[২৪ মুহাররম, ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১১ আগস্ট, ২০২৩ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. আব্দুল বারী ইবনু আওয়ায আছ-ছুবাইতী হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। তিনি তাদের প্রতি আদেশ-নিষেধ পাঠিয়েছেন এবং তাদেরকে অনর্থক ছেড়ে দেননি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। এছাড়া তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী ও তাঁর সমস্ত অনুরাগীদের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
অতঃপর, আমি নিজেকে ও আপনাদের প্রতি আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। তাক্বওয়া অবলম্বনই একমাত্র নাজাতের পথ এবং দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্য লাভের রাস্তা।
পরিবার হলো সমাজ গড়ার ভিত্তি এবং তার অস্তিত্বের প্রথম ধাপ। উচ্চ অবস্থান ও মর্যাদার কারণে এটা শারঈ বিধানে পরিপূর্ণ অংশ পেয়েছে; যা স্বামী-স্ত্রীর অধিকারের রূপরেখা, কর্তব্য নির্ধারণ এবং দক্ষতার পার্থক্য বর্ণনা করেছে। ইসলামী আইন প্রতিটি স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সক্ষমতা ও মনস্তাত্ত্বিক বিবেচনায় কোনটি উপযুক্ত এবং তাদের যোগ্যতা ও সামর্থ্যের জন্য কোনটি মানানসই তা আমলে নিয়েছে। যাতে তাদের সম্পর্ক পরিপূর্ণতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার সাথে হয়। যা একটি পরিবারকে মযবূত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে এবং শিক্ষায়, চরিত্র গঠনে, নৈতিকতা পরিমার্জনে, জ্ঞান ও ঈমানের বলয়ে সুরক্ষিত একটি প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে সক্ষম হয়।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি মাত্রই দ্বিমত পোষণ করবেন না যে, প্রত্যেক স্বামীই একটি স্থিতিশীল ও প্রশান্তিময় পরিবার গড়ে তুলতে চায়। যা তাদের নিজেদের, সন্তানদের এবং সমাজের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারে।
পরিবারে স্ত্রীর এমন ভূমিকা রয়েছে যা অন্য কেউ পূরণ করতে পারে না। তিনি হলেন শিষ্টাচার শিক্ষাদাতা, উপদেশদাতা ও বিজ্ঞ মতামত প্রদানকারী। তিনি স্বামীর জন্য শক্তিশালী অবলম্বন এবং পরিবারের জন্য স্তম্ভ, তাদের প্রতি অবারিত দয়া, অপ্রতিরোধ্য করুণা, আবেগ প্রকাশকারী আর মমতাময়ী মা। তার বিদায় একটি পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করে, এমনকি তা পরিবারের মূল ভিতকে কাঁপিয়ে দেয় এবং তার অনুপস্থিতি কেবল পরিবারকেই দুর্বল করে না; বরং সমাজের স্তম্ভগুলোকেও অস্থিতিশীল করে তোলে।
উল্লেখ্য যে, একটি প্রতিষ্ঠান, কোম্পানি বা কাঠামোর কার্যকারিতা যথার্থ হয় না একজন পরিচালক ছাড়া, যিনি এটি পরিচালনা করবেন এবং এর বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক। এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে’ (আন-নিসা, ৪/৩৪)।
অভিভাবকত্ব হলো এমন একটি ক্ষমতা যা স্বামীকে পরিবারের বিষয়গুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার অধিকার দেয়; যার ফলে তিনি পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক হন এবং তিনি এর যত্ন নেন ও সংরক্ষণ করেন। স্ত্রী-সন্তানদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন এবং পরিবারের শিক্ষা ও যত্নের বিষয়ে সচেষ্ট থাকেন।
এমন দৃশ্যও দেখা যায় যে, কিছু লোক অভিভাবকত্বকে বুঝতে এবং এ কেন্দ্রিক আচরণে ভুল করে বসে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে একটি খোলা তরবারিতে পরিণত করেন যা দিয়ে তিনি নিপীড়ন, অত্যাচার ও জবরদস্তির চর্চা করেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, গৃহে তিনিই একমাত্র কর্তা যার আনুগত্য করা হয়, যার কোনো আদেশ বা নিষেধ প্রত্যাখ্যান করা যায় না এবং যার কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মতামতও গ্রহণ করা হয় না। কখনো তিনি স্ত্রীর মতের বিরুদ্ধে তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। আবার কখনো স্বামীর এই অভিভাবকত্ব স্ত্রীর মর্যাদা হ্রাস করতে এবং তার উপর সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দিতে অথবা তাকে কষ্ট দিতে, তাকে অপমান করার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বস্তুত এমন আচরণ স্ত্রীর প্রতিভা ও সামর্থ্যকে হ্রাস করে। তার ব্যক্তিত্ব, দায়িত্ব গ্রহণ ও সন্তানদের লালনপালনে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতাকে নষ্ট করে এবং সামগ্রিকভাবে পরিবারে অবদান রাখার মনোভাবকে নষ্ট করে।
কিছু স্বামী তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্বকে খাদ্য, পানীয় এবং বাসস্থানের নিরাপত্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। অভিভাবকত্বের উপর দায়বদ্ধতার পরিমাণ এবং আমানতদারিতার আকার বুঝতে পারে না। সে দায়িত্বের রশিকে পাশে রেখে দেয়, নিজ কাঁধে অর্পিত দায়িত্ব থেকে মুক্ত থাকে এবং সে ভুলে যায় অথবা ভুলে যাওয়ার ভান করে যে, ক্বিয়ামতের দিন সে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তার একমাত্র চিন্তা থাকে যে, সে নিজের দায়বদ্ধতাকে উপেক্ষা করে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকবে, এর আগে-পরে বাড়ির বাইরে গল্প-আড্ডায় যোগ দিবে বা খেলাধুলার সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে। এই বাজে অভ্যাসগুলো এমন একটি পরিবার তৈরি করে যার বন্ধন ও কাঠামো খুব দুর্বল হয় এবং এতে খুব সহজেই পরিবারে ভাঙন ধরে, উদ্দেশ্য চরিতার্থকারী ও কুচিন্তার লোকদের ফাঁদে পড়ে।
অভিভাবকত্ব একটি দায়িত্ব এবং এই দায়িত্বটির সাথে পুরস্কার ও শাস্তি জড়িত থাকে। যদি একজন পুরুষ তার অভিভাবকত্বের দায়িত্বগুলো ভালোভাবে সম্পাদন করে, তবে সে পুরস্কৃত হবে। পক্ষান্তরে যদি সে তাতে অবহেলা করে ও ত্রুটি করে, তবে সে নিজেকে আল্লাহর শাস্তির মুখোমুখি করবে। আর এই কারণে স্বামীর জন্য নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ধারণ করা, দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হওয়া এবং আল্লাহ যা দিয়ে তাকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন তার মূল্য উপলব্ধি করা জরুরী। ফলে তিনি এই মহান দায়িত্বকে শরীআতের আলোকে পরিচালিত করবেন, তিনি কঠিন পরিস্থিতিতে সংযম ও বিবেকের উদ্রেক ঘটাবেন, তিনি আবেগ দেখানোর ব্যাপারে সহনশীল হবেন এবং ক্রোধের সময় ধৈর্যশীল হবেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ خُلُقًا ‘তোমাদের মধ্যে ঈমানে পরিপূর্ণ মুসলিম হচ্ছে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি। যেসব লোক নিজেদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম তারাই তোমাদের মধ্যে অতি উত্তম’।[1]
অভিভাবকত্বের দাবি হলো, লোকদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি আহ্বান জানানো এবং ইসলামের আচার-অনুষ্ঠান যেমন— ছালাত, ছিয়াম ইত্যাদির প্রতি উৎসাহিত করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا ‘আর তোমার পরিবার-পরিজনকে ছালাত আদায়ের আদেশ দাও এবং নিজেও তার উপর অবিচল থাকো’ (ত্ব-হা, ২০/১৩২)। এছাড়া অভিভাবকত্বের আরও দাবি হলো, জীবনসঙ্গিনীর প্রতি সদাচরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ‘আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করো’ (আন-নিসা, ৪/১৯)। সদাচরণের মধ্যে রয়েছে, স্ত্রীর প্রতি ভালো আচরণ করা, সুন্দরভাবে কথা বলা, শিষ্টাচারপূর্ণ সংলাপ করা ও সাধ্যের বাইরে কিছু তার উপর না চাপানো। এছাড়া তার জীবনকে সুখ-আনন্দে ভরে দেওয়া, তার দুর্বলতা ও অপারগতাকে উপেক্ষা করে চলা, শান্তি বিঘ্নিত করে এমন বিষয়কে এড়িয়ে চলা, তার ভুলত্রুটি মার্জনা করা এবং সর্বোপরি তার জন্য নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপন করা। ইবনু আব্বাস রযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য সাজতে পছন্দ করি যেমন আমার জন্য তার সাজগোজ করাকে পছন্দ করি’।
অভিভাবকত্বের আরেকটি দাবি হলো, সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা করবে, তার দোষত্রুটিগুলো প্রকাশ করবে না এবং স্ত্রী ও পরিবারের লোকদেরকে অপমান বা অভিশাপ দেওয়া থেকে সতর্ক থাকবে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِىءِ ‘মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না’।[2] অন্য একটি হাদীছে তিনি আরো বলেন, إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِى إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِى إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا ‘ক্বিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়’।[3]
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিম্নোক্ত কথার মধ্যে সকল দায়িত্ববোধের কথা ফুঠে উঠেছে। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, اسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا ‘তোমরা নারীদের প্রতি কল্যাণকামী হও’।[4]
অভিভাবকত্বের আরেকটি দাবি হলো, স্ত্রীর সাথে আচরণের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার করা, তার অধিকার ও কর্তব্য পালনে ন্যায়পরায়ণ হওয়া এবং আচরণে আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ অনুসরণ করা। নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আচরণ ছিল এমন যে তিনি ছিলেন পরিবারের প্রতি সদাচরণকারী, পরিবারের প্রতি স্নেহশীল, উদারভাবে তাদের জন্য খরচকারী এবং স্ত্রীদের আনন্দ দানকারী। তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলেন। তিনি তার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করতেন এবং তার সকল প্রয়োজন পূরণ করতেন। একটি ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে থাকা অবস্থায় কী করতেন? তিনি বললেন, ঘরের কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থাৎ পরিবারবর্গের সহায়তা করতেন। আর ছালাতের সময় হলে ছালাতের জন্য চলে যেতেন।[5]
পরস্পর পরামর্শ গ্রহণ ইসলাম দ্বারা উৎসাহিত একটি নীতি এবং পরিবারের মধ্যে এর চর্চা থাকা পরিবারকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করে, পরিবারের সদস্যদেরকে দায়িত্ব পালনে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَنْ تَرَاضٍ مِنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا ‘অতঃপর তারা যদি পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে তাদের কোনো পাপ হবে না’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩৩)।
স্ত্রী হচ্ছেন জীবন ও দায়িত্বের একজন অংশীদার, আল্লাহ তাকে যে বিবেক, হৃদয় ও আবেগ দিয়েছেন তা দিয়ে তিনি নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করতে সক্ষম। শরীআত তাকে গৃহ পরিচালনা এবং স্বামী ও সন্তানদের দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন। ফলে স্বামীর জন্য কর্তব্য হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে শরীক করা, তাকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া এবং তাকে যথাযোগ্য সম্মান করা। তবে স্বামীর কেবল ভালো কাজে স্ত্রীর আনুগত্য পাওয়ার অধিকার রয়েছে, সব বিষয়ে নয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لاَ طَاعَةَ فِى مَعْصِيَةِ اللَّهِ إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوفِ ‘আল্লাহর অবাধ্যতা হয় এমন কাজে আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল ভালো কাজে’।[6]
নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন পুরুষদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ও তাদের প্রধান নেতা, তবুও তিনি উম্মু সালামা রযিয়াল্লাহু আনহা-এর নিকট শুধু পরিবারসংক্রান্ত নয়, জাতির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়েও পরামর্শ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ (আন-নিসা, ৪/৩৪)। এখানে পুরুষজাতির প্রতি ইঙ্গিতের দ্বারা মূলত এমন পুরুষের কর্তৃত্বের প্রতি গুরুত্ব নির্দেশ করা হয়েছে যার মধ্যে পুরুষত্বের গুণাবলি বিদ্যমান রয়েছে, যেমন— মননশীলতা, প্রজ্ঞা, ধৈর্য, দূরদৃষ্টি, কথোপকথনের ক্ষমতা, পরিবারের সদস্যদের বুঝা ও তাদেরকে সম্মান করা, তাদের মতামত গ্রহণ করা, নরম মেজাজের অধিকারী হওয়া, তুচ্ছ বিষয় এড়িয়ে চলা, দোষ খুঁজে বের করা থেকে দূরে থাকা, সকল সমস্যা সমাধানে দক্ষ হওয়া ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম’।[7]
بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإيَّاكم بما فيه...
দ্বিতীয়খুৎবা
সমস্ত প্রশংসা আল্লার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। এছাড়া তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী ও তাঁর সমস্ত অনুরাগীদের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
অবশ্যই এটা জানা উচিত যে, অভিভাবকত্বের অন্যতম দাবি হলো স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্যসমূহ পালন করা। আর এসব কর্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে— সদয়ভাবে স্বামীর আনুগত্য করা, তার অনুমতি ছাড়া বাইরে না যাওয়া, স্বামী অপসন্দ করে এমন লোককে ঘরে প্রবেশ করতে না দেওয়া এবং স্বামী ও তাদের সন্তানদের বিষয়ে যত্ন নেওয়া ইত্যাদি। বস্তুত, স্ত্রীর সম্মান ও মর্যাদা তার স্বামীর আনুগত্যের মধ্যে নিহিত।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার নিকট যাবতীয় কল্যাণ কামনা করছি এবং যাবতীয় মন্দ হতে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের তওবা কবুল করুন, আমাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে পরিষ্কার করে দিন, আপনি আমাদের হুজ্জতকে সুদৃঢ় করুন, আমাদের ভাষাকে সঠিক করে দিন। আমাদের অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন; তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।
অনুবাদক: আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
[1]. তিরমিযী, হা/১১৬২, হাসান ছহীহ; আবূ দাঊদ, হা/৪৬৮২।
[2]. তিরমিযী, হা/১৯৭৭, হাদীছ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহা, হা/৩২০ ।
[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৩৭; ।
[4]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৮।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৬।
[6]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০।
[7]. ইবনু মাজাহ, হা/১৯৭৭, হাদীছ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৮৫।