কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বিজয় ও কর্তৃত্ব লাভের আমল এবং ফিলিস্তীনী জনগণকে সাহায্য করার আবশ্যকতা

post title will place here

[৩ জুমাদাল উলা, ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ১৭ নভেম্বর, ২০২৩ পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খআব্দুর রহমান আস-সুদাইস হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথম খুৎবা

যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। হে আমাদের রব! আমরা একমাত্র আপনারই গুণকীর্তন করছি, আপনার কাছেই সাহায্য চাই, আপনার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং একমাত্র আপনার কাছেই তওবা করছি। আমরা সকল কল্যাণকর কাজের জন্য একমাত্র আপনারই প্রশংসা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, যিনি মহিমান্বিত সিংহাসনের অধিকারী। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ নবী ও মহা সম্মানিত বান্দা। তাঁর উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক এবং তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী, তাবেঈ ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসরণকারী উম্মাহর উপর শান্তি অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর, হে আল্লাহর বান্দাগণ! সর্বোত্তম উপদেশ হলো, সকল কাজের শুরুতে ও শেষে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বন করা। বিশেষ করে বিভিন্ন বালা-মুছীবত, দুর্দশা ও প্রতিকূলতার মধ্যে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করে চলা। কেননা এই আল্লাহভীতি ব্যক্তির সকল দুঃখ-কষ্ট ও উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা দূর করে এবং এর কারণে তার উপর আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا-وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ‘যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য (সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার) কোনো না কোনো পথ বের করে দিবেন। আর তাকে রিযিক্ব দিবেন (এমন উৎস) থেকে যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (আত-তালাক, ৬৫/২-৩)

হে মুসলিম উম্মাহ! এই ভয়ংকর বিপদ, ভয়াবহ দুর্বিপাক ও শত বাধার মধ্যেও নফসকে দুর্বলতা এবং ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করা এবং সম্মান ও বিজয় লাভের মাধ্যমগুলো অবলম্বন করা জরুরী। আজ এই কঠিন সংকটময় মুহূর্ত ও ঐতিহাসিক যুগ অমানিশা আমাদের জাতিকে চারদিক থেকে ঘিরে নিয়েছে। মুসলিম উম্মাহ আজ চতুর্মুখী প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَى أَمْرِهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ‘আল্লাহ তাঁর কাজের ব্যাপারে পূর্ণ কর্তৃত্বশীল। কিন্তু অধিকাংশ লোকই (তা) জানে না’ (ইউসুফ, ১২/২১)

হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয় আল্লাহর চিরন্তন রীতি হলো, তিনি প্রতিটি জিনিসের পিছনে কিছু কারণ বা মাধ্যম, ফলাফল এবং চূড়ান্ত লক্ষ্য ও আনন্দের বিষয় স্থির করেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উক্ত মাধ্যমগুলো গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার মাধ্যমে সম্মান ও আল্লাহর সাহায্য লাভ করতে সক্ষম হয়।

দয়াময় শক্তিধর আল্লাহর সাহায্যের আশাবাদী ঈমানদার ও তাওহীদপন্থী ব্যক্তিদের উপর আবশ্যক হলো আল্লাহর সাহায্য, সম্মান ও ক্ষমতা লাভের মাধ্যমগুলো দ্বারা নিজেদেরকে সজ্জিত করা এবং সকল স্থান ও সকল সময়ে তা ধারণ করা।

নিশ্চয় মুমিন বান্দাদের উপর মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো তিনি তাদেরকে আল্লাহর সাহায্য, সম্মান ও ক্ষমতা লাভের এসব মাধ্যম সম্পর্কে অবহিত করেছেন এবং তা কুরআনুল কারীম ও পবিত্র সুন্নাহতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর সাহায্য লাভের মাধ্যমগুলোর মধ্যে রয়েছে—

প্রথম মাধ্যম : তাওহীদ ও ইখলাছের আক্বীদার ভিত্তিতে ভ্রাতৃত্ব গড়ে তোলা। আল্লাহর নির্দেশিত বিষয়গুলোর মধ্যে তাওহীদ ও ইখলাছ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তাওহীদ ও ইখলাছের আদলে গড়ে উঠা আমল আল্লাহর সাহায্য লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ ‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে’ (আল-বায়্যিনাহ, ৯৮/৫)। ছহীহাইনের মধ্যে আবূ মূসা আল-আশআরী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হলো, যে ব্যক্তি বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি গোত্রের স্বার্থ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করে, যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে এগুলোর মধ্যে কোনটি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ (বলে গণ্য হবে)? তখন (জবাবে) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি এ উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে যে, আল্লাহর বাণী সমুন্নত হবে (কেবল) সে আল্লাহর রাস্তায় (বলে গণ্য হবে)’।[1]

দ্বিতীয় মাধ্যম : ঈমান ও আমলে ছালেহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ ‘আর মুমিনদেরকে সাহায্য করা তো আমার কর্তব্য’ (আর-রূম, ৩০/৪৭)। আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ ‘নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে ও মুমিনদেরকে দুনিয়ার জীবনে এবং (ক্বিয়ামতে) যেদিন সাক্ষীগণ দণ্ডায়মান হবে সেদিন সাহায্য করব’ (গাফির, ৪০/৫১)। অন্যত্রে আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, إِنَّ اللهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا ‘আল্লাহ মুমিনদেরকে রক্ষা করেন (যাবতীয় মন্দ হতে)’ (আল-হজ্জ, ২২/৩৮)

তৃতীয় মাধ্যম : আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করা। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/৭)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ-الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ ‘আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে, আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রান্ত। (এরা হলো) যাদেরকে আমি যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা ছালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজে নিষেধ করে, সকল কাজের শেষ পরিণাম (ও সিদ্ধান্ত) আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ’ (আল-হজ্জ, ২২/৪০-৪১)। অতএব, আল্লাহর সাহায্য লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং আল্লাহর পথে দাওয়াত, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এবং আল্লাহর যমীনে বসবাসকারী দুর্বলদের জন্য সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

চতুর্থমাধ্যম : কালেমার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়া, হক্বের পথে কাতারবদ্ধ হওয়া, পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্কগুলো ঠিক করে নেওয়া এবং পরস্পরের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব, বিভেদ ও মতবিরোধ দূর করা। মহান আল্লাহ বলেন, وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ‘আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভক্ত হয়ো না’ (আলে ইমরান, ৩/১০৩)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, فَاتَّقُوا اللهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং পরস্পরের মধ্যকার অবস্থা সংশোধন করে নাও’ (আল-আনফাল, ৮/১)। এটিই হলো উম্মাহর ক্ষমতায়নের প্রথম পথ। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং পরস্পর ঝগড়া করো না, তাহলে তোমরা সাহসহারা হয়ে যাবে এবং তোমাদের শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে’ (আল-আনফাল, ৮/৪৬)

পঞ্চম মাধ্যম : সাধ্যমতো বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে প্রস্তুত হওয়া। মুমিনদের শক্তির পরিচয় হলো তাদের দ্বীন, জাতি এবং পবিত্র স্থানসমূহ রক্ষা করা; যা রক্ষা করা তাদের জন্য শিরোধার্য। ইসলাম একটি শক্তিশালী দ্বীন, ইজ্জত, সম্মানের নাম, যা এমন একটি কিতাব ও অস্ত্রের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা মানুষকে পথ দেখায় ও সাহায্য করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ ‘আর তাদের মোকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি ও অশ্ব বাহিনী প্রস্তুত করো, তা দ্বারা তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে’ (আল-আনফাল, ৮/৬০)

ষষ্ঠ মাধ্যম : আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,إِنْ يَنْصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ وَإِنْ يَخْذُلْكُمْ فَمَنْ ذَا الَّذِي يَنْصُرُكُمْ مِنْ بَعْدِهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ ‘যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদেরকে লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে তোমাদেরকে এর পরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর উপরই যেন মুমিনগণ তাওয়াক্কুল করে’ (আলে ইমরান, ৩/১৬০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, وَعَلَى اللَّهِ فَتَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ‘আর আল্লাহর উপরই তাওয়াক্কুল করো, যদি তোমরা মুমিন হও’ (আল-মায়েদা, ৫/২৩)। অতএব, মহাশক্তিধর আল্লাহর উপর ভরসা করা তাঁর সাহায্য লাভ ও তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমতা লাভের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ ‘আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে’ (আলে ইমরান, ৩/১২৬)

সপ্তম মাধ্যম : ছবর বা ধৈর্যধারণ করা ও দৃঢ় অবিচল থাকা। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ‘আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যা করে, তা পরিবেষ্টনকারী’ (আলে ইমরান, ৩/১২০)। অন্যত্র আল্লাহ তাআলা আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কোনো বাহিনীর সম্মুখীন হবে তখন অবিচল থাকবে আর আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করবে, যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারো’ (আল-আনফাল, ৮/৪৫)

অষ্টম মাধ্যম : ছালাত প্রতিষ্ঠা করা, বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা, তাঁর কাছে ইস্তিগফার করা, দু‘আ করা, তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া ও তাঁকেই একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসাবে গ্রহণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ - فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ ‘তোমরা ছালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী ছালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও। যদি তোমরা ভয় করো, তবে পদচারী কিংবা আরোহী অবস্থায় ছালাত আদায় করবে। যখন নিরুদ্বেগ হবে, তখন আল্লাহকে স্মরণ করো যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না’ (আল-বাক্বারা, ২/২৩৮-২৩৯)

নবম মাধ্যম : পথভ্রষ্ট, অবাধ্য, কপটচারীদের পথ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই উম্মাহর ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন,وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ‘আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা তাদের ঘর থেকে অহংকার ও লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বের হয়েছে এবং আল্লাহর রাস্তায় বাধা প্রদান করে, আর তারা যা করে, আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে আছেন’ (আল-আনফাল, ৮/৪৭)

দশম মাধ্যম : বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দু‘আ করা। কেননা বায়তুল মাক্বদিসের পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত ভাইদের জন্য আপনাদের উপর হক্ব হলো তাদের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে বিনয় ও নম্রতার সাথে বেশি বেশি দু‘আ করা। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং অবিচল থাকা ও ক্ষমতায়নের জন্য দু‘আ করা।

অতএব, আপনাদের ঈমানী ভাইদের জন্য আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দু‘আ করুন। আপনাদের অসহায় মুসলিম ভাইদের জন্য একমাত্র আল্লাহর দরবারেই দু‘আ করুন। শুধুই দু‘আ করতে থাকুন। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমার প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দিব’ (গাফির, ৪০/৬০)

হে সৌভাগ্যবান পিতাগণ! সুস্পষ্ট বিজয়, গৌরব এবং ক্ষমতা লাভের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য দৃঢ় সংকল্প এবং আকাঙ্ক্ষার সমন্বয় ঘটাতে হবে; যাতে উম্মাহর পবিত্র ও বরকতময় ভূমি বায়তুল ‍মাক্বদিসের পবিত্রতা অক্ষুণ্ন থাকে। যা মুসলিমদের প্রথম ক্বেবলা ও মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিচরণভূমি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম জাতি এক ভয়াবহ সময় পার করছে। ক্রমশ মুসলিমদের উপর বর্বর ইয়াহূদীবাদী আগ্রাসন প্রভাব বিস্তার করছে। তারা ফিলিস্তীনে দুর্বল নিরপরাধ বেসামরিক মুসলিমদের উপর বর্বর আক্রমণ চালাচ্ছে। সেখানে শত্রুরা পুরো মুসলিম জনপদকে তছনছ করে দিচ্ছে। হে আল্লাহ! আমরা আপনার দয়া কামনা করছি। আমাদের জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম প্রতিনিধি।

হে ফিলিস্তীনের ভূমিতে অবস্থানরত মুসলিম ভাইয়েরা! আপনারা বেশি বেশি ছবর করুন, সদা দৃঢ় অবিচল থাকুন। আমরা সকলেই আপনাদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী, সুধারণা পোষণকারী। আল্লাহ বলেন, وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ ‘আর নিশ্চয় আমার বাহিনীই বিজয়ী হবে’ (আছ-ছাফফাত, ৩৭/১৭৩)। তিনি আরো বলেন,أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ ‘জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী’ (আল-বাক্বারা, ২/২১৪)

হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা আল্লাহর স্পষ্ট সাহায্য লাভের মাধ্যমগুলো গ্রহণ করুন। তিনি অবশ্যই আপনাদের জন্য বিজয়, সম্মান ও ক্ষমতা নিশ্চিত করবেন।

بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإيَّاكم بما فيه...

দ্বিতীয় খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মুত্তাক্বীদের সাহায্যকারী। আমি আল্লাহ তাআলার অগণিত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর।

অতঃপর হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা আল্লাহকে ভয় করে চলুন। দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন যে, নিশ্চয়ই দৃঢ়তা ও ছবরের মধ্যেই আল্লাহর সাহায্য নিহিত আর চূড়ান্ত বিজয় তো কেবল সর্বশক্তিমানকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই অর্জিত হবে। হে মুসলিমগণ! আপনারা ইখলাছ, সততা এবং দৃঢ়তার সাথে ঈমান রাখুন। অবশ্যই আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বিজয়, সম্মান ও ক্ষমতা দান করবেন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের গাযার নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে সামনে ও পিছন থেকে, ডান ও বাম থেকে, উপর ও নিচ সকল দিক থেকে হেফাযত করুন। হে আল্লাহ! আপনি গাযার আবালবৃদ্ধবনিতার প্রতি রহম করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল করুন এবং যারা তাদের উপর যুলম করছে তাদের উপর এদেরকে বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ! তারা আজ নিপীড়িত মাযলূম, সুতরাং তাদের বিজয় দান করুন।

 

[1]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৪৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৪।

Magazine