হে যুবক! তুমি কি কখনো করেছ সময়ের হিসাব? যে সময় তুমি অতিবাহিত করেছ সৃষ্টিকর্তার বিধানকে উপেক্ষা করে। একদিন তুমি শিশু ছিলে, তারপর কৈশোর অতিক্রম করে তুমি যৌবনে পদার্পণ করেছ; এরপর তোমাকে বার্ধক্য গ্রাস করবে, অতঃপর তোমাকে এই মায়াভরা পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে। চলে যেতে হবে— না ফেরার দেশে। তোমার মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, সকল আত্মীয়স্বজন ছেড়ে, যাদের সঙ্গে তুমি এতদিন যাবৎ সময় পার করলে।
কিন্তু তুমি কি কখনো ভেবেছ সেই দিনের প্রতি? যেদিন তোমার দুনিয়াবী জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের হিসাব নেওয়া হবে। তুমি কি ভেবেছ— সেদিন তুমি কী হিসাব দেবে? তোমার যুববয়সের উত্তাল যৌবনে কত রঙ্গরসের মধ্য দিয়ে সময়কে অতিবাহিত করেছ— তার হিসাব কি রেখেছ?
তুমি কি কখনো ভেবেছ— তোমাকে তোমার প্রতিপালক কেন সৃষ্টি করেছেন? তোমাকে কোন পথে চলতে হবে? —এসব না ভেবে, তুমি খেয়ালখুশীমতো সময় অতিবাহিত করছ। অথচ তোমার সৃষ্টিকর্তা তোমাকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ﴿اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ مُعْرِضُونَ﴾ ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন; কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে’ (আল-আম্বিয়া, ২১/১)।
হে যুবক! তোমাকেই বলছি। তুমি এখন গান-বাজনা, সিনেমা-নাটক, খেলাধুলা ইত্যাদির প্রতি আসক্ত। তুমি সময় অতিবাহিত করছ— চায়ের দোকানে, পাড়ার মোড়ে আড্ডা মেরে, মোবাইলে অবৈধ প্রেমালাপ ও ভালোবাসার নামে পার্কে বয়ফ্রেন্ড বা গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে। কিন্তু তোমাকে তোমার সৃষ্টিকর্তা এজন্য তো সৃষ্টি করেননি। তুমি যে সময় নষ্ট করছ— তার হিসাব আমরা দিতে পারব না। তবে তোমাকে একটি ধারণা দিচ্ছি। তুমি নিজে নিজেই হিসাব কষে দেখো— কত সময় তুমি নষ্ট করেছ বা করছ।
হে যুবক! —জানি তো, তুমি টলিউড, বলিউড, হলিউড, দক্ষিণ ভারত প্রভৃতি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ভক্ত। এই সমস্ত ইন্ড্রাস্ট্রির সিনেমা দেখে তুমি আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুললেও কিন্তু কোনোদিনের জন্য তোমার অন্তরে পাপবোধ জাগ্রত হয় না। আর জাগ্রত হবেই-বা কীভাবে, তুমি তো সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথ থেকে বিমুখ হয়ে আছ।
হে যুবক, তোমাকেই বলছি! —ধরো তুমি প্রায় ১০-১২ বছর বয়স থেকে সিনেমা দেখতে শুরু করেছ এবং প্রতি মাসে গড়ে
কমপক্ষে ১০টি করে সিনেমা দেখ। তাহলে এক বছরে সংখ্যাটি ১২০-এ গিয়ে দাঁড়ায়। ধরো, প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই কাজ তোমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে; তাহলে পরিসংখ্যানটি গিয়ে দাঁড়ায় (২০×১২০)= ২৪০০টি। এটি একটি আনুমানিক পরিসংখ্যান মাত্র। হয়তো তোমার বা অন্যের আরো বেশি হওয়ারই কথা। আল্লাহু আ‘লাম।
ধরা যাক, একটি সিনেমার লেন্থ কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা; তাহলে সর্বমোট সময়টি দাঁড়ায়— (২৪০০×২.৫)= ৬০০০ ঘণ্টা। অর্থাৎ কুড়ি বছরে মোট ৬০০০ ঘণ্টা ব্যয় হয়েছে শুধু সিনেমা দেখার পেছনে।
যদি এটাকে দিনে রূপান্তরিত করি, তাহলে (৬০০০÷২৪)= ২৫০ দিন হয়; অর্থাৎ তোমার কুড়ি বছরের টানা ২৫০ দিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে শুধু সিনেমা দেখে পার হয়েছে।
এবার আসা যাক গান প্রসঙ্গে— তুমি সিনেমা দেখার পাশাপাশি গান শোনাতেও অভ্যস্ত। প্রতিদিন কত গান যে শোনো— তার হিসাব রাখনি। হিসাব করার চেষ্টাও করনি। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গান, সিনেমার গান, কত শিল্পির গান যে তুমি শোনো— তার ইয়াত্তা নেই।
সিনেমা দেখার মতো গান শোনাতেও তোমার প্রচুর সময় ব্যয় হয়। প্রতিদিন যে হারে গান শোনার কাজে তুমি সময় অপচয় করো তা হিসাব করা সত্যিই অসম্ভব। তবে আমি একটা আনুমানিক পরিসংখ্যান উল্লেখ করছি— তোমার আত্ম-চিন্তার খোরাক হিসেবে।
ধরো, প্রতিদিন গড়ে তুমি মিনিমাম ১৫টি করে গান শোনো; যার লেন্থ চার মিনিট করে। তাহলে দিনে (১৫×৪)= ৬০ মিনিট অর্থাৎ এক ঘণ্টা ব্যয় হয়। তাহলে এক বছরে ৩৬৫ ঘণ্টা। কুড়ি বছরে সংখ্যাটি হবে (৩৬৫×২০)= ৭৩০০ ঘণ্টা অর্থাৎ প্রায় (৭৩০০÷২৪)= ৩০৪ দিন।
এককথায়, সিনেমা ও গান শোনা মিলিয়ে তোমার কুড়ি বছরে একটানা প্রায় (২৫০+৩০৪)= ৫৫৪ দিন সময় কাটে বা কেটেছে।
হে যুবক! তুমি করেছ কি সময়ের হিসাব! জানি তো— তোমার খেলাধুলাতেও আকর্ষণ আছে। ক্রিকেট ও ফুটবলের পাগল তুমি। টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ পাঁচ দিন বসে বসে এখন আর না দেখলেও— স্কোরের আপডেট খবর ঠিকই রাখ। ওয়ান ডে, টি-টুয়েন্টি, আইপিএল, বিপিএল— কোনোটিও বাদ দাও না। একটি ওয়ানডে ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে প্রায় ছয়-সাত ঘণ্টা সময় যায়; টি-টুয়েন্টি ম্যাচে যায় প্রায় তিন ঘণ্টা। একটি ফুটবল খেলা চলে ৯০ মিনিট ধরে। এবার তুমি নিজে নিজে হিসাব কষো তো— আজ পর্যন্ত কত ক্রিকেট আর ফুটবল ম্যাচ দেখেছ।
হে যুবক! তুমি সকাল-বিকাল চায়ের দোকানে আড্ডা মারো। রাস্তার মোড়ে মোড়ে আড্ডা মারো। এই আড্ডায় কত পলিটিক্যাল ডিবেট আর কত মানুষের গীবত-পরনিন্দা ও পরচর্চা হয়, তা তো তুমি জানোই। তবুও কি তুমি কখনো উপলব্ধি করেছ, যে কত সময় তোমার নষ্ট হলো।
এছাড়াও তোমার আছে মোবাইল গেমসের প্রতি আসক্তি। ফ্রি-ফায়ার, পাবজি— আর কী নামের সব গেম। এতে তুমি কত সময় অতিবাহিত কর— বলো তো।
এখন তুমি ভাবছ, এসব কী বলছে। কী সময় নষ্ট, কী সময় অপচয়। আর কী সব হিসাব-নিকাশ করার কথা আমাকে বলছে। এখন এই যুবক বয়সে একটু মজা-মাস্তি, এন্টারটেইনমেন্ট না করলে আর কবে করব?
হ্যাঁ বন্ধু! তোমার চিন্তার খোরাক জোগানোর জন্যই হিসাবগুলো করতে বললাম। কারণ, যদি তোমার বিশ্বাস হতো, এই দুনিয়ায় তোমার শেষ জীবন। পরকাল বলে কিছু নেই। ‘খাও দাও ফুর্তি করো, দুনিয়াটা মস্ত বড়’ বা ‘জিনে কা হে চার দিন, বাকি হে বেকার দিন’ অথবা ‘No life, after death’, তাহলে এই সময়গুলো ব্যয় করা নিয়ে চিন্তা করার কোনো যুক্তি থাকত না।
কিন্তু তুমি তো মুসলিম। ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আর ‘ইসলাম’ প্রচলিত অর্থে শুধু কোনো ধর্ম নয়। ইসলাম আল-কুরআনুল কারীমের ভাষায় ‘দ্বীন’। যেমন উল্লেখ আছে, ﴿إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ﴾ ‘নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দ্বীন’ (আলে ইমরান,৩/১৯)।
যাঁরা আল্লাহ মনোনীত এই দ্বীনের অনুসারী, তাঁদেরকে বলা হয় মুসলিম। ‘মুসলিম’ শব্দটি পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। মুসলিম মানে, যে ব্যক্তি নিজের ইচ্ছাকে মহান আল্লাহর কাছে সমর্পণ করে অর্থাৎ আত্মসমর্পণকারী।
এখন কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ইচ্ছাকে মহান আল্লাহর নিকট সমর্পণ না করে, তাহলে তাঁর সম্মুখে পুরো পৃথিবী উন্মুক্ত। সে যা খুশী খেতে পারবে, সে যা খুশী পরিধান করতে পারবে, সে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলাফেরা করতে পারবে। এককথায়, সে তাঁর মনের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে। কেউ তাঁকে বাধা দেবে না, তাঁর পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা থাকবে। তাঁর উপর কোনো সীমাবদ্ধতা থাকবে না। থাকবে না কোনো রেস্ট্রিকশন, থাকবে না কোনো নিষেধাজ্ঞা।
কিন্তু অপরপক্ষে যে মুসলিম হবে, যে নিজের যাবতীয় ইচ্ছাকে মহান আল্লাহর নিকট সমর্পণ করবে, সে নিজ ইচ্ছায় পরিচালিত না হয়ে, পরিচালিত হবে স্রষ্টার ইচ্ছায়। তাঁর উপর রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সীমারেখা, যার গণ্ডি সে কিছুতেই অতিক্রম করতে পারবে না।
ইসলাম মানে ‘কমপ্লিট কোড অফ লাইফ’ অর্থাৎ —পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এখানে ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন, সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে দিকনির্দেশনা। রয়েছে বাউন্ডারি তথা সীমাবদ্ধতা।
তুমি তো নিজের ইচ্ছাকে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিকট সমর্পণ করেছ; যিনি এক প্রতাপশালী মর্যাদাবান একক সত্তা। যিনি তোমার-আমার, আমাদের পূর্বপুরুষদের, তথা সমস্ত আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা। তুমি তো তাঁর প্রতি বিশ্বাসী। তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। তাঁর এই বিশাল সৃষ্টির সাম্রাজ্যে তুমি এক নগণ্য দাস। তিনি তোমাকে এমনি এমনি পৃথিবীতে পাঠাননি। পাঠিয়েছেন— এক মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। তুমি যেন সর্বদা তাঁর ইবাদত কর। যেহেতু তুমি সৃষ্টিকর্তার দাস; আর দাসের কর্তব্য হচ্ছে মালিকের কথামতো চলা। মালিকের নিকট একান্ত অনুগত হয়ে থাকা। দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় তুমি তাঁর দাস। কোনো মাইক্রো সেকেন্ডের জন্যও তুমি সৃষ্টিকর্তার দাসের বাইরে নও।
এই পৃথিবী হচ্ছে তোমার-আমার জন্য পরীক্ষাগার। আর আমরা হচ্ছি পরীক্ষার্থী। যেমন উল্লেখ আছে পবিত্র কুরআনে,﴿الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ﴾ ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য— কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল’ (আল-মুলক, ৬৭/২)।
দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে এর ফলাফল দেওয়া হবে না। তার জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী পরকাল। সেই পরকালে মহান আল্লাহর আদালতে নিজের জীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দিতে হবে। সেই দিন মাযলূম পাবে ন্যায় বিচার। সেই দিন অত্যাচারী পাবে সাজা। সেই দিন কারো প্রতি কোনো প্রকার যুলম করা হবে না। সেই দিন মানুষের নিজের হাত-পা-চোখ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কী কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য প্রদান করবে। পবিত্র কুরআনে উল্লেখ আছে,﴿الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَى أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾ ‘আমি আজ এদের মুখে মোহর লাগিয়ে দিব। এদের হাত কথা বলবে আমার সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দিবে এদের কৃতকর্মের’ (ইয়াসীন, ৩৬/৬৫)।
সেই দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার ফয়সালা হবে চূড়ান্ত। অতঃপর সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক (মহান আল্লাহ) মানবজাতির ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করে রায় প্রদান করবেন। এই রায়ে একদল পাবে পুরস্কার তথা জান্নাত, যারা দুনিয়াতে সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত জীবনবিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করেছে। আর অপরদল পাবে শাস্তি তথা জাহান্নাম, যারা সৃষ্টিকর্তার বিধানকে হেয় তুচ্ছ করত অহংকার বসে অমান্য করেছে।
মুসলিমরা তো সেই দিনের প্রতি নিশ্চিত বিশ্বাসী। তাই দুনিয়াবি জীবনে মহান আল্লাহর ভৃত্য বা চাকর হওয়া সত্ত্বেও নিজ দায়িত্বে ফাঁকি মেরে সিনেমা, গান-বাজনা ও খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সময় অপচয় করার স্পর্ধা দেখিয়ে যে অপরাধ করেছ, তা থেকে রক্ষা পাবে তো?
প্রিয় নবীজি a-এর একটি হাদীছ শোনো— ইবনু মাসঊদ c হতে বর্ণিত, নবী করীম a বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আদম সন্তানকে স্ব স্ব স্থান থেকে এক কদমও নড়তে দেওয়া হবে না। যথা: (১) সে তার জীবনকাল কীভাবে অতিবাহিত করেছে? (২) যৌবনকাল কোথায় ব্যয় করেছে? (৩) ধনসম্পদ কীভাবে উপার্জন করেছে? (৪) কোন পথে তা ব্যয় করেছে? (৫) সে দ্বীনের কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে এবং অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী সে আমল করেছে কী না?’[1]
হাদীছের মর্মানুযায়ী আমরা অপরাধী। আমরা অপরাধী সময়ের অপচয়ের জন্য। আমরা অপরাধী অর্থের অপব্যবহারের জন্য। আমরা অপরাধী জ্ঞান অনুপাতে আমল না করার জন্য। কত সময় ও অর্থ অপচয় করেছি গান ও সিনেমার কাজে! উপেক্ষা করেছি প্রতিপালকের বাণী! কী হিসাব দেব— সেই দিন মহান প্রতিপালকের দরবারে?
আশা ও ভয়মিশ্রিত অন্তরে আমাদের জীবনবিধান ‘পবিত্র কুরআন’ পড়া উচিত। তাহলে জানতে পারব— আমাদের রব অত্যন্ত দয়ালু ও অত্যন্ত ক্ষমাপরায়ণ। তিনি নিজেই বলেছেন,﴿قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾ ‘বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আয-যুমার, ৩৯/৫৩)।
তবে, তিনি শর্ত প্রদান করেছেন পরের আয়াতে,﴿وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ﴾ ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো তোমাদের নিকট শাস্তি আসার পূর্বে, তৎপর তোমাদের সাহায্য করা হবে না’ (আয-যুমার, ৩৯/৫৪)।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের জন্য শেষ নবী হিসাবে মুহাম্মাদ a-কে নির্বাচন করেছেন। তাকে রোল মডেল হিসাবে গ্রহণ করার জন্য আমাদেরকে আদেশ করেছেন। যেমন উল্লেখ আছে,﴿لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا﴾ ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাঁদের জন্য রাসূলুল্লাহ-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (আল-আহযাব, ৩৩/২১)।
হে যুবক! তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি, তুমি সত্যের পথে এসো। তওবা করো। রঙিন পর্দার নায়ক-নায়িকাদের পরিত্যাগ করে, আমাদের সকলের রোল মডেল যাকে আল্লাহ নির্বাচন করেছেন, তাঁর আদর্শ গ্রহণ করো। দুনিয়ার কোনো সেলিব্রেটি ক্বিয়ামতের মাঠে তোমার-আমার সাহায্যে এগিয়ে আসবে না। শুধু এগিয়ে আসবেন শেষ নবী তথা মুহাম্মাদ a। তিনি আমাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শাফা‘আত প্রার্থনা করবেন। তাই তোমার-আমার সকলের রোল মডেল হোক— ‘রাসূলুল্লাহ a’। দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের তুলনায় প্রাধান্য পাক আখিরাতের চিরস্থায়ী জীবন।
তাহলে আশা করা যায় ক্ষমা পাব। কারণ, মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে,﴿قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ﴾ ‘আপনি বলে দিন, যদি তোমরা প্রকৃতই আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেবেন। আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আলে ইমরান, ৩/৩১)।
ছোটবেলায় তুমি নিশ্চয় কবিতার এই লাইনগুলো পড়েছিলে,
‘সময় চলিয়া যায়
নদীর স্রোতের ন্যায়
যে জন না বুঝে, তারে ধিক্ শত ধিক।
বলিছে সোনার ঘড়ি, ‘টিক্ টিক্ টিক্’।[2]
সময় চলে যাবে। দুনিয়া থেকে তুমিও একদিন হারিয়ে যাবে। যদি তুমি ইহজীবনে সময়কে ভালো কাজে না লাগাও, তবে পারলৌকিক জীবনে কস্মিনকালেও সফল হতে পারবে না। আর যদি পরকালে ব্যর্থ হও, তবে তোমার উচ্চ ডিগ্রি, তোমার চাকরি, তোমার স্ট্যাটাস— ‘ষোল আনাই মিছে’। এই সত্য উপলব্ধি করতে যদি তুমি ব্যর্থ হও, তবে— ‘ধিক তোমায় শত ধিক’।
পরিশেষে তোমার কাছে অনুরোধ, তুমি সময়কে মূল্যায়ন করো। কুরআন ও হাদীছের আলোকে যৌবন বয়সে ইবাদতে অভ্যস্ত হও। যদি তুমি তোমার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে পার করতে পার, তবে তোমার জন্য সুসংবাদ রয়েছে। কাল ক্বিয়ামতের মাঠে মহান আল্লাহ তোমাকে আরশের নিচে ছায়া প্রদান করবেন; যেদিন অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। শুধু সাত শ্রেণির মানুষ সেই বিশেষ ছায়া লাভ করবে; তার মধ্যে এক শ্রেণি হলো, ‘সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে তার প্রতিপালকের ইবাদতের মধ্যে’।[3]
আশা করি তুমি পারবে।
জাবির হোসেন
এম. এ. (বাংলা), কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, মুর্শিদাবাদ, ভারত।
[1]. তিরমিযী, হা/২৪১৬, হাসান; সিলসিলা ছহীহা, হা/৯৪৬।
[2]. কবিতা : ‘কাকাতুয়া’ —যোগীন্দ্রনাথ সরকার।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৬০।