[১]
প্রিয় ভাই ও বোন আমার! আপনি আত্মহত্যা কেন করতে চাইছেন? কষ্ট থেকে মুক্তির জন্যই তো? যে শান্তির জন্য আত্মহত্যা করতে চাইছেন, সে শান্তির মালিক কি আপনার এমন কাজে সন্তুষ্ট আছেন? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো! আপনি যে জিনিস অপছন্দ করেন, সে জিনিস করে যদি কেউ আপনার কাছে কিছু চাইতে আসে, তবে কি আপনি তার সে চাওয়া পূরণ করবেন? করবেন না, উল্টো আরো রাগান্বিত হবেন। কারণ আপনি যে কাজকে ঘৃণা করেন, সে কাজ সে জেনেশুনে করে আপনার কাছে চাইতে এসেছে। ঠিক একইভাবে, আত্মহত্যা করা আল্লাহর নিকট চরম অপছন্দীয় কাজ। আর এটা জেনেশুনে করে আল্লাহর কাছে শান্তি চাওয়া কিংবা শান্তির আশা করা কতোটা সঙ্গত সেটা বুঝতে কি মাথা খাটানোর প্রয়োজন আছে?!
আত্মহত্যার মাধ্যমে আপনার কী করা হচ্ছে জানেন? আপনি আত্মহত্যার মাধ্যমে স্থায়ী জীবনে প্রবেশ করছেন, যে জীবন থেকে আর কোনোদিন ফিরে আসা যায় না। ভাই ও বোন আমার! সেই অনন্তকালের জীবনের জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, আত্মহত্যার আগে সেই প্রস্তুতি নিয়ে একটিবার ভাবুন। আত্মহত্যা করে ফেললে তো আর আপনার সে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। আর আত্মহত্যা করলেই আপনার সকল দুঃখ-কষ্ট লাঘব হয়ে যাবে— এটা অন্তত কোনো বিশ্বাসীর বিশ্বাস হতে পারে না।
আত্মহত্যা করা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। কেন, জানেন? কারণ যখন মনে করা হয় যে, এই দুনিয়াতে আমার কেউ সাহায্য করার নেই, কেউ শান্তি দেওয়ার নেই, কেউ দুঃখ-কষ্ট দূর করার নেই, মূলত তখনই আত্মহত্যা করা হয়। আর এগুলো মনে করা মানে আল্লাহর উপর বিশ্বাস তথা ঈমান রাখতে না পারার বহিঃপ্রকাশ। আর ঈমান না থাকা অনেক ভয়ংকর একটি বিষয়। এবার আপনি চিন্তা করুন, যে ঈমানের কারণে আপনি নিজেকে ‘মুসলিম’ দাবি করতে পারছেন, যে ঈমান একজন মুমিনের আসল সম্পদ, যে ঈমান থাকা না থাকার ওপর জাহান্নামের ফয়সালা হবে; আত্মহত্যা করে কি আপনি সেই ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারছেন? প্রিয় ভাই ও বোন আমার! আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঈমান হারানোর বিষয় যেন আপনাকে গভীরভাবে ভাবায়।
আপনি হয়ত পারিবারিক, আর্থিক ইত্যাদি নানা কারণে অশান্তিতে আছেন, চরম হতাশায় ভুগছেন। এগুলো অবশ্যই কষ্টের বিষয়। আমি বুঝতে পারছি, আপনি হৃদয়ে অনেক কষ্ট অনুভব করছেন। তবে ভাই আমার! একটি বিষয় চিন্তা করুন! কত মানুষের হাত নেই, পা নেই, সুস্থতা নেই। কিন্তু আপনার তো হাত-পা সুস্থতা সবকিছুই আছে। যাদের হাত-পা, সুস্থতা নেই আপনি কি তাদের চেয়েও বেশি কষ্টে আছেন? নিশ্চয়ই না। যেখানে তারা আপনার চেয়ে কঠিন অবস্থায় থেকেও অভিযোগ না করে বেশ হাসিমুখে দিন কাটাচ্ছে, সেখানে আপনার হাত-পা সর্বোপরি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার মতো বিশাল নেয়ামত থাকার পরও কেন আপনি আত্মহত্যা করতে যাবেন?
প্রিয় ভাই ও বোন আমার! দুঃখ-কষ্ট নিয়েই তো মানুষের এই অল্প কয়েক দিনের জীবন। দেখতে দেখতেই এ সময়টা কেটে যাবে। কুরআন আমাদেরকে বলছে, ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে যখন জিজ্ঞেস করা হবে, তোমরা কত দিন দুনিয়ায় কাটিয়ে এসেছ? তখন তারা কী বলবে, জানেন? তখন তারা বলবে, এক সকাল কিংবা বিকাল পরিমাণ সময় কাটিয়ে এসেছি। তারপর আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা খুব কম সময়ই দুনিয়ায় কাটিয়ে এসেছ; যদি তোমরা এ কথাটা আগে বুঝতে’ (আল-মুমিনূন, ২৩/১১২-১১৪)।
এখন চিন্তা করুন তো, এই সামান্য সময়ের দুঃখ-কষ্টে আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি। অথচ এ সময়টা অতি সামান্য। যদি এ সামান্য সময়ের দুঃখ-কষ্ট আমরা মেনে নিতে না পারি, ধৈর্য রাখতে না পারি, তবে ঐ অনন্তকালের জীবনে দুঃখ-কষ্টে পতিত হলে কীভাবে কাটাব— তা কি আমরা একবারও ভাবছি?
আপনার যতই দুঃখ-কষ্ট থাকুক না কেন আপনার হাত-পা বা শরীরের কোনো অঙ্গ না থাকার মতো তো আর দুঃখ-কষ্ট নেই। এটা নিশ্চয়ই আপনি স্বীকার করবেন। তাহলে আপনি কীভাবে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার মতো এত কঠিন চিন্তা করতে পারেন? এতে কি আপনার যা আছে, তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ পাবে না?
আজ যদি আপনার হাত-পা কিংবা সুস্থতা না থাকত, তাহলে আজকে আপনি যেগুলোকে কষ্ট বলছেন সেগুলো বেশি কষ্টদায়ক হতো, না-কি সুস্থতা না থাকা বেশি কষ্টদায়ক হতো— নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তো। ইতিবাচক হোন; নেতিবাচক হতে যাবেন না কখনো। নিজের কী নেই সেটা নিয়ে কখনো দুশ্চিন্তা করবেন না; বরং আপনার কী কী আছে সেগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। তখন দেখবেন অবচেতনভাবেই কৃতজ্ঞতায় মাথা নত হয়ে আসবে। আপনার থেকে ভালো অবস্থানে থাকা মানুষের সাথে কখনো নিজের তুলনা করতে যাবেন না। তা না হলে মনে শান্তি পাবেন না কখনো। বরং আপনার চেয়ে যারা খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের সাথে তুলনা করুন। তখন মনে হবে আমি তো অনেক সুখে আছি।
মনে রাখবেন, এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া সবকিছু পাওয়ার জায়গা নয়। দুনিয়াতেই যদি সবকিছু পাওয়া হয়ে যায়, তাহলে জান্নাতের আর কী প্রয়োজনীয়তা থাকল? দুনিয়াতে নিজেকে সেভাবে তৈরি করতে হবে, যেন সবকিছু প্রাপ্তির স্থান জান্নাতে যাওয়া যায়। আর এই নিজেকে তৈরি করতে গিয়ে জীবনের কঠিন অবস্থায় ধৈর্য ধরতে হবে। কষ্টের মুহূর্তে ভেঙে পড়া যাবে না। নিজের মনকে বোঝাতে হবে যে, ও মন! যেকোনো মুহূর্তে মৃত্যু চলে আসলে এমনিতেই তো আমাকে এ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। এ কষ্ট তো আর সারা জীবন থাকছে না। তাই শুধু শুধু আত্মহত্যার মতো পাগলামি চিন্তা কেন করব!
[২]
নানান ডিপ্রেশনের জ্বালায়, মানুষের কষ্টদায়ক আচরণে আজকের এই সময়ে আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসছে, এইতো? আপনি শুধু কুরআনের সেই আয়াত মনে করুন যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই পরবর্তী সময় তোমার পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা উত্তম। অচিরেই তোমার রব এত কিছু দিবেন যে, তুমি তা পেয়ে খুশি হয়ে যাবে’ (আয-যুহা, ৯৩/৪-৫)। এর মানে কী, জানেন? এর মানে হচ্ছে আপনার আজকের কষ্ট একদিন থাকবে না। দেরিতে হলেও আল্লাহ আপনাকে সুখের নেয়ামত দান করবেনই করবেন। আপনাকে শুধু ধৈর্যকে নিজের সঙ্গী বানাতে হবে। এতটুকুই।
আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই কথাটি একটু ভাবুন, যে মা-বাবা আপনাকে জন্ম না দিলে আপনি পৃথিবীর আলো-বাতাস উপভোগ করতে পারতেন না, যে মা-বাবা আপনার শিশুকাল থেকে যত্ন করে আগলে না রাখলে আপনি নিরাপদে বসবাস করতে পারতেন না। আপনার অনুপস্থিতিতে সেই মা বাবার দেখাশোনার বিষয়টি কি আপনার একবারও ভাবনায় আসছে? আপনার মা-বাবা আপনাকে কষ্ট করে ছোট থেকে বড় করে তুললেন, আর আপনি কিনা কোনো এক কষ্ট পেয়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চাচ্ছেন! তাদেরকে একা রেখে কেবল নিজের শান্তির উদ্দেশ্যে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করে নেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে? ও ভাই! নিজে সুখ পাওয়ার আশায় পরিবারের এতগুলো মানুষকে একা রেখে চলে যাওয়া কি স্বার্থপরতা নয়?
এই যে আপনার মা-বাবা, তারা মনে কত আশা নিয়ে নিজে খেয়ে না খেয়ে আপনাকে বড় করেছেন, পড়াশোনা করিয়েছেন। আর আপনি কিনা তাদের ব্যাপারটা একটুও খেয়াল করলেন না। শুধু নিজেরটাই চিন্তা করলেন। তাদের জীবনে কি কোনো দুঃখ-কষ্ট ছিল না? শুধু আপনার জীবনেই আছে? বুঝলাম আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন, অনেক বেশি। হয়তো মা-বাবার মতো অনেক কাছের মানুষরাও আপনাকে কটু কথা বলেছে, বিভিন্নভাবে আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। এগুলোর জন্য আপনার অভিমান থাকতে পারে। তাই বলে আপনি নিজেকে ধ্বংস করে দিয়ে মা-বাবাকে একা রেখে এ পৃথিবী থেকে চিরতরে চলে যাবেন —এ কেমন কথা, ভাই!
[৩]
বর্তমান যুবসমাজে দিনদিন আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েই চলছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান দেখলে রীতিমতো চোখ কপালে ওঠে। এ ব্যাপারটি খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। উম্মাহ নিয়ে চিন্তা করে এমন মানুষ এ নিয়ে বসে থাকতে পারে না। আত্মহত্যাকারী শুধু নিজেরই ক্ষতি করছে না; তার পরিবারকেও ক্ষতির মুখে ফেলে দিচ্ছে। এমনকি সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে। আত্মহত্যার চিন্তায় বিভোর থাকা মানুষদেরকে যেমন আত্মহত্যার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বাঁচাতে হবে, তেমনি এ সমাজের কোনো মানুষ যেন আর আত্মহত্যার চিন্তাও না করে সেগুলো নিয়েও কাজ করা এখন সময়ের বড় দাবি। অন্যথায়, অদূর ভবিষ্যতে নিজের কাছের কারো এমন কঠিন পরিণতি দেখতে হতে পারে।
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক না থাকা ও দ্বীনের বুঝ না থাকা আত্মহত্যা করার অনেক বড় এক কারণ। দ্বীনের বুঝ না থাকলে সে দুনিয়ার কোনো কিছু না পাওয়াতে কিংবা কোনো কিছু হারানোতে নিজের ব্যর্থতা খুঁজে পায়। আর এই ব্যর্থতাই তাকে আত্মহত্যার দিকে নিয়ে যায়। সে এটা ভাবতেই পারে না যে, দুনিয়াওয়ালাদের দৃষ্টিতে সকল ব্যর্থ মানুষদের তালিকায় যদি তার নাম সবার উপরেও থাকে তবুও সে ব্যর্থ নয়। আসল ব্যর্থ তো সে, যে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে চলছে, যে নিজেকে সংশোধন করতে পারছে না। পরকালের মতো স্থায়ী জীবন নিয়ে যার মাথায় কোনো চিন্তা নেই, সেই প্রকৃত ব্যর্থ। এজন্য দুনিয়ার ব্যর্থতায় তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ এখানকার ব্যর্থতা সাময়িক। মৃত্যু আসলেই এগুলোর অবসান হয়ে যাবে। কিন্তু পরকালের ব্যর্থতার অবসানের জন্য ‘দ্বিতীয় মৃত্যু’ বলে কিছু আসবে না।
আত্মহত্যার আরেকটি কারণ হচ্ছে, মানুষের পাত্তা পাওয়ার আশায় বসে থাকা। আমি তার জন্য এত কিছু করলাম অথচ সে আমাকে আজ চিনে না, সে আমাকে বুঝল না, পাত্তা দিল না ইত্যাদি —এ জাতীয় নানান টক্সিক চিন্তা আমরা মাথায় ঠাঁই দেই। ভাই! আপনি মানুষকে খুশি করার জন্য, মানুষের পাত্তা পাওয়ার জন্য কিছু করবেন কেন? মানুষকে খুশি করার জন্য কিছু করলে আপনার অনেক কিছুই হারানোর থাকবে। তখন আপনি অনেক কষ্ট পাবেন।
পক্ষান্তরে, আল্লাহকে খুশি করার জন্য কিছু করলে আপনার কিছুই হারানোর থাকবে না। কারণ আপনি তো বিনিময়—হোক সেটা সামান্য ধন্যবাদ পর্যন্তই— কোনো মানুষের কাছ থেকে নিতে চান না। আপনি বিনিময় একমাত্র আপনার রবের কাছ থেকে নিতে চান। আর এই রবের কাছ থেকে নিতে চাওয়ার বিষয়টি আপনাকে মানসিকভাবে অনেক স্বস্তি দিবে। এজন্য মানুষের নয়, রবের কাছে পাত্তা পাওয়ার চেষ্টায় নিজেকে অভ্যস্ত করতে হবে। আর প্রকৃত মুমিনের কাজ সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টিকেন্দ্রিক হয়। এরা মানুষের সন্তুষ্টির জন্য কিছু করে না। মানুষের চিন্তায় মাথা ঘামায় না।
পড়ালেখা, রেজাল্ট, ক্যারিয়ার গঠন ইত্যাদি নিয়ে পরিবারের চাপ ও সমাজের নেতিবাচক মন্তব্য আত্মহত্যার জন্য অনেক বড় পরিসরে দায়ী। মনে রাখবেন, আপনি যখন কাউকে ভালো রেজাল্ট না করায়, ভালো ক্যারিয়ার না গড়ায় তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন, তখন কিন্তু আপনি তাকে পরোক্ষভাবে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কারণ আপনার কথাগুলো তার মানসিকতায় আঘাত করছে। তখন সে ভাবতে শুরু করে, আমাকে দিয়ে বোধহয় কিচ্ছু হবে না, আমি বোধহয় এ সমাজের বোঝা। এভাবে সে হীনম্মন্যতায় ভোগে। এটাই একসময় তাকে আত্মহত্যার অন্ধকার পথে টেনে নিয়ে যায়।
পরিবারের কেউ একজন ভালো রেজাল্ট করতে না পারলে, ভালো ক্যারিয়ার গড়তে না পারলে কক্ষনোই তাকে এমন কথা বলা যাবে না, যা তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়, নিজের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তাকে অভয় দিয়ে সুন্দর করে বিনীত কণ্ঠে বলুন যে, দেখো ভাই আমার! তুমি ভালো রেজাল্ট করতে পারোনি, ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারোনি, বিদেশ যেতে পারোনি তো কী হয়েছে? এতেই তো তোমার সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। তুমি এ নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা করো না। তাক্বদীরের ফয়সালাকে তো আমাদের সবাইকে মানতে হবে রে ভাই। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। আমরা যেন চেষ্টার জায়গায় কোনো ত্রুটি না রাখি— এটাই হচ্ছে মূল কথা। তুমি ভালো রেজাল্টের জন্য, ভালো ক্যারিয়ারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবে। কিন্তু ব্যর্থ হলে ভেঙে পড়া যাবে না। কারণ এটা এমন কোনো ব্যর্থতা নয় যে, তুমি জান্নাতই হারাতে যাচ্ছ।
আত্মহত্যা থেকে ফিরানোর জন্য সবচেয়ে বড় মেডিসিন কী, জানেন? দ্বীনী শিক্ষা তথা রবের সাথে সম্পর্ক গড়ার শিক্ষা। কারণ এই শিক্ষাই একজন মানুষের জীবনের সকল হতাশাকে আশার আলোয় পরিণত করে। এই শিক্ষাই তাকে দুনিয়ায় সব দুঃখ-কষ্টকে এক পাশে রেখে আখেরাতের স্থায়ী জীবনে কীভাবে সুখী হওয়া যায়, সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে শেখায়। আর যে পরকাল নিয়ে স্বপ্ন দেখতে পারে, তার কাছে দুনিয়ার কোনো কষ্টই ‘কষ্ট’ নয়। সে শুধু ভাবতে থাকে মৃত্যু চলে আসলেই তো এগুলোর চিরসমাপ্তি ঘটে যাবে। তাই শুধু শুধু এত ডিপ্রেসড হয়ে লাভ কী!
[৪]
যে নিজের জীবনকে শেষ করে দিতে চাইছে, তাকে বিভিন্নভাবে কাউন্সিলিং করতে হবে। ধমক দিয়ে নয়; তাকে সুন্দর ভাষায় তার প্রতি মনে ভালোবাসা নিয়ে দরদী কণ্ঠে বারবার বুঝাতে থাকতে হবে যে, দেখো ভাই আমার! এই যে তুমি তোমার জীবনটাকে নষ্ট করতে চাইছ, এই জীবনটা তো আল্লাহর দেওয়া আমানত। আল্লাহর আমানত নষ্ট করে কি মৃত্যুর পর তার প্রিয় বান্দা হওয়ার আশা করা যায়? তুমিই বলো। ভাই আমার! আমি বুঝতে পারছি তুমি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছ যা হয়তো কাউকে বোঝানোও সম্ভব না। কিন্তু এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে গিয়ে আরও বড় কষ্ট বরণ করা তো কোনোভাবেই একজন বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না —তাই না!
দেখো, আল্লাহ যদি তোমাকে তোমার সকল কষ্টে ধৈর্যের বিনিময়ে অনন্তকালের সুখে ভরপুর জান্নাত দিয়ে দেন, তবে কি তোমার আজকের দিনগুলোর কষ্টে ছবর করা লস প্রজেক্ট, না-কি লাভ প্রজেক্ট? একজন মুমিন কখনোই নিরাশ হতে পারে না। সে যদি কোটি কোটি টাকার সম্পদ খুইয়ে একদম পথেও বসে যায়, তবুও না। কারণ সে জানে জান্নাতের বিনিময়ে এগুলো হারানো তার জন্য কিছুই না। তার মালিক যখন আজকের কষ্টের দিনগুলোতে ধৈর্যের বিনিময়ে জান্নাত দিয়ে দিবেন, তখন তার আজকের কষ্ট আর ‘কষ্ট’ থাকবে না; পরম হাসি-আনন্দে পরিণত হয়ে যাবে। আর সে তো সেইদিনেরই প্রতীক্ষায় থাকে...।
আম্বরখানা, সিলেট।