عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيبُكَ».
সরল অনুবাদ : হাসান ইবনু আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে মুখস্থ করেছি, ‘যে কাজ তোমার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে তা বর্জন করে ঐ কাজ করো, যা তোমার মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি করে না’।[1]
হাদীছটির অবস্থান : উক্ত হাদীছটি দ্বীনের অন্যতম ভিত্তি। এটি আল্লাহভীতির এমন উৎস, যার উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপিত। এটি এমন সন্দেহ ও বিভ্রমের অন্ধকার থেকে নিষ্কৃতি দেয়, যা নিশ্চিত আলোর প্রতিফলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।[2] উক্ত হাদীছটি মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপক অর্থবোধক বাণীসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এটি অলংকারপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীমূলক অন্যতম নবুঅতী জ্ঞান। সংক্ষিপ্ত বাণীর মাধ্যমে তিনি আমাদের দ্বীন ইসলামে একটি মহান নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। আর তা হলো সন্দেহ বর্জন করা এবং অকাট্যভাবে প্রমাণিত হালালকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা।[3] আসকারী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, কোনো বিচক্ষণ ব্যক্তি যদি উক্ত হাদীছ নিয়ে গবেষণা করে, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবে এই জ্ঞান অর্জন করবেন যে, সন্দেহজনক বিষয় থেকে বাঁচার জন্য যত নির্দেশনা এসেছে, তার সব কয়টিকে এটি অন্তর্ভুক্ত করে।[4]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদা তাঁর উম্মতকে জীবিকা অর্জন ও কল্যাণের দিকে প্রত্যাবর্তনের জন্য উত্তম পথ অবলম্বনের উপদেশ দিতেন। তিনি তাদেরকে সৎ পথে চলার পরামর্শ দিতেন। তিনি তাদেরকে সৎ পথের বৈশিষ্ট্য এবং সৎ পথের দিকে চালিত করে এমন সব উপায়ের কথা বলে দিয়েছেন। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী বিষয়ক উপদেশের অন্যতম হলো এ হাদীছ। হাদীছটিতে মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে সন্দেহজনক বিষয় বর্জন করার এবং স্পষ্ট ও নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত বৈধ বিষয় অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।
হাদীছটির বর্ণনাকারীর পরিচয় : হাসান ইবনু আলী ইবনে আবী তালেব রাযিয়াল্লাহু আনহুমা ছিলেন ইমাম ও সরদার। তিনি হলেন জান্নাতের যুবকদের নেতা। তার উপনাম ছিল আবূ মুহাম্মাদ আল-কুরাশী। তিনি মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা ফাতেমা রাযিয়াল্লাহু আনহা-এর সন্তান। তিনি তৃতীয় হিজরীর শা‘বান মাসে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ কেউ কলেন, তিনি মধ্য রামাযানে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর ভাই হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর চেয়ে এক বছরের বড়। তিনি ২৫ বার হজ্জ করেছেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি হিজাজ, ইয়ামান, ইরাক ও খোরাসানে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তাঁর খেলাফতের ব্যাপ্তিকাল ছিল ছয় মাস। আত্মমর্যাদাবোধ, মহানুভবতা ও উদারতার কারণে মুসলিম নেতৃবৃন্দের পরামর্শে মুআবিআ রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হাতে খেলাফতের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ১৩টি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ৫০ বছর বয়সে বিষপানে তাঁর মৃত্যু হয়। যখন তাঁর সাত বছর বয়স, তখন মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স অল্প হওয়ায় তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা কম। এই হাদীছটি তাঁর বর্ণিত হাদীছের অন্যতম।[5]
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছটি এই বলে শুরু করেছেন, ‘বর্জন করো, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে’, একটি সাধারণ আদেশ যা বান্দাকে সন্দিগ্ধ করে এমন সব বিষয়ের বর্জনকে শামিল করে। এখানে ‘রায়ব’ বলতে সন্দেহকে বোঝানো হয়েছে। যেমন রায়ব শব্দটি সন্দেহ অর্থে আল-কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ ‘এই সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই’ (আল-বাক্বারা, ২/২)।
হাদীছটি আমাদেরকে যা সন্দেহ সৃষ্টি করে, তা বর্জন করার এবং যা স্পষ্ট ও সন্দেহমুক্ত, তা গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আলেমগণ সন্দেহজনক বিষয় ত্যাগ করার আদেশের তাৎপর্য অনুসন্ধান করেছেন। তারা বলেছেন, এই আদেশ কি বাধ্যতামূলক? অর্থাৎ বান্দা যদি সন্দেহজনক বিষয় বর্জন না করে, তবে সে গুনাহগার হবে নাকি বর্জনের আদেশ ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভরশীল?
উক্ত হাদীছ ও হাদীছের অর্থে বর্ণিত অন্যান্য হাদীছ নিয়ে ভাবলে এটা প্রতীয়মান হয় যে, হাদীছগুলোতে সন্দেহজনক বিষয় সম্পর্কে ভাবার পদ্ধতি স্পষ্টভাবে অঙ্কন করা হয়েছে। সুতরাং এখানে প্রকৃত অর্থে ‘আমর’ (আদেশ) বলতে কোনো বিধান সম্পর্কে যথাযথ নির্দেশনা প্রদান এবং শারঈ বৈধতাপ্রাপ্ত বিষয়ের বর্ণনা করা। কারণ, ইবাদত, লেনদেন এবং অন্যান্য বিধানের ক্ষেত্রে সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন একজন ব্যক্তিকে ধর্মভীরুতা ও তাক্বওয়া অর্জন এবং দ্বীনী পরিবেশ ও সম্ভ্রম রক্ষার দিকে পরিচালিত করে। যেমন নু‘মান ইবনু বাশীর রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদীছে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মানুষ এ ক্ষেত্রে সবাই একই পর্যায়ের নয়। যখন কোনো নিষিদ্ধ বিষয়ের সাথে সন্দেহ যুক্ত হয় কিংবা এমন ধারণা জন্ম নেয় যে, কাজটিতে জড়ালে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসন্তুষ্ট হবেন, তবে এমন অবস্থায় বান্দাকে অবশ্যই সন্দেহজনক বিষয় ত্যাগ করতে হবে।
মোদ্দাকথা, যখন কারও নিকট দু’টি বিষয় উপস্থিত হবে। তার মধ্যে একটির হালাল হওয়া বৈধ আর অপরটি অস্পষ্ট, তখন সতর্কতাস্বরূপ সন্দেহযুক্ত বিষয় বর্জন করতে হবে। প্রকাশ্য বিষয় অনুযায়ী আমল করতে হবে, যেখানে সন্দেহ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। সেটা সম্পদ হোক, পোশাক হোক, সঙ্গ অবলম্বন করা হোক বা অন্য কিছু হোক। সুতরাং যে বিষয়ে হারামের আশঙ্কা সৃষ্টি হয় তা বর্জন করতে হবে।
দীপ্ত সত্যের মূর্ত প্রতীক আমাদের সালাফের অনেক চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি এবং উজ্জ্বল বাণী রয়েছে, যা তাদের নৈতিকতার ভূষণে অলংকৃত এবং আল্লাহভীতির ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। এ প্রসঙ্গে তাদের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বাণী রয়েছে। তার মধ্যে আবূ যার আল-গিফারী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, ‘তাক্বওয়াপূর্ণ জীবনের চূড়ান্ত রূপ হলো, হারাম থেকে বাঁচার তাগিদে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কিছু হালাল বর্জন করা’।[6] ফুযাইল ইবনু ইয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘লোকেরা বলে যে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাক্বওয়ার অবলম্বন সবচেয়ে কঠিন বিষয়। কিন্তু যখন আমি দুইটি অবস্থার সম্মুখীন হই, তখন কঠিনটা গ্রহণ করি। কারণ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি সন্দেহের উদ্রেক করে এমন বিষয় বর্জন করো এবং এমন অবস্থা অবলম্বন করো, যা তোমাকে সন্দেহমুক্ত রাখে’।[7]
তাঁদের কর্মকাণ্ডে আল্লাহভীতির নিদর্শন স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। হাদীছে এসেছে, আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর একজন কৃতদাস ছিলেন, যিনি চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে ধার্যকৃত কর আদায় করতেন। আর আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু তার সেই আদায়কৃত অর্থ ভক্ষণ করতেন। কৃতদাসটি একদিন তার কাছে কিছু খাবার নিয়ে আসলে তিনি সেখান থেকে খেলেন। তখন কৃতদাসটি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি জানেন এটা কেমন খাদ্য? তিনি বললেন, আমি জাহেলী যুগে একজন ব্যক্তির ভাগ্য সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম, অথচ ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞান ছিল না। আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। তিনি আমার সাথে দেখা করে এ খাদ্য দিয়েছিলেন, যা থেকে আপনি খেয়েছেন। আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু মুখে তাঁর হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং সেই খাদ্য পেট থেকে বমি করে ফেলে দিলেন।[8]
আমাদের পূর্ববর্তীদের জীবন কতটা তাক্বওয়াপূর্ণ ছিল তা তাঁদের জীবনচরিত থেকে জানা যায়। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট থেকে একটি জমি ক্রয় করেছেন। জমিক্রেতা তার ক্রয়কৃত জমিতে একটি পাত্র পেয়েছেন, যাতে স্বর্ণ রয়েছে। জমির ক্রেতা বিক্রেতাকে বললেন, ‘আপনি আমার থেকে আপনার স্বর্ণ নিয়ে নিন। কেননা আমি আপনার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছি, স্বর্ণ ক্রয় করিনি। আর জমির মালিক বললেন, আমি আপনার নিকট জমি ও তাতে যা আছে সবকিছুই আপনার কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। অবশেষে তারা দু’জনে এক ব্যক্তির নিকট ফয়সালার জন্য গেলেন। অতঃপর যার কাছে ফয়সালার জন্য গিয়েছেন, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দু’জনের কোনো সন্তান আছে? তাদের মধ্যে একজন বললেন, আমার একজন পুত্র সন্তান আছে। আর অপরজন বললেন, আমার একজন কন্যা সন্তান আছে। তিনি বললেন, ছেলেটিকে মেয়েটির সাথে বিবাহ দিয়ে দাও এবং তাদের জন্য এই স্বর্ণ ব্যয় কর এবং ছাদাক্বা করো’।[9]
সুফিয়ান ছাওরীকে স্বপ্নে দেখা গেল। তাঁর দুটি ডানা রয়েছে যা দিয়ে তিনি জান্নাতে উড়ছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি কীভাবে এটি পেয়েছেন? তিনি বললেন, আল্লাহর প্রতি গভীর ভয় থেকে আমি এটি পেয়েছি।[10]
ফিক্বহশাস্ত্রবিদগণ এই হাদীছটির গবেষণায় যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। উক্ত হাদীছ থেকে তারা ফিক্বহশাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি বের করেছেন, যা শারঈ আইনের অধিকাংশ মাসআলার সাথে সম্পৃক্ত। উক্ত মূলনীতি হলো ‘নিশ্চিত জিনিস সন্দেহের কারণে লোপ পায় না’। তাই আমরা সন্দেহ বর্জন এবং দৃঢ়বিশ্বাস গ্রহণের নীতি অবলম্বন করব। এই মূলনীতির উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে বুঝাতে আমাদের উদাহরণ হলো, যখন কোনো ব্যক্তির ওযূ নষ্ট হয়, অতঃপর তার আবার সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, ওযূ ভঙ্গের পর সে কি পবিত্রতা অর্জন করেছে, না-কি করেনি? এ ব্যাপারে মূলনীতি হলো যে তার ওযূ ভেঙে গেছে এবং সে এরই উপর আমল করবে। (অর্থাৎ) পূর্ববর্তী মূলনীতির আলোকে সে ছালাত পড়তে চাইলে তার ওযূ করা ওয়াজিব। আর একইভাবে যদি সে ওযূ করে অতঃপর তার সন্দেহ সৃষ্টি হয় যে, ওযূ করার পর তার কি ওযূ ভেঙেছে, না-কি না? তখন মূলনীতি হলো এই যে, তার ওযূ বলবৎ আছে। কারণ, তার ওযূ করাটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত আর ওযূ ভঙ্গ হওয়ার ব্যাপারটি সন্দেহজনক। কাজেই তাকে নিশ্চয়তার উপর আমল করতে হবে।[11]
আলোচ্য হাদীছের আরও একটি অংশ রয়েছে, যা অন্যান্য সনদে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সুনানে তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, ‘সততা হলো প্রশান্তি এবং মিথ্যা হলো সন্দেহ’।[12] হাদীছের এই অংশ এই ইঙ্গিত দেয় যে, যদি কোনো মুসলিম সন্দেহ সৃষ্টি করে এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকে, তবে (মনে করতে হবে) হারামে পতিত হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষার ক্ষেত্রে সে সব থেকে অগ্রগামী পন্থা অবলম্বন করেছে। এটি মনে প্রশান্তি এনে দেয় এবং ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে। আর যদি সে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা অনুসরণ না করে এবং সন্দেহের পথ থেকে দূরে থাকতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে সে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে এবং অস্থিরতায় ভুগবে। কেননা সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তির স্বভাব এমন যে, তার হৃদয় কখনোই প্রশান্তি অর্জন করে না এবং তার বিবেক স্বস্তির পথ খুঁজে পায় না। অন্য এক হাদীছে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মানুষের সুন্দর ইসলামের অনুসারী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, অনর্থক বিষয় বর্জন করা। যার কোনো অর্থ নেই, যাতে কোনো কল্যাণ নেই, যার কোনো গুরুত্ব নেই, তা বর্জন করাই হলো সুন্দর ইসলাম। অনর্থক বস্তু ইসলামে প্রবেশ করতে পারে না। ইসলামে ঐসব বিষয়ের আলোচনা স্থান পায়, যা অর্থবহ। যার কোনো অর্থ নেই বা যাতে কল্যাণ নেই তাতে জড়ানো একজন মুসলিমের জন্য কোনো অবস্থাতেই শোভা পায় না।
পরিশেষে একথা বলা যায়, বান্দার গ্রহণ এবং বর্জন সম্পর্কিত স্পষ্ট বিধান উক্ত হাদীছে অঙ্কিত হয়েছে। হাদীছটির আলোচ্য বিষয় আত্মার স্বাচ্ছন্দ্য এবং মনের প্রশান্তিকে কতটা প্রভাবিত করে তার একটি স্পষ্ট চিত্র এখানে দেওয়া হয়েছে। আমরা আল্লাহর নিকট চাই, তিনি যেন আল্লাহভীরুতা ও ধার্মিকতার চূড়ান্ত আসনে আমাদের সমাসীন করান। তিনিই আমাদের আত্মার একমাত্র অভিভাবক এবং তিনিই একমাত্র নিয়ন্ত্রক। আল্লাহ আমাদের সকলকে হারাম থেকে বেঁচে আত্মা নিয়ন্ত্রণের শক্তি দান করুন- আমীন!
[1]. তিরমিযী, হা/২৫১৮, হাদীছ ছহীহ; আহমাদ, হা/১৭২৩; নাসাঈ, হা/৫৭১১; মিশকাত, হা/২৭৭৩।
[2]. মুহাম্মাদ আব্দুর রঊফ আল-মুনাবী, ফায়যুল ক্বাদীর শারহুল জামে‘ আছ-ছাগীর, পৃ. ৩/৭০৬; ফাতহুল মুবীন, পৃ. ১২৬।
[3]. মুছত্বফা আল-বাগা, আল-ওয়াফী ফী শারহিল হাদীছ আল-আরবাঈন, পৃ. ৮৫।
[4]. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-জুরযানী, আল-জাওয়াহিরুল লুলুআহ ফী শারহিল আরবাঈন আন-নাবাবিয়্যা, পৃ. ১১৬; ফায়যুল ক্বাদীর শারহুল জামে‘ আছ-ছাগীর, ৩/৭০৭।
[5]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, আল-ইছাবা, ১/৩২৮।
[6]. আবূ হামিদ আল-গাযালী, এহয়াউ উলূমিদ্দীন, ২/১০৮।
[7]. হাফেয ইবনু রজব আল-হাম্বালী, জামেউল উলূম ওয়াল-হিকাম, পৃ. ১৩১।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮৪২।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৭২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭২১।
[10]. আব্দুল হক্ব আল-ইশবীলী, আল-আক্বিবাতু ফী যিকরিল মাউত, পৃ. ২২৩।
[11]. মুহাম্মাদ ছিদ্দীক্বী, কিতাবুল ওয়াজীয ফী ক্বাওয়ায়েদিল ফিক্বহ আল-কুল্লিয়্যা, পৃ. ১৬৬।
[12]. তিরমিযী, হা/২৫১৮; আহমাদ, হা/১৭২৩; নাসাঈ হা/৫৭১; মিশকাত, হা/২৭৭৩, হাদীছ ছহীহ।