কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বিদআতের পরিণাম

post title will place here

عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنه قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ. وَفِى رِوَايَةِ: مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهْوَ رَدٌّ.

সরল অনুবাদ : আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরীআতে এমন নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায় যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত’।[1] মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যে এমন আমল করে যার উপর আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’।[2]

হাদীছের অবস্থা : ইবনু হাজার আসক্বালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছটিকে ইসলামের উৎপত্তি এবং এর একটি অন্যতম বিধান হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, এটি শরীআতের প্রমাণসমূহের অর্ধেক হওয়ার যোগ্য।[3] ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এটি ইসলামের একটি মহান বিধান এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপক অর্থবোধক বাণীসমূহের অন্যতম। কারণ শরীআতে বিদআত (নতুন আবিষ্কার) ও উদ্ভাবনকে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে এটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। এটি এমন একটি হাদীছ যাকে গুরুত্বের সাথে সংরক্ষণ করা হয় এবং মন্দ কাজকে বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত করতে এর ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করা হয়।[4] ইবনু হাজার আল-হায়তামী রহিমাহুল্লাহ বলেন, এটি ইসলামের এক মহান নিয়ম এবং প্রচলিত প্রমাণসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বাধিক উপকারী দলীল। কারণ প্রতিটি প্রমাণের বর্ণনায় এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ভূমিকা যা থেকে একটি শারঈ বিধান সৃষ্টি হয়।[5] ইবনু দাক্বীকুল ঈদ রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছটি দ্বীনের নীতিমালার একটি মহান নিয়ম। এটি ঐ ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যের অন্তর্গত যা বিশেষভাবে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রদান করা হয়েছে। কারণ এটি প্রতিটি বিদআত এবং এর উদ্ভাবককে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ। আর কিছু উছূলশাস্ত্রবিদ হাদীছটি থেকে এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য আমলটির বিপর্যয়কর বা অস্থিরতা সৃষ্টিকারীর পর্যায়ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।[6] আল-সা‘দী রহিমাহুল্লাহ বলেন, মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুইটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। হাদীছদ্বয় অর্থের বিচারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সমগ্র দ্বীন, দ্বীনের মৌলিক ও শাখা-প্রশাখাগত বিষয় এবং দ্বীনের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে। সুতরাং উমার রযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছ (সকল আমল নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল) হলো অভ্যন্তরীণ আমলের মানদণ্ড এবং আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত এই হাদীছটি বাহ্যিক আমলের মানদণ্ড। হাদীছদ্বয়ে আল্লাহর প্রতি ভক্তি এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য প্রকাশ পায়। প্রতিটি কথা, কর্ম, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আমল কবুলের পূর্বশর্ত হলো হাদীছদ্বয়ের শিক্ষা অনুসারে আমল করা।[7]

ব্যাখ্যা : মহান আল্লাহ মানুষের সকল বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত। মানুষের গতি-প্রকৃতি, আচার-আচরণ ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সবকিছুই তিনি ভালো করে জানেন। তিনি চান এই দ্বীন যেন সর্বশেষ চূড়ান্ত দ্বীন হয়, যাতে মানুষ একে তাদের জীবন পরিচালনার অপরিহার্য বিধান এবং মহান আল্লাহর পথে চলার একমাত্র মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। তিনি চান ইসলামের শিক্ষা যেন তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করে। 

তাই তিনি ইসলামের সকল বিষয়ের বর্ণনা করেছেন, যা মানুষের জন্য কল্যাণকর এবং সকল মন্দ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন, যা তাদের জন্য ক্ষতিকর। তাঁর শারঈ বিধানের এই বর্ণনা ততক্ষণ অব্যাহত থাকে, যতক্ষণ না শেষ নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর মাধ্যমে এই বিধানের পরিপূর্ণতা পায়। মহান আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ পূর্ণাঙ্গ করেছি এবং আমি ইসলামকে তোমাদের জন্য জীবনবিধান হিসেবে মনোনীত করেছি’ (আল-মায়েদা, /৩)। এই দ্বীনের পূর্ণতার সাথে সাথে এতে সংযোজন বা বিয়োজনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা শরীআত প্রণেতা দ্বীনের বৈশিষ্ট্যসমূহ তথা ইসলামের সকল বিধিনিষেধ স্পষ্ট করে বর্ণনা করে দিয়েছেন। ইবাদতের আকার ও সংখ্যা কেমন বা কত হবে এবং কখন বা কোথায় আদায় করতে হবে, তার বিস্তারিত উপায় তিনি বর্ণনা করে দিয়েছেন। তারপর তিনি মানুষকে এই পদ্ধতিগুলো মেনে চলার এবং সীমালঙ্ঘন না করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি সমস্ত কল্যাণকর কাজ সম্পাদন এবং সেগুলো আদায়ে এই সীমারেখাকে দৃঢ়ভাবে মেনে চলার আদেশ দিয়েছেন, যাতে ইবাদতটি আল্লাহ তাআলার পছন্দের সীমানা অতিক্রম না করে। অর্থাৎ কোনো কারণে এমনটা যেন না হয় যে, ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টির সীমারেখা অতিক্রম করে।

আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর আইন প্রণয়নের এমন কোনো পথ বা উপায় বাদ রাখেননি, যাতে কোনো কথক বা কোনো নামধারী শরীআত প্রণেতা কোনো কিছু রচনা বা সংযোজন-বিয়োজনের সুযোগ পায়। পক্ষান্তরে কোনো ব্যক্তি যদি এমন কোনো মতবাদকে সঠিক বলে দাবি করে, যেটা তার বিবেকের নিকট কল্যাণকর, যার চিন্তায় সে মুগ্ধ, যাকে সে কুরআন ও সুন্নাহর হেদায়াতের চেয়ে উত্তম মনে করে এবং সে ধারণা করে সে কুরআন-হাদীছের চেয়ে উত্তম কিছু রচনা করতে সক্ষম, তাহলে এর ভয়াবহ পরিণাম তাকে ভোগ করতে হবে।

হাদীছটির যে বিষয়টি সম্পর্কে এখানে আলোকপাত করা হয়েছে, তা হলো হাদীছটি এমন এক মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে, যার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য এবং অগ্রহণযোগ্য আমলগুলো জানা যায়, যা অনেক ইসলামী পণ্ডিতকে হাদীছটির প্রতি গুরুত্বারোপ করতে এবং অধ্যয়নে মনোযোগী হতে বাধ্য করেছে এবং তারা এটিকে ইসলামের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন।

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বাণী, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই শরী‘আতে এমন কিছু আবিষ্কার করে, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়’-এর দ্বারা দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত এমন পদ্ধতিকে বোঝানো হয়েছে, যার অনুসরণ নিষিদ্ধ এবং এমন কিছু অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে, যা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত নয়। এজন্যই তাঁর বাণী ‘আমাদের বিধান’ দ্বারা আল্লাহর বিধান, অহী ও শরীআত উদ্দেশ্য। এর দলীল হলো আল্লাহর এই বাণী, وَكَذَلِكَ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ رُوحًا مِنْ أَمْرِنَا ‘আর এমনিভাবে আমি আমাদের বিধান দিয়ে আপনার প্রতি ফেরেশতা প্রেরণ করেছি’ (আশ-শূরা, ৪২/৫২)। সুতরাং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত বিধানে সংযোজন বা বিয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।

‘যার উপর আমাদের নির্দেশনা নেই’ দ্বারা বোঝানো হয়েছে, প্রতিটি ইবাদত অবশ্যই শরীআত দ্বারা পরিচালিত হতে হবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর আদেশের আনুগত্য করতে হবে। এর অনুসরণ ব্যতীত অন্য যে কোনো আমলের ফলাফল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর বর্তাবে, যদিও তার দৃষ্টিতে এটা ভালো। কারণ আল্লাহর নিকট আমল গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য শিক্ষা হলো, সেটি অবশ্যই ভালো আমল হতে হবে এবং অবশ্যই তাঁর আদেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এই নির্দেশনা আল্লাহ তাআলার নিম্নের বাণীতে লক্ষণীয়। তিনি বলেন, فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের আশা করে, সে যেন সৎকাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (আল-কাহফ, ১৮/১১০)। এই আয়াতের মাধ্যমে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, একনিষ্ঠভাবে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় সম্পাদিত ব্যতীত কোনো আমল আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না। ফুযাইল ইবনু ইয়ায রহিমাহুল্লাহ বলেন, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদিত না হলে কোনো আমল তিনি কবুল করেন না এবং যত আন্তরিকতার সাথে আদায় করা হোক না কেনো সুন্নাহভিত্তিক না হলে তিনি তা কবুল করেন না।

উক্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, ইবাদতকারীর নিকট উভয় পথের একটির অবলম্বন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই; সেখানে তৃতীয় পথের কোনো সুযোগ নেই। সেই পথদ্বয়ের একটি হলো অহী ও শরীআতের পথ এবং অপরটি হলো পথভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির পথ।

যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, শরীআতে নতুন আবিষ্কার করে এবং আল্লাহর দ্বীনে এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায় যা তার অংশ নয়, সে মূলত এই দ্বীনের পরিপূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার ক্ষেত্রে কদার্যতার পথ অবলম্বনকারী। কারণ দ্বীনে অতিরঞ্জনের দাবীর অর্থ হচ্ছে, শরীআতে যে অসম্পূর্ণতা আছে তা পূরণ করা। তখন এই অর্থই দাঁড়ায় যে, দ্বীন এখনও পূর্ণ হয়নি এবং সে দ্বীনকে পূর্ণ করার জন্য এটি করেছে।

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শরীআতে বিদআতের (নতুন উদ্ভাবনের) প্রচলন ঘটায়, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতে তার সাক্ষ্যদানের কার্যকারিতা থাকল না। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ অনুসরণ এবং তা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এটির অনুসরণ করো এবং অন্যান্য পথের অনুসরণ করো না, যাতে তোমরা তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাও। এই উপদেশ আল্লাহ এজন্য দিচ্ছেন, যাতে তোমরা ভীত হতে পারো’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উক্তি ‘যে কেউ এ দ্বীনে কিছু নতুন আবিষ্কার করবে’-এর মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। তা হলো, এটি ততক্ষণ পর্যন্ত বিদআত (শরীআতে নতুন আবিষ্কার) হিসেবে গণ্য হবে, যতক্ষণ এটা ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এর বিপরীতে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন— শিল্প ও উদ্ভাবন, বই লেখা, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং অনুরূপ দুনিয়ার অন্যান্য বিষয় বিদআত হিসেবে গণ্য হবে না। যদিও আভিধানিক অর্থে এগুলো নতুন আবিষ্কার, তবুও এগুলো নিন্দনীয় নতুন আবিষ্কারের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ হাদীছে উল্লিখিত ‘আমাদের দ্বীন’-এর উদ্দীষ্ট অর্থ এগুলোকে শামিল করে না। 

এছাড়াও তাঁর উক্তি ‘যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়’ এই ইঙ্গিত দেয় যে, নিষিদ্ধ নতুন আবিষ্কার এমন বিষয় যা হেদায়াত এবং সুন্নাহর বাইরের বিষয়। এর বিপরীতে এর দ্বারা ঐসব বিষয় উদ্দেশ্য নয়, যাকে লোকেরা নিন্দনীয় বিদআত (নতুন আবিষ্কার) মনে করে, যা মূলত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু অজ্ঞতাবশত মানুষ এগুলোকে পরিত্যক্ত সুন্নাতে পরিণত করেছে। এ জাতীয় ঘটনার উপস্থিতি শরীআতে অনেক। বিশেষত মানুষের মধ্যে অজ্ঞতার ব্যাপকতা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এমনটা ঘটেছে। হাদীছটির শিক্ষা আমাদের ইবাদতের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ব্যাপারে তাড়াহুড়া না করার আহ্বান জানায়। কোনো বিষয়ের উপর আমলের ব্যাপারে আমরা ততক্ষণ অপেক্ষমান থাকব, যতক্ষণ না আমরা অবগত হই যে, এ ব্যাপারে শরীআতে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ নেই।

উপসংহারে বলা যায়, আল্লাহর পথ এক, সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত ও আলোকবর্তিকা দ্বারা সজ্জিত তাকের মতো। যদি কেউ এর নিকটবর্তী হয়, তবে এর আলোতে সে তার পথ দেখতে পায় এবং সঠিক পথের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে সঠিক পথে চলে। আর যদি সে এখান থেকে সরে যায়, তবে সে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে যায়, প্রবৃত্তির অমানিশায় হাবুডুবু খায়। তাই যদি কোনো মুসলিম সফল হতে চায় এবং পরিত্রাণ পেতে চায়, তবে তার উচিত হবে ইসলামের জ্ঞান অর্জন করা এবং ইসলামের জ্ঞান অর্জনে নিজের শিক্ষাকে সীমাবদ্ধ করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!

মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল

 প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮; মিশকাত, হা/১৪০।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।

[3]. ফাতহুল বারী, ৩৭৫/৫।

[4]. আল্লামা নববী, শারহু মুসলিম, ১৫/২।

[5]. ফাতহুল মুবীন, হা/৯৬।

[6]. ইবনু দাক্বীক্বিল ঈদ, শারহুল আরবাঈন আন-নাবাবিয়্যা, পৃ. ২২।

[7]. বাহজাতু কুলূবিল আবরার, পৃ. ১০।

Magazine