কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (৩৯) : কুরআন তেলাওয়াত কিংবা ওয়াজ-মাহফিল শেষে ‘মজলিস শেষ করার দু‘আ’ পড়ার পক্ষে কোনো দলীল আছে কি? নাকি মজলিসে কোনো ভুলত্রুটি হলেই কেবল দু‘আটি পড়তে হবে?

উত্তর :‘মজলিস শেষের দু‘আটি সব ধরনের মজলিস শেষ করার পর পড়া উচিত। কুরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ-মাহফিল, জুমু‘আহর খুৎবা, বিচার-সালিশ, দৈনন্দিন ক্লাস, এমনকি ওযূ কিংবা ছালাতের শেষেও এই দু‘আ পড়া ভালো। হাফেয ইবনু হাজার (আন-নুকাত ২/৭৩৩) এবং শায়খ আলবানী (সিলসিলা ছহীহা ৭/৪৯৫) গ্রন্থে হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু-এর বর্ণনায় আছে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে ওযূ শেষে বলল (সুবহানাকা... শেষ পর্যন্ত) তার এই দু‘আর উপর মোহর লাগিয়ে দিয়ে সেটা আরশের নিচে রেখে দেওয়া হয়, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গে না’ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লা, ইবনুস সুন্নী, পৃষ্ঠা ৩১, হা/৩০; আদ দাওয়াতুল কাবীর, ১/১১৮, হা/৫৯)। ইমাম হাকেম হাদীছটিকে মুসলিমের শর্তে ছহীহ বলেছেন, হাফেয যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন (মুসতাদরাকে হাকেম, ১৯৭০)। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি কোনো মজলিসে বসে আর তাতে সে অধিক অনর্থক কথা-বার্তা বলে ফেলে। তবে মজলিস থেকে প্রস্থানের পূর্বে (সুবহানাকা... শেষ পর্যন্ত) এই দু’আ পাঠ করলে সেই মজলিসে তার যে ত্রুটি হয়েছে তা মাফ করে দেওয়া হবে’ (তিরমিযী, হা/৩৪৩৩)। ইমাম ইবনু তায়মিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ভালো কাজের শেষে ইসতিগফার করার শরীআতসিদ্ধ হওয়ার পক্ষে দলীল হলো আল্লাহর বাণী وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ ‘আর যারা ভোরে ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (আলে ইমরান, ৩/১৭) এর অর্থ হলো- রাত জেগে ছালাত আদায় করো। ছালাত শেষ হলে ভোরে ইসতিগফার করো। তাছাড়া হাদীছে এসেছে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছালাত শেষে তিনবার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৯১; মিশকাত, হা/৯৬১)। ... আল্লাহ আরো বলেন,إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ * وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا * فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا (আন-নাছর, ১১০/১-৩)। এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ সাহায্য ও বিজয় আসলে তাসবীহ ও ইসতিগফার করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (মাজমূউল ফতওয়া, ১০/৮৯)। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোকেরা আনুগত্যের কাজ শেষে অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করে। কারণ উক্ত কাজে তাদের ত্রুটি সম্পর্কে তারা জানে এবং এটাও জানে যে উক্ত কাজ আল্লাহর শান ও মানে যেমনটা হওয়া উচিত তেমনটা তারা করতে পারেনি।... তাছাড়া আল্লাহ হাজীদের সর্বোত্তম কর্ম ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান’ শেষে ফিরে আসার পর ইসতিগফারের আদেশ দিয়েছেন। (মাদারিজুস সালেকীন, ১/৫২৪)। তাই সব ধরনের মজলিস শেষে উক্ত দু‘আটি পড়া উচিত। -আল্লাহই ভালো জানেন।

প্রশ্নকারী : মাহফুজুর রহমান

হারাগাছ, রংপুর।


Magazine