কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

তীব্র গরম: শিক্ষণীয় বিষয় ও উপদেশ

[২১ ছফর, ১৪৪৭ হি. মোতাবেক ১৫ আগস্ট, ২০২পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খ ড. বান্দার ইবনু আব্দুল আযীয বালীলাহ হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথমখুৎবা

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জন্য তাক্বদীর নির্ধারণ করেছেন, এছাড়াও যিনি সৃষ্টির জীবিকা ও আয়ু নির্ধারণ করেছেন। আমরা একমাত্র তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর প্রতিই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। তিনি মহাবিশ্বকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন, এতে নদী প্রবাহিত করেছেন, এর যমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং সাগর-সমুদ্রকে বিদীর্ণ করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি সূর্য-চন্দ্র, রাত-দিনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা, তাঁর নির্বাচিত নবী ও মহান রাসূল। তাঁর উপর আল্লাহর রহমত, শান্তি ও বরকত বর্ষিত হোক। এছাড়াও তাঁর পবিত্র পরিবার-পরিজনের ওপর, তাঁর সৎ ছাহাবীদের ওপর এবং তাদের পরবর্তী তাবেঈ ও তাবে‘-তাবেঈনের উপর রহমত বর্ষিত হোক, যারা শেষ রাত পর্যন্ত সৎকর্মে লিপ্ত থাকেন।

অতঃপর, হে মানুষ সকল! আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। অতএব, আপনারা তাক্বওয়া অবলম্বন করুন, আল্লাহ আপনাদের ওপর দয়া করুন।

আপনারা জেনে রাখুন! এই মহাবিশ্বে কোনো কিছুই আল্লাহর পূর্ব নির্ধারণ, তাঁর ইচ্ছা ও প্রজ্ঞার বাইরে ঘটে না। রাত ও দিন, বাতাস ও বর্ষা, শীত ও তাপ, পরিবর্তন ও পুনরাবৃত্তি এই সবকিছুই এমন বাস্তবতা যা একজন ঈমানদারের কাছে নিশ্চিত করে যে, এই পৃথিবী স্থায়ী আবাসস্থল নয়। এ সবই আল্লাহর সৃষ্টিজগতের নিদর্শন, যা তাঁর মহান শক্তি, ক্ষমতা, বিস্তৃত জ্ঞান, প্রজ্ঞা, সূক্ষ্ম ইচ্ছা ও রহমতের ইঙ্গিত বহন করে। আর সবকিছুই তাঁর কাছে নির্ধারিত পরিমাণে রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য বহু নিদর্শন আছে। যারা আল্লাহকে দণ্ডায়মান, উপবিষ্ট ও শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমিনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে এবং বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা করো’ (আলে ইমরান, ৩/১৯০-১৯১)

হে আল্লাহর বান্দাগণ! আমাদের মধ্যে কে আছে, যে গ্রীষ্মের তাপে কষ্ট পায়নি? আমাদের মধ্যে কে আছে, যার মুখমণ্ডল সূর্যের প্রখর তাপে দগ্ধ হয়নি? আমরা কমবেশি সবাই এর ভুক্তভোগী। এই প্রখর দাবদাহ গ্রীষ্মকালের উপদেশদাতা, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্বিয়ামতের দিনের তাপ এবং জাহান্নামের শাস্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন সূর্যকে মানুষের নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে। অবশেষে তা মানুষের এক মাইলের দূরত্বের মাঝে চলে আসবে’। বর্ণনাকারী সুলায়ম ইবনু আমির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি জানি না, ‘মাইল’ শব্দ দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে, যমিনের দূরত্ব নাকি ঐ শলাকা যা চোখে সুরমা দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। মানুষ তাদের আমল অনুসারে ঘামের মাঝে ডুবে থাকবে। তাদের কারো ঘাম পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত হবে, কেউ হাঁটু পর্যন্ত ঘামের মধ্যে থাকবে, কেউ কোমর পর্যন্ত আর কারো মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মুখের প্রতি ইঙ্গিত করলেন।[1]

হে মুসলিমগণ! তাপের তীব্রতা হলো সেই নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কাছে শিক্ষা ও উপদেশ হিসেবে ভয় প্রদর্শন ও স্মরণ করানোর জন্য পাঠান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নিদর্শনসমূহ পাঠাই’ (বনী ইসরা, ১৭/৫৯)

আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন গরম বৃদ্ধি পায়, তখন তোমরা তা কমে এলে (যোহরের) ছালাত আদায় করো। কেননা গরমের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’। তারপর তিনি বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে দুটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে আর একটি গ্রীষ্মকালে। আর সে দুটি হলো তোমরা গ্রীষ্মকালে যে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে যে প্রচণ্ড ঠান্ডা অনুভব কর তাই’।[2]

অতএব, হে ঈমানদারগণ! সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে এই দুনিয়ার উত্তাপের মধ্যে আখেরাতের উত্তাপ থেকে বাঁচার জন্য পাথেয় সংগ্রহ করে এবং নির্জনে ধৈর্যের সাথে ইবাদতে লিপ্ত থাকে, যাতে সে অন্তরের গোপন বিষয়গুলো প্রকাশের দিনে স্থায়ী জান্নাত লাভে তৃপ্ত হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে মোতায়েন করা আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতা। আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা তারা অমান্য করে না আর তারা তাই করে, তাদেরকে যা করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়’ (আত-তাহরীম, ৬৬/৬)। আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও ছিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার মুখমণ্ডলকে জাহান্নামের আগুন হতে ৭০ বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন’।[3] আবূ দারদা রাযিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, একদিন প্রচণ্ড গরমে ছিয়াম রাখো পুনরুত্থান দিবসের তীব্র গরমের কথা স্মরণ করে। আর রাতের অন্ধকারে দুই রাকআত ছালাত পড়ো কবরের অন্ধকারের কথা স্মরণ করে।[4]

জেনে রাখুন! ঈমানদারের উপর যে কষ্ট, দুঃখ-ক্লেশ, দুরবস্থা ও ক্লান্তি নেমে আসে, তার সবই লিখিত ও নথিভুক্ত রয়েছে সেই রবের নিকটে, যার কাছে কোনো নেক আমল নষ্ট হয় না, ইবাদত হারিয়ে যায় না; বরং তাঁর নিকটে সবই সংরক্ষিত থাকে। এই নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়, ছওয়াবগুলো বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং মর্যাদার স্তর উঁচু করা হয়। আবূ সাঈদ খুদরী ও আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, ‘কোনো ঈমানদার ব্যক্তির নিকটে এমন কোনো ব্যথা-বেদনা, রোগ-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট পৌঁছে না, এমনকি দুর্ভাবনা পর্যন্ত, যার প্রতিদানে তার কোনো গুনাহ ক্ষমা করা হয় না’।[5]

আমলকারীর নিয়্যত, একনিষ্ঠতা, দৃঢ়তা ও ধৈর্যশীলতার উপর ভিত্তি করে আমলসমূহের প্রতিদান বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়, ছওয়াব বৃদ্ধি করা হয় এবং আমলনামার পাল্লা ভারী হয়। ইবনুল আছীর রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আমলে ছালেহ ও অপ্রিয় বিষয়ের ক্ষেত্রে ইহতিসাব বা ছওয়াবের প্রত্যাশা করার অর্থ হলো আল্লাহর নিকট থেকে ছওয়াব অর্জনের জন্য আগ্রহভরে কোনো কাজে এগিয়ে যাওয়া এবং তা ধৈর্য ও আত্মসমর্পণের মাধ্যমে অর্জন করা।

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাদের সাধ্যের মধ্যে আমল নির্ধারণ করেছেন, তাদের সাধ্যের বাইরে কোনো আমল নির্ধারণ করেননি। আবূ হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন গরম বেড়ে যায়, তখন তোমরা তা কমে এলে (যোহরের) ছালাত আদায় করো। কেননা গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’।[6]

ছালাতকে বিলম্ব করে আদায় করার অর্থ হলো ছালাতকে তীব্র দুপুরের গরম হালকা হলে সময়ের শেষভাগে আদায় করা, তবে অবশ্যই তা পরবর্তী ছালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্বেই হতে হবে। এ নিয়মের সঙ্গে মিল আছে এমন অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য, শরীআতে সেসব ইবাদত দেরি করে আদায় করার অনুমতি রয়েছে। কারো ওপর যদি রামাযানের ক্বাযা ছিয়াম থাকে অথবা কাফফারার ছিয়াম কিংবা অনুরূপ কিছু থাকে, তাহলে তার জন্য বৈধ যে, যদি গরমে ছিয়াম আদায় করা কষ্টকর মনে হয়, তাহলে সে তা বিলম্ব করে শীতের দিনে রাখবে। এর প্রমাণ হলো আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীছে এসেছে, তিনি বর্ণনা করেন, আমার ওপর রামাযানের যে ক্বাযা হয়ে যেত তা পরবর্তী শা‘বান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।[7] তবে বিলম্ব ছাড়া দ্রুত আদায় করা উত্তম।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! সকল অবস্থায় ও পরিস্থিতিতে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করুন এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, যিনি ছায়া, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আর গ্রীষ্মের বিশ্রামস্থল ইত্যাদি উপায়-উপকরণ সহজ করার মাধ্যমে আপনাদের জন্য গরমের তীব্র দাবদাহের কষ্ট লাঘব করেছেন। অতএব, আপনারা গরীব ও অসহায় ভাইদের খোঁজখবর নিন এবং নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ওপর গরম ও সূর্যের তীব্র দাবদাহ থেকে সাধ্যমত হেফাযত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এক্ষেত্রে আপনি এই তীব্র দাবদাহের মধ্যে ঠান্ডা পানি পান করানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। এটি হচ্ছে সর্বোত্তম ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। যেমনটা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন।

আর আপনারা আপনাদের সেসব দ্বীনী ভাইদের কথা স্মরণ করুন, যারা প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে এবং এর কারণে তাদের প্রাণহানি, সম্পদ ও ফল-ফলাদির ঘাটতি হয়েছে।

হে আল্লাহ! তাদের উপর যে বিপদ নেমে এসেছে তা আপনি দূর করে দিন। হে আল্লাহ! তাদের ভয়কে নিরাপত্তায়, দুঃখকে আনন্দে এবং ক্ষুধাকে পরিতৃপ্তিতে রূপান্তরিত করে দিন। হে পরাক্রমশালী ও মহাশক্তিধর রব! আপনার ও তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে মুসলিমদের সাহায্য করুন।

أقول قولي هذا وأستغفِر اللهَ لي ولكم، ولسائر المسلمين من كل ذنب فاستغفروه، إنه هو الغفور الرحيم.

দ্বিতীয়খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যার কর্ম ও ইচ্ছায় যাবতীয় বিষয় ঘটে। আমরা তাঁর মহান অনুগ্রহ, অগণিত নেয়ামত, মহৎ ক্ষমাশীলতা ও মার্জনার জন্য প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি। তাঁর মহৎ গুণাবলি ও বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসার অধিকারী পরিবারবর্গ ও ছাহাবীদের ওপর শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক। আর তাবেঈ, তাবে‘-তাবেঈ এবং এভাবে বিচার ও পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত কল্যাণের উপর অটল থাকা সকল মানুষের ওপর শান্তি অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর, জেনে রাখুন! প্রচণ্ড গরমের কারণে অসন্তোষ ও বিরক্তি প্রকাশ করা আল্লাহর ফয়সালা, তাক্বদীর, ইচ্ছা ও চাওয়ার উপর আপত্তি তোলার শামিল। এ বিশ্বজগতে যা কিছু ঘটে তার পিছনে অবশ্যই কোনো না কোনো হিকমত, কল্যাণ বা উপকার রয়েছে।

অতএব, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন, আপনাদের হৃদয় ও জিহ্বাকে এমন সব কথা ও কাজ থেকে রক্ষা করুন, যা আপনাদের ঈমানকে দুর্বল করে এবং তাওহীদকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কেননা তাওহীদের পূর্ণতার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর শারঈ বিধান এবং মহাজাগতিক নিয়মনীতির প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ ও সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা।

হে আল্লাহ! ইসলাম ও মুসলিমেদের মর্যাদা দান করুন, দ্বীনের সুরক্ষিত সীমা রক্ষা করুন এবং আপনার তাওহীদপন্থী বান্দাদের সাহায্য করুন।

হে আল্লাহ! দুঃখ-কষ্টে থাকা মুসলিমদের দুঃখ দূর করুন, দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিমের দুর্দশা লাঘব করুন, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করুন, আমাদের ও মুসলিম ভাইদের অসুস্থতা থেকে আরোগ্য দিন। আমরা আপনার অসীম দয়ার ভিক্ষারী, হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!

হে আল্লাহ! আমাদেরকে বিপদে ছবর করার তাওফীক্ব দিন, তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্টি দান করুন, সচ্ছলতায় শোকর করার তাওফীক্ব দিন। আমাদের ওপর এমন কোনো বোঝা চাপিয়ে দিবেন না, যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। হে পরম দয়ালু রব! আপনার দয়া ও সুরক্ষা আমাদের জন্য বিস্তৃত করে দিন। হে আল্লাহ! আমরা পুনরুত্থান দিবসে আপনার আযাব থেকে পরিত্রাণ চাই।


 [1]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৬৪।

 [2]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬১৭।

 [3]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৯।

 [4]. আবূ নুআইম স্বীয় ‘আল-হিলইয়া’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন; ইবনু হাজম, লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ৩২৩।

 [5]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৭৩।

 [6]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/৬১৫।

 [7]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪৬।

Magazine