কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

জিহ্বাকে হেফাযতের গুরুত্ব

post title will place here

[১৩ জুমাদাল উলা, ১৪৪৬ হিজরী মোতাবেক ১৫ নভেম্বর, ২০২৪ পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খ. আব্দুল্লাহ ইবনু আওয়াদ আল-জুহানী হাফিযাহুল্লাহ। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]

প্রথম খুৎবা

সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, আমি তাঁর গুণগান করি, তাঁর কাছে সাহায্য চাই, তাঁর কাছে ক্ষমা চাই এবং একমাত্র তাঁর কাছেই হেদায়াত কামনা করছি। আমি তাঁর প্রতি ঈমান রাখি, তাঁর সাথে কুফরী করি না এবং যে তাঁর সাথে কুফরী করে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই আর নিশ্চয় মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাঁর উপর ও তাঁর পরিবারের উপর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ করুন। আল্লাহ তাঁকে হেদায়াত, সত্য দ্বীন, নূর ও উপদেশসহ রাসূলগণের আগমনধারা বন্ধের প্রাক্কালে, ইলমের হ্রাস পাওয়া, মানুষের ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হওয়া, যামানার পরিসমাপ্তি এবং ক্বিয়ামত ও মৃত্যুর নিকটবর্তী সময়ে প্রেরণ করেছিলেন। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করে সে সঠিক পথ প্রাপ্ত হয় এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী করে সে বিপথগামী হয়, বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয় এবং দূরবর্তী পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়।

হে মানুষ সকল! আপনারা একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করে চলুন। কেননা তিনি চোখের ধোঁকা ও অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। আপনারা আল্লাহর সম্মানিত কিতাবের মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি ও ভীতিপ্রদর্শন রয়েছে তা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করুন আর কোনোভাবেই দুনিয়ার জীবন যেন আপনাদেরকে ধোঁকায় না ফেলে এবং আল্লাহর ব্যাপারে বড় প্রতারক (শয়তান) যেন আপনাদেরকে প্রতারিত না করে। আপনারা আল্লাহর নেয়ামতকে স্মরণ করুন। তিনি আপনাদেরকে অতীতের মন্দ আমলের সংশোধনের সুযোগ করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য; অতএব, দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে আর বড় প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রতারিত না করে’ (ফাত্বি, ৩৫/৫)

হে আল্লাহর বান্দাগণ! রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ বাগ্মী, কথাবার্তায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টভাষী, তাদের মধ্যে সুমিষ্ট ভাষার অধিকারী, কথাবার্তায় তাদের মধ্যে সবচেয়ে তীক্ষ্ণ ও উন্নত উচ্চারণভঙ্গির অধিকারী, তর্কের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ, বক্তৃতায় তাদের মধ্যে অধিক দক্ষ এবং তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে হক্বের উপর অধিক প্রতিষ্ঠিত। তিনি ইলাহী মদদপুষ্ট, আত্মনিবেদিত, প্রভুভক্ত এবং তিনি আধ্যাত্মিক তত্ত্বাবধানের মধ্যে ছিলেন। তিনি অশ্লীলভাষী ছিলেন না আর অভিশাপকারী বা নিন্দাকারীও ছিলেন না।

অতএব, জিহ্বা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে একটি অঙ্গ, আল্লাহ এর অনিষ্টতা থেকে আপনাদেরকে হেফাযত করুন। এটি বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহের একটি, এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।

জিহ্বা চিন্তা ও হৃদয়ের দোভাষী এবং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নফসের অন্তর্নিহিত কথা প্রকাশ করে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের হৃদয় ও বিবেকের ভালো অথবা মন্দ, ঈমান অথবা কুফরী ইত্যাদি বাহ্যিক বিষয় প্রকাশ পেয়ে থাকে। আমরা অবশ্যই জিহ্বাকে মন্দ ও খারাবি থেকে বিরত রাখতে আদিষ্ট হয়েছি।

নিশ্চয় জিহ্বাকে সংযত রাখা ও তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সকল কল্যাণের মূল আর যে ব্যক্তি তার জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে, সে মূলত সকল বিষয়ের মালিকানা পায়।

আর যখন বিবেক আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে এমন কাজের মধ্যে যবানকে ব্যবহার না করে, তখন তা ব্যক্তির জন্য ক্বিয়ামতের দিন বিপদ ও পরিতাপের কারণ হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে’ (আন-নূর, ২৪/২৪)

সবচেয়ে উত্তম, মূল্যবান ও উপকারী উপদেশ হলো, যা আবূ সাঈদ খুদরী রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছে মারফূ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মানুষ সকালে ঘুম হতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহ্বাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক, তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও, তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য’।[1]

বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় একদা আমীরুল মুমিনীন উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতিনিধি আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রাযিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখলেন যে, তিনি স্বীয় হাত দ্বারা জিহ্বাকে টেনে ধরে রেখেছেন। উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খলীফা! আপনি এটা কী করছেন? তিনি বললেন, এই জিহ্বাই তো আমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ (ক্বিয়ামতের মাঠে) জিহ্বার খারাবির বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে’।[2]

আপনারা জেনে রাখুন (আল্লাহ আপনাদের প্রতি রহম করুন)! নিশ্চয় প্রতিটি মানুষের উচিত তার জিহ্বাকে অকল্যাণকর বিষয় থেকে হেফাযত করা আর যখন কল্যাণের দিক দিয়ে কথা বলা ও না বলা উভয় সমান বলে মনে হবে, তখন কথা বলা থেকে বিরত থাকাই সুন্নাহসম্মত। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা নীরব থাকে’।[3] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক আচরণ ত্যাগ করা’।[4]

আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আশ্চর্যের বিষয় হলো একজন মানুষের পক্ষে হারাম ভক্ষণ করা, যুলমে পতিত হওয়া, যেনায় লিপ্ত হওয়া, চুরিতে লিপ্ত হওয়া, মদ্যপান করা, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ইত্যাদি থেকে সতর্ক ও হেফাযতে থাকা সহজ হলেও কথা বলার (বিপদ) থেকে বেঁচে থাকা কঠিন। একারণে আপনি একজন দ্বীনদার, দুনিয়াবিমুখ ও ইবাদতগুজার ব্যক্তিকেও দেখবেন যে, সে আল্লাহর অসন্তোষমূলক কথা বলতে কোনো পরোয়া করছে না। সে কখনো শুধু একটি কথার দ্বারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে নিশ্চিত করছে, যাতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার জন্য পূর্ব-পশ্চিম দিগন্তের দূরত্বের ন্যায় অসম্ভব ছিল। আপনি এমন অনেক ব্যক্তিকে দেখবেন, যে অনৈতিকতা এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকে; কিন্তু তার জিহ্বা জীবিত এবং মৃতদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে কোনো তোয়াক্কা করে না।

হে মুসলিমগণ! নিশ্চয় জিহ্বার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো বিনা ইলমে আল্লাহর ব্যাপারে কিছু বলা। এরপর বড় বিপদ হলো মিথ্যা বলা, গীবত করা, চোগলখুরি করা, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া ও সতীসাধ্বী নারীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা ইত্যাদি।

অতঃপর শরীরের এই ছোট্ট অঙ্গের পদস্খলন কখনো কখনো মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই বিবেকের জিহ্বার দ্বারা মুসলিমদের সম্মান নষ্ট হওয়া, তাদের ব্যাপারে মন্দ ধারণা করা, তাদের নিন্দা করা, অন্যায়ভাবে কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়া বিবেকের জন্য আরো আবশ্যক হলো জিহ্বাকে বাক-বিতণ্ডায় না জড়ানোর ব্যাপারে অভ্যস্ত করা। এভাবে একসময় সে এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, তার কাছে বিষয়গুলো সোজা মনে হবে এবং তার জন্য জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। এভাবে এতে করে সে জিহ্বার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে। এমনকি একজন বান্দার জন্য নীরবতাকে বেছে নেওয়াই সর্বোত্তম নির্বাচন।

অতএব, আল্লাহ এমন একজনের প্রতি রহম করুন যে তার জিহ্বাকে অসার কথাবার্তা থেকে, তার চোখের পাতাকে হারাম জিনিসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে এবং তার কানকে নিষিদ্ধ বিনোদন শ্রবণ থেকে হেফাযত করেছে। যে তার প্রতিটি মুহূর্তকে আনুগত্যে এবং তার সময়গুলোকে ভালো আমল লিপিবদ্ধ করার দ্বারা পরিপূর্ণ করেছে। আর যে অস্তিত্ব বিলীন হওয়া, সুস্থতা থেকে অসুস্থ হওয়া, হাড়গুলো বিলীন হয়ে যাওয়া এবং জীবন থেকে মৃত্যুর মাধ্যমে কবরের বারযাখী জীবনে পদার্পণের পূর্বেই অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য নিজেকে অনুতাপের তওবা দ্বারা সংশোধন করে নিয়েছে। যে কবরের বারযাখী জীবন পৃথিবীর প্রথম সৃষ্টির প্রবেশ করা থেকে শুরু করে শেষ সৃষ্টির প্রবেশ করা অবধি চলতেই থাকবে। অতঃপর সে সময় পৃথিবী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে, পৃথিবী তার বোঝা বের করে দিবে, প্রাণিকুল তাদের কৃতকর্মের জন্য পুরস্কৃত হবে এবং তাদের উপার্জন ও কাজের জন্য প্রতিদান দেওয়া হবে।

তাই সে বান্দার জন্য সুসংবাদ, যে উত্তম বলার মাধ্যমে সাফল্য লাভ করেছে অথবা মন্দ থেকে চুপ থাকার মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তাও আমি জানি। আর আমি তার গলার ধমনি হতেও অধিক কাছে। যখন ডানে ও বামে বসা দুজন লিপিবদ্ধকারী পরস্পর গ্রহণ করবে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে তার কাছে সদা উপস্থিত সংরক্ষণকারী রয়েছে’ (ক্বাফ, ৫০/১৬-১৮)

نفعني الله وإيَّاكم بهدي كتابه المبين، وبهدي سيد المرسلين، أقول قولي هذا وأستغفر الله العظيم لي ولكم ولكافة المسلمين...

দ্বিতীয় খুৎবা

একমাত্র মহান আল্লাহর জন্য অনাদি অনন্তকালের জন্য চিরন্তন প্রশংসা আর তাঁর জন্য এমন অফুরন্ত গুণকীর্তন, যা তাঁর ইচ্ছা ব্যতীত কখনোই শেষ হবে না। তাঁর জন্য এমন চিরন্তন প্রশংসা, যার দ্বারা প্রশংসাকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভকারী হয় আর চোখের প্রতিটি পলক ও নফসের নিঃশ্বাসের সাথে আল্লাহর অবিরত প্রশংসা।

আর দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এবং তাঁর পরিবার, ছাহাবী এবং যারা তাঁর দেখানো হেদায়াতের উপর চলবে ও তাঁর দেখানো পথে মানুষকে আহ্বান করবে, তাদের উপর শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক।

অতঃপর, হে লোকসকল! আপনারা প্রকাশ্য ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করে চলুন। আর জেনে রাখুন! একজন মুসলিমের অনর্থক, অপ্রয়োজনীয় কথা ও কাজ থেকে বেঁচে থাকা এবং অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা তার সুন্দর ইসলাম ও পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচায়ক। তার জন্য জরুরী হলো সে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল পাপ ও অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকবে।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা জেনে রাখুন, অবশ্যই আপনাদেরকে আপনাদের কৃত আমলের জন্য পুরস্কৃত করা হবে এবং আপনার কথা ও আমলের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। আর বান্দার আমলের হিসাব গ্রহণ ও তাদের প্রতিদান দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহই উত্তম হিসাবগ্রহণকারী। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে তা সে দেখবে আর কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে তাও সে দেখবে’ (আয-যিলযাল, ৯৯/৭-৮)

হে আল্লাহ! ইসলাম এবং মুসলিমদের শক্তিশালী করুন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সর্বোত্তম চরিত্রের, আমলের ও কথার পথ নির্দেশ করুন। আপনি ব্যতীত আর কেউ সর্বোত্তম পথে পরিচালিত করতে পারে না। আমাদের থেকে খারাবি দূর করে দিন, একমাত্র আপনিই আমাদের থেকে খারাবি দূর করতে পারেন আর আমাদের থেকে মন্দ ও অশ্লীলতাকে দূরে সরিয়ে দিন।

হে আল্লাহ! আমরা আপনার কাছে এই দুনিয়া ও আখেরাতে দৃঢ় বিশ্বাস, ক্ষমা ও স্থায়ী সুস্থতা কামনা করছি। হে আল্লাহ! ফিলিস্তীনসহ পৃথিবীর সর্বত্র অবস্থানরত নিপীড়িত মুসলিমদের রক্ষা করুন। হে আল্লাহ! দখলদার ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে আপনি কঠোর হোন। হে আল্লাহ! তাদের উপর ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর সময়ের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। হে আল্লাহ! তাদের বিভক্ত করে দিন, তাদের সমূলে ধ্বংস করুন, তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিন এবং সর্বোপরি আপনার অসীম শক্তি দিয়ে তাদের পরাজিত করুন, যা যালেম সম্প্রদায় থেকে কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।

হে আল্লাহ! আমাদের থেকে, সমস্ত মুসলিম দেশ থেকে মহামারি, সূদ, ব্যভিচার, ভূমিকম্প, বিপদাপদ এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফেতনার অনিষ্ট দূর করে দিন। হে আল্লাহ! দুশ্চিন্তাগ্রস্তদের দুশ্চিন্তা দূর করে দিন, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করার তাওফীক্ব দিন এবং অসুস্থ মুসলিমদের সুস্থ করে দিন।

হে আল্লাহর বান্দাগণ! মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ইনছাফ, সদাচার ও নিকটাত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন এবং তিনি আশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’ (আন-নাহল, ১৬/৯০)। আল্লাহ আমাদেরকে আমাদের জিহ্বা তথা আমাদের কথাবার্তাকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!


 [1]. তিরমিযী, হা/২৪০৭, হাসান।

 [2]. মুসনাদে বাযযার, হা/৮৪; আবূ ইয়া‘লা, হা/৫; সিলসিলা ছহীহা, হা/৫৩৫, হাদীছ ছহীহ।

 [3]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০১৯।

 [4]. তিরমিযী, হা/২৩১৭, হাদীছ ছহীহ।

Magazine