১. হিজরত : আমার রবের সিদ্ধান্তই যখন চূড়ান্ত
দারুন নাদওয়ায় চূড়ান্ত প্রস্তাব পাস হলো, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হত্যা করার ব্যাপারে৷ সেই মোতাবেক রাতের আঁধারে জড়ো হলো একে একে এগারো জন হতভাগা, যার নেতৃত্বে ছিল আবূ জাহল৷ কিন্তু সেই রাতেই আল্লাহর আদেশে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রযিয়াল্লাহু আনহু-কে তাঁর বিছানায় রেখে বাইরে বেরিয়ে আসেন। মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের দৃষ্টি থেকে আড়াল করে দেন এবং তিনি সে রাতেই হিজরতের জন্য বেরিয়ে পড়েন৷ তারা আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামান্যতমও ক্ষতি করতে সমর্থ হলো না৷[1] মূলত এটাই ছিল মহান আল্লাহর সিদ্ধান্ত, যা তিনি নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন এভাবে, وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ ‘যখন তারা আপনার ব্যাপারে চক্রান্ত করল, যেন আপনাকে বন্দি করা হয় কিংবা হত্যা করা হয় কিংবা আপনাকে বের করে দেওয়া হয়৷ তারা কৌশল করে আর আল্লাহও কৌশল করেন, মূলত আল্লাহ সর্বোত্তম কৌশলকারী’ (আল-আনফাল, ৮/৩০)৷
তবে এখানেই তারা বসে থাকেনি, খুঁজতে খুঁজতে গারে ছাওর পর্যন্ত পৌঁছে গেল তাদের লোকবল, এমনকি আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু তাদের পা দেখতে পেলেন ৷ তাই তিনি আশঙ্কা করে বললেন, لَوْ أَنَّ بَعْضَهُمْ طَأْطَأَ بَصَرَهُ رَآنَا ‘(হে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) যদি তাদের কেউ নিচের দিকে তাঁকায়, তবে আমাদের দেখে ফেলবে’।[2] তখন আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, اسْكُتْ يَا أَبَا بَكْرٍ اثْنَانِ اللهُ ثَالِثُهُمَا ‘শান্ত হও, আবূ বকর! আমরা এমন দু’জন, যাদের তৃতীয় জন হলেন আল্লাহ’৷[3]
মহান আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলো এবং তিনি তাদেরকে সাহায্য করলেন ঠিক যেভাবে তিনি বলেছেন নিচের আয়াতটিতে إِلَّا تَنْصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ‘যদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর, তবে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিল। তিনি ছিলেন দু’জনের দ্বিতীয়জন। যখন তারা উভয়ে পাহাড়ের একটি গুহায় অবস্থান করছিলেন, তিনি তার সঙ্গীকে বললেন, তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার উপর তার পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাকে এমন এক সৈন্যবাহিনী দ্বারা সাহায্য করলেন, যাদেরকে তোমরা দেখোনি এবং তিনি কাফেরদের বাণী অতি নিচু করে দিলেন। আর আল্লাহর বাণীই সুউচ্চ। আর আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান’ (আত-তাওবা, ৯/৪০)। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন,يعني {كلمة الذين كفروا} الشرك و {كلمة الله} هي: لا إله إلا الله ‘অর্থাৎ এখানে কাফেরদের কথা বলতে শিরককে বুঝানো হয়েছে এবং আল্লাহর কথা বলতে لا اله الا الله কে বুঝানো হয়েছে’৷[4] তথা মহান আল্লাহ এর মাধ্যমে তাওহীদকে উঁচু করলেন এবং শিরককে নিচু করে দিলেন।
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি৷ মক্কার মুশরিকরা পুরস্কার ঘোষণা করল আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবূ বকর রযিয়াল্লাহু আনহু-কে জীবন্ত অথবা মৃত ধরে আনার জন্য। সেই মোতাবেক সুরাক্বা ইবনু মালেক ধাওয়া করলেন আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে৷ কিন্তু কাছাকাছি পৌঁছানোর পর তিনি অগ্রসর হতে চাইলে ঘোড়ার পা পিছলে গেল, ফলে তিনি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গেলেন৷ আবার অগ্রসর হতে চাইলে তার ঘোড়ার পা অকস্মাৎ মাটিতে দেবে গেল এবং আবারও তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন৷ কষ্ট করে ঘোড়াকে উঠাতে গেলে ঘোড়ার পদচিহ্ন থেকে আসমানের দিকে ধোঁয়ার মতো ধূলিঝড়ের সৃষ্টি হলো৷[5] সুরাক্বার কার্যসিদ্ধি হলো না৷ বরং আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হলো যেভাবে তিনি বলেছেন, وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ كَفَرُوا السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ‘আল্লাহ কাফেরদের কালেমাকে (শিরককে) হেয় করলেন, আল্লাহর কালেমা (তাওহীদ) সমুন্নত করলেন’ (আত-তওবা, ৯/৪০)। মূলত তাঁর সিদ্ধান্ত তো চূড়ান্ত হওয়ারই ছিল৷ তিনিই যে আমাদের একমাত্র রব। আমাদের ইবাদত ও অনুনয়-বিনয়ের একমাত্র হক্বদার, আমাদের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা৷ তাঁর কোনো শরীক নেই৷ আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ ‘তার চাইতে অধিক গোমরাহ আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডাকে, যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দেবে না এবং তারা তো তাদের ডাক সম্পর্কেও বেখবর’ (আল-আহক্বাফ, ৪৬/৫)।
সুতরাং নিজেকে প্রশ্ন করি, কার কাছে আমরা নিজেকে পেশ করছি? আমার রবের ক্ষমতা, গুণ কিংবা ইবাদতে কারও সামান্যতম কোনো অংশীদারত্ব আছে কি, না-কি নিজ থেকেই আমরা তা সাব্যস্ত করেছি?
নিচের আয়াতগুলোকেও উপলব্ধির খাতায় সেভাবে রাখুন যেভাবে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাহাবায়ে কেরাম রেখেছেন, قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ - اللهُ الصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‘বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়৷ আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন (বরং সকল কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী)৷ তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারও দ্বারা জন্ম নেননি এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই’ (আল-ইখলাছ, ১১২/১-৪)।
আর আপনাদেরকেও বলে রাখছি, যারা দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে রাতদিন এক করে ফেলছেন আপনাদের কার্যক্রম এক নিষ্ফল আবেদন মাত্র, নিতান্তই পণ্ডশ্রম৷ আপনাদের এই কার্যক্রম কখনই সফলতার ছায়াটুকু মাড়াতে পারবে না৷ মহান আল্লাহ বলেন, يُرِيدُونَ لِيُطْفِئُوا نُورَ اللهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَاللهُ مُتِمُّ نُورِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ ‘তারা মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতিকে নিভিয়ে দিতে চায় আর আল্লাহ তার জ্যোতিকে পরিপূর্ণতা দান করবেন- যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে’ (আছ-ছফ, ৬১/৮)।
২. হিজরত : সংকল্পের মাপকাঠিতে
ইবনুল ক্বাইয়িম রহিমাহুল্লাহ সংকল্পের দিক দিয়ে হিজরত নিয়ে আলোচনা করেছেন৷ তিনি বলেন,وَلِلَّهِ عَلَى كُلِّ قَلْبٍ ِجْرَتَانِ. وَهُمَا فَرْضٌ لَازِمٌ لَهُ عَلَى الْأَنْفَاسِ ‘আল্লাহর দিকে প্রতিটি হৃদয়ের দুই ধরনের হিজরত রয়েছে, যা ফরযে আইন প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে’৷[6] প্রথমটি হলো,هِجْرَةٌ إِلَى اللَّهِ سُبْحَانَهُ بِالتَّوْحِيدِ وَالْإِخْلَاصِ، وَالْإِنَابَةِ وَالْحُبِّ، وَالْخَوْفِ وَالرَّجَاءِ وَالْعُبُودِيَّةِ ‘মহান আল্লাহর দিকে হিজরত করা তাওহীদ ও ইখলাছের ভিত্তিতে এবং তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ করা, ভালোবাসা, ভয় ও আশা রাখা, তাঁর ইবাদতের হক্ব আদায়ের মাধ্যমে৷ দ্বিতীয়টি হলো, وَهِجْرَةٌ إِلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بِالتَّحْكِيمِ لَهُ وَالتَّسْلِيمِ وَالتَّفْوِيضِ، وَالِانْقِيَادِ لِحُكْمِهِ، وَتَلَقِّي أَحْكَامِ الظَّاهِرِ وَالْبَاطِنِ مِنْ مِشْكَاتِهِ ‘রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে হিজরত করা, তাঁর সিদ্ধান্ত ও বিচার-ফয়ছালার প্রতি আত্মসমর্পণ, নিজেকে ন্যস্ত করার মাধ্যমে এবং সেই সাথে তার আদেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের মাধমে, তার দেওয়া প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য বিধানকে স্বতঃস্ফূর্ত এবং সংশয়মুক্তভাবে মেনে নেওয়ার মাধ্যমে’।[7]
মূলত এটা তার কোনো নিজস্ব বক্তব্য নয়৷ বরং আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেড় হাজার বছর আগে থেকেই এমন নির্দেশনা আমাদের দিয়ে গেছেন ৷ তিনি বলেন, الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ وَلِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ ‘প্রতিটি কাজই নিয়্যতের (অন্তরের দৃঢ় সংকল্প) উপর নির্ভরশীল৷ প্রত্যেকে তাই পাবে, যার নিয়্যত সে করবে৷ অতএব, যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকেই গণ্য হবে’৷[8] তিনি আরও বলেন, وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ ‘আর যার হিজরত হবে দুনিয়া অর্জন কিংবা কোনো নারীকে বিয়ে করার আশায় তার হিজরত সেদিকেই গণ্য হবে, যেদিকে সে হিজরত করেছে’।[9]
সুতরাং আপনি যত বড়ই আত্মত্যাগী, হিজরতকারী কিংবা দরবেশ হন না কেন, আপনার আমল ও বিশাল কর্মযজ্ঞের সামন্যতম কোনো মূল্য থাকবে না- যদি না তার মোটিভকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে ফেরানো হয়৷ আবূ মূসা আশআরী রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, سُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الرَّجُلِ يُقَاتِلُ شَجَاعَةً وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً وَيُقَاتِلُ رِيَاءً أَىُّ ذَلِكَ فِى سَبِيلِ اللَّهِ ‘আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো সেই সমস্ত লোক সম্পর্কে যারা বীরত্ব প্রদর্শন, অন্ধ পক্ষপাতিত্ব কিংবা লোক দেখানোর জন্য জিহাদ করে, যে এদের মধ্যে আল্লাহর পথে জিহাদ করছে? তিনি বললেন, مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِىَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِى سَبِيلِ اللهِ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, কেবল তার জিহাদই আল্লাহর রাস্তায় হয়ে থাকে’।[10]
তবে এই হিজরতকে কীভাবে নিজের মধ্যে ধারণ করবেন, কীভাবে তা আয়ত্ত করবেন তারও সুনির্দিষ্ট একটি মডেল পবিত্র কুরআন আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে৷ আর সেটা হলো ছাহাবায়ে কেরামের বুঝ। মহান আল্লাহ বলেন,﴿وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا ‘আর কারো নিকট হেদায়াত স্পষ্ট হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের (ছাহাবীগণ) পথ ছাড়া অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায়, সেদিকেই তাকে আমি ফিরিয়ে দেব এবং তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করাব, আর তা কতই না মন্দ আবাস! (আন-নিসা, ৪/১১৪)।
সুতরাং হিজরতের নামে চলমান সন্ত্রাস, বোমাবাজি, জঙ্গিবাদ কিংবা কথিত দ্বীন ক্বায়েমের নামে রাস্তায় হরতাল, মিছিল, গাড়ি ভাঙচুর করা ইত্যাদি কখনই হিজরতের অন্তর্ভুক্ত নয়৷ বরং তা সীমালঙ্ঘন, কবীরা গুনাহ এবং ইবাদতের ছদ্মবেশে নিকৃষ্ট বিদআত৷ কেননা কুরআন ও সুন্নাহর নামে চালানো আপনার এই বুঝের সাথে ছাহাবায়ে কেরামের সামান্যতম কোনো সম্পর্ক নেই৷ সুতরাং আপনার কাজটি পরিত্যাজ্য ও বাতিল৷ কেননা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ ‘আর যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কোনো বিষয় উদ্ভাবন করে, যা তার মধ্যে নেই তা বাতিল’।[11] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ ‘যে এমন কোনো কাজ করে, যে বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা নেই তা বাতিল’।[12]
ইবনুল ক্বাইয়িম রহিমাহুল্লাহ–এর আরও একটি উক্তি দিয়ে শেষ করব। তিনি বলেন, فَمَا لَمْ يَكُنْ لِقَلْبِهِ هَاتَانِ الْهِجْرَتَانِ فَلْيَحْثُ عَلَى رَأْسِهِ الرَّمَادَ. وَلْيُرَاجِعِ الْإِيمَانَ مِنْ أَصْلِهِ ‘যে তার অন্তর দিয়ে এ দু’টি হিজরতকে ধারণ করেনি, সে যেন তার মাথাকে ছাই ভস্মে পরিণত করল এবং সে যেন তার ঈমানকে তার মৌলিকত্ব থেকে ফিরিয়ে নিল’।[13]
মেরাজুল ইসলাম প্রিয়
ধলপুর লিচু বাগান জামে মসজিদ গেইট, বউ বাজার, সায়েদাবাদ, ঢাকা।
[1]. আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ২০৭-২০৮।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৯২২।
[3]. প্রাগুক্ত।
[4]. ইবনে কাছীর, ৪/১৫৫।
[5]. আর-রাহীকুল মাখতূম, পৃ. ২১৪-২১৫।
[6]. মাদারিজুস সালেকীন, ২/৪৩৩।
[7]. মাদারিজুস সালেকীন, ২/৪৩৩-৪৩৪।
[8]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৪।
[9]. ছহীহ বুখারী, হা/১, ৫৪; রিয়াযুছ ছালেহীন, হা/১।
[10]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৪।
[11]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।
[12]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮।
[13]. মাদারিজুস সালেকীন, ২/৪৩৪।