কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশান্ত হৃদয়ের কল্যাণসমূহ এবং বিপদগ্রস্তদের সাহায্য করার ফযীলত

post title will place here

[১৯ রজব, ১৪৪৪ হি. মোতাবেক ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খ. বান্দার ইবনে আব্দুল আযীয বালীলাহ হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথম খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। যাবতীয় প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য যিনি সকল পরিপূর্ণতার একচ্ছত্র অধিকারী এবং সঙ্গী ও পরিবার থেকে মুক্ত। আমি মহাপবিত্র সেই সত্তার অফুরন্ত নেয়ামতের প্রশংসা জ্ঞাপন করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক ও তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন এবং তাঁর নিজের ও পরিবারবর্গ, ছাহাবীগণ, তাবেঈ ও তাবে‘ তাবেঈনের প্রতি কল্যাণ অবতীর্ণ করুন।

অতঃপর, হে মানুষ সকল! আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আপনারা নিজেদেরকে আশা-আকাঙ্ক্ষার ধোঁকা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন; কেননা দুনিয়া থেকে আপনাদের প্রস্থান সন্নিকটে। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেকেই চিন্তা করে দেখুক, আগামীকালের জন্য সে কী (পুণ্য কাজ) অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে পুরোপুরি খবর রাখেন’ (আল-হাশর, ৫৯/১৮)

হে মুসলিমগণ! মানুষের সবচেয়ে দামী ও মর্যাদাকর অঙ্গ হলো তার ক্বলব বা অন্তর। এটি তার সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মূল। অন্তরের সংশোধনই পুরো শরীরের সংশোধন এবং অন্তরের ফাসাদ তার পুরো শরীরেরই বিপর্যয় সৃষ্টির নামান্তর। নু‘মান ইবনু বাশীর রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরোটি হলো অন্তর’।[1]

ক্বলব বা অন্তর মূলত সকল শক্তির উৎস, রূহের বিশ্রামস্থল এবং ঈমানের সংরক্ষণাগার। অন্তর রবকে পর্যবেক্ষণ ও তাঁকে সন্তুষ্ট করার জায়গা। অন্তর তার মালিকের জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে, যদি তা রবের নিকটে আগমনের দিন সুস্থ থাকে। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,﴿يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَلَا بَنُونَ - إِلَّا مَنْ أَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيمٍ﴾ ‘যেদিন ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোনো উপকারে আসবে না। তবে যে আল্লাহর কাছে আসবে সুস্থ অন্তরে’ (আশ-শুআরা, ২৬/৮৮-৮৯)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চালচলন ও বিত্ত-বৈভবের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর ও আমলের প্রতি’।[2]

হে আল্লাহর বান্দাগণ! অন্তরের রক্ষণাবেক্ষণ, তার পবিত্রকরণ ও সংশোধন অত্যাবশ্যক এবং আল্লাহর নিকটে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। অন্তরের পরিশুদ্ধতার মধ্যেই বান্দার সফলতা, ‍মুক্তি, সৌভাগ্য ও সুখস্বাচ্ছন্দ্য নিহিত রয়েছে। অন্তরের ‍সুখ ব্যতীত কি কোনো সুখ হতে পারে? অন্তরের শাস্তি ব্যতীত কি কোনো শাস্তি হতে পারে?

জেনে রাখুন! নিশ্চয় অন্তরের সুখস্বাচ্ছন্দ্য লাভের কতগুলো কারণ, মাধ্যম বা স্তর রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ও সর্বোত্তমটি হলো, আল্লাহ তাআলার জন্য একনিষ্ঠ হওয়া। অর্থাৎ বান্দা তার অন্তরকে রবের প্রতি সম্পৃক্ত করবে। বান্দা তার কথা ও কাজ একমাত্র মহান রবের জন্য নিবেদন করবে; পৃথিবীর কোনো সৃষ্টির জন্য নয়।

আনুগত্যের কাজ অন্তরকে শুদ্ধ রাখে। যেমন শরীআতের ফরয, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজসমূহ। আনুগত্যের কাজ অন্তরকে আলোকিত করে, তাকে শক্তিশালী করে এবং সুদৃঢ় রাখে। এর বিপরীতে পাপ ও নাফরমানীর কাজ অন্তরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন, পথভ্রষ্ট ও অসুস্থ করে তোলে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘চাটাই বুননের মতো এক এক করে ফেতনা মানুষের অন্তরে আসতে থাকে। যে অন্তরে তা গেঁথে যায় তাতে একটি করে কালো দাগ পড়ে। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করবে তাতে একটি উজ্জ্বল দাগ পড়বে। এমনি করে দুটি অন্তর দু’ধরনের হয়ে যায়। একটি সাদা পাথরের ন্যায়; আসমান ও যমীন যতদিন থাকবে ততদিন কোনো ফেতনা তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর অপরটি হয়ে যায় উলটানো সাদামিশ্রিত কালো কলসির ন্যায়, তার প্রবৃত্তি যা গ্রহণ করেছে তা ছাড়া ভালো-মন্দ বলতে সে কিছুই চিনে না’।[3]

হে মুসলিমগণ! আল্লাহর যিকির অন্তরের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, এর মাধ্যমে রূহ প্রাণবন্ত হয়। এটি এমন আলো যার আলোয় অন্তর আলোকিত হয়। আল্লাহর যিকির অন্তরের প্রতি শরীরের জন্য খাদ্য এবং শস্যের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তার অনুরূপ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ﴿أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ﴾ ‘জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়’ (আর-রা‘দ, ১৩/২৮)। হাদীছের মধ্যে এসেছে- জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ইসলামের শরীআতের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় জানান, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারি। তিনি বললেন, ‘সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহ তাআলার যিকিরের দ্বারা সিক্ত থাকে’।[4]

আর যে ব্যক্তি পাপ কাজ করে সে যেন আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করে। কেননা ইস্তেগফার হলো পাপকে মোচনকারী এবং অন্তরকে পরিশুদ্ধকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾ ‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনেশুনে তা তারা বারবার করে না’ (আলে ইমরান, ৩/১৩৫)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إنَّه لَيُغانُ على قَلبِي، وإنِّي لَأسْتَغْفِرُ اللهَ في اليومِ مئةَ مرةٍ ‘আমার অন্তরে কখনো কখনো অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি’।[5]

আর যখন বান্দা তেলাওয়াত, আমল ও চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে কুরআনের অভিমুখী হয় তখন তার অন্তর নরম হয়ে যায় এবং কল্যাণ তাকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে। আর এমনটা কেনই বা হবে না? অথচ আল্লাহর কিতাব ভ্রষ্টতা থেকে সঠিক পথ প্রদর্শনকারী। এটি অজ্ঞতার অন্ধকারকে বিতারণকারী এবং শরীর ও অন্তরের ব্যাধি থেকে আরোগ্য দানকারী এবং সর্বোপরি দ্বীনী ও দুনিয়াবী সকল কাজে হেফাযতকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِلْمُؤْمِنِينَ﴾ ‘হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের কাছে এসেছে নছীহত আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তার নিরাময়, আর মুমিনদের জন্য সঠিক পথের দিশা ও রহমত’ (ইউনুস, ১০/৫৭)

হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আর জেনে রাখুন, নিশ্চয় বান্দার মর্যাদা তার রবের নিকটে তার অন্তরের অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ বান্দা তার অন্তরের নিষ্ঠার কারণে তার রবের নিকটবর্তী হয় অথবা অন্তরের কঠোরতার জন্য সে তার রব থেকে দূরে চলে যায়; আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِنْ تَكُونُوا صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلْأَوَّابِينَ غَفُورًا﴾ ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে তোমাদের রবই অধিক জ্ঞাত। যদি তোমরা নেককার হও তবে তিনি তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারীদের প্রতি অধিক ক্ষমাশীল’ (বানী ইসরাঈল, ১৭/২৫)

باَرك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم…

দ্বিতীয় খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা আল্লার জন্য যিনি একচ্ছত্র মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। তাঁর হুকুম ও ইচ্ছায় সকল কিছু পরিচালিত হয়। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন এবং তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবীগণ ও তাঁর পদাঙ্ক ও সুন্নাহর অনুসারী সকলের প্রতি বরকত নাযিল করুন।

অতঃপর, হে মুমিনগণ! আল্লাহর জন্য তাঁর সৃষ্টিজগতে অগণিত প্রকাশ্য নিদর্শন এবং উজ্জ্বল মু‘যিযা রয়েছে যা সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্ব ও তাঁর সৃষ্টির সৌন্দর্যের সাক্ষ্য বহন করে। এটি চিন্তাভাবনা, নিরীক্ষণ ও দৃঢ় বিশ্বাসের পথ দেখায়। তারা কি এই যমীনের দিকে লক্ষ করে না, যা থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে? আর তাতেই তারা জীবনযাপন করে। এই যমীনের ‍উপর তোমরা বিচরণ করছ এবং এর ভিতরেই তোমাদেরকে দাফন করা হবে। আল্লাহ তাআলা যমীনকে করেছেন বিছানা ও আবাসস্থলস্বরূপ। এর মধ্যে আপনাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহস্বরূপ অফুরন্ত খাদ্য রিযিক্ব হিসাবে দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কখনো সতর্কতাস্বরূপ যমীনে ভূমিকম্প দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ﴾ ‘আর অবশ্যই আমি তো তোমাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ’ (আল-আ‘রাফ, ৭/১০)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ﴿اللهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ قَرَارًا﴾ ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে স্থিতিশীল করেছেন’ (আল-মুমিন, ৪০/৬৪)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ ذَلُولًا فَامْشُوا فِي مَنَاكِبِهَا وَكُلُوا مِنْ رِزْقِهِ وَإِلَيْهِ النُّشُورُ﴾ ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে-প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তাঁর রিযিক্ব থেকে তোমরা আহার করো। আর তাঁর নিকটই পুনরুত্থান’ (আল-মুলক, ৬৭/১৫)

জেনে রাখুন! নিশ্চয় ভূমিকম্প হয় বান্দার অন্তরকে সতর্ক করার জন্য এবং কঠিনতার পরে তাকে নরম করার জন্য যাতে সে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ও বিনয়ী হয়। এছাড়া অন্তর যেন তাঁর নিষেধকৃত কাজ থেকে দূরে থাকে এবং তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে।

কিছু মানুষ মুসলিম জনপদে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আল্লাহর সকল ফয়সালার ক্ষেত্রে একমাত্র তাঁরই প্রশংসা। তিনি কাউকে সুখস্বাচ্ছন্দ্য ও ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন আবার কাউকে দান করা বা বঞ্চিত করার মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি ধৈর্যশীলদের স্বীয় দয়া ও হেদায়াতের মাধ্যম পুনর্বহাল করেন। বালা-মুছীবতের ক্ষেত্রে আল্লাহর পূর্ণ রহমত ও হিকমাহ রয়েছে। আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকটে আশা করছি তিনি ঐ সকল বিপদগ্রস্ত মানুষকে তাঁর নিরাপত্তা বলয়ে আশ্রয় দিবেন। আমরা দু‘আ করছি আল্লাহ তাদের অসুস্থদের সুস্থ করে দিন এবং আঘাতপ্রাপ্তদের সাড়িয়ে তুলুন এবং তাদের মৃতদের উপর দয়া করুন।

এই পবিত্র ভূমি সঊদী আরব তাদের এই ভয়াবহ বিপদে বড় সহযোগী হয়েছে। তারা তাদের দিকে সাহায্য ও দানের হাতকে প্রসারিত করেছে। এটি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কল্যাণ ও দানশীলের বাগানে পরিণত হয়েছে। হারামাইনের খাদেমের প্রতি শুকরিয়া এবং মহামান্য যুবরাজ যে সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন এবং ইতোমধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের উভয়কে উত্তম প্রতিদান দিন।

হে সামর্থবান ব্যক্তিগণ! আপনাদেরকে যেন এই ভয়াবহ দুর্দিনে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তাদেরকে সহযোগিতার এই কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে কোনো কিছুই বিরত রাখতে না পারে। আল্লাহ ততক্ষণ বান্দার সহযোগিতায় থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকেন।

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীগণ এবং ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত ঈমানের সাথে তাঁর অনুসরণকারীদের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে আমাদের জনপদে নিরাপদে রাখুন। আমাদের নেতা ও শাসকদের সংশোধন করুন। আমাদের ইমাম ও শাসকদেরকে হক্বের পথে সুদৃঢ় রাখুন। হে আল্লাহ! আমাদের নেতা ও শাসকদেরকে দেশের ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার তাওফীক্ব দিন। হে আল্লাহ! আমাদের সৈনিকদেরকে তাদের সীমানা পাহারার কাজে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের জন্য সাহায্যকারী ও সহযোগী হয়ে যান। হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকটে উপকারী ইলম চাই। প্রশস্ত রিযিক্ব চাই। সৎ ও গ্রহণযোগ্য আমলের তাওফীক্ব চাই। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সকল বিষয়ে সুন্দর পরিণতি দান করুন। আমাদেরকে দুনিয়াবী বঞ্চনা ও পরকালীন শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,﴿رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنْزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ﴾ ‘হে আমাদের রব, আপনি যা নাযিল করেছেন তার প্রতি আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। অতএব, আমাদেরকে সাক্ষ্যদাতাদের তালিকাভুক্ত করুন’ (আলে ইমরান, ৩/৫৩)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,﴿رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ﴾ ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন। আর আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন’ (আল-বাক্বারা, ২/২০১)

ছালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর যিনি সত্য নিয়ে আগমন করেছেন। হে আল্লাহ! আপনি ইসলাম ও মুসলিমদের শক্তিশালী করুন এবং আপনার তাওহীদপন্থি বান্দাদেরকে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গসহ তাঁর সহচরবৃন্দের উপর রহমত নাযিল করুন।


[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯।

[2]. ছহীহ বুখারী, হা/২৫৬৪।

[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪।

[4]. তিরমিযী, হা/৩৩৭৫; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৯৩।

[5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭০২।

Magazine