কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

চোগলখোরি ও তার ধ্বংসাত্মক প্রভাব

post title will place here

[২২ শাওয়াল, ১৪৪৪ হি. মোতাবেক ১২ মে, ২০২৩ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেনশায়খ ছালাহআল-বুদাইর হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথমখুৎবা

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই, যিনি আমাদেরকে সুস্থতা ও প্রত্যেক কল্যাণকর জিনিস দান করেছেন এবং চোগলখোরি থেকে নিষেধ করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। আর এই সাক্ষ্য প্রদান আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে রক্ষা করবে। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমাদের নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তাঁকে তাঁর রব হক্ব ও সুন্নাহসহ প্রেরণ করেছেন যা আমাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন।

অতঃপর, হে মুসলিমগণ! আপনারা সেই ব্যক্তির ন্যায় তাক্বওয়া অবলম্বন করুন, যে তার মাওলাকে সর্বদা ভয় করে চলে এবং তাঁর সাক্ষাৎ লাভের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ ‘হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেমনভাবে করা উচিত এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০২)

হে মুসলিমগণ! পবিত্র হৃদয়গুলো মহৎ গুণাবলি ও শ্রেষ্ঠ বৈশিষ্ট্যসমূহের দিকে মনোযোগ দেয় আর অপরিপক্ক বিবেক অন্যায় ও নোংরামির আশ্রয় নেয়। কাজেই যে ব্যক্তি নিজের মাঝে মহৎ গুণাবলির সমন্বয় করতে না পারে, অন্তত তার অন্যায়-অশ্লীলতা পরিত্যাগ করার প্রচেষ্টা থাকা উচিত। মানুষের মাঝে চোগলখোরি বা পরনিন্দা করা একটি নিন্দনীয় স্বভাব। চোগলখোরি করা রুগ্ন অন্তর, নিকৃষ্ট স্বভাব ও এমন মন্দ আত্মার অধিকারী ব্যক্তির কাজ যে অন্যের পর্দা বিনষ্ট ও গোপনীয়তা ফাঁস করতে উদগ্রীব থাকে।

চোগলখোরি হলো প্ররোচনা দেওয়া, ক্ষতি করা, বিচ্ছিন্ন করা, চক্রান্ত করা অথবা বিবাদ সৃষ্টি বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোনো কথা এক বৈঠক থেকে অপর বৈঠকে পাচার করা, একজনের কাছ থেকে কথা নিয়ে অন্যের কাছে লাগানো।

চোগলখোরি হলো একটি ভয়ানক অপরাধ। এটি বিনাশকারী আগুন সদৃশ ও একটি কবীরা গুনাহ। এটি কেবল সেই ব্যক্তি করে বেড়ায় যার দ্বীনদারিতা নগণ্য, যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই এবং যার মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা সুস্পষ্ট। চোগলখোর সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট প্রাণী; যেহেতু এমন কর্ম অন্তরের বিনাশ করে, হৃদয়ে হিংস্রতা ও মনে উত্তেজনা তৈরি করে এবং বিবেককে এলোমেলো করে দেয়। এছাড়া হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদকে উসকে দেয়।

চোখলখোরি হলো শত্রুতার বীজ, অনিষ্টের সোপান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কলকাঠি ও অপবাদের মুখপাত্র। এটি দুষ্ট লোকদের অস্ত্র, নিকৃষ্ট লোকদের অবলম্বন এবং বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও অনিষ্টের প্রতীক। চোগলখোরির আসল রূপ হলো মানুষের গোপনীয়তা ফাঁস করা, সঙ্গীসাথির বিশ্বাস ভঙ্গ করা, তার ক্ষতির চেষ্টা করা এবং সর্বোপরি ‍মুসলিমদের কষ্ট প্রদান করে আনন্দিত হওয়া।

হে মুসলিমগণ! মানুষের মাঝে কুৎসা, গুজব ও মিথ্যা ছড়ানো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ‘যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো তাহলে দ্বিগুণ বিভ্রাট সৃষ্টি করা ব্যতীত আর কী হতো? তারা তোমাদের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে দৌড়াদৌড়ি করে ফিরত আর তোমাদের মধ্যে কতিপয় তা শ্রবণ করত’ (আত-তওবা, ৯/৪৭)

ইমাম শা‘বী রহিমাহুল্লাহ বলেন, রক্তপাত, অবৈধকে বৈধ মনে করা, সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া ও বড় বড় ঘটনায় প্ররোচনা দেওয়া ইত্যাদি কি চোগলখোরি ব্যতীত হয়? জনৈক সালাফ বলেন, চোগলখোরদের এড়িয়ে যাও। কেননা এর সূচনায় রয়েছে বিষ আর সমাপ্তিতে পাপ।

এভাবে চোগলখোরির মাধ্যমে কত ঘনিষ্ঠ বন্ধু দূরে সরে গেছে, সর্বদা যোগাযোগ রক্ষাকারী দুজন বন্ধু বিচ্ছিন্ন হয়েছে, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী দুজন সম্পর্কচ্ছেদ করেছে, দুজন একাত্মার মানুষ একে অপরকে ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে চোগলখোরের কুৎসা রটনা ও অপবাদের কারণে কত স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছে! সুতরাং ধিক্বার চোগলখোরদের জন্য, আবারও ধিক্বার জানাই এসব কুৎসা রটনাকারীদের।

চোগলখোরদের জন্য লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, ‍নিকৃষ্টতা, অধঃপতন ও হীনতার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, এতে হীন কর্মে কেবল ইতর ও নিকৃষ্ট প্রকৃতির মানুষই জড়িত হয়। যদি সে জানত যে, তার চোগলখোরি বা কুৎসা রটনার মাধ্যমে যে বিষ সে ছড়িয়েছে তা তার নিজের, আত্মীয়স্বজনের ও বন্ধুবান্ধবের কত ক্ষতি সাধন করেছে, তাহলে সে চোগলখোরি ও কুৎসা রটানোর চেয়ে বধির হয়ে জীবনযাপন করাকেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্যময় ও হৃদয়ের জন্য অধিক তৃপ্তিদায়ক মনে করত।

হুযায়ফা রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, لَا ‌يَدْخُلُ ‌الْجَنَّةَ ‌قَتَّاتٌ ‘চোগলখোর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না’।[1] ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মদীনা বা মক্কার কোনো এক বাগানের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এমন দুজন ব্যক্তির আওয়াজ পেলেন, যাদের কবরে আযাব হচ্ছিল। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এদের দুজনকে আযাব দেওয়া হচ্ছে, অথচ কোনো বড় গুনাহের জন্য এদের আযাব দেওয়া হচ্ছে না’। তারপর তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, এদের একজন তার পেশাবের নাপাকী থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না আর একজন চোগলখোরি করত’।[2] ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ هِىَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ ‘আমি কি তোমাদের হুঁশিয়ার করব না, চোগলখোরি কী? তা হচ্ছে কুৎসা রটনা করা, যা মানুষের মধ্যে বৈরিতার সৃষ্টি করে’।[3]

হে মুসলিমগণ! ভদ্র বিচক্ষণ ব্যক্তি এমন কথায় কর্ণপাত করেন না যা পরনিন্দুক, কুৎসা রটনাকারী, মিথ্যুক ও ফেতনাবাজ ব্যক্তি প্রচার করে বেড়ায়। সে ফেতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ঘৃণার বীজ বপন করে এবং শত্রুতা ছড়ায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ ‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোনো ফাসেক্ব তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো ক্বওমকে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/৬)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَهِينٍ - هَمَّازٍ مَشَّاءٍ بِنَمِيمٍ - مَنَّاعٍ لِلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ ‘আর তুমি আনুগত্য করো না প্রত্যেক এমন ব্যক্তির যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছিত। পিছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখোরি করে বেড়ায়, ভালো কাজে বাধাদানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী অপরাধী’ (আল-ক্বলম, ৬৮/১০-১২)। অতএব, আপনারা চোগলখোর বা নিন্দাকারীর অনুসরণ করবেন না, যারা পরস্পরের সম্পর্ক নষ্ট করে, দুজনের সুসম্পর্ক নষ্ট করার মাধ্যমে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এবং দুই প্রতিবেশীর মাঝে ফেতনার আগুন প্রজ্জ্বলন করে।

যার নিকট কুৎসা বর্ণনা করা হলো এবং বলা হলো যে, অমুক তোমার ব্যাপারে এরূপ বলেছে; এমতাবস্থায় তার উপর ছয়টি কাজ আবশ্যক—

(১) তার কথা বিশ্বাস না করা; কেননা সেই চোগলখোর ফাসেক্ব, তাই তার সংবাদ পরিত্যাজ্য।

(২) এ ধরনের কাজ থেকে তাকে বারণ করা, তাকে উপদেশ দেওয়া এবং তার এমন কাজের নিন্দা করা।

(৩) আল্লাহর ওয়াস্তে তাকে ঘৃণা করা; কেননা সে আল্লাহর নিকট ঘৃণিত ব্যক্তি।

(৪) যার বিষয়ে কথা লাগানো হয় তার ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ না করা। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাকো’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১২)

(৫) লাগানো কথার প্রেক্ষিতে গোয়েন্দাগিরি বা নজরদারি না করা।

(৬) সে চোগলখোরকে যা করতে বারণ করেছে তা নিজে না করা; কাজেই তার কুৎসাকে প্রচার করবে না।

চোগলখোরের কথা বিশ্বাস করা চোগলখোরির চেয়েও নিকৃষ্ট। কেননা চোগলখোরি করা নির্দেশ মাত্র আর তা বিশ্বাস করা স্বীকৃতিদানের নামান্তর। কাজেই আপনারা কুৎসা রটনাকারী থেকে বেঁচে থাকুন, কেননা সে যদি কুৎসা বর্ণনায় সত্যবাদীও হয় তবুও সে অন্যের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা না করার কারণে ধিকৃত।

কথিত আছে যে, জনৈক পণ্ডিত ব্যক্তির নিকট তার এক বন্ধু দেখা করতে আসে এবং এক ভাই সম্পর্কে কিছু কথা বলে। তখন পণ্ডিত ব্যক্তিটি তাকে বলেন, একে তো বহুদিন পর দেখা করতে এসেছ, তার উপর আবার তিনটি অপরাধ নিয়ে এসেছ; ঐ ভাইটিকে আমার নিকট ঘৃণার পাত্র বানিয়েছ, আমার মুক্ত হৃদয়টাকে ব্যস্ত করে দিয়েছ এবং তুমি অসত্য দ্বারা তোমার নিজেকেই কলুষিত করেছ।

আরবের লোকেরা বলে থাকেন যে, বর্ণনাকারীও একজন গালিদাতা বা কুৎসা রটনাকারী। একদা একজন ব্যক্তি জনৈক সালাফ এর নিকট এসে বলল, অমুক ব্যক্তি আপনাকে গালি দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, শয়তান তোমাকে ছাড়া আর কোনো দূত পেল না? জনৈক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির উপর ক্ষিপ্ত হলে সে বলল, কীসে তোমাকে আমার উপর ক্ষিপ্ত করল? সে বলল, আমার নিকট এক বিশ্বস্ত ব্যক্তি তোমার সম্পর্কে যা বলেছে তা। তখন সে বলল, যদি বিশ্বস্তই হতো তাহলে তো কুৎসা রটনা করত না। অতএব, হে আল্লাহর বান্দা! আপনি যদি গ্লানি ও পঙ্কিলতামুক্ত নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে চান, তাহলে কখনো পরনিন্দাকারীর সাথে মিশবেন না। কুৎসা রটনাকারীর সাথে উঠাবসা করা মানেই ফেতনা প্রজ্জ্বলনকারী ও অপপ্রচারকারীর সাথে চলা।

প্রবৃত্তি ও শয়তান যেন আপনাকে তার দিকে ধাবিত করতে না পারে। বরং আপনি আপনার নফসকে নিয়ন্ত্রণ করুন, আপনার শ্রবণশক্তিকে মূল্যায়ন করুন; কেননা এর পিছনে আপনি আপনার দ্বীনদারিতা, জীবন ও মূল্যবান সময় থেকে যা ব্যয় করেছেন তা আর ফিরে পাবেন না।

জেনে রাখুন! কুৎসা রটনাকারীর কথা চুপচাপ শোনা ক্ষতিকর এবং তার সঙ্গ গ্রহণ করা লজ্জাজনক। পক্ষান্তরে তার নিকট থেকে দূরে থাকা তৃপ্তিদায়ক। আরো জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি আপনার নিকট অন্যের কুৎসা রটায়, সে অন্যের নিকটেও আপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়।

আল্লাহ তাআলা আমাকে ও আপনাদেরকে বিভ্রান্তকারী প্রবৃত্তি হতে রক্ষা করুন, শয়তানের প্ররোচনা হতে হেফাযত করুন এবং আমাদের হৃদয়গুলোকে বিচ্ছিন্ন না করে সত্যের উপর ঐক্যবদ্ধ রাখুন, পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ নয় বরং ভালোবাসা পোষণকারী করুন।

أقول ما تسمعون وأستغفِر اللهَ لي ولكم ولسائر المسلمين...

দ্বিতীয় খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা আল্লার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। যে ব্যক্তি তাঁর অনুসরণ করবে সে হেদায়াতের উপরে থাকবে আর যে তাঁর নাফারমানী করবে সে পথভ্রষ্ট হবে এবং তার জন্য ধ্বংস অনিবার্য।

অতঃপর, হে মুসলিমগণ! আপনারা আল্লাহভীতি অবলম্বন করুন, তাঁর আনুগত্য করুন এবং তাঁর অবাধ্য হবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’ (আত-তওবা, ৯/১১৯)

হে চোগলখোর, প্রতারক ও ফেতনাবাজ! তোমাকে তোমার প্রবৃত্তি চালনা করছে, ফলে তা হতে তুমি মুক্ত হতে পারছ না। হে ক্ষতির ব্যাপারে উদাসীন ব্যক্তি! তোমাকে ইতোমধ্যে ধ্বংস পেয়ে বসেছে। হে নিজের সুস্থতায় প্রতারিত ব্যক্তি! তোমার দিকে মৃত্যু তার ফাঁদ পেতে রেখেছে।

আপনি একবার এ আবাস ছেড়ে অন্তিম যাত্রার কথা চিন্তা করুন! এখনি আপনার রবের নিকট তওবা করুন, কুৎসা রটানো ও অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি চোগলখোরির মাধ্যমে যাদের উপর অন্যায় করেছেন তাদের সাথে মীমাংসা করে নিন। যাদেরকে কষ্ট দিয়েছেন তাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করুন এবং যাদেরকে কুৎসা রটনার মাধ্যমে পেরেশানিতে ফেলেছিলেন তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। তবে যদি তা বলতে গেলে বা মীমাংসা চাইতে গেলে কোনো ফেতনা বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে আপনার জন্য তাকে অবগত করানো বা তার কাছে মীমাংসা চাওয়া জরুরী নয়। বরং এ অবস্থায় আপনি তার জন্য বেশি বেশি দু‘আ ও ইস্তিগফার করুন, তার বেশি বেশি প্রশংসা করুন এবং তার প্রতি ইহসান করুন।

হে আল্লাহ! আপনি ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মানিত করুন। শিরক ও মুশরিকদের লাঞ্ছিত করুন এবং দ্বীনের শত্রুদের ধ্বংস করুন। আমাদের দেশ সঊদী আরবসহ সকল মুসলিম দেশকে ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র, বিদ্বেষীদের বিদ্বেষ এবং হিংসুকদের হিংসা থেকে হেফাযত করুন।

হে আল্লাহ! সকল স্থানে আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে আপনি রক্ষা করুন। হে পরম দয়ালু! আপনি তাদের রক্ত, মান-ইযযত, ধনসম্পদ ও দেশকে হেফাযত করুন। হে আল্লাহ! তাদের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষা করুন- আমীন!

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৫৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৫।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯২।

[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬০৬।

Magazine