কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মানুষের চারিত্রিক উৎকর্ষতায় ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ভূমিকা

post title will place here

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنهم قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «بُنِىَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ»

ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ‍ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি রুকন তথা মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত— এই সাক্ষ্য দেওয়া আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। ছালাত ক্বায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং রামাযানের ছিয়াম পালন করা’।[1]

ব্যাখ্যা : প্রকৃতপক্ষে ইসলাম হচ্ছে সব সময় আল্লাহ তাআলা রাসূলগণকে যে আইনকানুন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার অনুসরণ করা। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের কাছ থেকে কী চান, তারা তা জানার উপায় বুঝতে পেরেছিলেন। সুতরাং মূসা আলাইহিস সালাম-এর অনুসারীদের জন্য ইসলাম হলো, তাওরাতে যা আছে তার অনুসরণ করা। ঈসা আলাইহিস সালাম-এর অনুসারীদের জন্য ইসলাম হলো, তাঁর উপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অনুসরণ করা। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর অনুসারীদের জন্য ইসলাম হলো, তিনি যে প্রমাণ ও হেদায়াত নিয়ে এসেছিলেন তার অনুসরণ করা। এভাবে শেষ নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের মাধ্যমে দ্বীনের এ ধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মের সন্ধান করবে, তা তার কাছ থেকে কবুল করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত হবে’ (আলে ইমরান, ৩/৮৫)। অতএব, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর সকল মানুষের এই দ্বীনের অনুসরণ করা অপরিহার্য, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর সকল বান্দার জন্য মনোনিত করেছেন।

যে দ্বীনের অনুসরণ আল্লাহ আমাদের উপর আবশ্যক করেছেন, তার বৈশিষ্ট্য হলো এটি একটি আন্তর্জাতিক জীবনবিধান, যার উপযোগিতা প্রত্যেক কাল ও স্থানে বিদ্যমান।

এ দ্বীনের পদ্ধতি, বিধিবিধান ও নীতিমালা খুবই সুদৃঢ়। এই জন্যই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই হাদীছে ইসলামকে একটি সুদৃঢ় ভবনের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি পাঁচটি রুকনকে ইসলামের এমন দৃঢ় ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন, যার উপর ইসলামের মূল কাঠামো দণ্ডায়মান। উক্ত ভিত্তি ব্যতীত ইসলামের টিকে থাকা অসম্ভব। আর অপরাপর বিধিবিধান ইসলামের শোভাবর্ধনে সহায়ক। মোদ্দাকথা, এই হাদীছে ইসলামের ঐ সব রুকন সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, যার উপর ইসলামের বিশুদ্ধ কাঠামো স্থাপিত।

প্রথম রুকন : উক্ত আরকানের মধ্যে প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ হলো, আল্লাহর একত্ব এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাতে সাক্ষ্য প্রদান করা। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত অর্থে উপাসনার যোগ্য কেউ নেই এবং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসূল— এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করা। এটি দ্বীনের সেই মানদণ্ড যার মাধ্যমে বান্দা দ্বীনের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সে জান্নাতে নাঈমের অধিকারী হয়। কালেমার প্রথম অংশ ‘লা ইলাহা’ এর অর্থ হলো— অন্তরে স্বীকার করে মুখে উচ্চারণ করে এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ উপাসনার যোগ্য নয় এবং তিনি বরকতময় ও মহান। সুতরাং আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা এবং তিনি ব্যতীত অন্যের নিকট কোনো কিছু চাওয়া ও ভরসা করা যাবে না। যখন কোনো ব্যক্তি কালেমাকে বিশ্বাস করে এবং এর দাবি অনুযায়ী সৎকর্ম করে, তখন আল্লাহ তাআলা মৃত্যুর সময় তাকে এই কালেমা পাঠ করার সুযোগ করে দেন এবং তার জিহ্বাকে স্থিরতা দান করেন, যাতে দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার সময় এ বাক্য বলা তার জন্য সহজ হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার শেষ বাক্য হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ অপরিহার্য’।[2]

মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আল্লাহর রাসূল হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হচ্ছে— এই বিশ্বাস করা যে, তিনি বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন আর তিনি সকলের জন্য সুসংবাদদাতা ও ভয়প্রদর্শনকারী। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে রাসূল!) আপনি বলুন, হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের নিকট ঐ আল্লাহর রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি, যার হাতে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের রাজত্ব রয়েছে; যিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি মানুষকে জীবিত করেন ও মৃত্যুদান করেন। অতএব, তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর ঐ রাসূল ও নিরক্ষর নবীর প্রতি ঈমান আনো, যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীকে বিশ্বাস করেন এবং তোমরা তাঁরই অনুসরণ করো যাতে হেদায়াত পেতে পারো’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৫৮)। এই সাক্ষ্যদানের দাবি হলো এই বিশ্বাস করা যে, তাঁর শরীআত পূর্ববর্তী ধর্মসমূহের রহিতকারী। এই জন্য আল্লাহর রাসূল (যার হাতে তাঁর আত্মা, সে সত্তার শপথ করে) বলেন, এই উম্মতের যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে শুনবে; সে ইয়াহূদী হোক বা খ্রিষ্টান হোক অতঃপর আমাকে যে বিধান দেওয়া হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনবে না এবং সে অবস্থায় মারা যাবে সে অবশ্যই জাহান্নামে যবে’।[3] হাদীছের এই বাক্য থেকে বুঝা যায়, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিসেবে অবিশ্বাস করবে এবং তাঁর দ্বীনকে অনুসরণ করবে না, সে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আল্লাহ তাআলার নিকট তার কোনো ইবাদত কবুল হবে না। সে কোনো রহিত ধর্ম কিংবা বিকৃত ধর্মের অনুসারী হোক বা কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নয় এমন হোক, তার মনে রাখতে হবে পরকালে ইসলাম ব্যতীত অন্য বিধান অনুসারীর মুক্তি নাই। সর্বোত্তম মানুষের অনুসরণ ব্যতীত পরকালে মুক্তি পাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়।

এখানে উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি বিষয়ের সাক্ষ্যদানকে একটি স্তম্ভ বানিয়ে এ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, উভয়টির সমন্বয়ে একটি রুকন। এরা একে অপরের পরিপূরক; কেউ কারও থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। ইবাদতের মৌলিক উদ্দেশ্যের বিবেচনায় ইবাদত শুধু দুটি বিষয়ের মাধ্যে সীমাবদ্ধ। একটি হলো আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তির সাথে তাঁর একত্বকে বিশ্বাস ও স্বীকার করা যাকে ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই’ সাক্ষ্যদানের এই বাক্যটি শামিল করে। আর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি সাক্ষ্যদানের দাবি হলো তাঁর একনিষ্ঠ অনুসরণ করা।

দ্বিতীয় রুকন : বান্দার উপর দ্বিতীয় ফরয রুকন হলো ছালাত, যা বান্দা ও তাঁর পালনকর্তার মধ্যে গভীর ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। ছালাত আল্লাহর সাথে সংলাপের আধ্যাত্মিক মাধ্যম, যা তাঁর আলোর জন্য তৃষ্ণার্ত আত্মার তৃষ্ণা মিটায় এবং হৃদয়কে আলোকিত ও বক্ষকে উন্মুক্ত করে।

ইসলামে ছালাতের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ছালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন। ক্বিয়ামতের দিন প্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে।[4] আল্লাহ তাআলা সর্বোচ্চ স্থান আরশে মুআল্লায় তাঁর নবীর উপর ছালাত ফরয করেছেন; যেখানে মানুষ হিসেবে তাঁর প্রথম যাত্রা ছিল। সর্বাধিক সম্মানিত রাত ইসরায় সপ্তম আকাশে ছালাত ফরয হওয়ার ইলাহী আদেশ আসে।[5] ফলে শান্তি, যুদ্ধ, সুস্থতা, অসুস্থতা এক কথায় সর্বাবস্থায় ছালাত আদায়ের বাধ্যবাধ্যকতার ইলাহী হুকুম মুসলিমদের উপর অবতীর্ণ হয়।[6] বিবেক লোপ পাওয়া ব্যতীত এর আবশ্যকতা রহিত হবে না।

এমনিভাবে এটি এমন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা একজন মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে। জাবের ‍রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছ এর উজ্জ্বল প্রমাণ। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মানুষ এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো ছালাত বর্জন করা’।[7]

তৃতীয় রুকন : তৃতীয় রুকন যাকাত, এটি এমন একটি আর্থিক ইবাদত, যা আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দার আত্মাকে কার্পণ্য থেকে এবং আমলনামাকে পাপ থেকে পবিত্র করার জন্য একে ফরয করেছেন। মানুষের অন্তর ও সম্পদ পবিত্র করার মাধ্যম কেনইবা যাকাত হবে না? যেখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে কারীমে বলেছেন, ‘তাদের ধনসম্পদ থেকে ছাদাক্বা গ্রহণ করো, যা তাদেরকে পবিত্র ও কলুষমুক্ত করে’ (আত-তওবা, ৯/১০৩)। যাকাত ফরযের আরও কিছু উদ্দেশ্য হলো— সৃষ্টির প্রতি দয়া, তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের প্রয়োজন মিটানো এবং ভিক্ষাবৃত্তির লাঞ্ছনা থেকে তাদের মুক্ত করা।

পক্ষান্তরে, মানুষ যদি তাদের সম্পদের যাকাত আদায় না করে, তবে পৃথিবীর বরকত কমে যাবে। পৃথিবীর অর্থনৈতিক ভারসম্য ব্যাহত হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে জনজীবন বিপর্যাস্ত হবে। বুরায়দা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকবে, তখন আকাশ থেকে পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে’।[8] আর যারা যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকবে, আখেরাতে তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘নিজ অনুগ্রহ হতে আল্লাহ তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন ধারণা না করে যে, তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য (খুবই) অকল্যাণকর, তারা যাতে কৃপণতা করেছে, সত্বর ক্বিয়ামতের দিন তারই বেড়ি তাদের গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে’ (আলে ইমরান, ৩/১৮০)। আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘যারা স্বর্ণ ও রূপা মজুদ করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও’ (আত-তওবা, ৯/৩৪)। এর বাখ্যায় আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ ‍ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সোনা-রূপার মালিক যেসব লোক এসবের হক্ব (যাকাত) আদায় করে না, ক্বিয়ামতের দিন ঐ সোনা-রূপা দিয়ে তার জন্য আগুনের অনেক পাত তৈরি করা হবে, অতঃপর তা জাহান্নামের আগুনে গরম করা হবে। অতঃপর তা দিয়ে তার পার্শ্বদেশ, কপাল ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে। যখনই ঠান্ডা হয়ে আসবে পুনরায় তা উত্তপ্ত করা হবে। এরূপ করা হবে এমন একদিন যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান। আর তার এরূপ শাস্তি লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। অতঃপর তাদের কেউ জান্নাতে যাবে আর কেউ যাবে জাহান্নামে’।[9] আল্লাহর পক্ষ থেকে তার উপর শাস্তি হবে ঐ ধনসম্পদের কারণে— যে ধনসম্পদে সে মানুষের উপর কার্পণ্য করেছিল।

চতুর্থ রুকন : রামযানের ছিয়াম হলো ইসলামের একটি মহান পর্ব। যেখানে একজন মুসলিম তার ঈমানকে পরিমার্জিত এবং আল্লাহর সাথে তার অঙ্গীকারকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। ছিয়াম একজন মুমিনের জন্য এমন এক শক্তিশালী ইলাহী পথেয়, যা রামাযানের পর আনুগত্যের পথে চলার জন্য তার উত্সাহকে তীক্ষ্ণ করে। রামাযানের বেশ কতগুলো ফযীলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ ‍ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং ছওয়াব আশায় ছিয়াম পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে’।[10] ছিয়াম পালনকারীর উক্ত ফযীলত থেকে ছিয়ামের ছওয়াব কোনো সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করা যাবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ছিয়ামের প্রতিদান নির্ধারিত করে দেননি; বরং তিনি এর প্রতিদান নিজ হাতে দান করবেন।

পঞ্চম রুকন : পঞ্চম রুকন হজ্জ, এটি হলো আল্লাহর পবিত্র গৃহের হজ্জ পালন। হিজরতের নবম বছরে হজ্জ ফরয হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর উদ্দেশ্যে মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তির উপর বায়তুল্লাহর হজ্জ পালন করা ফরয, যে সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম’ (আলে ইমরান, ৩/৯৭)। আত্মার পবিত্রতা এবং আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের উপর মানুষকে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে হজ্জ ফরয করা হয়েছেন। পাশাপাশি এটি গুনাহ মাফের একটি দুর্দান্ত সুযোগ। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার ঘরের হজ্জ করে অতঃপর অশ্লীল কাজ করে না এবং পাপাচারে লিপ্ত হয় না, সে সেই দিনের মতো পবিত্র হয়, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল’।[11]

উক্ত পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের মহান কাঠামো প্রতিষ্ঠিত। রুকনগুলোর শিক্ষা ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজকে আদর্শবান, নৈতিক ও আল্লাহভীরু হতে সাহায্য করবে। একটি কল্যাণকামী ও জনদরদী সমাজব্যবস্থা এবং উদার ও উন্নত রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণে রুকনগুলো চর্চার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের যা পছন্দ করেন তা করার তাওফীক্ব দান করেন। তিনি আমাদের দুনিয়াসক্তি ও কদর্য অবস্থার সংস্কার করে উত্তম নৈতিক চরিত্রে সমৃদ্ধ জীবন গড়ার তাওফীক্ব দেন- আমীন!

 

মুহাম্মদ মুস্তফা কামাল

প্রভাষক (আরবী), বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বরিশাল।

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬

[2]. আবূ দাঊদ, হা/৩১১৬; আহমাদ, হা/২২০৩৪।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৩

[4]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৭৬

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৫৭০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬২

[6]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯

[7]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮২

[8]. ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৯

[9]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৭

[10]. ছহীহ বুখারী, হা/২০১৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৬০

[11]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫২১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৫০

Magazine