কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

আধুনিকতার ছোঁয়ায় আমাদের জীবন

post title will place here

বর্তমান যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ গর্ববোধ করব কিনা এই নিয়ে মাঝেমধ্যে চিন্তায় পড়ে যাই। আধুনিকতার ছোঁয়া আমাদের জীবনে খুবই বড় আকারে তার শাখাপ্রশাখা বিস্তার করেছে। আমাদের চিন্তাধারা আজ তার চার দেয়ালে বন্দি। জীবনের মূল গন্তব্যস্থল আমরা এখনো ঠিক করতে পারিনি। উদ্দেশ্যহীন তরির ন্যায় কোনো কূল-কিনারায় নৌকা ভিড়াতে এখনো আমরা ব্যর্থ। আমরা কি কখনো এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠে সফলতার সোপানে আহরণ করার স্বপ্ন বুনি?

যদি এমন কোনো স্বপ্ন আঁকতাম, যে অঙ্কনের প্রতিটি চিহ্ন আমাদের জীবনের একেকটা ধাপ হয়ে সামনে এগোবে! যে ভাবনা আমাদের হৃদয় মলাটে জমে থাকা ময়লার স্তূপ ধুয়ে ঝকঝকে আলোয় উদ্ভাসিত হওয়া দিনের মতো করে তুলবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পদাঙ্ক অনুসরণে আগ্রহী করে তুলবে আর শরণাপন্ন হওয়া যাবে দয়াময় আল্লাহর কাছে। এমন হলে কতই না ভালো হতো!

এই যুগে অহেতুক ও অনর্থক কাজ করে না এমন লোকের দেখা পাওয়া একটা ভাগ্যের ব্যাপার। ছোট থেকে শুরু করে কিশোর, যুবক, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ব্যক্তিও দুনিয়ামুখিতা ও অশ্লীলতার মাঝে অবগাহন করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

সাকিবের এক প্রতিবেশী ছিল। তার সাথে পাঠক বন্ধুদেরকেও পরিচয় করিয়ে দেই। তাহলে চলুন, তার জীবনচরিত সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক।

সেই ছোট্ট থেকেই তার লেবাসের অবস্থা বেহাল। মাথার চুল ছিল সমাজে বেমানান। মডার্ন লাইফস্টাইল ছিল তার পছন্দের। তার প্যান্ট যেন মাটি ছুঁয়ে যাবে এমন অবস্থা। অনেকবার টাখনুর নিচে পরিধেয় বস্ত্র পরতে তাকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এই তো সেদিনই ইমাম সাহেব মসজিদে এই বিষয়ে খুব চমৎকারভাবে আলোচনা করলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু উমার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلَاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‘যে ব্যক্তি অহংকারবশত তার পোশাক টেনে চলে (টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরার কারণে), ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না’।[1] এরপর টাখনুর নিচে পোশাক পরিধানকারীর ভয়াবহতা বলতে গিয়ে তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَا أَسْفَلَ مِنَ الْكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ ‘টাখনুদ্বয়ের নিচে যা পরিধান করা হয়, তা জাহান্নামে যাবে’।[2]

তবু এই কথা তার মনে যেন একবিন্দু পরিমাণও আঁচড় কাটেনি। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোশাকের বিবরণ সুস্পষ্টভাবে দিয়েছেন, কোনো কিছুই বাদ রাখেননি। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন পোশাক পরিধান করতেন, তাঁর পোশাক কেমন ঢিলেঢালা ছিল, কোন রঙের পোশাক ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যুদ্ধের ময়দানে কেমন পোশাক পরতেন- এগুলো সবই তো বলা হয়েছে। তবুও তার অন্তর মরুভূমির ন্যায় শুকনো হয়ে আছে। সেই কবে থেকে যে আর্দ্রতার মিলন হয়নি তার হৃদয়ে তা জানি না। এটা ছিল সাকিবের প্রতিবেশীর জীবনের প্রথম চালচিত্র।

দ্বিতীয় পাঠ শুরু করা যায় এবার। বর্তমান যুগে গান-বাজনা, নাচানাচি, নাইট পার্টিতে যাওয়া লোকের অভাব নেই। সাকিবের প্রতিবেশীও ছিল ঠিক ওই রকম। গান-বাজনা ছিল তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘুমানোর পূর্বে গান শোনা ছিল তার প্রশান্তির খোরাক। নিশাচর হয়ে কত রাত যে পার করেছে তার কোনো হদিস নেই। কত নিশি পার করেছে মাতলামি করে। নাইট ক্লাবে সাদা পানির বদলে ভিন্ন ধরনের পানীয় ছিল তার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। বাড়ি ফিরতে প্রায়ই রাতের অর্ধেক অংশ কেটে যেত। এই নিরন্তর চলাচল ছিল তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।

একদিন সন্ধ্যার অন্ধকার ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীতে। মাঠের পাশে আব্দুর রহীম চাচা ছোট্ট টিনের ছাউনির তলে তেলেভাজা বহুপদী খাদ্য তৈরিতে ব্যস্ত। সে কিছু আইটেম অর্ডার করে বসে গেল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। কথার ফাঁকে কেউ একজন বলে উঠল, আজকে পূর্বপাড়ায় জালসা হচ্ছে। চলো যাওয়া যাক সবাই মিলে। যেই বলা সেই কাজ। সকলেই সম্মত হয়ে চটজলদি চলতে লাগল পূর্বপাড়ার জালসার উদ্দেশ্যে।

তারপর বাদামসহ আরও কয়েক রকমের খাবার কেনা হলো। এরপর প্যান্ডেলের পিছন দিকের এক কোনায় তারা সবাই মিলে বসে পড়ল। বিরতিহীনভাবে চলছে তাদের খাওয়াদাওয়া। এদিকে কেউ কেউ আবার মনোযোগ দিয়ে বক্তার মুখপানে চেয়ে অধীর আগ্রহে তার কথাগুলো শুনছে। মনে হচ্ছে যেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই কথাগুলো বলা হচ্ছে।

এদিকে সাকিবের প্রতিবেশী রাকিব বেশ কিছুক্ষণ থেকেই কুরআন-হাদীছের আলোচনা শোনায় মনোনিবেশ করেছে। কেন জানি আজ সে খুবই আগ্রহ সহকারে বক্তব্য শুনছে। আমরা কীভাবে ফেতনার জালে আটকে গেছি, সে বিষয়ে বক্তব্য হচ্ছে। যুবকরা আজ গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে মনে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। কুরআন পড়া হতে আজ তারা বহুদূরে। তাদের প্রিয় পাঠ্য বইয়ের তালিকায় কুরআন একদম নিচে, তাও আছে কি-না সন্দেহ। এভাবেই চলছে বক্তব্য...।

বক্তা সাহেব বাদ্যযন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে বেশ কিছু হাদীছ উল্লেখ করেছেন। যেমন:

عَنْ أَبِيْ مَالِكِ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ.

আবূ মালেক আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই আমার পরে এমন কিছু লোক আসবে যারা যেনা, রেশম, নেশাদার দ্রব্য, গান-বাজনা ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে’।[3]

এসব বাদ্যযন্ত্রকে হারাম করা রয়েছে। একদা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পথ ধরে হেঁটে চলছেন, পথিমধ্যে কোনো এক দিক থেকে ভেসে আসছিল বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ। এতে তিনি তাঁর কানে আঙুল ঢুকিয়ে দেন। যাতে করে গানের আওয়াজ তাঁর কানে না আসে।

আর আজ আমরা তাঁর বাতলে দেওয়া পথ হতে কত দূরে সরে গেছি! তিনি গানের আওয়াজ যাতে না শুনতে পান এজন্য কানে আঙুল ঢুকিয়েছিলেন আর আমরা গান শোনার জন্য কানে এয়ারফোন ঢুকিয়ে দেই!

এবার আসা যাক নেশার ভয়াবহতার কথায়। এসব কথায় রাকিবের মনের ভেতরটা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। সাথে সাথে তার জানার আগ্রহের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সজাগ হয়ে সে নড়েচড়ে বসল। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ শুধুই বক্তার প্রতি। বক্তা সাহেব বলছেন,

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيَبِيتَنَّ قَوْمٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى طَعَامٍ وَشَرَابٍ وَلَهْوٍ , وَيُصْبِحُوا قَدْ مُسِخُوا قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ.

ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘অবশ্যই আমার উম্মতের কিছু লোক বিভিন্ন ধরনের খাদ্য-পানীয় ও অসার-অনর্থক ও আমোদ-প্রমোদে রত অবস্থায় রাত্রি যাপন করবে। অতঃপর তাদের সকাল হবে শূকর ও বানরের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়ে’।[4]

এই হাদীছটি যেন রাকিবের কাজের সাথে শতভাগ মিল আছে। রাকিবের তা আর বুঝতে দেরি হয়নি। তারপর আলোচনার এক পর্যায়ে বক্তা সাহেব আরও কিছু হাদীছ উল্লেখ করেন,

عَنْ عُثْمَانَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإنَّهاَ أُمُّ الْخَبَائِثِ فَمَنْ لَمْ يَجْتَنِبْهَا فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَاسْتَحَقَّ الْعَذَابَ بِمَعْصِيَةِ اللهِ وَرَسُوْلِهِ قال الله تعالى وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِيْنٌ.

উছমান রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকো। কেননা নেশাদার দ্রব্য হচ্ছে অশ্লীল কর্মের মূল। যে ব্যক্তি নেশাদার দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকে না, সে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করার কারণে সে শাস্তির উপযু্ক্ত হয়ে যায়’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমালঙ্ঘন করে, তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন, সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’।[5]

সেই জাহান্নামের ভয়াবহতা ও তার আগুনের তীব্র উত্তাপের কথা রাকিব আগে থেকেই কিছুটা জানত। সেগুলোই ছিল তার অন্তরে ভীতি সঞ্চারের মূল কারণ।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ لَمْ يَرْضَ اللهُ عَنْهُ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً.

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মদ পান করবে, আল্লাহ তার উপর ৪০ দিন সন্তুষ্ট হবেন না’।[6]

এভাবেই রাতের মধ্যভাগে জালসার সমাপ্তি ঘটল। মানুষেরা দলে দলে বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। স্বেচ্ছাসেবকরাও তাদের কাজ করে যাচ্ছে। প্যান্ডেলের এরিয়ায় কোনো লোক চোখে পড়ছে না। তবে রাকিব এখনও একই জায়গায় আগের মতোই বসে আছে।

রাকিব বিষণ্ন মনে কিছুক্ষণ পর বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে। একা রাস্তায় যাচ্ছে আর ভাবছে, জীবনটা কতই না নির্বুদ্ধিতায় বশীভূত হয়ে কাটিয়েছে! অশ্লীলতার কাজে জড়িয়ে ভুলে বসেছে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে! আমার এ পাপরাশি কি মোচন হবে কখনো? আমি কি ক্ষমা পাবার যোগ্য? এমন আরও সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে পৌঁছল বাড়িতে। তার ব্যাকুল মন ঘুমাতে চায় না। তবুও চোখের পাতা টিপটিপ করতে করতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছে।

ঠিক সেদিনই ফজরের ছালাত মিস হয়নি রাকিবের। তবুও তার মাথায় তার অপকর্মের কথাগুলো বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। চিন্তা আর অস্থিরতায় সময় পার করছে সে। সরু ললাটে এখন তার চিন্তার ভাঁজ দেখা যায়।

উঠানের গাছতলায় রাকিবকে বিষণ্ন অবস্থায় বসে থাকতে দেখে সাকিব তাকে জিজ্ঞেবস করল, কী হয়েছে রাকিব ভাই? এমন বিষণ্ন দেখাচ্ছে কেন আপনাকে?

রাকিব তার সমস্ত কথা সাকিবকে বলে। সাকিব তাকে আশ্বস্ত করে। বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি ১০০ মানুষকে হত্যা করেছিল, তারপরও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন, এই ঘটনাটা শুনায়। আরও বলে, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি সীমাহীন দয়াশীল। তিনি তাঁর অফুরন্ত রহমত হতে কাউকে নিরাশ করেন না। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। এভাবে সাকিব তাকে বেশ কিছু কথা বলতে থাকে। তাকে ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করে। রাকিব এখন প্রতিদিন ছালাত আদায় করে। অশ্লীলতার ধারেকাছেও সে আর যায় না। তার মনে বিষণ্নতা আর নামে না।

সম্মানিত পাঠক! আমরাও অনেক সময় সঠিক কোনো গাইডলাইন না থাকায় বিষণ্নতায় ভুগি। তাহলে চলুন, আপনাদের বিষণ্নতার অবসান ঘটানো যাক।

জীবনের ভার আর সইতে পারছেন না? দিনমণির লালিমা বিদায় নিতেই রাতের তমসার মতো ছেয়ে যাচ্ছে আপনার জীবন? জীবনের কূল হারিয়ে ফেলেছেন স্রোতের মাঝে? ক্লান্তি, হতাশা, দুঃখ-কষ্ট এসে বাসা বেঁধেছে আপনার মনের ছাউনিতে? কোনো উপায় না পেয়ে জড়োসড়ো হয়ে আশার হাত গুটিয়ে নিয়েছেন? কী ভাবছেন? আপনার পাহাড়সম পাপ মিটানোর মতো কেউ নেই? কেউ নেই কি এমন, যিনি আপনার সব দুঃখ-কষ্ট মুছে মণিমুক্তার মতো উজ্জ্বল করে দিবে আপনার জীবন?

জীবনের তরিতে আর বইতে হবে না পাপের বোঝা। চিন্তার কোনো কারণ নেই। অবশ্যই! এমন একজন আছেন, যিনি আপনার সব দুঃখ-কষ্টের কথা জানেন। আপনার মনের মধ্যে যে কালবৈশাখীর ঝড় বইছে, তিনি জানেন সেটার কথাও। আপনার হৃদয়মলাটে যে বিন্দু পরিমাণ পঙ্কিলতা রয়েছে, তারও খবর তাঁর কাছে আছে। বেলা ফুরাবার আগে এসে হাযির হন তাওবাকারীদের একজন হয়ে। অন্যজন যখন ঘুমে ব্যস্ত, তখন উঠে পড়ুন, দুই রাকআত ছালাত আর চোখের অশ্রুতে সিক্ত হোক আপনার জায়নামায। লম্বা আবদারের দরখাস্ত উঠে আসুক একান্ত মুনাজাতে। ছোট থেকে ছোট সবকিছু চাওয়া হোক তাঁর কাছে। সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। সর্বক্ষেত্রে বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন, حَسْبِيَ اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ ‘আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম কর্মবিধায়ক’। আপনার সব দুঃখ-কষ্টের অবসান হয়ে আপনার জীবন হয়ে উঠবে ইলাহী আলোয় উদ্ভাসিত একটি আলোকিত জীবন। জীবনে আসবে মহান রবের অদৃশ্য সান্নিধ্য। আল্লাহ আমাদের জীবনকে তাঁর রঙে রঙিন করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

আব্দুল হাসিব বিন আব্দুর রহমান

অধ্যয়নরত, আলিম ২য় বর্ষ, আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, পবা, রাজশাহী।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৪।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৯৩।

[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৫৯০।

[4]. সিলসিলা ছাহীহা, হা/১৬০৪, ২৬৯৯।

[5]. নাসাঈ, হা/৫৬৬৬।

[6]. আহমাদ, হা/২৭৬৪৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/৩৪১০।

Magazine