কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রকৃত ঈমানদারদের জন্য রয়েছে নিরাপত্তা ও কর্তৃত্ব

post title will place here

[১৭ যুলহিজ্জাহ, ১৪৪ হিজরী মোতাবেক ১৩ জুন, ২০২পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খ. ইয়াসির আদ-দূসারী হাফিযাহুল্লাহউক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথমখুৎবা

যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি মহান অনুগ্রহশীল। তিনি তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের প্রতি স্বীয় অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন এবং অনুগত বান্দাদের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাবিজ্ঞানী। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। তিনি ঈমানদারদের প্রতি ছিলেন স্নেহপরায়ণ ও দয়াশীল। আল্লাহ তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন আর তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হোক, যারা তাঁর পথ অনুসরণ করে চলে এবং সোজা ও সরল পথের উপর অটল থাকে।

অতঃপর, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আর জেনে রাখুন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তাকে রক্ষা করেন আর যে ব্যক্তি তাঁর শারঈ সীমারেখাকে রক্ষা করে, আল্লাহও তাকে রক্ষা ও লালনপালন করেন। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎ কর্মপরায়ণ’ (আন-নাহল, ১৬/১২৮)

হে ঈমানদারগণ! ইবাদতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি মৌসুম অতিবাহিত হয়ে গেছে। শেষ হয়েছে হজ্জ ও আরাফাতের দিনসমূহ। রহমানের অতিথি হিসেবে পবিত্র হারামে প্রবেশে আপনাদেরকে আন্তরিক অভিনন্দন! আপনারা আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন এবং পবিত্র বিষয়সমূহ ও ইসলামের নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছেন।

আর আপনারা হজ্জের সময়ে পবিত্র স্থানসমূহ তাওহীদের স্লোগানে মুখরিত করে তুলেছিলেন। আপনাদের পরিপূর্ণভাবে হজ্জ পালনের জন্য এবং মহান আল্লাহ আপনাদেরকে যে অনুগ্রহ ও নেয়ামত দিয়েছেন তার জন্য অভিনন্দন! মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ ‘বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটা যা তারা জমা করে, তা থেকে উত্তম’ (ইউনুস, ১০/৫৮)

জেনে রাখুন! আল্লাহ আপনাদের প্রতি দয়া করুন। নিশ্চয় ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম নিদর্শন হলো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং এই কল্যাণের ধারা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া। আর মানুষকে দৃঢ় রাখে এবং ইবাদতে অবিচল রাখে এমন বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো সর্বক্ষেত্রে বান্দা তার রবকে (বিধিনিষেধ মানার মাধ্যমে) হেফাযত করবে, যাতে সে দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে আল্লাহর নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, কোনো এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে ছিলাম। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

يَا غُلاَمُ إِنِّى أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ احْفَظِ اللَّهَ يَحْفَظْكَ احْفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ إِذَا سَأَلْتَ فَاسْأَلِ اللَّهَ وَإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَاعْلَمْ أَنَّ الأُمَّةَ لَوِ اجْتَمَعَتْ عَلَى أَنْ يَنْفَعُوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ لَكَ وَلَوِ اجْتَمَعُوا عَلَى أَنْ يَضُرُّوكَ بِشَىْءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إِلاَّ بِشَىْءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللَّهُ عَلَيْكَ رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحُفُ.

‘হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি, তুমি মহান আল্লাহর (বিধিনিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রাখবে, আল্লাহ তাআলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তাআলার নিকট চাও আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ তাআলার নিকটেই করো। আর জেনে রাখো! যদি পুরো জাতিও তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু উপকার-ই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে তারা ততটুকুই ক্ষতি করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে’।[1] অতএব, এই হাদীছটি ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ ও মহান হেদায়াতসমূহের বাহক।

এখানে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীছটি শুরু করেছেন এই বলে যে, ‘হে ছেলে! আমি তোমাকে কিছু কথা শিক্ষা দিব’ অর্থাৎ এমন কিছু কথা, যেগুলো আল্লাহ তোমার পার্থিব ও আখেরাতের জীবনে উপকার বয়ে আনবে। আর এতে রয়েছে বক্তব্যের এক অনন্য সূচনাকৌশল, যা শ্রোতাকে মনোযোগ দিয়ে শোনার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এবং বলা কথার প্রতি মনোযোগী করে তোলে। এরপর তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি আল্লাহকে হেফাযত করো, আল্লাহ তোমার হেফাযত করবেন’ অর্থাৎ তুমি খুব দৃঢ়তার সাথে তাঁর হক্ব ও বিধিবিধানের সীমারেখাকে হেফাযত করবে, তাঁর আদেশ মান্য করবে এবং নিষেধ এড়িয়ে চলবে। যে ব্যক্তি এভাবে আল্লাহর বিধিবিধানের সীমারেখাকে রক্ষা করে চলে, সে রহমান এর সীমারেখা হেফাযতকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুত জান্নাতের অধিকারী হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(তাদের বলা হবে) এ হলো তাই, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল। প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী ও (গুনাহ থেকে) খুব বেশি হেফাযতকারীর জন্য। যে না দেখেই দয়াময় (আল্লাহকে) ভয় করত আর আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য বিনয়ে অবনত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হতো। (তাদেরকে আরও বলা হবে) শান্তির সঙ্গে এতে প্রবেশ করো, এটা চিরস্থায়ী জীবনের দিন’ (ক্বাফ, ৫০/৩২-৩৪)

হে আল্লাহর বান্দাগণ! নিশ্চয়ই আল্লাহর সীমারেখা ও অধিকারসমূহের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাওহীদের বাস্তবায়ন এবং তাওহীদকে সকল প্রকার শিরক ও ভ্রান্ত বিশ্বাস থেকে পরিশুদ্ধ রাখা। তাওহীদই হলো দ্বীনের মূলভিত্তি ও তার স্তম্ভ। তাই তাওহীদ বিবর্জিত কোনো আমলের প্রতিদান আশা করা যায় না। তাওহীদের সাথে সঠিকভাবে কোনো আমল বাস্তবায়িত হলেই কেবল তা কবুলের আশা করা যায়। মহান আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ - بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ

‘আর আপনার প্রতি ও আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবশ্যই অহী হয়েছে যে, যদি আপনি শিরক করেন; তবে আপনার সমস্ত আমল তো নিষ্ফল হবে এবং অবশ্যই আপনি হবেন ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। বরং আপনি আল্লাহর-ই ইবাদত করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হোন’ (আয-যুমার, ৩৯/৬৫-৬৬)

আর তাওহীদ বাস্তবায়নের পর বান্দার ওপর যেসব বিষয়ের হেফাযত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে অন্যতম হলো ছালাতের হেফাযত করা। কেননা ছালাত হলো ইসলামের মূল স্তম্ভ এবং সর্বপ্রথম মানুষের কাছে এই ছালাতেরই হিসাব চাওয়া হবে। এটি হলো সফলতা লাভের রহস্য এবং মুক্তির চাবিকাঠি। মহান আল্লাহ বলেন,حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَى وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ‘তোমরা ছালাতের প্রতি যত্নবান হও, বিশেষ করে মধ্যবর্তী ছালাতের প্রতি এবং আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও’ (আল-বাকারা, /২৩৮)

অতঃপর, হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনাদের উচিত ইসলামের সকল স্তম্ভগুলোর যথাযথ হেফাযত করা। যেমন- যাকাত, হজ্জ ও ছওম। সুতরাং এসব ইবাদতের প্রতি পূর্ণ যত্নবান হোন এবং এগুলোর হক্ব সর্বোত্তমভাবে আদায় করুন।

হে ঈমানদার ভ্রাতৃমণ্ডলী! উক্ত হাদীছে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘আল্লাহ তোমার হেফাযত করবেন’ এর অর্থ হলো, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার দ্বীন ও দুনিয়ার হেফাযত করবেন। কেননা বান্দার প্রতিদান নির্ধারিত হয় তার কর্ম অনুযায়ী। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ ‘আর তোমরা আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করো, তাহলে আমি তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করব’ (আল-বাক্বারা, ২/৪০)

মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য হেফাযত দুভাবে হতে পারে। প্রথমত, আল্লাহ বান্দাকে তার দ্বীন, ঈমান এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর অনুসরণের ব্যাপারে হেফাযত করেন। এটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। তা হলো মহান আল্লাহ বান্দাকে তার জীবদ্দশায় বিভ্রান্তিকর সন্দেহ থেকে রক্ষা করেন, হারাম আকাঙ্ক্ষা থেকে বাঁচান এবং এমন সব বিষয় থেকে দূরে রাখেন, যা তার দ্বীনকে নষ্ট করতে পারে।
আর মৃত্যুর সময়েও তাকে হেফাযত করেন, যাতে সে ঈমান ও সুন্নাহর ওপর মৃত্যুবরণ করে।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ বান্দাকে তার দুনিয়াবী কল্যাণকর কাজের ব্যাপারে হেফাযত করেন। যেমন- সে নিজে, তার সন্তানসন্ততি, পরিবার-পরিজন এবং সম্পদ হেফাযতে থাকা। ফলে কোনো ক্ষতি তার কাছে পৌঁছাতে পারে না এবং কোনো কষ্টদায়ক বিষয় তাকে স্পর্শ করতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ‘মানুষের সামনে ও পেছনে পাহারাদার নিযুক্ত আছে, যারা আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে’ (আর-রা‘দ, ১৩/১১)। এ প্রসঙ্গে মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ একজন নেককার ব্যক্তির কারণে তার সন্তান, তার সন্তানের সন্তান, এমনকি তার চলার পথের আশপাশের ঘরগুলো পর্যন্ত হেফাযত করেন। ফলে তারা সবাই আল্লাহর হেফাযত ও তাঁর নিবিড় আবরণে আচ্ছাদিত থাকে। মূলত বান্দা তার রবের বিধিবিধানের প্রতি যতটুকু হেফাযতের মনোভাব রাখে, আল্লাহও তাকে ততটুকুই হেফাযত করেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘তুমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, তাহলে তুমি আল্লাহ তাআলাকে কাছে পাবে’। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে, তাঁর অধিকারসমূহের প্রতি যত্নবান হয়, সে সকল অবস্থায় আল্লাহকে সঙ্গে পায়। আল্লাহ তাকে ঘিরে রাখেন, তাকে সাহায্য করেন, সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং তাকে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ় রাখেন। মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল’ (আন-নাহল, ১৬/১২৮)

হে মানবমণ্ডলী! উক্ত হাদীছে বর্ণিত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী, ‘তোমার কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তাআলার নিকট চাও আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ তাআলার নিকটেই করো’। এটা ঠিক তেমনি, যেমন মহান আল্লাহ বলেন, إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ ‘আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই’ (আল-ফাতিহা, ১/)। এখানে আল্লাহর কাছে চাওয়ার অর্থ হলো, তাঁর নিকট দু‘আ করা ও তাঁর কাছে গভীর আকাঙ্ক্ষা রাখা। সুতরাং কিছু চাইতে হলে একমাত্র আল্লাহর কাছেই চাওয়া আবশ্যক এবং একমাত্র তাঁর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত। কারণ কল্যাণ পৌঁছানো এবং অকল্যাণ দূর করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে, যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন।

بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن والسُّنَّة، ونفعني وإيَّاكم بما فيهما من الآيات والحكمة.

দ্বিতীয়খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য আর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং তাঁর পরিবার, ছাহাবী ও যারা তাদের অনুসরণ করেছে তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর, হে মুসলিমগণ! উক্ত মর্যাদাপূর্ণ হাদীছের শেষাংশে রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আর জেনে রাখো! যদি পুরো জাতিও তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু উপকার-ই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে তারা ততটুকুই ক্ষতি করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার তাক্বদীরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে’—এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বান্দার জীবনে উপকার বা ক্ষতি যা আসে, তা সবই আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ ‘বলুন, আমাদের জন্য আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কিছু ঘটবে না; তিনি আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত’ (আত-তাওবা, /৫১)। তাই বলা যায়, তাক্বদীরের সকল বিষয়সমূহ ইতোমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং তা লেখা হয়েছে আল্লাহর আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার আগেই। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আছ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সকল মাখলূকের তাক্বদীর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বে লিখে রেখেছেন’।[2]

হে মুসলিমগণ! আল্লাহ আপনাদের ওপর দয়া করুন। যে ব্যক্তি সুখ-সমৃদ্ধির সময়ে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী থাকে, আল্লাহও তার সঙ্গে থাকেন এবং সকল অবস্থায় তার হেফাযত করেন। আর কঠিন বিপদ ও সংকটপূর্ণ সময়ে তাকে রক্ষা করেন এবং সকল বিপদ থেকে নিরাপদ রাখেন।

হে আল্লাহর পবিত্র ঘরের হাজীগণ! আল্লাহ আপনাদের হজ্জ ও সাঈ কবুল করুন। আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের জন্য এ বরকতময় মৌসুমগুলো বহু বছর ধরে বারবার ফিরে আসার তাওফীক্ব দিন।

হে আল্লাহ! বিপদগ্রস্তদের দুশ্চিন্তা দূর করে দিন, কষ্টে থাকা লোকদের কষ্ট লাঘব করে দিন, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিন, আমাদেরকে ও সমস্ত মুসলিমকে রোগ থেকে আরোগ্য দিন। হে আল্লাহ! আমাদের মৃত ও সমস্ত মুসলিমদের মধ্যে মৃতদের প্রতি দয়া করুন।

হে আল্লাহ! আপনি ফিলিস্তীনের নির্যাতিত মুসলিম ভাইদের সাহায্য করুন; ফিলিস্তীনসহ পৃথিবীর প্রতিটি স্থানের নির্যাতিত মুসলিমদের সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে সকল দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিন, প্রতিটি সংকট থেকে নিস্তার দিন এবং প্রতিটি বিপদ থেকে নিরাপত্তা দান করুন। হে আল্লাহ! তাদের আহতদের আরোগ্য দিন, তাদের রক্তপাত থামিয়ে দিন এবং তাদের হৃদয়কে দৃঢ় ও ধৈর্যশীল করুন।

হে আল্লাহ! আপনি মসজিদে আক্বছাকে হেফাযত করুন এবং তা ক্বিয়ামত পর্যন্ত সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ রাখুন।

হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করুন, নিশ্চয় আপনি অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। হে আল্লাহ! আমাদের তওবা কবুল করুন, নিশ্চয় আপনি তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।


[1]. তিরমিযী, হা/২৫১৬, হাদীছ ছহীহ।

[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৫৩।

Magazine