কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

হতাশা থেকে মুক্তির মেডিসিন

post title will place here

[]

ভাবুন তো, আপনি ভুলে কাউকে হত্যা করে ফেলার মতো বড় কোনো বিপদে পড়ে যালেম শাসকের অত্যাচারের ভয়ে নিজের জন্মস্থান ঘরবাড়ি, প্রিয় বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ছেড়ে কোনো এক অচেনা স্থানে গিয়ে ঠাঁই নিলেন। এমনই এক পরিবেশে আপনার অবস্থান, যেখানে না আছে আপনার কোনো আত্মীয়, না আছে আপনার কোনো বন্ধুবান্ধব। কেউ নেই আপনার সেখানে। দুপুরে কোথায় খাবেন, কী খাবেন এগুলোর কিছুই আপনি জানেন না। এমনকি আজ খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করা ছাড়া আপনার আর দ্বিতীয় কোনো পথও খোলা দেখছেন না। আজ এতটাই অসহায় আপনি। বড় কঠিন এক সময় অতিবাহিত করার আভাস পাচ্ছেন।

এই যে একটি দৃশ্যপট ভাবার কথা আপনাকে বলা হলো, কল্পনার জগতে এই পরিস্থিতিতে নিজেকে দাঁড় করিয়ে একটু বোঝার চেষ্টা করুন তো বাস্তবে এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেলে আপনাকে কতটা করুণ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। তখন আপনি নিশ্চয়ই অনেক বড় অসহায় হয়ে পড়বেন, তাই না! আল্লাহ তাআলা সাধারণত মানুষকে তার ঘরবাড়ি, সকল আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, চাকরি, খাওয়ার ব্যবস্থা হারানোর মতো ভয়াবহ ব্যবস্থায় ফেলেন না। তবে কেউ যদি এরকম পরিস্থিতির স্বীকার হয়েই যায়, তবে তার আশাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বলাই বাহুল্য, মূসা আলাইহিস সালাম-এর ঘটনা তাকে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা যোগাবে, যোগাবে সাহস, যোগাবে মানসিক শক্তি।

অনেক চেষ্টা করার পরও আপনার হয়তো চাকরি হচ্ছে না, বয়স অনেক হয়ে গেছে কিন্তু এখনো বিয়ে হচ্ছে না, পরিবারের সবার অবস্থান আপনার প্রতিকূলে, কারো কাছ থেকে সামান্য সান্ত্বনাটুকু পাচ্ছেন না, নিজের অতি আপনজনও অচেনা আচরণ করছে, সবাই কাছে থেকেও যেন আপনার কাছে কেউ নেই, আপনি বড় একা অনুভব করছেন, ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে নানান কারণে হতাশায় আপনার চলার পথটুকু যেন অন্ধকার হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে বেঁচে থাকাটাই বৃথা। জীবনের এমন অসহায় পরিস্থিতিতে কুরআন আমাদেরকে মূসা আলাইহিস সালাম-এর জীবনের ঘটনা থেকে মোটিভেশন নেওয়ার শিক্ষা দেয়।

যুবক বয়সে একবার মূসা আলাইহিস সালাম একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার স্বীকার হয়ে ফেরাউনের হত্যার ভয়ে নিজের আপন বাড়ি ছেড়ে মাদইয়ান নামক এক স্থানে যাত্রা শুরু করলেন। পেছনে নিজের বাড়ি, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাইকে ফেলে অচেনা এক জায়গায় যাচ্ছেন। সেই যাত্রা পথে তিনি যেতে যেতে আল্লাহ তাআলাকে কী বলেছিলেন জানেন? তিনি বলেছিলেন, رَبِّي أَنْ يَهْدِيَنِي سَوَاءَ السَّبِيلِ ‘আমি আশা করি আমার মালিক আমাকে সঠিক পথই দেখাবেন’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/২২)

এই কথাটির মানে কী, জানেন? এর মানে হচ্ছে, তিনি আল্লাহ তাআলার ওপর সুধারণা রেখেছেন। সেই সুধারণা এরকম যে, আল্লাহ তাআলা তাকে সেদিকেই যাওয়ার তাওফীক্ব দিবেন, যেদিকে গেলে তিনি সঠিক পথ পাবেন, যেদিকে গেলে তার কোনো অকল্যাণ হবে না, যেদিকে গেলে তার জন্য সবকিছু সহজ হবে। এই আয়াত দিয়ে বোঝা যায়, তিনি আল্লাহর ওপর কতটা গভীর ভরসা রেখেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! আমরা কি বিপদ-আপদে পড়ে আল্লাহকে স্মরণ করছি? মূসা আলাইহিস সালাম-এর মতো আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পারছি? আল্লাহ আমাদের জীবনের সকল সমস্যাকে মুহূর্তেই সমাধান করে দিতে পারেন, আমাদের দৃষ্টিতে সকল অসম্ভবকে ‘সম্ভব’ করে দিতে পারেন সেই সুধারণা কি আমরা রাখছি? আল্লাহ বলেছেন, আমি সেরকমই, যেরকম আমার বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।[1]

মনে করুন, ইচ্ছা থাকার পরও বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখন বিয়ে করাটা আপনার কাছে এক প্রকার ‘অসম্ভব’ মনে হচ্ছে। কিন্তু আপনি সুধারণা করলেন যে, আমার রব চাইলেই আমার বিয়েকে সহজ করে দিতে পারেন, তবে আল্লাহ তা-ই করবেন। পক্ষান্তরে, আপনি যদি মনে করেন, এত কঠিন সমস্যার মধ্যে এটা আসলে কখনোই সম্ভব হবে না, তবে আল্লাহ তা-ই করবেন অর্থাৎ আপনার ধারণা অনুযায়ী আল্লাহ অসম্ভবকে ‘অসম্ভবই’ রেখে দিবেন। ঐ হাদীছ তেমনটাই বলছে। শুধু বিয়েই নয়। আয়-রোজগার থেকে শুরু করে বিদেশ যাত্রার মতো অন্য সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রতি সুধারণা থেকেই ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব।

যাহোক, মূসা আলাইহিস সালাম-এর ঐ কথায় প্রমাণ করে তিনি তার করুণ অবস্থায়, জীবনের কঠিন সময়ে আল্লাহর ওপর শতভাগ ভরসা করতে ভুলে যাননি, রবের ওপর তার ভরসার জায়গা একটুও নড়বড়ে ছিল না, ছিল না সুধারণারও কোনো ঘাটতি। আল্লাহ সাহায্য করবেনই করবেন- এমন দৃঢ় বিশ্বাস তিনি অন্তরে লালন করেছিলেন। আর রবের ওপর এমন ভরসার তাৎক্ষণিক ফলও তিনি হাতেনাতে পেয়েছিলেন, যা সম্পূর্ণরূপে কল্পনাতীত।

প্রসঙ্গক্রমে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য সংকট থেকে বের হয়ে আসার জন্য একটা পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিক্ব (হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা, উত্তম স্বামী-স্ত্রী, নেক সন্তান এগুলোও রিযিক্বের অন্তর্ভুক্ত) দান করেন যার উৎস সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য তিনিই যথেষ্ট’ (আত-তালাক, ৬৫/২-৩)। এই আয়াতের বাস্তব প্রতিফলন আমরা মূসা আলাইহিস সালাম-এর ঘটনার মধ্যে স্পষ্ট দেখতে পাই। আল্লাহ তাআলা উল্লিখিত আয়াতের বাস্তবতা মূসা আলাইহিস সালাম-এর ঘটনা বর্ণনার মাধ্যমে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আমরা যদি মূসা আলাইহিস সালাম-এর মতো আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে পারি, তবে আল্লাহ আমাদেরকেও সাহায্য করবেনই যে সাহায্যের কথা আমরা ভাবতেও পারবো না। সুবহানাল্লাহ!

আমাদের শুধু প্রয়োজন ভরসার জায়গায় নড়বড়ে না থাকা।

[২]

আল্লাহর ওপর মূসা আলাইহিস সালাম-এর ভরসামূলক ঐ কথা উল্লেখ করার পরপরই আল্লাহ তাআলা বলছেন, অবশেষে যখন সে মাদইয়ানের একটি পানির কূপের কাছে পৌঁছল, তখন দেখল তার পাশে অনেক মানুষ, তারা পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের অদূরে সে দুজন রমণীকে দেখতে পেল, যারা নিজ নিজ পশুদের আগলে রাখছে, সে তাদের জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কী হলো তোমরা যে পশুদের পানি খাওয়াচ্ছ না? তারা বলল, আমরা পশুদের পানি খাওয়াতে পারব না যতক্ষণ এ রাখালরা তাদের পশুদের সরিয়ে না নিয়ে যায় এবং আমাদের পিতা একজন বৃদ্ধ মানুষ তাই আমরাই পশুদের পানি খাওয়াতে নিয়ে এসেছি। একথা শোনার পর সে এদের পশুগুলোকে পানি খাইয়ে দিল, তারপর সরে একটি গাছের ছায়ার নিচে বসল এবং আল্লাহকে বলল, رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنْزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ ‘হে আমার রব! নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’ আল-ক্বাছাছ, ২৮/)

এই দু‘আটি যতটুকু না ছোট্ট দেখা যাচ্ছে তার চেয়েও বেশি ভারী একটি দু‘আ। কথাগুলো নিয়ে আপনি যতই চিন্তা করবেন ততোই মুগ্ধ হবেন। এই কথাগুলোর মানে হচ্ছে, আল্লাহ যা দিবেন তাতেই তিনি খুশি থাকবেন। এমনকি আল্লাহ যদি কিছু না-ও দেন তাতেও তার কোনো অভিযোগ থাকবে না। তিনি আল্লাহর দেওয়া না দেওয়া উভয় অবস্থায়ই খুশি। ‘আপনি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তারই মুখাপেক্ষী’ এটা বলে তিনি মূলত বলটা আল্লাহর কোটায় দিয়ে দিলেন। তিনি নির্দিষ্ট করে কোনো চাওয়া পাওয়ার কথা বলেননি। বরং আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য যা ভালো মনে করে দিবেন, সেটাই ভালো। আল্লাহর যেকোনো ফয়সালা মেনে নেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত।

এই দু‘আ পাঠ করার সাথে সাথেই আল্লাহ তাআলা তাকে এমন ব্যবস্থা করে দিলেন, যা রীতিমতো অকল্পনীয়। আল্লাহ তাআলার নেয়ামত আসতে একটুও দেরি হলো না। এর পরের ঘটনা নিয়ে আল্লাহ তাআলা বলছেন, মূসা দেখতে পেল, সে দুই রমণীর একজন লজ্জা জড়ানো অবস্থায় তার কাছে এলো এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে তার কাছে ডেকেছেন, আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি খাইয়ে দিয়েছিলেন তার জন্য তিনি আপনাকে পারিশ্রমিক দিতে চান; অতঃপর সে তার কথামতো তার পিতার কাছে এলো এবং নিজের কাহিনী তার কাছে বর্ণনা করলো, সব শুনে সে মূসাকে বলল, তুমি কোনো ভয় করো না। এখন তুমি যালেমদের কাছ থেকে বেঁচে গেছ।

প্রসঙ্গত, একজন বিপদগ্রস্তের সাথে কেমন আচরণ করতে হয় তার চমৎকার এক শিক্ষা আমরা এ ঘটনা থেকে পাই। মূসা আলাইহিস সালাম যখন ঐ রমণীদের পিতার কাছে তার পুরো ঘটনা খুলে বলছিলেন, তখন কিন্তু তিনি তার আলাইহিস সালাম কথা মন দিয়ে প্রথমে শুনছিলেন যে, কীভাবে কী হলো! আমরা কি বিপদগ্রস্তের কথা আগে মন দিয়ে শুনার চেষ্টা করি? তারপর অভয় দিয়ে তাকে সান্ত্বনার বাণী শুনালেন যাতে তিনি ঘাবড়ে না যান, ভয়ে আরও দুর্বল হয়ে না পড়েন। এমনকি তিনি অবশেষে নিজের বাড়িতে পর্যন্ত আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমরা হলে আশ্রয় দেওয়া তো দূরের কথা, অভয় দিয়ে কথা বলে সামান্য সান্ত্বনাটুকু কি দেই?

আমরা হলে বিপদগ্রস্তের বিপদের কথা ভালো করে না শুনেই মন্তব্য করে বসতাম, আরে! তুমি এত বড় কাণ্ড করে ফেলেছ। কেমনে এত বড় অপরাধ করতে পারলে? তুমি তো একজন আস্ত খুনি। একজন খুনির জায়গা আমার বাড়িতে হতে পারে না। জলদি এখান থেকে কেটে পড়ো। এভাবে বলে লোকটাকে মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দিতাম, দূরে ঠেলে দিতাম। এই আচরণ আপনার বিপদে আপনার সাথে করলে কেমন লাগবে ভাবুন তো। যে আচরণ নিজের বিপদে সহ্য করা যায় না, সে আচরণ অন্যের বিপদে আমি কীভাবে অনায়াসে করতে পারি? ঐ বৃদ্ধ লোকটির আচরণের কথাই চিন্তা করুন। কত মায়া লাগে বিপদগ্রস্তের সাথে তার অমায়িক আচরণের কুরআনিক বর্ণনা শুনে। আর আমরা এমন আচরণ থেকে কত দূরে, আফসোস!

বিপদের সময় মানুষের আচরণ হৃদয়ে প্রচণ্ড দাগ কেটে যায়। এ সময়ে কারো করা আচরণ কোনোদিন ভুলা যায় না, হোক সেটা ভালো কিংবা খারাপ আচরণ। এজন্য আমরা যেন কারো বিপদে বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে হলেও এমন কোনো আচরণ না করি, যে আচরণ তার কষ্টকে আরও বাড়িয়ে দেয়, যে আচরণ তার মন খারাপ করে দেয়, যে আচরণ সারাজীবন তার স্মৃতির পাতায় ভেসে বেড়ায়। যে বিপদে পড়ে, সে বুঝে সে কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। এসময় মানুষের একটুখানি সহানুভূতি পাওয়া, সান্ত্বনা বাণী শোনা অনেক দামি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, অনেক দামি।

তারপর সে দুজন রমণীর একজন তার পিতাকে এসে বলল, হে আমার পিতা! উনাকে বরং তুমি তোমার কাজে নিয়োগ করো, কেননা তোমার মজুর হিসেবে সে ব্যক্তিই উত্তম বলে প্রমাণিত হবে, যে হবে শারীরিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং চরিত্রের দিক থেকে বিশ্বস্ত। এরপর রমণীদের পিতা তাকে বলল, আমি আমার এ দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, তবে তা হবে এ কথার ওপর তুমি ৮ বছর আমার কাজ করবে, যদি তুমি আট বছরের পরিবর্তে ১০ বছর পুরো করতে চাও তবে তা হবে তোমার একান্ত ব্যাপার, আমি তোমার ওপর কোনো কষ্টকর শর্ত আরোপ করতে চাই না; আল্লাহ তাআলা চাইলে তুমি আমাকে সদাচারী ব্যক্তি হিসেবেই দেখতে পাবে। সে এতেই রাজি হলো এবং বলল ঠিক আছে, আমার এবং আপনার মাঝে এ চুক্তিই পাকা হয়ে থাকল (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৩-২৮)

[৩]

আমি বুঝতে পারছি, আপনি হয়তো জীবনের অনেক কঠিন সময় পার করছেন, যা হয়তো কাউকে বোঝানোও সম্ভব না। সান্ত্বনার বাণী শুনানো যত সহজ মনটাকে শান্ত করা ততই যেন কঠিন। মানুষের বিষমাখা কথার তিরের আঘাতে কিংবা জীবনে অনেক কিছু না পাওয়ার বা হারিয়ে ফেলার কষ্টে আপনি ভীষণ আহত ও হতাশাগ্রস্ত। ভাঙা মন নিয়ে চলতে বড় কষ্ট হচ্ছে আপনার ঠিক যেমন রক্তাক্ত শরীর নিয়ে চলতে কষ্ট হয়। মনে হচ্ছে শুধু শুধু অন্ধকারপূর্ণ এ জীবন রেখে কী লাভ! মরে যাওয়াই ভালো।

প্রিয় ভাই ও বোন আমার! জীবনে আমরা যত কষ্টেই থাকি না কেন এই যে মূসা আলাইহিস সালাম তার নিজের ঘরবাড়ি, বন্ধুবান্ধব তথা কাছের মানুষ, মাথা গুঁজানোর ব্যবস্থা হারিয়ে ফেলার মতো নিঃস্ব অবস্থায় পড়ে দুর্যোগপূর্ণ সময়ের মধ্যে গিয়েছিলেন আমরা কি তার আলাইহিস সালাম চেয়েও বেশি দুঃসময় পার করছি? নিশ্চয়ই না। অনেক কষ্টে থাকলেও অন্তত তার আলাইহিস সালাম কষ্টের মতো কষ্টে নয়। সেই তিনি যদি বড় কষ্টের মুহূর্তে রবের প্রতি আশা না হারান, হতাশ না হন তবে আমরা তার আলাইহিস সালাম চেয়ে তুলনামূলক কম কষ্টে থেকে কীভাবে রবের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলতে পারি? ডিপ্রেশনে চলে যেতে পারি? কীভাবে নিজেকে ধ্বংস করে দেওয়ার মতো বিধ্বংসী চিন্তা পর্যন্ত করে বসতে করি?

যে আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালাম-এর এতো সংকটপূর্ণ অবস্থায় শুধু তার প্রতি ভরসা ও সুধারণা করার কারণে মুহূর্তের মধ্যে নিরাপদ স্থানে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। শুধু তা-ই নয়। না চাইতেই পরহেজগার এক স্ত্রীর সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন, চাকরি তথা রিযিক্বের ব্যবস্থা করে দিলেন সেই একই আল্লাহ তাআলা কি আপনার আমার জীবনের সকল সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবেন না? অবশ্যই পারবেন। কেবল প্রয়োজন ভরসা, মূসা আলাইহিস সালাম-এর মতো শক্ত ভরসা।

কাজেই মূসা আলাইহিস সালাম-এর ন্যায় জীবনের কঠিন সময়ে হতাশ না হয়ে, ভেঙে না পড়ে, সুইসাইডের মতো পাগলামি চিন্তা না করে আল্লাহর ওপর শতভাগ ভরসা রেখে আল্লাহর কাছে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে নিজের চাওয়ার বিষয়গুলো চাইতে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে মূসা আলাইহিস সালাম-এর দু‘আ বেশি বেশি পাঠ করা যেতে পারে। এই দু‘আ হতাশা থেকে মুক্তির মেডিসিন হিসেবে কাজে দিবে। বিশ্বাস করুন, দেরি হলেও একদিন ঠিকই ফলাফল আপনার পক্ষেই আসবে। কেবল সময়ের অপেক্ষা। আর মনে রাখবেন, আপনার অতীতের দুর্দিনের দিনগুলো যেমন আজকের দিনে আর নেই ঠিক তেমনি আজকের দুর্দিনও একসময় থাকবে না। শীঘ্রই এগুলো কেটে যাবে। ইনশা-আল্লাহ! কেবল থেকে যাবে আজকের দিনের আপনার ভুল কোনো পদক্ষেপের আফসোস।

রাকিব আলী

 আম্বরখানা, সিলেট।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪০৫।

Magazine