চিকিৎসাবিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি! ক্যানসার কোষকে ধ্বংস না করেই সুস্থ কোষে রূপান্তরের এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন অধ্যাপক কোয়াং হিউন চো এবং তাঁর গবেষণা দল। তাঁদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিতে কেমোথেরাপির মতো কঠিন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াপূর্ণ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। বরং, এটি ক্যানসার কোষের আচরণ পাল্টে দিয়ে তাকে সুস্থ কোষের মতো ব্যবহার করতে শেখায়।
গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত কম্পিউটারভিত্তিক প্রযুক্তি ‘ডিজিটাল টুইন’, যার মাধ্যমে কোষের অভ্যন্তরে জিনগত যোগাযোগের নিখুঁত নকশা তৈরি করা হয়। এই প্রযুক্তির মূল শক্তি একটি বিশেষ অ্যালগরিদম— বেনাইন (Boolean Network Inference and Control)। এটি কোষের মধ্যে কোন কোন জিন কীভাবে একে অপরকে প্রভাবিত করে, তা বিশ্লেষণ করে এবং বোঝায়, কোন জিনগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করলে কোষের আচরণ পরিবর্তন করে সুস্থতার দিকে ফেরানো সম্ভব।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা অন্ত্রের ৪,০০০-এরও বেশি ক্যানসার কোষ বিশ্লেষণ করে প্রায় ৫০০টিরও বেশি জিন শনাক্ত করেন। সেই বিশ্লেষণ থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিন— MYB, HDAC2 ও FOXA2— চিহ্নিত করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি এই তিনটি জিন একযোগে ‘নকড-ডাউন’ (অর্থাৎ কার্যকারিতা বন্ধ) করা হয়, তবে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি থেমে গিয়ে তা সাধারণ কোষের মতো আচরণ করতে শুরু করে।
এই পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষাগারে এবং প্রাণিদেহে সফলভাবে প্রমাণিত হয়েছে। নিয়ন্ত্রিত এসব কোষ ইঁদুরের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হলে দেখা গেছে, সৃষ্ট টিউমার আগের তুলনায় ছোট ও কম ক্ষতিকর হয়েছে। আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো, ঐ কোষগুলোতে সুস্থ অন্ত্র কোষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে।
এই প্রযুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো— এটি শুধু ক্যানসার নয়, মস্তিষ্কের কোষের বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ টি-সেল সম্পর্কেও কার্যকর জিন শনাক্তে সক্ষম হয়েছে।
যদিও গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, সব ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে এবং এর প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে— তা জানতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবুও, এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। ভবিষ্যতের ক্যানসার চিকিৎসা হয়তো কেমোথেরাপি ছাড়াও নতুন সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে।