[২৮ রজব, ১৪৪৫ হি. মোতাবেক ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. ছালেহ ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু হুমাইদ হাফিযাহুল্লাহ।উক্ত খুৎবা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়-এর আরবী বিভাগের সম্মানিত পিএইচডি গবেষক আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথমখুৎবা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্যই, যিনি সুউচ্চ জ্ঞানের অধিকারী এবং সর্বোত্তম পুরস্কারদাতা। আমি ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্য সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমাদের নবী ও নেতা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। হে আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী ও তাঁর অনুসারীদের উপর ছালাত ও সালাম অবতীর্ণ করুন।
অতঃপর, হে মানুষ সকল! আমি নিজেকে ও আপনাদেরকে আল্লাহভীতির অছিয়ত করছি। আমি আপনাদেরকে সর্বপ্রথম, সবচেয়ে মূল্যবান ও অধিক অর্থজ্ঞাপক তাক্বওয়ার অছিয়ত করছি যে তাক্বওয়ার অছিয়ত মহান আল্লাহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উম্মাহকে করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ‘আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো’ (আন-নিসা, ৪/১৩১)।
অতএব, মহান আল্লাহকে ভয় করে চলুন, আল্লাহ আপনাদের প্রতি রহম করবেন। জেনে রাখুন! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা একমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্যই আপনাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আপনাদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়েছেন, যাতে আপনারা তাঁর তাওহীদ তথা একত্ব ঘোষণা করতে পারেন। তিনি আপনাদের প্রতি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যাতে আপনারা তাঁর আনুগত্য করতে পারেন। সর্বোপরি তিনি আপনাদের নিকটে রাসূল হিসাবে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রেরণ করেছেন, যাতে আপনারা তাঁর অনুসরণ করেন।
হে আল্লাহর বান্দা! জেনে রাখুন, নিশ্চয় প্রত্যেক যৌবনের পরেই বার্ধক্য রয়েছে। সুস্থতার পরেই অসুস্থতা রয়েছে। দুনিয়ার জীবনের পরেই সুনিশ্চিত মৃত্যু রয়েছে। সুতরাং আপনি বার্ধক্য আসার পূর্বেই যৌবনকালকে মূল্যায়ন করুন। অসুস্থতা আসার পূর্বেই সুস্থতাকে কাজে লাগান আর মৃত্যু আসার পূর্বেই দুনিয়ার জীবনকে মূল্যায়ন করুন। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللَّهِ الْغَرُورُ - إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ ‘হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; কাজেই দুনিয়ার জীবন যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রতারিত না করে এবং সেই প্রবঞ্চক (শয়তান) যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে প্রবঞ্চিত না করে। নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; কাজেই তাকে শত্রু হিসেবেই গ্ৰহণ করো। সে তো তার দলবলকে ডাকে শুধু এজন্য যে, তারা যেন প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী হয়’ (ফাত্বির, ৩৫/৫-৬)।
হে মুসলিমগণ! তা‘লীম বা শিক্ষাই অগ্রগতির চাবিকাঠি এবং নবজাগরণের পথ। এটি ভবিষ্যৎ উন্নতি লাভের পথনির্দেশ করে। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির মনন ও সৃজনশীলতা তৈরি হয়। শিক্ষার মাধ্যমে আক্বীদা ও বিশুদ্ধ তাওহীদের ভিত তৈরি হয়। বিশুদ্ধ শিক্ষার মাধ্যমেই কেবল একজন শিক্ষার্থী ইসলামকে সঠিক, পরিপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার সাথে বুঝতে সক্ষম হয়।
হে উপস্থিত ভ্রাতৃমণ্ডলী! শিক্ষা কার্যক্রম তখনই সফল হয় যখন শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে, সফলতার সাথে শিক্ষক তার দায়িত্ব পালন করে এবং খুব দক্ষতার সাথে তার বার্তা ছাত্রদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। একটি শিক্ষা কার্যক্রম তখনই সফলতা পায় যখন শিক্ষক তার মহান দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকেন।
হে মুসলিমগণ! একজন শিক্ষক একটি সফল শিক্ষা কার্যক্রমের মূল কারিগর। শিক্ষক জাতির খুঁটি এবং তার উচ্চ মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল নবজাগরণ ও সভ্যতার বিকাশ ঘটা সম্ভব।
প্রকৃত শিক্ষক তিনিই যার অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান মানুষ গ্রহণ করে থাকে। প্রকৃত শিক্ষক ব্যতীত কোনো পেশাজীবী ও বিশেষজ্ঞ তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। একজন আদর্শ শিক্ষকই ব্যক্তি ও সামাজিকভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে পারেন। আল্লাহর ইচ্ছায় একজন শিক্ষকই জাতির বিবেকবোধ তৈরির কারিগর। তার হাত ধরেই আদর্শ আলেম, দাঈ, বিচারক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, উদ্ভাবক, আবিষ্কারক, সৈনিক, কৃষক, প্রস্তুতকারক ও অন্যান্য পেশাজীবী তৈরি হয়ে থাকে।
হে উপস্থিত ভ্রাতৃমণ্ডলী! নিশ্চয়ই শিক্ষাদান একটি শিল্প যা সুনির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর মহান শিক্ষকগণ আল্লাহর অনুগ্রহে জীবনকে কল্যাণের দিকে পরিবর্তন করাতে সক্ষম। শিক্ষকগণই হচ্ছেন উত্তম আদর্শ, যারা তাদের ছাত্রদের জীবনে বড় প্রভাব রাখেন।
হে মুসলিমগণ! একারণে একজন যোগ্য শিক্ষক মাত্রই একনিষ্ঠ, দ্বীনকে মযবূতভাবে আঁকড়ে ধারণকারী, সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত, স্বীয় কর্মে সুশৃঙ্খল, ন্যায়নিষ্ঠ ও শক্তিশালী হবেন। তিনি প্রকৃত পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পারেন, বাস্তবতা বুঝতে পারেন। তিনি পাঠদানের বিষয় সম্পর্কে দক্ষ, সহনশীল, উদার, নমনীয়, ধৈর্যশীল এবং সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম। একজন যোগ্য শিক্ষক স্বীয় পাঠদানের বিষয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন। তিনি স্বীয় দায়িত্ব ও কর্ম সম্পর্কে সচেতন হবেন, ভালো আচরণের দিক দিয়ে একজন আদর্শবান, চরিত্রবান, ন্যায়পরায়ণ এবং আমলে মধ্যপন্থি হবেন।
হে সম্মানিত শিক্ষক! নিশ্চয় আপনার হাতে উম্মাহর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ তথা ইলম রয়েছে। আপনার হাতে এমন মহা মূল্যবান প্রাচুর্য রয়েছে, যার সামনে পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ মূল্যহীন। এটি হচ্ছে মানুষের অর্জিত সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আপনিই ইলমের বাহক, জাতি গড়ার কারিগর। আপনি হলেন মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদাতা। আপনিই স্বীয় সুশিক্ষা, সত্যনিষ্ঠ নির্দেশনার মাধ্যমে যুবকদেরকে তাদের পিতা-মাতার চোখের মণি, তাদের স্বদেশের জন্য একটি সম্পদ এবং নিজেদের সভ্যতা-সংস্কৃতির নির্মাতা হিসাবে গড়ে তুলতে পারেন।
আপনি নিজেকে সৎ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আপনিই হতে পারেন জাতির রোল মডেল। অবশ্যই আপনি কথায় ও কাজে এবং ভেতর ও বাহ্যিক অবস্থার মধ্যে বৈপরীত্য তৈরি হওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন; কেননা কথা ও কাজের বৈপরীত্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নিশ্চয়ই আপনার কথা, কর্ম, বাহ্যিক রূপ, সমস্ত কর্মকাণ্ড ও অবস্থা ছাত্রদেরকে প্রভাবিত করে। অতএব, আপনার দায়িত্ব হলো ইলম বিতরণ করা, তাযকিয়্যাহ বা আত্মার পরিশুদ্ধি শিখানো, সঠিক পথ নির্দেশ করা এবং সর্বোপরি একটি সৎ জীবন যাপনের ভিত গড়ে দেওয়া।
হে শিক্ষকগণ! আপনারাই হলেন ইলমের যোগ্য উত্তরসূরি। আপনাদের মধ্যে যারা ইলম শিক্ষা দিবে তাদের জন্য আমলকারীর সমপরিমাণ ছওয়াব লিখা হবে। যাতে আমলকারীর আমলনামা থেকে সামান্য পরিমাণ কর্তন করা হবে না। এ মর্মে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরসূরি। নবীগণ কোনো দীনার বা দিরহাম মীরাছরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকারসূত্রে রেখে যান শুধু ইলম। সুতরাং যে ইলম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে’।[1] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়; তিন প্রকার আমল ছাড়া— ১. ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ, ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয়, ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করতে থাকে’।[2] এই হাদীছে বর্ণিত তিন প্রকারের মধ্যে আপনিও একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি। তাই মানুষকে দান-ছাদাক্বার পথপ্রদর্শক ও শিক্ষক হিসেবে আপনিও তার ছওয়াবে অংশীদার হবেন। কাজেই যা কিছু দান করা হয় এবং যা কিছু অছিয়ত করা হয় আপনারা তাতে অংশীদার ও উত্তরাধিকারী। একটি ভালো সন্তান মূলত ইলম, উত্তমভাবে লালনপালন এবং পরিশুদ্ধি অর্জনের ফসল। আলেম ও শিক্ষক যে পুরস্কার লাভ করেন তা কতই না বড় পুরস্কার! আর এর প্রভাব কতই না সুদূরপ্রসারী!
হে ভ্রাতৃমণ্ডলী! নিশ্চয়ই শিক্ষকের মর্যাদা সুসংহত করতে, তার সম্মান ছড়িয়ে দিতে এবং তার মর্যাদা রক্ষা করতে মিডিয়ার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে উপন্যাস, গল্প, সিরিজ এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে। কাজেই কোনোভাবেই যেন শিক্ষকের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা না হয়, তার পেশাকে ছোট করে দেখা না হয় বা তার কোনো বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো না হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
অতঃপর, আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন। সুতরাং শিক্ষার উন্নতির জন্য নেওয়া প্রতিটি উদার প্রচেষ্টা ও শিক্ষার পরিবেশকে সুন্দর করতে গৃহীত সকল প্রশংসনীয় পদক্ষেপ উত্তম শিক্ষক ও দক্ষ উস্তায তৈরি করে; কেননা এটি তারবিয়্যাহ ও তা‘লীমের লক্ষ্য অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমে প্রজন্ম উন্নত হয়, শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে উম্মাহ এগিয়ে যায় এবং শিক্ষকের দুর্বলতার কারণে জাতি দুর্বল হয়। প্রতিটি মহান জাতি গঠনের পেছনে যেমন একজন মহান শিক্ষকের অবদান রয়েছে, তেমনি প্রতিটি আদর্শ শিক্ষা বিস্তারের পেছনেও রয়েছে একজন মহান শিক্ষকের অবদান। প্রস্তুতি গ্রহণ, ধার্মিকতায়, চারিত্রিক ও সাংস্কৃতিকভাবে যোগ্য শিক্ষকের মাধ্যমেই কেবল সুশিক্ষা আশা করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِنْكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ - فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ ‘যেমন আমরা তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের কাছে রাসূল পাঠিয়েছি, যিনি তোমাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করেন, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। আর তা শিক্ষা দেন যা তোমরা জানতে না। কাজেই তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না’ (আল-বাক্বারা, ২/১৫১-১৫২)।
نفعني الله وإياكم بهدي كتابه، وبسنة نبيه محمد...
দ্বিতীয়খুৎবা
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক তাঁর প্রেরিত রাসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর। তাঁর পরিবারবর্গ, ছাহাবী এবং তাঁর সকল অনুসারীদের উপর শান্তির ধারা অবতীর্ণ হোক।
হে মুসলিমগণ! শিক্ষককে সম্মান করা ও তার হক্ব সম্পর্কে জানা আল্লাহর তাওফীক্ব ও হেদায়াত লাভের অংশ। আর যে এতে অবহেলা ও ত্রুটি করবে তার জন্য ক্ষতি ও লাঞ্ছনা রয়েছে। উবাদা ইবনু ছামেত রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি আমার উম্মতের দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের বড়দেরকে সম্মান দেয় না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং আলেমের অধিকার চেনে না’।[3]
হে সৌভাগ্যবান যোগ্য ছাত্র! যিনি তোমাকে একটি মাত্র হরফও শিখিয়েছেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। শিক্ষকের কাছে ইলম অর্জনের পূর্বে সচ্চরিত্রবান হও এবং পাঠ গ্রহণের পূর্বে আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা করো। শিক্ষকের কৃত সঠিক কাজে তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করো। তবে তিনি কোনো কাজে ভুল করলে সেক্ষেত্রে তাকে তোমরা অনুসরণ করো না। শিক্ষকের ব্যাপারে তোমার চোখ যা দেখেছে এবং তোমার কান যা শুনেছে তা আমানতের সাথে সংরক্ষণ করো। অবশ্যই তার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতিতে তার সম্মানকে অক্ষুণ্ন রাখবে। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এটা একজন শিক্ষর্থীর শিষ্টাচার যে, শিক্ষকের মতের সাথে নিজের মত না মিললেও সে শিক্ষকের সন্তুষ্টি কামনা করে, তার অনুপস্থিতিতে গীবত করে না, তার গোপনীয়তা প্রকাশ করে না, তার ব্যাপারে নিজের মধ্যে পূর্ণ শ্রদ্ধাবোধ রাখে এবং হৃদয় থাকে উদ্বেগমুক্ত। সে কোমলতার সাথে শিক্ষককে প্রশ্ন করে, উত্তমভাবে সম্বোধন করে এবং অনুপযুক্ত কিছু জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত থাকে।
সাবধান! আপনারা সকলেই আল্লাহকে ভয় করে চলুন, আল্লাহ আপনাদের প্রতি রহম করুন। হে সম্মানিত মাতা ও পিতাগণ! আপনারা আল্লাহভীতি অবলম্বন করুন। আপনারা শিক্ষকদের সংস্পর্শে থাকুন। আপনারা সন্তানদেরকে শিক্ষকের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার শিক্ষা দিন। কখনোই তাদের শিক্ষককে অপমান বা অবজ্ঞা করার অনুমতি দিবেন না। তাদেরকে শিক্ষার আদব, কথোপকথনের আদব এবং প্রশ্ন করার আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দিন; যাতে তারা জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং উত্তম শিষ্টাচার ধারণ করতে পারে।
ছাত্রের প্রতি শিক্ষকের হক্ব হলো তার গুণাবলি প্রকাশ করা, তার দোষত্রুটি গোপন রাখা এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা। আর কেউ শিক্ষককে অপমান করলে তাকে প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সকলের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
হে আল্লাহ! আমরা তোমার বিশাল সৃষ্টিজগতের সামান্য সৃষ্টি। আমাদের পাপের কারণে তোমার অনুগ্রহ আমাদের থেকে সরিয়ে নিয়ো না। আমরা একমাত্র তোমার উপরেই ভরসা করি।
[1]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৪১, হাদীছ ছহীহ।
[2]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৩১।
[3]. আহমাদ, হা/২২৭৫৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৫।