কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেয়ো না!

দুইজন নন-মাহরামের কথোপকথন, অতঃপর...

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপে এক মেয়ে সবসময় দ্বীনী বিষয়ক লেখনী পোস্ট করে থাকে। তার শেয়ার করা এসব পোস্ট অনেকেই পড়ে। তার পোস্টে নিয়মিত লাভ রিঅ্যাক্ট দেওয়া এক ছেলে হঠাৎ একদিন তার মেসেঞ্জারে নক দিয়ে বলল,

—আস-সালামু আলায়কুম।

—ওয়াআলাইকুম আস-সালাম।

—কেমন আছেন আপনি?

—আল-হামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আপনি?

—আল-হামদুলিল্লাহ, আমিও ভালো আছি। আপনি ইসলামী বেশ কয়েকটি গ্রুপে দ্বীনী অনেক কনটেন্ট শেয়ার করেন। আমি নিয়মিত পড়ি। অনেক ভালো লাগে আপনার কনটেন্টগুলো। মাশা-আল্লাহ! অনেক কিছু শিখতে পারি। 

—দু‘আ করবেন।

—অবশ্যই। আচ্ছা, আপনার পুরো নামটা যেন কী?

—সাদিয়া বেগম ইভা।

—মাশা-আল্লাহ! অনেক সুন্দর নাম! এই নামের অর্থটাও বেশ।

—অর্থটা কী?

—সুখী।

—জানা ছিল না। অর্থটা জানানোর জন্য থ্যাংকস।

—আচ্ছা, কী করছেন এখন?

—এই তো শুয়ে আছি।

কথাগুলো কিন্তু আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগুচ্ছে এবং অপ্রয়োজনীয় কথার দিকে যাচ্ছে। আর এভাবেই কিন্তু একটা হারাম রিলেশনশিপের সূত্রপাত হয়। এভাবে বেশ কয়েকদিন ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করা কিংবা দ্বীনী কোনো আলোচনা করার মতো সফট কথোপকথনের পর হঠাৎ একদিন বলে বসে,

আচ্ছা, আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?

—ফ্রেন্ড তো আছিই।

—হুম, সেটাই তো কথা। আচ্ছা, কিছু মনে না করলে আপনার একটি ছবি দেওয়া যাবে? দেখেই ডিলেট করে দেব।

—কী বলেন এসব?

—মাফ করবেন, লাগবে না তাহলে।

—কিন্তু যদি… 

Look! Shatan is in the business now. দেখুন, শয়তান এই মাত্র তার আসল টোপ ফেলেছে। শুরুতে কিন্তু সে এই টোপ ফেলেনি। সে ধীরে ধীরে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। লক্ষ করে দেখুন, শুরুটা হয়েছিল সালাম দিয়ে আর এভাবে যখন হারাম সম্পর্ক হয়ে যাচ্ছে, তখন শেষটা হচ্ছে যেনা দিয়ে। নাঊযুবিল্লাহ!

আজকের ফ্রি-মিক্সিং এর কঠিন যুগে যুবক-যুবতিদের মধ্যে অহরহ ঘটতে থাকা ঠিক এই ধরনের কথোপকথন আমাকে কুরআনের একটি আয়াতের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছে, উপলব্ধি করিয়েছে কেন এই আয়াতের এত গুরুত্ব। একইসাথে আয়াতটিতে রবের অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস আরও বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার মতো বিষয় রয়েছে। জানেন, কোন সে আয়াত? সেই আয়াত নিয়ে স্বয়ং আল্লাহ বলেছেন, وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যেনার ধারেকাছেও যেয়ো না। এটা অবশ্যই অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ’ (বনী ইসরাঈল, ১৭/৩২)

এই আয়াতটি নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছি। আল্লাহ তো বলতে পারতেন যে, যেনা করো না; কিন্তু সেটা না বলে আল্লাহ বলেছেন, যেনার ধারেকাছেও যেয়ো না। এই ‘ধারেকাছে না যাওয়ার’ মানে কী, জানেন? এর মানে হচ্ছে যে কথা বা কাজ দ্বারা যেনার দরজায় প্রবেশ করা হয়, হোক সেটা অনেক ভালো কথা, তবুও সেই কথা বা কাজ না করতে আল্লাহ জোরালোভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ আল্লাহ ভালো করেই জানেন তাঁর বান্দা কী করলে কী হবে। তিনি জানেন তাঁর বান্দা শুরুতেই যেনার মূল কাজ করবে না। আস্তে আস্তে সে সেটার দিকে এগুবে। এজন্য আল্লাহ তাআলা যেনা নয়, যেনার সূত্রপাত হয় এমন কিছু থেকে আগে থেকেই দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

উপরের কথোপকথনের কথাই ধরুন। সে কিন্তু প্রথমেই যেনার কিছু করেনি। শুধু সালাম দিয়েছে মাত্র, যা আপাতদৃষ্টিতে খুবই ভালো কাজ। কিন্তু এক্ষেত্রে এই ‘সালাম’ তাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে অর্থাৎ তার শেষ পরিণতি কী হতে পারে, তা তো আল্লাহ ভালো করেই জানেন। আল্লাহ ভালো করে জানেন বলেই এখানে সালাম দিতে নিষেধ করছেন। কারণ এই ‘সালাম’ দেওয়া মানে আপনি যেনা করছেন না ঠিকই, কিন্তু আপনি যেনার ধারেকাছে চলে যাচ্ছেন। আপনি উপরের কথোপকথনটির পরবর্তী কথাগুলোর দিকে খেয়াল করলে স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে, কীভাবে ধীরে ধীরে যেনার দিকে যাওয়া হচ্ছে। প্রতিটি হারাম রিলেশনশিপের শুরুর দিকের কার্যকলাপ কিন্তু এভাবেই হয়। এজন্য ফেতনার এই সময়ে কোনো পরপুরুষ বা পরনারীকে শুধু শুধু সালাম কিংবা জবাব দেওয়াই উচিত নয়। অন্তত উপরের কথোপকথনটি আমাদেরকে তাই বলছে।

মূলত, ‘লা তাক্বরাবুয যেনা’ অর্থাৎ তোমরা ব্যভিচারের ধারেকাছেও যেয়ো না— এই আয়াতটির গভীরতা বোঝানোর জন্য উপরের কথোপকথনটি টেনে আনা। এই আয়াত নিয়ে আমি যত ভাবি, ততই অবাক হই। একইসাথে আল্লাহর অস্তিত্বকে আরও বেশি উপলব্ধি করি। অবশ্যই আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই। আল্লাহর কুরআন সত্য। বিশ্বাস করুন, ছোট্ট এই আয়াতটি ঈমান বৃদ্ধির মতো আয়াত। সুবহানাল্লাহ! এই আয়াতটির অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারলে কোনো মুমিন অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!

রাকিব আলী

আম্বরখানা, সিলেট।

Magazine