বন্যার এমন ভয়াবহ রূপ আগে দেখেনি সিলেটের মানুষজন। বন্যার পানির এমন আকস্মিক বৃদ্ধিতে হতভম্ব ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষ। ভয়াবহ বন্যার শিকার লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও জায়গা পাচ্ছেন না। শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন সিলেটের বানভাসি মানুষ। এছাড়া জেলার কৃষকরা তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুরো জেলার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বলা যায় সিলেট বিভাগ কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এবারের বন্যায় সিলেট নগরের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট জেলার ভারতের সীমান্তঘেঁষা উপজেলা গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট এবং সিলেট সদর। এই পাঁচ উপজেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর-সিলেট সড়কও পানির নিচে। ফলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী এ উপজেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ। এছাড়াও পুরো সুনামগঞ্জ শহরের ৯০ ভাগ বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ছাতক শহরের শতভাগ এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। সুনামগঞ্জ ও ছাতক পৌর এলাকার প্রধান সড়কে হাঁটু থেকে কোমর পানিতে ডুবে আছে। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে অনায়াসে নৌকা চলাচল করছে। ৬৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক কোমর পানিতে ডুবে থাকায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। জেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ছাতক, তাহিরপুর দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভপুর উপজেলা। এসব এলাকার প্রধান সড়কে এখন সাতার পানিতে নিমজ্জিত। নৌকা ছাড়া এসব উপজেলায় যাওয়ার বিকল্প কোনো বাহন নেই। তাছাড়াও উত্তরবঙ্গে সীমান্তের ওপারে ভারী বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, ঘাঘটসহ ১৬ নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এদিকে, রৌমারী ও রাজিবপুর ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার আরও তিনটি উপজেলার অনেক ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলার অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় মাচা বা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। এদিকে ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যার আরও অবনতির পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।