কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

সুখী দাম্পত্য জীবন ও শারঈ নির্দেশনা

post title will place here

[৬ মুহাররম, ১৪৪ হি. মোতাবেক ১২ জুলাই, ২০২৪ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. আব্দুল বারী ইবনু আওয়ায আছ-ছুবাইতী হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথমখুৎবা

যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি এরশাদ করেছেন,وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন’ (আর-রূম, ৩০/২১)। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি এরশাদ করেছেন, وَأَنَّهُ خَلَقَ الزَّوْجَيْنِ الذَّكَرَ وَالْأُنْثَى ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেন জোড়া পুরুষ আর নারী’ (আন-নাজম, ৫৩/৪৫)

আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমাদের নেতা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে তোমাদের মধ্যে তার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম আর তোমাদের মধ্যে আমিই আমার পরিবারের কাছে সর্বোত্তম ব্যক্তি’।[1] আল্লাহ তাআলা তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন।

অতঃপর, আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতি অবলম্বনের অছিয়ত করছি; কেননা এটা দুনিয়া ও আখেরাতের উত্তম পাথেয়।

বিবাহ হৃদয়ে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা বয়ে আনার বড় একটি মাধ্যম। যেখানে একজন যুবক পরিবার গঠন ও এর ভিত্তিমূল তৈরির জন্য একটি দৃঢ় চুক্তি ও শারঈ উপায়ে একজন নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, যা সমাজের বন্ধনকে শক্তিশালী করে এবং জাতির স্তম্ভকে সুদৃঢ় করে। তাদের উভয়কে এই পথে ধাবিত করে সুখী জীবনের প্রত্যাশা, সুধারণা ও আকাঙ্ক্ষা নিয়ে; যেখানে সুসন্তান শান্ত পরিবেশে বেড়ে উঠবে, যা ভালোবাসা ও দয়ায় পরিপূর্ণ।

স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকার ও কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধের সীমারেখাকে হৃদয়ঙ্গম করার দ্বারা তাদের সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয় ও সম্পর্কের স্থায়িত্ব গভীর হয়, যা দাম্পত্য জীবনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।

যারা বিবাহের ফযীলত লাভ করতে চায় তাদের জন্য এটি একটি উপভোগ্য বিষয় ও মহৎ ইবাদত আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই যে গৃহ ঈমানে আলোকিত, দ্বীনের ছায়ায় আবৃত, আনুগত্যের আলোয় উজ্জ্বল এবং শরীআতের প্রতি পূর্ণ অনুগত; কিছুটা বিলম্বে হলেও সে গৃহ-ই উত্তম ফল বয়ে আনে। মহান আল্লাহ বলেন,ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِنْ بَعْضٍ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ‘তারা একে অপরের বংশধর আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’ (আলে-ইমরান, ৩/৩৪)

বিবাহিত দম্পতি যুবক ও যুবতীর ঘরে কীভাবে বরকত আসে তা ইসলাম আমাদের নিকট ব্যাখ্যা করেছে। আর যখন পরিবারে বরকত নেমে আসে, তখন কল্যাণ অবিরতভাবে আসতেই থাকে এবং শয়তান সেখান থেকে পলায়ন করে। বস্তুত, ব্যক্তির উপর আল্লাহর পক্ষ হতে বরকত আসে কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর যিকির ও ছালাত আদায়ের মাধ্যমে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের সময় এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে, তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন শয়তান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ না করে, তখন সে (শয়তান) বলে, তোমাদের রাত্রিযাপন ও রাতের খাবারের আয়োজন হলো’।[2] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র আরো বলেন, ‘আর তোমরা সূরা আল-বাক্বারা পাঠ করো। এ সূরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর মোকাবেলা করতে পারে না’।[3] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘তোমরা কিছু কিছু ছালাত বাড়িতে আদায় করবে। (বাড়িতে কোনো ছালাত না আদায় করে) বাড়িকে তোমরা কবর সদৃশ করে রেখো না’।[4] আল্লাহ তাআলা বলেন,فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً ‘তবে যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা অভিবাদনস্বরূপ তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে, যা আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নির্দেশ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝতে পার’ (আন-নূর, ২৪/৬১)

আল-কুরআনুল কারীম একটি কুরআনিক নীতি চিত্রিত করেছে যা আচরণ ও শিষ্টাচারকে উন্নত করে, আত্মাগুলোকে পরস্পরের নিকটবর্তী করে এবং ভালোবাসার বন্ধনকে শক্তিশালী করে; তা হলো সম্মানজনক সহাবস্থান। যেন তা জীবনের রীতি ও দাম্পত্য জীবনের পারস্পরিক আচরণের নীতি হয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ‘তাদের সাথে দয়া ও সততার সঙ্গে জীবন যাপন করো’ (আন-নিসা, ৪/১৯)। অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন একে অপরের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করে। মূলত সুন্দর সহাবস্থান বলতে বুঝায় নরম সুরে কথা বলা, উত্তম কাজ করা, কোমল আচরণ করা, ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্রশস্ততা অবলম্বন করা, সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল থাকা, নম্র হওয়া, একে অপরকে আনন্দিত করা, ক্ষমা ও উদারতা প্রদর্শন করা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, ক্রোধ সংবরণ করা, তর্ক না করা এবং রূঢ়তার উপর সমঝোতাকে প্রাধান্য দেওয়া।

সম্মানজনক সহাবস্থানের মধ্যে আরো রয়েছে গোপনীয়তা রক্ষা করা, ছোটখাটো সমস্যাগুলো গোপন রাখা যা প্রকাশ বা নজরদারি করা অনুচিত, গুপ্তচরবৃত্তি থেকে দূরে থাকা এবং এগুলোর সকল পথ বন্ধ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/১২)। অর্থাৎ দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান, অপ্রকাশ্য বিষয় অনুসরণ ও গোপনীয় বিষয় উদঘাটনের মাধ্যমে আল্লাহ যা গোপন রেখেছেন তা প্রকাশ করো না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষের অন্তর বা পেট চিরে দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি’।[5]

দাম্পত্য জীবনে একে অপরের প্রতি মন্দ ধারণা একটি মারাত্মক সমস্যা, যা ব্যক্তিকে প্রমাণবিহীন অপবাদ আরোপের দিকে নিয়ে যায়। এমনকি সন্দেহ ও কুধারণা ভালোবাসা ও ঘৃণার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

উন্নত আচরণের মধ্যে আরো রয়েছে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল রপ্ত করা, ছোটখাটো বিষয়গুলোতে অতিরিক্ত মনোযোগ না দেওয়া এবং তুচ্ছ বিষয়সমূহ ও ভুল-ত্রুটির অনুসন্ধান এড়িয়ে যাওয়া।

বৈবাহিক জীবন কখনো কিছু চ্যালেঞ্জ ও মতপার্থক্যের মুখোমুখি হয়, যা এই সুন্দর সম্পর্কের স্বচ্ছতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কিন্তু বিবেকবান স্বামী-স্ত্রী মাত্রই সমস্যা নিয়ে দ্রুত আলোচনার টেবিলে বসেন এবং সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। তারা পরিবারের স্থিতি ও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ব্যক্তিস্বার্থ থেকে মুক্ত হয়ে কাজ করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক জেদ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা শয়তানের কুমন্ত্রণার ফল, যা পারিবারিক কাঠামোকে ধ্বংস করে।

মনে রাখতে হবে, কোনো মানুষই দোষ ও অপূর্ণতা থেকে মুক্ত নয়। যদি স্বামী-স্ত্রী পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে হিকমাহ অবলম্বন করে, তাহলে তারা সুন্দর পদ্ধতি, ভালো কথা ও উন্নত আচরণের মাধ্যমে পারস্পরিক ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিতে পারে। তারা পারস্পরিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সরাসরি ধরিয়ে না দিয়ে অথবা আঘাতের মাধ্যমে শুধরিয়ে না দিয়ে বরং প্রশংসাসূচক শব্দ ব্যবহার করে ও ভালোবাসার অনুভূতি জাগিয়ে ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে সংশোধন করার চেষ্টা করলে তা অধিক ফলপ্রসূ হবে।

দাম্পত্য জীবনকে বিপন্ন করে তুলতে পারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যাতে দেখানো হয় তার সাথে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের স্বভাব, বৈশিষ্ট্য ও আচরণকে তুলনা করার মাধ্যমে। এতে স্বামীর চোখে স্ত্রী তুচ্ছ হয়ে যায় এবং স্ত্রীর হৃদয়ে স্বামী মূল্যহীন হয়ে উঠে। তাই এই মাধ্যমগুলো ব্যবহারের সময় আল্লাহকে ভয় করা উচিত এবং এগুলোর পদস্খলন থেকে মুক্ত থাকা উচিত। আল্লাহ যা দিয়েছেন তাতেই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় ও পারিবারিক কাঠামো রক্ষার স্বার্থে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ থাকা জরুরী। মহান আল্লাহ বলেন,فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا ‘আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোনো কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন’ (আন-নিসা, ৪/১৯)। এই উপদেশ মহিলাদের জন্যও প্রযোজ্য।

জেনে রাখুন! একটি ছোট্ট উপহার বা কোনো আনন্দদায়ক আকস্মিক উপহার বিনিময় জীবনের উষ্ণতাকে নবায়ন করে, ঝিমিয়ে পড়া আবেগকে আন্দোলিত করে, ভালোবাসা ও প্রেমের অর্থ পুনরুজ্জীবিত করে এবং ঘুমন্ত প্রীতিকে জাগিয়ে ‍তুলে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহারাদি বিনিময় করো; তোমাদের পারস্পরিক মুহাব্বত সৃষ্টি হবে’।[6]

হাসিমুখ হৃদয় ও মনকে মুগ্ধ ও প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে উপহারের মতোই কাজ করে। স্বামী-স্ত্রীর উচিত এটিকে অবহেলা না করা। কেননা তা হৃদয়ের তালা খুলে দেয়, ঘৃণা-বিদ্বেষ দূর করে, উপরন্তু এটি একটি ছাদাক্বা। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য ছাদাক্বাস্বরূপ’।[7]

أقول قولي هذا، وأستغفر الله العظيم لي ولكم ولسائر المسلمين من كل ذنب فاستغفروه، إنه هو الغفور الرحيم.

দ্বিতীয়খুৎবা

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সুগঠিত করেছেন। যিনি নিয়তি নির্ধারণ করেছেন এবং পথপ্রদর্শন করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। তাঁর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ ছিফাত। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাআলা তাঁকে প্রেরণ করেছেন নূর, রহমত ও হেদায়াতসহ। মহান আল্লাহ তাঁর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন।

অতঃপর, আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি।

রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরার ছিয়াম পালন করতে উৎসাহিত করেছেন আর তা হলো মুহাররম মাসের ১০ তারিখ। তিনি বলেন, ‘আর আশূরার ছওম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে’।[8] 

১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখ মিলিয়ে ছিয়াম পালন করা মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তবে মুহাররমের নবম তারিখেও ছিয়াম পালন করব’।[9]

পরিশেষে হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা হেদায়াতের রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ পেশ করুন। কেননা আল-কুরআনে আল্লাহ আপনাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে,إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ‘নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দু‘আ করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৬)

হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর বংশধর ও ছাহাবীদের উপর ছালাত নাযিল করুন। হে আল্লাহ! আপনি খুলাফায়ে রাশেদীন আবূ বকর, উমার, উছমান ও আলী আলাইহিস সালাম-এর প্রতি সন্তুষ্ট হোন আর আহলে বায়তের প্রতিও সন্তুষ্ট হোন। আপনার ক্ষমা, বদান্যতা ও অনুগ্রহে আমাদের প্রতিও সন্তুষ্ট হোন।

হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে জান্নাত এবং যা জান্নাতের নিকটবর্তী করে এমন কথা ও আমলের তাওফীক্ব চাই। আমরা আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নাম থেকে এবং যা জাহান্নামের নিকটবর্তী করে এমন কথা ও আমল থেকে।

হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের জানা ও অজানা সকল কল্যাণকর কাজের তাওফীক্ব চাই। আমরা আপনার কাছে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের জানা ও অজানা সকল মন্দ কাজ থেকে আশ্রয় চাই।

হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে এমন নেয়ামত চাই যা শেষ হবে না, এমন চোখের শীতলতা চাই যা কখনো থামবে না এবং আপনার চেহারার দিকে তাকানোর সুখ এবং আপনার সাথে দেখা করার আকাঙ্ক্ষা চাই- আমীন!


[1]. ইবনু মাজাহ, হা/১৯৭৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৮৫।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০১৮।

[3]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৪।

[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৭৭।

[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬৪।

[6]. ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৭।

[7]. তিরমিযী, হা/১৯৫৬; সিলসিলা ছহীহা, হা/৫৭২।

[8]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৬২।

[9]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩৪।

 

 

 

Magazine