[১৭ রজব, ১৪৪৬ হি. মোতাবেক ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. আব্দুল বারী ইবনু আওয়ায আছ-ছুবাইতী হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, এমন প্রশংসা যার ব্যাপ্তি অপরিসীম। যার পুরস্কার কখনো বন্ধ হয় না এবং যার গুণকীর্তন করে শেষ করা যায় না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। যিনি দৃশ্যমান কোনো খুঁটি ছাড়াই আসমানসমূহকে সুউচ্চে স্থাপন করেছেন। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। যাকে মহান আল্লাহ হেদায়াত ও রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন আর তিনি এমন এক আলোকবর্তিকা ছিলেন, যার দেখানো পথই অনুসরণীয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর, তাঁর বংশধরদের উপর, সমস্ত ছাহাবী ও তাঁর অনুসরণকারীদের উপর দরূদ অবতীর্ণ করুন।
অতঃপর, আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতি অবলম্বনের অছিয়ত করছি, যাকে আল্লাহ তাআলা নাজাতের পথ ও মুমিনদের পাথেয় হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং এর মাধ্যমে আনুগত্যশীলদেরকে মুত্তাক্বীদের স্তরে উন্নীত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল বস্তু থেকে এবং দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন। আর শক্তির পর তিনি আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)। এই আয়াতটি জীবনের গতিপথকে প্রজ্ঞাপূর্ণ ভাষায় ও গভীর তাৎপর্যের সাথে সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছে। এতে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ চিত্রিত হয়েছে। যার শুরু হয় দুর্বল শৈশব থেকে এবং শেষ হয় শক্তিধর হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর আবার মানুষ ধীরে ধীরে বার্ধক্যের মোড়কে দুর্বলতায় ফিরে আসে। এই আয়াতটি মানুষের বিবেককে জাগ্রত করে; যাতে সে মানবীয় দুর্বলতা বুঝতে পারে এবং অন্তরকে যেন সকল প্রয়োজনে সর্বদা আল্লাহর প্রতি নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করাতে পারে।
আয়াতটি আমাদের সৃষ্টির বিভিন্ন ধাপ, শক্তি ও দুর্বল অবস্থার পরিবর্তন এবং মহান আল্লাহর সর্বময় ক্ষমতা সম্পর্কে চিন্তা করতে আহ্বান করে; যেই ক্ষমতা এই গতিপথকে প্রজ্ঞা ও নিপুণতার সাথে পরিচালনা করছে। সকল কিছুর ক্ষমতা তাঁর হাতেই। তাঁর থেকেই সবকিছুর শুরু হয় এবং তাঁর নিকটে গিয়েই আবার শেষ হয়।
শৈশবকাল জীবন ডায়েরির প্রথম পাতা। এ জীবন নিষ্পাপ ও দুর্বলতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়, যাকে আল্লাহর দয়া ও রহমত আবৃত করে রাখে। এমন ছোট্ট শিশু অবস্থায় তার জীবনের সূচনা হয়, যার নিজের কোনো কিছুই করার ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু মহান আল্লাহ তার চারপাশের মানুষের হৃদয়ে তার জন্য মমতা ও ভালোবাসা সঞ্চার করেন এবং তাকে এমন কিছু হাত দ্বারা বেষ্টন করে রাখেন, যে হাতগুলো তাকে লালনপালন করে এবং তার দুর্বলতাকে লাঘব করে। এটি এমন এক বিস্ময়কর চিত্র, যা আল্লাহর মহাব্যবস্থাপনার দিকটি প্রমাণ করে। মহান আল্লাহ এই দুর্বল শিশুকে এমনভাবে রক্ষা ও সাহায্য করেন, যা তার কল্পনাতেও ছিল না। মানব সন্তান মাতৃগর্ভের অন্ধকার থেকে এমন অবস্থায় বের হয়ে আসে, যখন তার কোনো জ্ঞান বা ক্ষমতা থাকে না, সম্পূর্ণ অপারগ ও এক চরম অজ্ঞতার মধ্যে তার জন্ম হয়। এরপর আল্লাহ তাআলা তার জন্য জ্ঞানের দরজা খুলে দেন এবং তাকে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও আকল দান করেন, যার মাধ্যমে সে শিক্ষা ও জ্ঞানের উৎসের সন্ধান লাভ করে। মানুষ যে জ্ঞান বা শক্তি অর্জন করে, তা কেবল আল্লাহর অনুগ্রহ ও দান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে বের করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ থেকে এমতাবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানতে না। তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন শ্রবণশক্তি, চক্ষু ও অন্তর। যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর’ (আন-নাহল, ১৬/৭৮)।
এই বাস্তবতা মানুষের অন্তরে দাসত্বের শিষ্টাচার এবং হৃদয়ে আনুগত্যশীলদের বিনয়-নম্রতার বীজ বপন করে। তাই কখনোই মানুষের জন্য স্বীয় জ্ঞানের কারণে অহংকার করা বা স্বীয় শক্তির কারণে ধোঁকায় পতিত হওয়া উচিত নয়।
মানুষের উপলব্ধি করা উচিত যে, তার শক্তির প্রতিটি বিন্দু ও দেহের নড়াচড়া করার ক্ষমতা আল্লাহর এক বিশেষ অনুগ্রহ, যা তাঁর জন্য স্থায়ী কৃতজ্ঞতা ও পূর্ণাঙ্গ আনুগত্য প্রকাশকে আবশ্যক করে। কাজেই বান্দা যত উঁচু মর্যাদার অধিকারীই হোক না কেন, সে সর্বদা স্বীয় রবের প্রতি মুখাপেক্ষী ও প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর অনুগ্রহের ভিখারী। মূলত, তার পুরো জীবনটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ দান, যা সার্বক্ষণিক প্রশংসার দাবি রাখে। কাজেই আল্লাহর স্বয়ংসম্পূর্ণতা কতই না মহান আর তাঁর সামনে বান্দার নিঃস্বতা কতই না চরম পর্যায়ের! মহান আল্লাহ বলেন, ‘দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)।
তাই যৌবনের বিভিন্ন স্তর তার শক্তির উৎস, জীবনের স্পন্দন এবং সফলতার প্রদীপ, যা ভবিষ্যতের পথকে আলোকিত করে। এই বয়সে ব্যক্তির সক্ষমতা বিকশিত হয়, স্বপ্ন উন্মোচিত হয় এবং মর্যাদার নিদর্শন অঙ্কিত হয়। যৌবন এমন এক সম্পদ যার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, এটি ব্যক্তির কর্ম ও তৎপরতার ময়দান। এই স্তরেই সংগ্রামের মহাকাব্য লিখা হয় ও সভ্যতার শক্তিশালী ভিত নির্মিত হয়। যুবকদের সর্বোচ্চ সাহায্য ও উচ্চ সাহসিকতা ব্যতীত কখনোই একটি দেশের ভিত্তি স্থাপিত হতে পারে না এবং জাতি উন্নতিও লাভ করতে পারে না।
নিঃসন্দেহে দ্বীনের ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণের মধ্য দিয়েই তারুণ্যের শক্তি বিকশিত হয়। মূল্যবোধ ও নৈতিকতার সংস্পর্শেই কেবল তারুণ্য অগ্রগতি লাভ করে এবং দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের মাধ্যমেই তা মর্যাদার উচ্চ শিখরে আরোহণ করে।
বস্তুত যে ব্যক্তি তার যৌবনকে নষ্ট করল, সে তার পুরো জীবনকেই নষ্ট করল। আসলে তা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের একটি ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত। যে ব্যক্তি এ সময়কে কল্যাণ ও উপকারের কাজে নিয়োজিত করবে, সে একটি ভালো নিদর্শন রেখে যাবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে পরিপক্ব ফল আহরণ করবে।
আমরা যেন এটা ভুলে না যাই যে, যৌবনের শক্তি কখনও কখনও নেয়ামত থেকে শাস্তিতে রূপান্তরিত হয়, বিনির্মাণের পরিবর্তে ধ্বংসের শক্তিতে পরিবর্তিত হয়; যদি তরুণ সমাজ আল্লাহর পথ বর্জন করে, ইসলাম থেকে দূরে সরে যায় এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
মহান আল্লাহর বাণী, ‘দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)। এই শক্তি কেবল দেহের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা শক্তিশালী আত্মা, উন্নত চিন্তা ও কঠোর সংকল্পের সমন্বিত রূপ। এমন অনেক শক্তিশালী দেহ রয়েছে, যা দুর্বল ইচ্ছা ও মন্থর সংকল্প ধারণ করে। ফলে সে কিছুই করে না এবং কোনো ফলাফল লাভেও সক্ষম হয় না। সে তার পুরো যৌবনকে নষ্ট করে ফেলে। কাজেই সে তার আশপাশের লোকদের জন্য বোঝায় পরিণত হয় এবং নিজেকে ও নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে অক্ষম হয়।
প্রকৃত শক্তি ঈমানী সুবাস থেকে নির্গত হয়, আনুগত্যের মাধ্যমে তীক্ষ্ণ হয়, ইস্তিগফারের মাধ্যমে মজবুত হয় এবং সৎ আমলের মাধ্যমে তা ফল প্রদান করে। এটা এমন শক্তি যা তার রবের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। ফলে রবের পথে তার সংকল্প ও অবিচলতা বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ হূদ আলাইহিস সালাম-এর ভাষায় বলেন, ‘হে আমার ক্বওম! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা করো; তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন’ (হূদ, ১১/৫২)। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর শক্তির পর তিনি আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য’ (আর-রূম, ৩০/৫৪)।
আল্লাহর হিকমতে এভাবেই জীবনের পর্যায় অতিবাহিত হয়, যা দুর্বল শৈশব থেকে শুরু হয়ে যৌবনে শক্তির শীর্ষে উন্নীত হয়, অতঃপর বার্ধক্যে গিয়ে পৌঁছায়; যখন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়, মাথার চুল সাদা হয়ে যায়, হাড়গুলো ধ্বংসের উপক্রম হয় এবং আল্লাহর সাক্ষাৎ নিকটবর্তী হয়ে আসে। যখন চুলে বার্ধক্যের ধূসর চিহ্ন প্রকাশ পায়, তখন চোখের সামনে থেকে দুনিয়ার পর্দা সরে যায় এবং তার ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন মানুষ উপলব্ধি করে যে, জীবনে সময়গুলো যেন চোখের পলকে অতিবাহিত হয়েছে আর জীবন অতিবাহিত হয়েছে একটি অতিক্রান্ত স্বপ্নের ন্যায়; তখন সে মনে মনে বলে, হায়! যদি আমার সম্প্রদায় জানত যে, দুনিয়া হলো একটি অতিক্রমের স্থান এবং এটি কারো জন্য স্থায়ী নয়!
বার্ধক্য হলো এক নীরব বার্তা, যা আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্য আহ্বান করে। ফলে বার্ধক্য মানব হৃদয়ের প্রধান ব্যস্ততায় রূপ নেয়। তখন তওবা তার কাছে অগ্রাধিকার পায়, আত্মসমালোচনা তার অভ্যাসে পরিণত হয় আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয়ে ওঠে তার প্রধান উদ্দেশ্য। এটিকে সে জীবনের শেষ সুযোগ মনে করে, যা তাকে অবশিষ্ট সময়কে সুন্দর করা এবং আসমান ও জমিনের প্রভুর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য প্রেরণা জোগায়।
উল্লেখ্য যে, বার্ধক্য মানেই দুর্বলতার কাছে আত্মসমর্পণ বা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়; বরং এর মাধ্যমে এমন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়, যেখানে প্রজ্ঞা দীপ্তিময় হয়ে ওঠে, অভিজ্ঞতার ধারা প্রবাহিত হয় এবং জীবনের পরিপক্বতা প্রকাশ পায়।
জীবনে এই পর্যায়ে প্রবীণরা হয়ে ওঠেন সফলতার মশাল, যা যুবসমাজের পথ আলোকিত করে এবং প্রজন্মের জন্য জীবনের ভিত্তি স্থাপন করে। তারা উচ্চাকাঙ্ক্ষীর অনুপ্রেরণা জোগান এবং নতুন উদ্যমে তাদের মনোবল জাগিয়ে তোলেন।
বার্ধক্য সত্ত্বেও আমলের ধারা থেমে থাকে না, দান বন্ধ হয় না; যতক্ষণ হৃদয় ঈমানের শক্তিতে জাগ্রত থাকে এবং ঈমান দ্বারা দৃঢ়সংকল্প পুনরুজ্জীবিত থাকে। এটি একটি মহান শিক্ষা যা আমরা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি তাঁর এ বাণীর মাধ্যমে, ‘যখন ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে আর এমতাবস্থায় তোমাদের কারো কাছে খেজুরের চারা থাকে, তাহলে সে যেন তা রোপণ করে’।[1]
أقول قولي هذا وأستغفر الله العظيم لي ولكم ولسائر المسلمين من كل ذنب فاستغفروه، إنه هو الغفور الرحيم.
দ্বিতীয় খুৎবা
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি মানুষকে উত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে বিবেক ও দ্বীন দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আমি মহান আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি তাঁর ব্যাপক অনুগ্রহের জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি তাঁর সম্মান ও তা‘যীমের সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, যাকে তিনি হিকমাহ ও বিশুদ্ধ কিতাবের শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। মহান আল্লাহ তাঁর ওপর এবং তাঁর পরিবার ও ছাহাবীদের উপর ছালাত ও সালাম অবতীর্ণ করুন, যারা ছিলেন সঠিক দ্বীনের অনুসারী।
অতঃপর, আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে তাক্বওয়া অবলম্বনের অছিয়ত করছি। শৈশব ও যৌবনের শক্তি, এরপর দুর্বলতা ও বার্ধক্য সবই মানুষের গড় আয়ুর সীমার মধ্যে আবর্তিত হয়। যেমন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের (গড়) আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছর। তাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই এ বয়স অতিক্রম করবে’।[2] বয়স সময়ের মানদণ্ডে একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ, যা এক অনিবার্য পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং প্রতিটি অতিবাহিত মুহূর্তের সাথে শেষ সময় ঘনিয়ে আসে।
হাদীছটি দুনিয়ার চাহিদা ও আখেরাতের প্রস্তুতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানায় এবং সময়ের প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার করার তাগিদ দেয়। কারণ জীবন সীমিত আর সুযোগ আর ফিরে আসে না। জীবনের প্রকৃত মূল্য নির্ধারিত হয় রেখে যাওয়া অমর চিহ্ন ও সৎ আমলের মাধ্যমে, বছরের সংখ্যা দিয়ে নয়। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘উত্তম মানুষ সেই, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে আর সবচেয়ে মন্দ মানুষ সেই, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে; কিন্তু তার আমল খারাপ হয়েছে’।[3]
হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং এমন কথা ও আমলের তাওফীক্ব কামনা করছি যা আমাদের জান্নাতের নিকটবর্তী করবে। আমরা আপনার কাছে জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় কামনা করছি এবং যে কথা ও আমল জাহান্নামের নিকটবর্তী করে তা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের জানা ও অজানা সকল বিষয়ের কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের জানা ও অজানা সকল অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন এবং আমাদের বিরুদ্ধে (শত্রুকে) অনুগ্রহ করবেন না। আমাদের সাহায্য করুন, আমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করবেন না। আমাদের পক্ষে (শত্রুর বিরুদ্ধে) কৌশল করুন, আমাদের বিরুদ্ধে (শত্রুর পক্ষে) কৌশল করবেন না। আমাদেরকে হেদায়াত দিন, আমাদের জন্য হেদায়াতকে সহজ করুন। যারা আমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আজ ফিলিস্তীন এক ভয়াবহ দুর্যোগ ও বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, যা আপনার অবগতিতে রয়েছে এবং তা দূর করতে আপনিই সক্ষম।
হে আল্লাহ! আজ ফিলিস্তীনীদের উপর যে দুর্যোগ নেমে এসেছে তা থেকে তাদের উদ্ধার করুন। হে আল্লাহ! তারা আজ নগ্নপদে রয়েছে, তাদেরকে সক্ষম করুন। তারা আজ ক্ষুধার্ত, তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করুন। তারা আজ পোশাকহীন অবস্থায় রয়েছে, তাদের পোশাকের ব্যবস্থা করে দিন। তারা আজ নির্যাতিত, তাদের বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ! আপনার শত্রু ও আমাদের শত্রু আগ্রাসনবাদী ইয়াহূদীদের উপর মুসলিমদের বিজয় দান করুন- আমীন!
[1]. আহমাদ, হা/১২৯০২; মুসনাদে বাযযার, হা/৭৪০৮, সনদ ছহীহ।
[2]. তিরমিযী, হা/২৩৩১, ৩৫৫০; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৩৬, হাসান ছহীহ।
[3]. তিরমিযী, হা/২৩৩০, ছহীহ লি-গায়রিহি।