[১০ রবীউল আউয়াল, ১৪৪৬ হি. মোতাবেক ১৩সেপ্টেম্বর, ২০২৪ মদীনামুনাওয়ারারআল-মাসজিদুলহারামে (মসজিদেনববী) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. আলী ইবনু আব্দুর রহমান আল-হুযায়ফী t। উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, যথার্থ আকৃতি দান করেছেন এবং সবকিছু দয়া ও জ্ঞান দিয়ে পরিবেষ্টন করেছেন। ‘নিশ্চয় তিনি সহনশীল ও ক্ষমাশীল’ (ফাত্বির, ৩৫/৪১)। আমি আমার প্রতিপালকের অগণিত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমাদেরকে দেওয়া তাঁর জানা ও অজানা, প্রকাশ্য ও গোপনীয় সব নেয়ামতের জন্য। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী ও মহান নেতা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তাকে বিশ্ববাসীর প্রতি প্রেরণ করেছেন রহমতস্বরূপ, সুসংবাদবাহক ও সতর্ককারীরূপে এবং আল্লাহর নির্দেশে তাঁর পথে আহ্বানকারী ও আলোকিত প্রদীপ হিসেবে। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ এবং তাঁর পরিবার ও ছাহাবীদের প্রতি অগণিত শান্তি, বরকত ও রহমত বর্ষণ করুন।
অতঃপর, আপনারা আল্লাহভীতি অবলম্বন করুন, তাঁর সন্তুষ্টিমূলক আমল করা ও তাঁর নিষেধকৃত বিষয় থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে। তাহলে তিনি আপনাদের জন্য তাঁর সন্তুষ্টি অবধারিত করবেন এবং আপনাদেরকে জান্নাতে সর্বোচ্চ মর্যাদায় প্রবেশ করাবেন। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَا - وَمَنْ يَأْتِهِ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَأُولَئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلَا ‘যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না। আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায়, সৎকর্ম করে তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা’ (ত্ব-হা, ২০/৭৪-৭৫)।
হে মানবসকল! মহান আল্লাহ বলেন, يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِنْكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي فَمَنِ اتَّقَى وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ‘হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসে, যারা তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ বর্ণনা করবে; তবে যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করবে এবং (আমল) সংশোধন করবে, তাদের উপর কোনো ভয় নেই আর তারা দুঃখিতও হবে না’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৩৫)।
হে আদম সন্তানেরা! নিশ্চয় আল্লাহ আপনাদেরকে এক মহৎ কাজ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যা আসমান ও যমীন বহন করতে অপারগ হয়েছিল এবং তা পালন করতে ভয় পেয়েছিল এই আশঙ্কায় যে, তারা এর অপব্যবহার করার ফলে শাস্তির সম্মুখীন হবে অথবা তা পালনে ত্রুটি করার কারণে নিন্দিত হবে। ফলে এ ত্রুটির কারণে আল্লাহর হিসাব ও শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
জেনে রাখুন! এই মহৎ দায়িত্বটি হচ্ছে নিষ্ঠার সাথে মহান আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহর শরীআত অনুসারে পৃথিবীতে সংশোধন করা এবং যুলম ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা। মহান আল্লাহ বলেন,مَنْ عَمِلَ صَالِحًا فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ أَسَاءَ فَعَلَيْهَا وَمَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِلْعَبِيدِ ‘যে সৎকর্ম করে, সে তার নিজের জন্যই তা করে এবং যে অসৎকর্ম করে, তা তার উপরই বর্তাবে। তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি মোটেই যালেম নন’ (ফুছছিলাত, ৪১/৪৬)।
হে আদম সন্তান! আপনার জীবনের শুরু ও শেষের বিষয়গুলো এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিবর্তনশীল অবস্থাগুলোর ব্যাপারে চিন্তা করুন। মহান আল্লাহ বলেন, لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ في كَبَدٍ ‘নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে’ (আল-বালাদ, ৯০/৪)। মুফাসসিরগণ বলেছেন, মহান আল্লাহ মানুষকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, সে দুনিয়া ও আখেরাতের কষ্ট ও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। তারপর ধৈর্যশীল ও পরহেযগারদের জন্য রয়েছে অনন্ত সুখ ও শান্তি আর যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ ও নিষিদ্ধ কামনা-বাসনার পথে চলে, তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। মহান আল্লাহ বলেন,وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ ‘আর যারা যুলম করেছে, তারা বিলাসিতার পেছনে পড়ে ছিল এবং তারা ছিল অপরাধী’ (হূদ, ১১/১১৬)।
হে মানুষ! আল্লাহ তাআলা বলেন, حسبُنا اللهُ ونِعمَ الوكيلُ ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট আর তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক!’ (আলে ইমরান, ৩/১৭৩)। এটা এমন একটি বাক্য যা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠিন পরিস্থিতি, বিপদ ও সংকটের সময় পাঠ করতেন এবং ছাহাবীদেরও তা বলার পরামর্শ দিতেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন তিনি এই বাক্যটি পাঠ করেছিলেন।
আল্লাহু আকবার! মানুষ তার পার্থিব জীবনে ও আখেরাতে কতই না বিশাল ও ভয়াবহ সেইসব ঘটনার সম্মুখীন হবে। আবূ যার রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে তাহলে তোমরা খুব কমই হাসতে, বেশি কাঁদতে এবং বিছানায় স্ত্রীদের উপভোগ করতে না, বাড়িঘর ছেড়ে পথে-প্রান্তরে বেরিয়ে পড়তে, আল্লাহ তাআলার সামনে কাকুতিমিনতি করতে’। বর্ণনাকারী বলেন, ‘আমার মন চায় আমি যদি একটি বৃক্ষ হতাম আর তা কেটে ফেলা হতো’।[1]
পার্থিব জীবনের পরে প্রত্যেকেই কবরে সওয়াল-জওয়াবের সম্মুখীন হবে। আনাস রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তার সাথীরা এতটুকু মাত্র দূরে যায় যে, সে তখনও তাদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় দুজন ফেরেশতা তার নিকট এসে তাকে বসান এবং তারা বলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন মুমিন ব্যক্তি বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল। তখন তাকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানস্থলটির দিকে নযর দাও, আল্লাহ তোমাকে তার বদলে জান্নাতের একটি অবস্থানস্থল দান করেছেন। তখন সে দুটি স্থলের দিকেই দৃষ্টি দিবে। অতঃপর মুনাফেক্ব বা কাফের ব্যক্তিকেও প্রশ্ন করা হবে যে, তুমি এ ব্যক্তি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কী বলতে? সে উত্তরে বলবে, আমি জানি না, লোকেরা যা বলত আমিও তা-ই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে, তুমি না নিজে জেনেছ, না তেলাওয়াত করে শিখেছ। আর তাকে লোহার মুগুর দ্বারা এমনভাবে আঘাত করা হবে, যার ফলে সে এমন বিকট চিৎকার করে উঠবে যে, দুই জাতি (মানুষ ও জিন) ছাড়া তার আশপাশের সকলেই তা শুনতে পাবে’।[2]
অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুমিনদের স্থির রাখবেন এবং মুনাফেক্ব ও কাফেরদের বিপথগামী করবেন; তাদের দুনিয়ার স্বীকৃতি কোনো কাজে আসবে না। তারপর আল্লাহ তাআলা নবীদেরকে প্রশ্ন করবেন, তোমরা তোমাদের উম্মতের কাছে রিসালাত পৌঁছে দিয়েছিলে কি-না? এই প্রশ্ন নূহ থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল নবীকে করা হবে। মহান আল্লাহ বলেন,فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلَاءِ شَهِيدًا ‘অতএব, কেমন হবে যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের উপর সাক্ষীরূপে?’ (আন-নিসা, ৪/৪১)।
সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আবূ বারযা আল-আসলামী
রযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দার পদযুগল (ক্বিয়ামত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবে— কীভাবে তার জীবনকাল অতিবাহিত করেছে, তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কী আমল করেছে, কোথা হতে তার ধনসম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কী কী কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে?’[3]
নিশ্চয় সেদিনের হিসাব হবে অত্যন্ত কঠিন এবং এর নিরীক্ষক হবেন অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী। মহান আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন নয়, তিনি অন্তরের খবর সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত। ক্বিয়ামতের দিন কোনো বান্দার পা তার স্থান থেকে সরবে না এবং জান্নাতে যাওয়ার জন্য জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত অতিক্রম করতে পারবে না, যতক্ষণ না তাকে চারটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়— তার জীবন সম্পর্কে কীভাবে সে তা নিঃশেষ করেছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। যদি স্বীয় রবের নিকট সে সঠিক উত্তর দিতে পারে এবং তার জীবন মাওলার আনুগত্যে অতিবাহিত করে থাকে, তবে কতই না সৌভাগ্যবান হবে সেই আনুগত্যশীল ব্যক্তিরা!
মহান আল্লাহ বলেন,قَالَ اللَّهُ هَذَا يَوْمُ يَنْفَعُ الصَّادِقِينَ صِدْقُهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ‘আল্লাহ বলবেন, এটা হলো সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ, যার নিচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য’ (আল-মায়েদা, ৫/১১৯)।
মানুষকে তার সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং কীভাবে তা ব্যয় করেছে? সম্পদের উৎস, এর বণ্টন পদ্ধতি ও ব্যয়ের মাধ্যম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়া অত্যন্ত জটিল ব্যাপার এবং সে সম্পর্কে উত্তর দেওয়াও কষ্টসাধ্য। হালাল সম্পদের কারণে সৎকর্মশীল ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তরে প্রবেশ করবে, পক্ষান্তরে হারাম সম্পদের কারণে সে তার জীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হবে এবং তার মৃত্যুর পরে তার উত্তরাধিকারীগণও এর অমঙ্গলের কারণে দুর্ভাগ্যবান হবে। খাওলা আল-আনছারিয়া রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘কিছু লোক আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত হবে’।[4]
সুতরাং সম্পদের দায়িত্বভার কতই না কঠিন এবং এর অকল্যাণ ও ক্ষতি কতই না বিশাল ঐ ব্যক্তির জন্য, যে তা কুপ্রবৃত্তির পথে ব্যয় করে এবং হক্বদারদেরকে বঞ্চিত করে! তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তার ইলম সম্পর্কে, ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে? ইলম অনুযায়ী আমল করার অর্থ হলো, যার প্রয়োজন তাকে শিক্ষা দেওয়া, সে অনুযায়ী ভালো কাজের আদেশ করা ও খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করা। মূলত, সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো মানুষকে সঠিক পথ দেখানো এবং খারাপ বিষয় থেকে নিষেধ করা।
যে ব্যক্তি তার অতীত জীবনের জবাব তৈরিকরণে ত্রুটি করেছে, কিন্তু সবশেষে নিজেকে সংশোধন করেছে ও তওবা করেছে; আল্লাহ তার তওবা কবুল করবেন, তাকে স্বীয় রহমতে আবৃত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি এ চারটি বিষয়ের উত্তরের ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করবে, আল্লাহ তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবেন এবং তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। মহান আল্লাহ বলেন,وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءُ اللَّهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوزَعُونَ - حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘আর যেদিন আল্লাহর দুশমনদেরকে আগুনের দিকে সমবেত করা হবে, তখন তাদেরকে বিভিন্ন দলে বিন্যস্ত করা হবে। অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে’ (ফুছছিলাত, ৪১/১৯-২০)।
আর যে ব্যক্তি স্বীয় রবের নিকট উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে মিথ্যা বলবে, আল্লাহ তার কাছ থেকে এ চারটি বিষয়ে সে যা আমল করেছে তার স্বীকৃতি আদায় করবেন, অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,يُنَبَّأُ الْإِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ ‘সেদিন মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হবে সে কী (আমল) আগে পাঠিয়েছে আর কী পেছনে ছেড়ে এসেছে’ (আল-ক্বিয়ামাহ, ৭৫/১৩)।
بارَك اللهُ لي ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإيَّاكم بهدي سيد المرسلين.
দ্বিতীয় খুৎবা
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা, পরম করুণাময় ও বিচার দিনের মালিক। আমি তাঁর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশ্বস্ত বান্দা ও রাসূল। হে আল্লাহ! আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর পরিবার ও ছাহাবীদের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
অতঃপর আপনারা যথাযথভাবে আল্লাহভীতি অবলম্বন করুন এবং ইসলামের দৃঢ় রজ্জুকে মযবূতভাবে ধারণ করুন; কেননা যে ব্যক্তি তাক্বওয়া অবলম্বন করে, সে কল্যাণ লাভে ধন্য হয় এবং অকল্যাণ ও ধ্বংস থেকে মুক্তি পায়।
মহান আল্লাহ তাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন, তাই দুনিয়া ও আখেরাতে একজন মুসলিম যে কল্যাণই অর্জন করে, আল্লাহ তা তার মাধ্যমেই সূচনা করেছেন। কাজেই আল্লাহর হক্বের পরই রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হক্ব। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহ্বান করে তাঁর প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে’ (আল-আনফাল, ৮/২৪)।
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হক্বসমূহের মধ্যে রয়েছে তাকে ভালোবাসা, তাঁর ভালোবাসাকে সকল কিছুর উপর অগ্রাধিকার দেওয়া, তাঁর আদেশ মান্য করা, তাঁর নিষেধকৃত বিষয় বর্জন করা, তাঁর দেওয়া সংবাদকে সত্যায়ন করা এবং একমাত্র তাঁর দেখানো পদ্ধতিতেই আল্লাহর ইবাদত করা। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের অপেক্ষা অধিক প্রিয়পাত্র হই’।[5]
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে রূঢ় আচরণের অন্তর্ভুক্ত হলো ঈদে মিলাদুন্নবীর বিদআত পালনে উদ্যত হওয়া, ঐ সকল বিদআত পালন করা যার স্বপক্ষে কোনো দলীল নেই এবং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহর অনুসরণে অবহেলা করা।
মুহাজির ও আনছারদের পরে এমন কতক সম্প্রদায় এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে গেছেন যারা ঈদে মিলাদুন্নবীর কথা শ্রবণ করেননি। ফলে তারা সুন্নাতের অনুসরণ, সে অনুযায়ী আমল সম্পাদন এবং সকল ধরনের বিদআত পরিত্যাগের মাধ্যমে সফলকাম হয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘আর এটাই আমার সঠিক সরল পথ, কাজেই তোমরা তার অনুসরণ করো আর নানান পথের অনুসরণ করো না; করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তাঁকে ভয় করে যাবতীয় পাপ থেকে বেঁচে চলতে পারো’ (আল-আনআম, ৬/১৫৩)।
[1]. তিরমিযী, হা/২৩১২, হাসান।
[2]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৭৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৭০।
[3]. তিরমিযী, হা/২৬১৭।
[4]. ছহীহ বুখারী, হা/৩১১৮।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৪।