[১০ছফর, ১৪৪৩ হি. মোতাবেক ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১। পবিত্র হারামে মাক্কীর (কা‘বা) জুমআর খুৎবা প্রদান করেন শায়খড. বান্দার ইবনে আব্দুল আযীয বালীলাহt।বাংলা ভাষায় উক্ত খুৎবার ভাবানুবাদ করেন আল-জামি‘আহ আস-সালাফিয়্যাহ, ডাঙ্গীপাড়া, রাজশাহীর সম্মানিত সিনিয়র শিক্ষক শায়খ মাহবূবুর রহমান মাদানী। খুৎবাটি ‘মাসিক আল-ইতিছাম’-এর সুধী পাঠকদের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হলো।]
প্রথম খুৎবা
সম্মানিত খত্বীব খুৎবার শুরুতে আল্লাহর প্রশংসায় বলেন, হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য, প্রশংসা মাত্রই তোমার নেয়ামত কেন্দ্রিক। কৃতজ্ঞতা একমাত্র তোমারই, কেননা কৃতজ্ঞতা কেবল তোমারই নেয়ামত বৃদ্ধি করে। তোমার জন্যই অনুগ্রহ, দয়া, দান, শ্রেষ্ঠত্ব ও রাজত্ব। হে আমাদের রব! তোমার চেয়ে উচ্চ ও মর্যাদাবান কোনো জিনিস নেই। তুমি সবকিছুর অধিপতি, তত্ত্বাবধায়ক ও আসমানের আরশে সমুন্নত। তাঁর সম্মানে চেহারা অবনমিত হয় ও সিজদা করে। আর আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর, তাঁর পরিবার-পরিজন, ছাহাবী ও যারা তাঁর অনুসরণ করে ও সত্য পথে চলে তাদের প্রতি।
অতঃপর, হে মানবমণ্ডলী! আমি আপনাদের সকলকে ও নিজেকে তাক্বওয়া অবলম্বনের উপদেশ দিচ্ছি। মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَآمِنُوا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُورًا تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনো, তাহলে তিনি তোমাদেরকে নিজ অনুগ্রহের দ্বিগুণ দান করবেন। আর তিনি তোমাদের জন্য আলোর ব্যবস্থা করবেন যা দিয়ে তোমরা পথ চলবে। আর তিনি তোমাদের ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু’ (আল-হাদীদ, ৫৭/২৮)।
হে ঈমানদারগণ! ইসলাম হচ্ছে উত্তম চরিত্র, সুন্দর শিষ্টাচার এবং সভ্যতা ও আভিজাত্যের ধর্ম।
এটা এমন দ্বীন, যা মহৎ চরিত্রকে প্রতিষ্ঠিত ও আবশ্যক করে এবং এর উপরই তার অনুসারীদের গড়ে তোলে। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া রাহিমাহুল্লাহ সালাফদের মানহাজ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তারা উত্তম চরিত্র ও ভালো আমলের দিকে দাওয়াত দেন। আর তারা রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী,أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خُلُقًا ‘ঈমানের বিচারে ঐ মুমিন পরিপূর্ণ যার চরিত্র সুন্দর’[1]-এর মর্মার্থকে বিশ্বাস করে। আর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের নবুঅতপ্রাপ্তিকে উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা প্রদানের উপর সীমাবদ্ধ করেছেন। তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ صَالِحَ الْأَخْلَاقِ ‘সৎ চরিত্রকে পরিপূর্ণতা দানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি’।[2]
মহান আল্লাহ তার প্রশংসা করে বলেন, وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ ‘নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (আল-ক্বালাম, ৬৮/৪)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ ‘স্বয়ং কুরআনই ছিল তাঁর চরিত্র’।[3]
হে আল্লাহর বান্দাগণ! মহৎ চরিত্রের অগ্রভাগে রয়েছে প্রশংসনীয় একটি গুণ, যা মহত্ব ও কল্যাণ দান করে এবং ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। আর তা হচ্ছে ‘ইনছাফ’। আদল ও ইনছাফ বা ন্যায়পরায়ণতা ও সুবিচার হলো কোনো জিনিসকে তার যথাস্থানে রাখা এবং অন্যকে তার হক্ব বা অধিকার ঐভাবে প্রদান করা, যেভাবে সে নিজের প্রাপ্য গ্রহণ করতে ভালোবাসে। ন্যায়-ইনছাফের প্রতি উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়ে শরীআতের দলীল এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়ের সাক্ষ্যদাতা হিসেবে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান থাকো, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা তোমাদের যেন এতটা উত্তেজিত না করে যে, তোমরা ইনছাফ করা ত্যাগ করবে। সুবিচার করো, এটা তাক্বওয়ার নিকটবর্তী। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্পূর্ণ অবহিত’ (আল-মায়েদা, ৫/৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ ‘নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচার ও সদাচরণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন’ (আন-নাহল, ১৬/৯০)। আল্লাহ তাঁর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, وَأُمِرْتُ لِأَعْدِلَ بَيْنَكُمُ ‘(তুমি বলো,) তোমাদের মাঝে ইনছাফ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি’ (আশ-শূরা, ৪২/১৫)।
আম্মার ইবনু ইয়াসির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনটি গুণ যে আয়ত্ত করে, সে পূর্ণ ঈমান লাভ করে— ১. নিজ থেকে ইনছাফ করা, ২. বিশ্বে সালামের প্রচার করা এবং ৩. অভাবী অবস্থাতেও দান করা।[4] আবূয যিনাদ বলেন, কোনো বান্দা যখন ন্যায়পরায়ণতার গুণে গুণান্বিত হয়, তখন সে তার মালিকের হক্ব আদায় না করে থাকতে পারে না আর যা থেকে তাকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে বিরত না থেকে পারে না। আর এভাবেই সে ঈমানের রুকনগুলোর সমাবেশ নিজের মধ্যে ঘটায়।
হে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ! ইনছাফ বা ন্যায়পরায়ণাতার কতগুলো স্তর রয়েছে :
প্রথম ও উত্তম স্তর : মহান আল্লাহর ব্যাপারে ইনছাফ করা। ইবাদতকে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করাই হলো তাঁর ব্যাপারে ইনছাফ করা। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। কারণ, আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা হলো ইনছাফের বিপরীত। আর এটা নিকৃষ্টতর যুলম। মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ‘শিরক অবশ্যই বড় যুলম (লুক্বমান, ৩১/১৩)। ইবনু মাসঊদ রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেন, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর জন্য অংশীদার স্থাপন করা অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’।[5]
দ্বিতীয় স্তর : নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ইনছাফ করা। আর তা হলো তাঁর প্রতি ঈমান আনা, তাঁকে মুহাব্বত করা, তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর কথা ও আদেশকে সকলের কথা ও আদেশের উপর প্রাধান্য দেওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁর সমস্ত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
তৃতীয় স্তর : হে আল্লাহর বান্দাগণ! ব্যক্তির নিজের আত্মার সাথে ইনছাফ করা। আর এটি হলো সর্বোচ্চ স্তর। যে নিজের আত্মার সাথে ইনছাফ করতে সক্ষম নয়, সে অন্যের সাথে ইনছাফ করতে পারে না। কেননা যে আদর্শ দাতার মধ্যে নেই, তা সে দিতে পারে না। ব্যক্তি তার আত্মার সাথে ইনছাফ করার অর্থ হলো আত্মার নিকট এমন কোন জিনিসের দাবি না করা যা তার নিকট নেই। নিচু চরিত্র ও অবাধ্যাচরণে লিপ্ত হয়ে আত্মাকে অপবিত্র বা কলুষিত করবেন না; বরং আল্লাহর আনুগত্য, ভালোবাসা, ভয়, সন্তুষ্টি, তাঁর উপর ভরসা, তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন, অন্যের আশা-আকাঙ্ক্ষার উপর তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রাধান্য প্রদান এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে আত্মার মান উন্নয়ন করবেন।
চতুর্থ স্তর : মানুষের সাথে ইনছাফ করা। একজন মুসলিমের উচিত, নিজের তুলনায় অন্যের প্রতি বেশি ইনছাফ করা। তার (মুসলিম ভাই) নিকট থেকে যে কথা শুনেছে বা তার সম্পর্কে যে বাণী তার নিকট পৌঁছেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে তার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান না করা তার প্রতি ইনছাফ। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের নিকট কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তার সত্যতা যাচাই করে নাও, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না ফেল। অতঃপর নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমরা অনুতপ্ত না হও’ (আল-হুজুরাত, ৪৯/৬)।
মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَى إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে যাত্রা কর, তখন কে বন্ধু আর কে শত্রু তা পরীক্ষা করে নাও। কেউ তোমাদেরকে সালাম দিলে তাকে ‘তুমি মুমিন নও’ বলো না, (আন-নিসা, ৪/৯৪)। একজন মুসলিম অন্যের প্রতি ভালো ধারণা রেখে ও তার কথাকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে তাঁর প্রতি ইনছাফ করবে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ভালো চরিত্রের পথনির্দেশ করো, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের পথনির্দেশ করতে পারে না। তুমি আমাদের থেকে মন্দ চরিত্র দূর করে দাও। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাদের থেকে মন্দ চরিত্র দূর করতে পারে না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জন্য কুরআন ও সুন্নাহতে বরকত দান করো। আর তাতে যে পথনির্দেশনা ও বিবরণ রয়েছে, তা দ্বারা আমাদের উপকৃত কর। আর আমি নিজের, আপনাদের ও সকল মুসলিমের জন্য সকল প্রকার গুনাহ ও পাপ হতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। নিশ্চয় তিনি তাওবাকারীদের জন্য বড় ক্ষমাশীল।
দ্বিতীয় খুৎবা
সম্মানিত খত্বীব দ্বিতীয় খুৎবায় আল্লাহর প্রশংসা করার পর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তার পরিবার, ছাহাবী এবং যারা তার পথে চলে, তাদের উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করেন। এরপর বলেন, হে আল্লাহর বান্দাগণ! নিশ্চয় যে জাতি অগ্রগতি ও উন্নতি সন্ধান করে, সে জাতির সন্তানদের আত্মাগুলো প্রশংসনীয় গুণাবলির এবং মহান চরিত্রের তৃপ্তিদায়ক ও পরিচ্ছন্ন পাথেয় এর প্রয়োজনবোধ করছে। যেমন তাদের শরীর ও দেহগুলো উত্তম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যের প্রয়োজনবোধ করে, যাতে করে শরীর তা থেকে জীবন ধারণের শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। তদ্রূপ ইনছাফও খাদ্যের ন্যায়, যা থেকে অমুখাপেক্ষী হওয়া সম্ভব নয় বা যা পরিহার করা যায় না।
যে ইনছাফ বা ন্যায়পরায়ণাতার চরিত্র দ্বারা ভূষিত ও সজ্জিত হতে ইচ্ছা করে, সে যেন স্বার্থপরতার ব্যাপারে নিজের মধ্যে হিংসা ও বাড়াবাড়ির রোগ অনুসন্ধান করে। যদি সে হিংসা ও বাড়াবাড়ির প্রভাব লক্ষ্য করে, তাহলে সে যেন তার আত্মাকে প্রশিক্ষণ দেয় ও বাধ্য করে যতক্ষণ না সে তার স্বভাবসূলভ আচরণ বা ফিতরাতের দিকে ফিরে আসে।
হিংসা-বিদ্ধেষ দূর করার উত্তম পন্থা হচ্ছে, মানুষকে বুঝতে হবে যে, মহান আল্লাহর হিকমাহ বা প্রজ্ঞার দাবি অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করা হয়েছে। ফলে পাপে পতিত হওয়ার আশঙ্কায় সে ইলাহী প্রজ্ঞার বিরোধিতাও করবে না, অপছন্দও করবে না।
আত্মপ্রীতি ও স্বার্থ পরতার মধ্যে বাড়াবাড়ি করার ওষুধ বা প্রতিকার হলো, সংশোধিত হওয়া, যাতে আবেগ ন্যায়সঙ্গত হয়, যা তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে এবং অন্যের অকল্যাণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করবে। ইবনু হাযম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ইনছাফ অর্জন করতে চায় সে যেন তার স্বেচ্ছাচারী মনকে প্রতিপক্ষের জায়গায় স্থাপন করে। এতে তার মুখমণ্ডল উজ্জ্বল বা চকচক করতে থাকবে।
পরিশষে সম্মানিত খত্বীব, আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গের, মুমিনদের মা তাঁর স্ত্রীগণের, তাঁর ছাহাবীগণের, তাদের অনুসারীগণের উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করেন, যা চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত।
তারপর নিম্নের দু‘আগুলো করে খুৎবা সমাপ্ত করেন :
হে আল্লাহ! ইসলাম ও মুসলিমদের শক্তি দান করো, দ্বীনের ভূখণ্ডকে রক্ষা করো, তোমার মুমিন বান্দাদের সাহায্য করো, মুসলিমদের থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করো, বিপদগ্রস্তের দুঃখ-কষ্ট দূর করো, ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধ করো, আমাদের এবং মুসলিমদেরকে রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য দান করো। হে পরম দয়ালু! তোমার রহমত দিয়ে সবকিছু করো।
হে আল্লাহ! আমাদের দেশে নিরাপত্তা দান করো, আমাদের নেতা ও শাসকদের সংশোধন করো, আমাদের নেতা ও শাসকদের সত্য, সক্ষমতা ও সঠিকতা দ্বারা শক্তিশালী করো। হে আল্লাহ! তুমি তাদেরকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে আসে এমন কাজ করার তাওফীক্ব দান করো।
হে আল্লাহ! তুমি সীমানা ও উপকূলীয় এলাকায় প্রহরারত আমাদের যেসব সৈনিক রয়েছে, করো সঠিক রাখো। হে আল্লাহ! তুমি তাদের পৃষ্ঠপোষক, সাহায্যকারী, সমর্থনকারী ও প্রত্যক্ষ মদদদাতা হয়ে যাও- আমীন!
[1]. আবূ দাঊদ, হা/৪৬৮২, হাসান ছহীহ।
[2]. আহমাদ, হা/৮৯৫২, হাদীছ ছহীহ।
[3]. আহমাদ, হা/২৫৮১৩, হাদীছ ছহীহ।
[4]. ছহীহ বুখারী, ১/৫৬, ‘ঈমান’ অধ্যায়, মু‘আল্লাক্ব।
[5]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৪৭৭; মুসলিম হা/৮৬।