সময়ের সাথে সাথে মননের চাহিদার প্রেক্ষিতে আধুনিকতার স্বাদ মেটাতে গিয়ে আমরা শুধু তাকিয়েছি বাহ্যিকভাবে জাঁকজমকপূর্ণ দুনিয়াকে জান্নাত জ্ঞান করা জাতির দিকে। আমরা মেনেছি এটাই আধুনিকতা। সময়ের সাথে পা মেলাতে হলে আমাদের তা-ই গ্রহণ করা উচিত। কৈশরের এই উচ্ছ্বাস ভাঙার সময়ে আমরা পরিচিত হয়েছি অশ্লীল, অর্ধ-উলঙ্গ, উলঙ্গ সব সংস্কৃতির সাথে। বাড়ন্ত বয়সের দুরন্ত সময়েও আমরা শান্ত, নির্জীব, নিস্তেজ। ফলশ্রুতিতে নিজেদের ক্বলবকে করছি অসুস্থ, ভেসে যাচ্ছি সেই পাথরপূর্ণ স্রোতঃস্বিনী নদীর পানিতে যার পথিমধ্যেই অপেক্ষমাণ এক সুবিশাল মরণ ফাঁদের ঝরনা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا ‘তোমরা যেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিশ্চয় এটি অশ্লীল ও মন্দ কাজ’ (বনী ইসরাঈল, ১৭/৩২)।
বন্ধুরা! একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করুন— আল্লাহ তাআলা তো এভাবেও বলতে পারতেন, ‘তোমরা যেনা-ব্যভিচার করো না’। কিন্তু তিনি এখানে বলেছেন, ‘তোমরা এগুলোর কাছেও যেয়ো না’। অর্থাৎ যে বিষয়গুলো যেনা-ব্যভিচারকে প্ররোচিত করে তার থেকেও দূরে থাকতে বলেছেন।
কারণ প্রথমেই কোনো ব্যক্তি যেনা করে ফেলে না; কোনো না কোনোভাবে এই অপকর্মের বীজ তার অপত্য মনে রোপিত হয় ও কালক্রমে তার পাতা, ডালপালা গজায়, অবশেষে মাকাল ফল হিসেবে এই মারাত্মক অপকর্ম সংগঠিত হয়। এক্ষেত্রে প্ররোচনা জন্মানোর প্রথম ধাপ হিসেবে আমাদের সুশীল সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা সংস্কৃতির অর্ধ-উলঙ্গ অংশকে দায়ী করা যায়। সেই দুনিয়াকে জান্নাত জ্ঞান করা জাতির মতোই আমাদের সংস্কৃতির কাণ্ডারিরা মুসলিম মেয়েদেরও সেই বিধর্মী মেয়েদের মতোই অর্ধ-উলঙ্গ করে সমাজে উপস্থাপন করছে। একদিক থেকে আমাদের ঘায়েল করছিল বিধর্মীদের অশ্লীলতা নামক অস্ত্র এবার সে স্রোতেই গা ভাসালো অন্তরে মোহরযুক্ত কিছু বিকৃত মানুষ। ধর্মীও বিধিনিষেধ উপেক্ষার ধারায় রেখে ভাইরাসের মতো তারা অশ্লীলতা ইনজেক্ট করতে থাকল আমাদের মুসলিম সমাজেও।
ফলে মননে জন্মাচ্ছে অতৃপ্ত চাহিদা, প্রভাবিত হচ্ছে মন ও শরীরের নানানদিক, আমরা ছুটছি আরও গভীর রহস্য উন্মোচনে। পরিচিত হচ্ছি আরও খোলামেলা সব দৃশ্যের সাথে। অতঃপর বিমোহিত হয়ে মাতালের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি সেই অপসংস্কৃতির গোলকধাঁধার বৃত্তপথেই। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক যেনাকার ও যেনাকারিণী ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত উলঙ্গ অবস্থায় আগুনে জ্বলতে থাকবে’।[1]
তাই আমাদের অবশ্যই অবশ্যই সাবধান থাকা উচিত এই মরণ ফাঁদের ঝরনা থেকে। তার সুদৃশ্যের জলরাশি থেকে। আমরা তো জানি এ নদী চোরা স্রোতে পূর্ণ, টলমলে পানির স্বাদ নিতে গেলেই টেনে নেবে ভয়ংকর পরিণতির দিকে। যেখানে কোনো পানি-ই নেই, আছে শুধু এ দুনিয়ার চেয়ে ৭০ গুণ তীব্র আগুনে পোড়া পাপীদের বিগলিত দেহ, রক্ত, পুঁজে ঠাসা বিশ্রী সব তরল। আর অবশ্যই অবশ্যই এটি সেই জায়গা যেখানে কেউ পরিমাপের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন সময়ও থাকতে চাইবে না।
বন্ধু! বলো, এ দুর্গন্ধযুক্ত দুনিয়া আর কত দিনের? যার জন্য তুমি আল্লাহর ওয়াদাকৃত জান্নাতের বর্ণনাতীত নেয়ামত ছেড়ে ঐ সীমাহীন যাতনার স্থানে পৌঁছাবে। বলো, তুমি কি এতই বোকা! মহান আল্লাহ তো সেই সুবাসিত মনোমুগ্ধকর জান্নাতে এমন হূর রেখেছেন যাদের উদীয়মান সূর্য দেখলেও লজ্জা পায়...। তো তুমি এ পচনশীল দুনিয়ায় কীসের মোহে ডুবে আছো? কীসে তোমাকে ভুলিয়েছে সেই অনন্ত সুখ থেকে, সেই চিরযৌবনা অতুলনীয় রমণীদের থেকে!
তাই সেই অনন্ত সুখময়তার জন্য পাপাচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য আমরা এসব চোখধাঁধানো অসুস্থ অপসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ এবং আল্লাহর কাছে এভাবে দু‘আ করব যে, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার চিন্তায় নূর দিন, মননে নূর দিন, চোখেও নূর দান করুন ও তার পর্দা করার তাওফীক্ব দিন এবং আমাদের দান করুন সেই সুবাসিত জান্নাত, যা আপনি আপনার মুমিন বান্দাদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন’। আল্লাহ কবুল করুন- আমীন!
নোমান আব্দুল্লাহ
খরমপট্টি, কিশোরগঞ্জ।
[1]. ছহীহ বুখারী, মিশকাত, হা/৪৬২১।