[২৬ যুলহিজ্জাহ, ১৪৪৪ হি. মোতাবেক ১৪ জুলাই, ২০২৩ পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. ছালেহ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-হুমাইদ হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তাঁর মনোনীত সম্মানিত নবী। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন।
অতঃপর, হে মানুষ সকল! আমি আপনাদেরকে ও নিজেকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। অতএব আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন, আল্লাহ আপনাদের প্রতি দয়া করবেন। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলে এমন ব্যক্তির সান্নিধ্য গ্রহণ করুন ও চিন্তাশীল ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করুন। আপনারা জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের সাহচর্য গ্রহণ করুন, সৎ ব্যক্তিদের মধ্য হতে বন্ধু গ্রহণ করুন এবং শত্রুর প্রতি বদান্যতা প্রদর্শন করুন। আপনারা বিবেককে সংবরণ করুন এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করুন। আপনারা কখনোই কাউকে কষ্ট দিবেন না। আল্লাহ তাআলার ভাষায়,﴿وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا ‘আর তোমরা লোকের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে’ (আল-বাক্বারা, ২/৮৩)। দুনিয়ার জীবন ক্ষণস্থায়ী। খুব শীঘ্রই আপনারা প্রস্থান করবেন আর তখন শুধু আপনাদের কথা ও পদচিহ্নই অবশিষ্ট থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব’ (আন-নাহল, ১৬/৯৭)।
হে মুসলিমগণ! সেই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সুগঠিত করেছেন। তাদেরকে ঈমান দ্বারা সুসজ্জিত ও আলোকিত করেছেন। তাদেরকে আক্বল বা বিবেক দান করার মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন। অতঃপর তাকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন করেছেন। হে আল্লাহর বান্দা! আক্বল বা বিবেক হলো দায়িত্ববোধের চাকতিস্বরূপ। বিবেকের অবর্তমানে ব্যক্তির উপর অর্পিত দায়িত্বসমূহ রহিত হয়ে যায়। আর আক্বল বা বিকেককে এই নামে নামকরণ করা হয়েছে এজন্য যে, বিবেক ব্যক্তিকে প্রবৃত্তির উপর ঝাঁপিয়ে পড়া থেকে সজাগ করে এবং অপছন্দনীয় ও ক্ষতিকর বিষয়ের দিকে অগ্রসর হওয়া থেকে বাধা দেয়।
আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন। বিবেক হচ্ছে মানুষের মানবিকতার মূল ভিত্তি। তার স্বভাব-প্রকৃতির প্রধান উপাদান ও তার দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার মূল হেতু। এই আক্বল বা বিবেকের দ্বারাই মানুষ চিন্তা ও উপলব্ধি করতে পারে এবং তার উপর শরীআতের হুকুম এ কারণেই অর্পিত হয়। যার আক্বল নষ্ট হয়ে যায়, তার উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। হাসান বাছরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, যদি আক্বল বিক্রি করা যেত তাহলে মানুষ তার মূল্য নিয়ে সীমালঙ্ঘন করত। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো মানুষ তার সম্পদ দিয়ে এমন কিছু ক্রয় করছে যা তার আক্বলকে নষ্ট করে দেয়।
হে মুসলিমগণ! অএতব উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায়, নিশ্চয় মাদকদ্রব্য হচ্ছে আক্বল ও মনুষ্যত্ব এবং সম্মানকে বিনষ্টকারী বড় মাধ্যম। এর মধ্যে সকল প্রকার মাদক ও নেশাদার দ্রব্য অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে সকল প্রকার (নেশা সৃষ্টিকারী) পানীয়, ভোজ্য, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে অথবা ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় এমন তরল, কঠিন, ট্যাবলেট, পাউডার অথবা বায়বীয় আকারে যা কিছুই হোক তা মাদকদ্রব্য হিসাবে গণ্য হবে। আয়েশা ছিদ্দীক্বা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাঁর নামের কারণে মাদকদ্রব্যকে হারাম করেননি, বরং তার পরিণতির কারণে হারাম করেছেন। প্রত্যেক যে সকল পানীয় মাদকদ্রব্যের ন্যায় ক্ষতিকর তা মাদকের ন্যায় হারাম।[1] অতএব যা বিবেককে আচ্ছাদন ও বিকারগ্রস্ত করে এবং প্রত্যেক নেশাদার দ্রব্যই হলো মদ এবং সকল প্রকার মাদকদ্রব্যই হারাম। সুতরাং সকল প্রকার মাদকদ্রব্যই হাদীছে বর্ণিত ‘খামর’ নামের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, كلُّ مُسكِرٍ خمرٌ وكلُّ خمرٍ حرامٌ ‘যা নেশা সৃষ্টি করে, তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম’।[2] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, كُلُّ شَرَابٍ أَسْكَرَ فَهُوَ حَرَامٌ ‘যে সকল পানীয় নেশা সৃষ্টি করে, তা হারাম’।[3]
হে আল্লাহর বান্দাগণ! এ কারণে সকল ইসলামী ফক্বীহগণ মাদকদ্রব্য গ্রহণ, তার চাষাবাদ, উৎপাদন ও তাতে মানুষকে অভ্যাস করানো হারাম হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আমি আল্লাহর আশ্রয় চেয়ে আপনাদেরকে এসবের চোরাচালান ও প্রচলন করা থেকে নিষেধ করছি। এমনকি ইবনু আবেদীন রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি গাঁজাকে হালাল বলবে সে ধর্মত্যাগী ও বিদআতী। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যা রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, হাশীশ বা গাঁজা মদের চেয়েও অধিক নিকৃষ্ট; যা বিবেক ও মেজাজকে বিনষ্ট করে ফেলে।
হে সমবেত মুসলিমগণ! মাদবদ্রব্য হচ্ছে সকল অনিষ্ট, ক্ষতি, বিশৃঙ্খলা ও বিপদাপদের মূল। এটি অনিষ্টের গোপন আস্তানা এবং মাদকদ্রব্যের বিপদের কাছে অন্য সব বিপদাপদ তুচ্ছ। মাদক যুগের সবচেয়ে বড় মুছীবত। এটি বিবেক ও নফসকে নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে সম্মান বিনষ্ট হয় এবং এটি সকল অনিষ্ট ও খারাবির মূল। এটি সকল অনিষ্টের চাবিকাঠি ও শয়তানের কাজ। এর কারণে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ তৈরি হয় এবং এটি মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে। মাদক ছালাত থেকে বিমুখ করে দেয় এবং দ্বীন ও দুনিয়ার সকল সৎ আমল থেকে বাধা দেয়। এটি জীবনকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে, আত্মসম্মানবোধকে মিটিয়ে দেয়। মাদকাসক্ত ব্যক্তির থেকে নীতি-নৈতিকতা ও ধীরস্থিরতা দূর হয়ে যায়। এটি শুধু মানবজাতির মধ্যে বেহায়াপনা, নোংরামি ও ক্রোধ-বিদ্বেষেরই প্রসার ঘটায়। মাদক কতই না জীবনের আয়ুষ্কালকে কমিয়ে দিয়েছে! এর কারণে কত সম্পদের বিনষ্ট হয়েছে! কতই না ঘর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে! এর কারণে অনেক মানুষ বন্দী হয়েছে! অনেকের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে!
হে সম্মানিত ভাই! মাদকের কারণে আজ বহু ঘর থেকে বিষণ্নতার সংবাদ পাওয়া যায়। এছাড়া আরো কত গোপন রহস্য প্রকাশ পাচ্ছে, যেমন- একজন যুবক, যে তার যৌবনের উষালগ্নে স্বীয় রবের অনুগত ছিল, উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিল, গবেষণায় শ্রেষ্ঠ ছিল এবং সর্বোপরি একটি সুন্দর জীবনযাপন করছিল। কিন্তু হঠাৎ করে সেই যুবক খারাপ ও দুষ্ট সঙ্গীর সাহচর্যের ফাঁদে পা দেয়; যে সঙ্গীটি হিংস্র নেকড়ে সদৃশ ও ভ্রান্ত প্রতারক। ফলে হঠাৎ করেই তার সুন্দর জীবনটা ভেঙে খানখান হয়ে যায় এবং তার আলোকজ্জ্বল জীবনের প্রদীপ নিভে যায়। আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্য ফাসেক্বীতে এবং তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, তার সুন্দর চরিত্র অবাধ্যতা ও পশ্চাৎপদতায় রূপ নেয়। শুধু তাই নয়, সেই মেয়েটি যে তার পিতা-মাতার চক্ষু শীতলকারী ছিল। যে তার পরিবার-পরিজনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক ছিল। যে চরিত্র ও সৌন্দর্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের একজন ছিল। এরপর হিংসুটে ও পথভ্রষ্ট নারীরা তার নিকটবর্তী হওয়ার কারণে সেই দরিদ্র মহিলাটি তাদের পাতানো ফাঁদে ধরা দেয় এবং সে প্রতারকদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়। এরপর তার দরিদ্র অভিভাবক বুঝতে পারে না যে তাকে অপমান অপদস্থতার সাথে ধরে রাখবে নাকি মাটির মধ্যে পুঁতে দেবে!
হে মুসলিমগণ! এসকল নোংরামিতে নিমজ্জিত ব্যক্তি সুস্থ স্বাভাবিক চিন্তা করতে সক্ষম হয় না। সে সুন্দর কিছু নির্বাচন করতেও সক্ষম হয় না। মাদকাসক্ত ব্যক্তি নিজেকে, তার গবেষণাকে, তার কর্তব্যকে, তার সম্পদকে, তার সুখ্যাতিকে, তার সুস্থতাকে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সে একটি অথর্ব, অলস, উদ্বেগ উৎকণ্ঠা পূর্ণ নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে থাকে।
হে ভ্রাতৃমণ্ডলী! মাদক প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হচ্ছে দ্বীনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরা এবং উত্তম আখলাক লালন করা। আল্লাহর নির্দেশের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ও তাঁর শরীআতকে নিজের জীবনে ধারণ করা। আল্লাহ ফরযকৃত বিধান আদায় করা এবং তাঁর হারামকৃত বিধান থেকে দূরে থাকা। যখন দ্বীনের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন বিক্ষিপ্ত চিন্তা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের পথ সহজ হয়ে যায়।
হে মুসলিমগণ! আল্লাহর ইচ্ছায় পরিবার হলো সুন্দরভাবে সন্তানসন্ততির লালনপালনের আদর্শ জায়গা। পরিবার সামাজিক বিপদাপদ থেকে রক্ষার দুর্গ; অচিরেই এসকল সন্তানসন্ততিরা তাদের বাহিরের জীবনে যে বিপদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, আল্লাহর সাহায্যক্রমে একটি পরিবার সন্তানদের জীবনকে ভীতসন্ত্রস্ত করে এমন বিষয়কে প্রতিরোধ করতে পারে। পরিবারের অভিভাবকের উপর আবশ্যক হলো, তিনি পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে সর্বদা সজাগ থাকবেন এবং তাদের কাজের জবাবদিহিতা করবেন। তিনি সন্তানদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি সন্তানদের লালনপালনে যথেষ্ট সময় ব্যয় করবেন। তিনি মনোযোগ সহকারে সন্তানদের কথা শুনবেন, তাদের সাথে ভালো সময় অতিবাহিত করবেন। তিনি তাদেরকে গুরুত্ব দিবেন এবং তাদের সাথে পারস্পরিক আলাপচারিতায় লিপ্ত হবেন। তিনি সন্তানদের সমস্যাগুলো দেখবেন এবং তারা যে চিন্তাভাবনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেদিকে নযর রাখবেন।
এছাড়া তাদের মাঝে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা ও তাদের প্রতি কঠোরতা আরোপ এবং যথাসম্ভব শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরী। তাদের প্রতি তিরস্কার করা, কঠোরতা আরোপ করা এবং তাদেরকে বাড়ির বাহিরে রাত্রি জাগরণ করতে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অভিভাবকের জন্য সন্তানদের বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্টজনদের ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং তাদেরকে খারাপ সঙ্গ থেকে বিরত রাখা জরুরী। আর নিঃসন্দেহে অসৎ সঙ্গ অসুস্থতার ঘর।
হে উপস্থিত মুসলিমগণ! মাদক প্রতিরোধ ও মাদক সম্পর্কে সতর্কীকরণে অংশগ্রহণ করা সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করুন এবং তাদেরকে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার তাওফীক্ব দিন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়, মসজিদসমূহে আহলুল ইলমগণ ভূমিকা রাখবেন। লেখক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকার কর্মী, অর্থনীতিবিদ, চিকিৎসক, ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ - إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তিরসমূহ তো শয়তানের নাপাক কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও। শয়তান শুধু মদ-জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (আল-মায়েদা, ৫/৯০-৯১)।
أقول قولي هذا وأستغفِر اللهَ لي ولكم ولسائر المسلمين...
দ্বিতীয় খুৎবা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যার রহমত সীমালঙ্ঘনকারীদের বেষ্টন করে রেখেছে এবং যার নেয়ামত গণনাকারীদের অপারগ করে দিয়েছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। যার কাছে তওবার মাধ্যমে বড় পাপীরাও ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। তাঁর উপরে দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক। আর শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক তাঁর সম্মানিত পরিবার, ছাহাবীগণ, তাবেঈগণ ও তাদের পরবর্তী অনুসরণকারীদের উপর।
অতঃপর, হে মুসলিমগণ! এই ভয়াবহ বিপদ থেকে সামাজিকভাবে ও ব্যক্তি পর্যায়ে সতর্ক করা সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য। কেননা এ ব্যাপারে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে তা খুবই ভীতিকর। এছাড়া মাদকের চোরাচালান ও প্রসার ক্রমেই অভিভাবকদের আতঙ্কিত করে তুলছে। এজন্য মাদক প্রতিরোধে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এগিয়ে আসা খুবই জরুরী।
হে মানুষ সকল! আপনারা সকলেই (মাদক প্রতিরোধে) এ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর সাথে পূর্ণমাত্রায় সহযোগিতা করুন। আর আমাদের রাষ্ট্র এই ভয়াবহ মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে তীব্র অভিযান পরিচালনা করছে; এতে নিরাপত্তা, সামাজিক ও স্বাস্থ্যবিষয়ক সকল এজেন্সিগুলো একযোগে তাদের সকল উপাদানগুলো ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
সাবধান! আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আল্লাহ আপনাদের প্রতি রহম করুন। জেনে রাখুন! নিশ্চয় মাদক প্রতিরোধে সকল সমাজের অবস্থান এক ও অভিন্ন। এটি মানুষকে পরিশুদ্ধ করার লড়াই। অতএব সকলের জন্য এই ভয়ংকর শত্রুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিপূর্ণ সাহায্য সহযোগিতা করা আবশ্যক।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে সকল ধরনের বালা-মুছীবত থেকে সুস্থতার ফরিয়াদ জানাচ্ছি। আপনাকে সুস্থতা দানের জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে সকল অপছন্দনীয়, মন্দ জিনিসের অপনোদন চেয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
[1]. দারাকুত্বনী, হা/৪৭২৯।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০০৩।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/২০০১।