[১৮ যুলক্বা‘দাহ, ১৪৪৬ হি. মোতাবেক ১৬ মে, ২০২৫ মদীনা মুনাওয়ারার আল-মাসজিদুল হারামে (মসজিদে নববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. খালেদ আল-মুহান্না হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি অতি নিকটবর্তী, দু‘আ কবুলকারী, অভিভাবক, সাহায্যকারী ও হিসাব গ্রহণকারী। তিনি তাঁর সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে পছন্দ করেন তাকে নিজের নৈকট্য দেন। আমি দরূদ ও সালাম পাঠ করছি তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি, যিনি আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি এবং সৃষ্টির সর্বসেরা জীব।
অতঃপর, হে মানুষ! আপনারা আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের তাক্বওয়া অবলম্বন করুন এবং তাক্বওয়ার বাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে দৃঢ়ভাবে ধারণ করুন। কেননা সেই ব্যক্তিই সফল, যে তার অন্তরে তাক্বওয়া ধারণ করে এবং আখেরাতকে সামনে রাখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর প্রত্যেকের উচিত চিন্তা করে দেখা সে আগামীকালের জন্য কী প্রেরণ করেছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত’ (আল-হাশর, ৫৯/১৮)।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! সেই বান্দাই প্রকৃতভাবে সফল ও আলোকিত পথের পথিক, যে তার প্রতিপালকের দিকে সহজ-সরল পথে চলে, কোনোরূপ বক্রতা অবলম্বন ছাড়াই। সে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত না হয়ে এবং সরল পথ থেকে গোমরাহ না হয়ে তার মহিমান্বিত মালিকের নিকটবর্তী হয়। সে তার প্রতিপালকের দেখানো পথে সৎ ও একনিষ্ঠ আমলের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করে। সে আল্লাহকে পরিপূর্ণ ভালোবাসে, পরম শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সাথে তাঁকে সম্মান করে, তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ বিনয়াবনত হয় এবং তাঁর উপর সর্বতোভাবে নির্ভরশীল হয়। সে তাঁর কাছে ছওয়াব কামনা করে এবং তাঁর শাস্তি থেকে ভয় পায়। সে তাদের গুণাবলিতে নিজেকে তৈরি করে, যাদেরকে অনুকরণ করতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, যেমন- নবীগণ, রাসূলগণ এবং আল্লাহর নির্বাচিত নেককার বান্দাগণ। যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাঁর নিকটতর? আর তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর আযাবকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের আযাব ভীতিকর’ (বনী ইসরাঈল, ১৭/৫৭)।
হে মুসলিমগণ! একজন বান্দার তার প্রতিপালকের নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো আল্লাহ তাঁর উপর যেসব বিষয় ফরয করেছেন, সেগুলো যথাযথভাবে পালন করা। যেমনটা হাদীছে কুদসীর মধ্যে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা কেবল তার উপর ফরযকৃত আমলের দ্বারাই আমার নৈকট্য লাভ করে’।[1] আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হলো তাঁর ইবাদতে তাওহীদ বজায় রাখা এবং তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে দ্বীন পালন করা। এটি তাঁর বান্দাদের উপর সবচেয়ে বড় ফরয আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও ঘৃণিত বিষয় হলো তাঁর সাথে শিরক করা। এটিই হলো সবচেয়ে বড় নিষিদ্ধ বিষয়, যাকে আল্লাহ সবচেয়ে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
জেনে রাখুন! ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরয, যা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবি রাখে এবং মহান অধিপতি আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো ছালাত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কখনো নয়, তুমি তার আনুগত্য করবে না। আর সিজদা করো এবং নৈকট্য লাভ করো’ (আল-আলাক্ব, ৯৬/১৯)।
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বান্দা সিজদারত অবস্থায়ই তার প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভের সর্বোত্তম মুহূর্ত। অতএব, তোমরা আল্লাহর কাছে অধিক পরিমাণে দু‘আ করো’।[2] এখানে সিজদার কথা বলার কারণ হলো বান্দার ছালাতের সিজদা হচ্ছে তার সর্বোচ্চ দাসত্ব ও বিনয় প্রকাশের মাধ্যম। আর সীমাহীন মর্যাদা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। তাই আপনি যত আল্লাহর মহান গুণাবলির বিপরীতে নিজেকে বিনম্র করবেন, ততই আপনি তাঁর সান্নিধ্য ও জান্নাতের নিকটবর্তী হবেন। আর বান্দার তাঁর রবের প্রতি সত্যিকারের বিনয় প্রকাশ দুইভাবে প্রমাণিত হয়। যথা—
প্রথমত, বান্দা তার প্রভুর হুকুম ও নিষেধ মানার ক্ষেত্রে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করে এবং তার নির্ধারিত তাক্বদীর বা ফয়সালার ক্ষেত্রে ধৈর্য ও বিনয়-নম্রতার পরিচয় দেয়।
দ্বিতীয়ত, বান্দা নিজের ভেতর থেকে অহংকার ও আত্মগর্বের পোশাক খুলে ফেলে এবং বিনয়-নম্রতা ও নতজানুর পোশাক স্থায়ীভাবে গ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়্যা রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, বান্দা যতই আল্লাহর সামনে নিজেকে অধিক নিঃস্ব ও বিনম্র হিসেবে প্রকাশ করে, সে ততই আল্লাহর নিকটবর্তী ও সম্মানিত হয়।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! একজন আল্লাহভক্ত বান্দা দ্বীনের ফরয ইবাদতের পর নফল ইবাদতের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে তার রবের নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে থাকে। সে তার উপর ওয়াজিব বিষয়গুলো পালনের সাথে সাথে নফল, মুস্তাহাব ও অন্যান্য মুস্তাহাব আমলগুলোও সম্পাদন করে থাকে যতক্ষণ না আল্লাহ তাকে ভালোবেসে ফেলেন।
আর যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তিনি তার অভিভাবক ও সহায় হয়ে যান। ফলে আল্লাহ তার কান ও চোখকে হারাম থেকে রক্ষা করেন, তার হাতকে সীমালঙ্ঘন থেকে রক্ষা করেন এবং তার পদযুগলকে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে চলা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। সে তখন কেবল তাঁর রব ও মাওলার সন্তুষ্টির পথেই চলতে থাকে। এর ফলে তার আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, তার অন্তর পবিত্র হয়, সে আসমান ও যমীনের রবের নৈকট্য লাভ করে এবং সর্বদা তার দু‘আ কবুল করা হয়। এর প্রমাণ হলো একটি হাদীছে কুদসী, যাতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয়ভাজন বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে চলে। সে যদি আমার কাছে কোনো কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই’।[3]
আর যখনই কোনো বান্দা তাঁর রবের নিকটবর্তী হয়, তখন তার রবও তাকে কাছে টেনে নেন এবং তাকে এক মহাসুসংবাদ প্রদান করেন যাতে তার অন্তর আনন্দ ও খুশিতে ভরে যায়। মৃত্যুর সময় সেই নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাকে বিশ্রাম, উত্তম জীবনোপকরণ, সুখময় জান্নাত ও সম্মানিত রিযিক্বের সুসংবাদ দেওয়া হয়, যা আল্লাহ তাআলা নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। তার প্রমাণ রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও অতি পবিত্র আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীতে, তিনি বলেন, ‘অতঃপর সে যদি (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের একজন হয়; তবে তার জন্য থাকবে বিশ্রাম, উত্তম জীবনোপকরণ ও সুখময় জান্নাত’ (আল-ওয়াক্বিআহ, ৫৬/৮৮-৮৯)।
হে মুসলিমগণ! আল্লাহর প্রিয় বান্দারাই কেবল তাঁর নৈকট্য লাভ করেন। তারা নিজেদের সৎ আমলের মাধ্যমে তাঁর সাথে সুসম্পর্ক গড়েন এবং আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সর্বোচ্চ নৈকট্য দান করেন। যেমন সর্বোচ্চ নৈকট্য লাভ করেছিলেন তাঁর দুই প্রিয় বান্দা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম (আল্লাহ তাঁদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন)। আল্লাহ তাঁদের উভয়কেই ‘খলীল’ (ঘনিষ্ঠ বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন’ (আন-নিসা, ৪/১২৫)। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আমার উম্মতের কাউকে যদি আন্তরিক বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু-কেই গ্রহণ করতাম। তবে তিনি আমার ভাই ও আমার ছাহাবী’।[4]
আর মহান আল্লাহ কবর জীবনে তাঁদের উভয়ের নফসের অবস্থান করেছেন সর্বোচ্চ মর্যাদায় আর জান্নাতে তাঁদের মর্যাদা রেখেছেন সর্বোচ্চ স্তরে। অতঃপর তাঁদের পরে সর্বোচ্চ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হলেন মূসা আলাইহিস সালাম, যিনি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তাঁর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বোত্তম দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাকে তূর পর্বতের ডান দিক থেকে ডেকেছিলাম এবং অন্তরঙ্গ আলাপের উদ্দেশ্যে তাকে আমার নিকটবর্তী করেছিলাম’ (মারইয়াম, ১৯/৫২)। এরপর সর্বোচ্চ নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা হলেন ঈসা আলাইহিস সালাম, তারপর নূহ আলাইহিস সালাম, অতঃপর অন্যান্য সব রাসূল ও নবীগণ। তাঁদের সকলের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। তাদের পর সর্বোচ্চ নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি হলেন, আবূ বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু, তারপর উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু, তারপর উছমান ও আলী রাযিয়াল্লাহু আনহুমা, এরপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্যান্য ছাহাবীগণ (আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হোন)। তাঁদের মর্যাদা নির্ধারিত হয়েছে ঈমানে অগ্রগামী হওয়া, হিজরত করা এবং রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণের ভিত্তিতে। এরপর সর্বোচ্চ নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন নবীদের ছাহাবীগণ, তারপর এই উম্মতের সর্বোত্তম তাবেঈ ও তাবে-তাবেঈগণ এবং তাদের পর এ উম্মতের পথপ্রদর্শক আলেম ও ওলীগণ।
হে ঈমানদার ভ্রাতৃমণ্ডলী! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি যে অনুগ্রহ, সহজতা এবং সম্মান দান করেছেন তার অন্যতম হলো তিনি বান্দাদের ওপর এমন কোনো বিধান চাপিয়ে দেননি যে, তাঁর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে কোনো মাখলূকের মধ্যস্থতার প্রয়োজন হবে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রয়োজন তাঁর কাছ পৌঁছাবে অথবা তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য চাওয়া হবে বা যে তাদেরকে রবের নিকটে পৌঁছে দিবে। বরং তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য অনুগ্রহ ও দয়ার দরজা সর্বদা খুলে রেখেছেন, যাতে তারা নিজেদের সৎকর্মের মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করে এবং সরাসরি মুনাজাতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করতে পারে। তারা কেবল তাঁর সাথেই মুনাজাত করবে, অন্য কারো সাথে নয়; কেবল তাঁকেই ডাকবে, অন্য কাউকে নয়; কেবল তাঁর কাছেই নৈকট্য কামনা করবে, অন্য কারো কাছে নয়। মূলত তারা তাঁকেই ডাকে আর তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন। তারা তাঁরই নিকট এগিয়ে আসে আর তিনি তাদের কাছে টেনে নেন।
মহান আল্লাহ কিছু মুশরিক জাতির নিন্দা করেছেন, যারা তাঁর সাথে অন্য কাউকে আহ্বান করেছে এবং তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন করেছে। এই কর্ম তাদের কোনো উপকারে আসেনি, কারণ তারা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অসীলা তলব করলেও তাদের এই পথ ছিল চরম পর্যায়ের ভ্রষ্টতাপূর্ণ। তাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘জেনে রেখো, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে। যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফের, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হেদায়াত দেন না’ (আয-যুমার, ৩৯/৩)।
তাদের নিকটে আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রধান মাধ্যম হলো শিরক, যা তাদের কোনো উপকারে আসেনি; বরং আল্লাহ তাদের মিথ্যাবাদী বলেছেন এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাঁর ইবাদতের সঠিক পথ ও পদ্ধতি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে’ (আল-বাক্বারা, ২/১৮৬)। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ অদৃশ্য এবং অতি গোপন বিষয়ও জানেন, আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। তিনি ভাষার পার্থক্য ও প্রয়োজনের ভিন্নতা সত্ত্বেও সব কণ্ঠের আওয়াজ শোনেন। এতে একসাথে একাধিক বান্দার আবেদন শ্রবণ কোনো সমস্যার তৈরি করে না, বান্দার কোনো চাওয়াই তাঁকে বিভ্রান্ত করে না এবং বান্দার বারবার চাওয়ার কারণে তিনি বিরক্তিবোধও করেন না।
بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم، ونفعني وإيَّاكم بما فيه من الآيات والذِّكْر الحكيم.
দ্বিতীয় খুৎবা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত, যিনি পরম দয়ালু ও স্নেহময়। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নেতা ও নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি, যিনি হাউযে কাউছারের মালিক হবেন এবং যার হাতে থাকবে সম্মানের পতাকা।
অতঃপর, হে আল্লাহর বান্দারা! রাসূলগণের সর্দার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কারভাবে দ্বীনের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ সমস্ত সৃষ্টির উপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই গোপন রাখেননি, বরং সবকিছুই স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারবে, এমন সবকিছুই আমি তোমাদের নির্দেশ দিয়েছি’।[5] তাই আল্লাহর নৈকট্য পেতে হলে তিনি তাঁর কিতাবে যে নির্দেশনা দিয়েছেন কিংবা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে যা বর্ণনা করেছেন সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে এবং তা ইখলাছের সাথে করতে হবে। এর বাইরে ভিন্ন পন্থায় তার নৈকট্য লাভ করতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যাত হবে এবং তা বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করার পরিবর্তে আরো দূরবর্তী করে দিবে। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে কেউ এরূপ আমল করে যা আমাদের শরীআতের পরিপন্থি, তা পরিত্যাজ্য’।[6]
ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল বিষয়ে সুন্নাহর অনুসরণ করা। সর্বদা আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল থাকা। সকল কথা ও কাজে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা। উক্ত তিনটি মাধ্যম ব্যতীত কেউ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেনি। তারাই কেবল আল্লাহর নৈকট্য লাভে ব্যর্থ হয়েছে, যারা এ তিনটির কোনো একটি বা সবগুলো থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
হে আল্লাহ! আমরা আপনার নৈকট্য চাই, আপনার সাথে মুনাজাতে তৃপ্ত হতে চাই। আপনার যিকির, শুকরিয়া ও ইবাদতের উপর অটল থাকার জন্য সাহায্য চাই।
[1]. মুসনাদে বাযযার, হা/৮৭৫০।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৮২।
[3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫০২।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৫৬।
[5]. ত্ববারানী, হা/১৬৪৭; সিলসিলা ছহীহা, হা/২৩২।
[6]. ছহীহ বুখারী, হা/২১৪২।