কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইসলাম প্রচারে তারুণ্যের অবদান

post title will place here

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, নব উদ্দীপনা, কণ্টকাকীর্ণ পথে চলার দুঃসাহস আর সফলতা ছিনিয়ে আনার ইতিহাস কিন্তু নতুন নয়। ধোঁয়াশা পথ, প্রতিকূল পরিবেশে চলার মতো অসীম সাহস আর দুর্বার গতিও একালের লিখিত নতুন ইতিহাস নয়। তারুণ্য নিয়ে আসে জীবনের জয়গান, তারুণ্য সফলতার পথকে করে উন্মোচিত। তাদের হাত ধরে বিজয়ের বীরত্বগাঁথা রচিত হয়। তারুণ্য নিশান উড়িয়ে দেয় নব উচ্ছ্বাসের। ইতিহাস সাক্ষী! তারুণ্যের দীপ্ততা, বীরত্বগাঁথায় বিজয়ের কেতন ওড়ে মিনারের চূড়ায়। ভালোবাসা, পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে ঈমানের ভিত্তি করে সুদৃঢ়, শিক্ষা দেয় জীবনের আসল সোপান, রচিত হয় স্বর্ণালি ইতিহাস। তারুণ্য! তারুণ্য! তারুণ্য! কঠিন মুহূর্তেও নিজের শেষ সম্বল পানি নিজে না পান করে যে দিয়ে দিতে পারে অন্য পিপাসার্ত ভাইকে সেটাই তো তারুণ্য। তারুণ্য হলো বিজয়ের মত্ত আশায় সমাজে ইনছাফ ক্বায়েম করার লক্ষ্যে নববধূকে বাসরঘরে রেখে রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়ার নাম। তারুণ্য মানে মুহাম্মাদ ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহিমাহুল্লাহ। তারুণ্য মানে মুহাম্মাদ বিন কাসিম রহিমাহুল্লাহ। তারুণ্য মানে তারেক বিন যিয়াদ রহিমাহুল্লাহ। জীবনের উচ্ছ্বাসে তারুণ্যের সফলতা সর্বযুগেই কাম্য। অশ্লীল, বেহায়াপনাকে বিসর্জন দিয়ে আবারো সমাজ হবে পাপমুক্ত।‌ ইনছাফ, সাম্য-মৈত্রী জাগ্রত হবে সেখানে। তারুণ্য মানেই যুলুম, অন্যায়, অত্যাচারের পিঠে কশাঘাত করে চিরতরে নিরুদ্দেশ করা। তারুণ্য মানেই সকল মতবাদ, ইজম, মত ও পথের ঊর্ধ্বে ইসলামকে বিজয়ী করা, এর প্রচার-প্রসারে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা। তারুণ্য মানে ইসলামের সুমহান আদর্শকে ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনির মাধ্যমে আল্লাহর যমীনে আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। তপ্ত লহু ও বাহুর শক্তিবলে অযুত কোটি ঝড়ঝঞ্ঝা আর বাতিলপন্থির রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে হক্ব ও আল্লাহর দ্বীন ক্বায়েমের জন্য সামনে এগিয়ে চলাই মূলত তারুণ্যের অঙ্গীকার। এজন্য বলা হয়, Youth is called the golden season of life বা ‘যৌবনকে জীবনের সোনালী সময় বলা হয়’। তারুণ্যের সময় হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ নেয়ামত ও মূল্যবান সম্পদ। আল্লাহ তাআলা এজন্য বলেছেন,﴿وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ ‘তোমরা যেসব অনুগ্রহ ভোগ কর, তা তো আল্লাহরই নিকট হতে। অধিকন্তু যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহ্বান কর’ (আন-নাহল, ১৬/৫৩)

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীছে অসংখ্য জায়গায় যৌবনকালের উচ্ছলতা, উদ্দীপনা ও সময়ের যথার্থ মূল্যায়নের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘পাঁচটি অবস্থার পূর্বে পাঁচটি অবস্থার মূল্যায়ন করবে— (১) তোমার বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে, (২) অসুস্থ হ‌ওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে, (৩) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে’।[1]

তারুণ্যের এই অপরাজেয় বুদ্ধিমত্তা, তেজস্বী বাহুর দুর্বার শক্তি আর সামনে অগ্ৰসর হ‌ওয়ার যে প্রবল উদ্দীপনা, তা তারুণ্যের জীবনকে আরো বেশি শাণিত করবে এবং চেতনার বাতিঘরে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বীরশ্রেষ্ঠ জাতির আদর্শ সন্তান তুল্য ছাহাবীগণ।

রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আদম সন্তান এক পা‌ও নড়াতে পারবে না— (১) সে তার জীবনকালকে কোন পথে অতিবাহিত করেছে, (২) যৌবনকাল কোথায় কাটিয়েছে, (৩) ধনসম্পদ কীভাবে অর্জন করেছে, (৪) কোন পথে তা ব্যয় করেছে এবং (৫) দ্বীনের কতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছে এবং সে অনুযায়ী আমল করেছে কি-না?[2]

লক্ষ্য করুন, হাদীছটিতে গোটা জীবনের অংশকে দুটি প্রশ্নের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। একটি প্রশ্ন করা হয়েছে গোটা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমভাবে। আরেকটি করা হয়েছে খাছভাবে শুধু যৌবনকাল সম্পর্কে।

জীবনের এই সোনালী সময় কত দামী তা হাদীছের ভাষ্য‌ই প্রমাণ করে। মালেক ইবনু দীনার রহিমাহুল্লাহ বলেন, إِنَّمَا الْخَيْرُ فِي الشَّبَابِ ‘কল্যাণ কেবল যৌবনকালেই বিদ্যমান’।[3] হাসান বাছরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ، إِيَّاكُمْ وَالتَّسْوِيفَ.. سَوْفَ أَفْعَلُ، سَوْفَ أَفْعَلُ ‘হে যুবক সম্প্রদায়! তোমরা বিরত থাকো দীর্ঘসূত্রিতা থেকে তথা আমি খুব শীঘ্রই করব, অচিরেই করব বলা থেকে’।[4]

তাই তো আধুনিক যুগের কবি আরবী সাহিত্যের সম্রাট আহমাদ শাওকী তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা ও তাদের জন্য নিকট ভবিষ্যতে সোনালী দিনের এক নবপ্রভাতের সূচনার মানসে কবিতায় আহ্বান করেছেন এভাবে—

عصرُكم حُرٌّ ومُستقبَلُكم في يمينِ اللهِ خيرِ الأُمَناءْ

لا تقولوا حطَّنا الدهرُ فما هو إلا من خيالِ الشعراءْ

هل علِمتُم أُمَّةً في جهلِها ظهرَت في المَجدِ حسناءَ الرِّداءْ

باطنُ الأُمَّةِ من ظاهرِها إنما السائلُ مِن لونِ الإناءْ

فخُذوا العلمَ على أعلامه واطلبوا الحكمةَ عندَ الحكماءْ

واقرءوا تاريخَكم واحتفِظوا بفصيحٍ جاءكم من فُصَحاءْ

أنزلَ اللهُ على ألسُنِهم وَحيَه في أعصُرِ الوحي الوِضاءْ

واحكموا الدنيا بسلطانٍ فما خُلِقَت نَضرتُها للضعفاءْ

واطلبوا المَجدَ على الأرض فإن هي ضاقت فاطلبوه في السماءْ

অর্থাৎ হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের যুগ স্বাধীন, আর তোমাদের ভবিষ্যৎ মহান আল্লাহর ডান হাতে। তোমরা একথা বলো না যে, যুগ আমাদের পিছিয়ে রেখেছে, কেননা এটা কবিদের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। তোমরা কি সেই জাতি সম্পর্কে জানতে পেরেছ, যারা অজ্ঞতার মধ্যে নিমজ্জিত আছে, অথচ তাদের মর্যাদা ও স্থায়ী সভ্যতা বহিঃপ্রকাশ ঘটছে? অত‌এব তোমরা আলেমদের (জ্ঞানী) নিকট থেকে জ্ঞান অন্বেষণ করো এবং বিজ্ঞজনদের কাছ থেকে প্রজ্ঞা অর্জন করো। তোমরা তোমাদের ইতিহাস পড়ো এবং তা প্রাঞ্জল ভাষার মাধ্যমে হেফাযত করো এমনভাবে যেন ভাষা তোমাদের কাছে প্রাঞ্জল ভাষাভাষীদের কাছ থেকে এসেছে। তোমরা ক্ষমতার সাথে পৃথিবীকে শাসন করো, কেননা দুর্বলদের জন্য কোনো প্রকার বিজয় সৃষ্টি করা হয়নি। তোমরা পৃথিবীতে মর্যাদা তালাশ করো, আর তা তালাশ করার নেশায় পৃথিবী সংকুচিত হয়ে পড়লে আকাশে তা অন্বেষণ করো।

বাংলার কবি আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪ খ্রি.) তাই দীপ্ত কণ্ঠে তার ‘জয়যাত্রা’ কবিতায় বলেছেন—

যাত্রা তব শুরু হোক হে নবীন, কর হানি দ্বারে

নবযুগ ডাকিছে তোমারে।

তোমার উত্থান মাগি, ভবিষ্যৎ রহে প্রতীক্ষায়

রুদ্ধ বাতায়ন-পাশে শঙ্কিত আলোক শিহরায়।

সুপ্তি ত্যাজি বরি লও তারে, লুপ্ত হোক অপমান,

দেখা দিক শাশ্বত কল্যাণ।

শুধু তাই নয়, এক‌ই সুরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম‌ও বলেছেন—

আমি যে চির অজেয়

ঝুটা কানুনের নিগড় আমাকে করিতে পারেনি জয়

কত নমরুদ, কত ফেরাউন, কত শাদ্দাদ ও কারুণ

আসিয়াছে মোর এই চলাপথে হইয়া বাধা দারুণ

পুড়ি নাই আমি নমরুদী হুতাশনে

বিকাইনি আমি বিপুল কারুণী ধনে

শাদ্দাদের ঐ অহংকারী মাথা বালুতে মিশেছে শেষে

ফেরাউন গেছে নীল দরিয়ায় ভেসে

নমরুদ শিরে পড়েছে পয়যার

আমি মুসলিম

এক আল্লাহ ছাড়া করি না কারো তাসলীম

তারুণ্যের এই শক্তিমত্তাই মূলত জীবনের মূল প্রেরণা। যাদের শির কখন‌ও বাতিল শক্তির কাছে মাথা নোয়াবার নয়। ঘুনে ধরা সমাজে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার মূল কারিগর হলো তারুণ্য। ত্যাগ-তীতিক্ষা এমনকি জানমালের পরোয়া না করে হক্বের পতাকা চির উড্ডীন করার জন্য তাদের অবদান অসামান্য। সেই ফেরাউনী শক্তি হোক কিংবা আজকের ফেরাউনী শক্তি, কোনো শক্তিকে তারা তোয়াক্কা করে না। বাতিলের সাথে আপসহীনভাবে চলার অপর নাম তারুণ্য। জীবনের জয়গান মূলত তারুণ্যের জন্য‌ই উপযুক্ত।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে অধিকাংশ মুসলিম যুবক‌ তথাকথিত রাজনীতির চোরাবালিতে পড়ে নিজের জীবনকে নষ্ট করছে এবং চরিত্র নষ্টকারী মাদকদ্রব্য ও নারীর খপ্পরে আটকা পড়ে সীমাহীন ক্ষতির অতল গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আবার ঈমান, আমল নষ্ট করার পিছনে তো লেগেই আছে ধর্মীয় যত কুসংস্কার, অজ্ঞতা আর শিরক-বিদ‌আতের বিষাক্ত ছোবল। ফলে একজন মুসলিম যুবক যেমনভাবে ধর্মীয় বেড়াজালে গোমরাহির শিকার, ঠিক ধর্মের বাইরেও নানা কুফরী মতবাদ, ইজমের সাথে আপস করে এগিয়ে যাচ্ছে জাহান্নামের কিনারে। তাই এমন এক নাজুক পরিস্থিতিতে প্রয়োজন মুছ‘আব বিন উমায়ের রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মতো তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা। বাতিলের গায়ে তীব্র আঘাত হেনে ইসলামের স্বার্থে ঘর, বাড়ি, পরিবারের মায়া বিসর্জন দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার এক চির আপসহীন তারুণ্যের ভূমিকা ও অবদান। পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষী! পৃথিবীতে যত বড় বড় অর্জন হয়েছে, তার অধিকাংশ ইতিহাস জুড়েই তারুণ্যের অবদান, আপসহীন বিপ্লব দিয়েই অর্জিত হয়েছে। কবি কাজী নজরুল ইসলাম একবার সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুবসমাজের অনুরোধে তাদের অনুষ্ঠানে তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আমি যে গান গাই, তাহা যৌবনের গান। তারুণ্যের ভরা ভাদরে যদি আমার গান জোয়ার আনিয়া থাকে, তাহা আমার অগোচরে, যে চাঁদ সাগরে জোয়ার জাগায় সে হয়তো তাহার শক্তি সম্বন্ধে আজ‌ও নাওয়াকিফ।

ইতিহাস সাক্ষী! পৃথিবীতে যে কোনো আদর্শ কিংবা থিউরি প্রতিষ্ঠার নায়ক সর্বযুগে যুবকরাই ছিল। দেশ ও জাতির উন্নতি, অবনতি তাদের উপর নির্ভর করে। তারা চাইলে দেশকে সম্মিলিত শক্তির জোরে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে আবার তারা চাইলে উন্নত দেশকে পৃথিবীর মানুষের কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত পর্যায়েও নিয়ে যেতে পারে। আমরা দেখেছি তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, উদ্দীপনা আর ফেরাউনী, নমরূদী অপশক্তির বিরুদ্ধে তাঁদের উন্মুক্ত তরবারির ঝলকানি। দেখেছি পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত তাঁদের দাপট, ক্ষমতা। দেখেছি অপরাজেয় শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সফল নেতৃত্ব। অবরুদ্ধ সমাজের অগ্ৰযাত্রাকে তারুণ্যের অপরাজেয় শক্তির জোরে গতিশীল এক সমাজব্যবস্থার নতুন মাত্রা যোগ করবে। তাই এমন দায়িত্ববোধসম্পন্ন জাতির বিবেক সমতুল্য যুবকদের উদ্দেশ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম চমৎকার বলেছেন তার ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’ কবিতায়—

দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার! 

দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

...

কাণ্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি, নিয়াছ যে মহাভার।

ইসলাম প্রচারে তারুণ্যের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। ইসলামবিদ্বেষী অপশক্তির ভিতকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করেছে তারুণ্যের পদধ্বনি। তারা জানে নির্ঘাত সম্মুখে মৃত্যু তবুও ঝাঁপিয়ে পড়েছে মৃত্যুর মুখে শুধু ইসলামের জন্য। সবার জানা মু‘আয ও মুয়াওবিয রযিয়াল্লাহু আনহুমা-এর কথা। আবূ জাহলকে ধরাশায়ী করার সেই সাহসী ইতিহাস। আবূ জাহলকে সর্বশেষ শিরশ্ছেদ করেছিল কিন্তু তারুণ্যের দুর্বার সাহস। তারুণ্যের কত তেজ আর কী জাযবা হতে পারে তা অচিন্তনীয়। কর্ডোভা, গ্ৰানাডা, সেভিল, স্পেন, বাগদাদ, ফ্রান্স ইত্যাদি সর্বত্র যুবকদের দ্বারাই মহাবিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। পৃথিবীর হাজার বছরের সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। তারুণ্যের এই অপরাজেয় হিম্মত ছিল বলেই তারেক বিন যিয়াদ রহিমাহুল্লাহ স্পেন, পর্তুগাল বিজয় করে ফ্রান্স বিজয়ের নিকটবর্তী হন। তারুণ্যের এই প্রেরণায় ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী রহিমাহুল্লাহ বায়তুল মাক্বদিসকে খ্রিষ্টানদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিজয় করেন মুসলিম ইতিহাস ঐতিহ্য বিজড়িত মর্যাদাপূর্ণ এই মসজিদ। মুহাম্মাদ বিন কাসিম, ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বখতিয়ার খিলজীসহ সকলেই তারুণ্যের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে যৌবনকাল বিলিয়ে দিয়েছেন দেশ ও জাতি গঠনের কাজে। এই অকুতোভয় বীর সেনাদের বীরত্বগাঁধা জাতি আজীবন মনে রাখবে।

তারুণ্যের অমূল্য সম্পদ, জানমাল বিসর্জনের ফলে ইসলামের অগ্ৰযাত্রা কোনো যুগেই স্তিমিত হয়নি। তারুণ্যের পদধ্বনি ইসলাম প্রচারে অসামান্য অবদান রেখেছে। তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে ইসলাম আজ পৃথিবীর বুকে সমুন্নত। তাই আজকের ইসলামবিদ্বেষীদের নানামুখী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য একনিষ্ঠ কর্মঠ যুবসমাজ প্রয়োজন। যারা তাদের জানমাল বিসর্জন দিবে ইসলাম প্রচারের জন্য। যাবতীয় কুফরী মতবাদ আর নোংরা রাজনীতির বেড়াজাল ছিন্ন করে ইসলামের সুমহান আদর্শ ও শিক্ষা ধারণ করে দেখিয়ে দিবে ইসলাম মানুষের স্বভাব ও মানবতার ধর্ম।

আমরা সেই প্রত্যাশাই করি আজকের তরুণসমাজের কাছে। পরিশেষে কবি ফররুখ আহমদের ‘সাত সাগরের মাঝি’ কবিতার কয়েকটি লাইন স্মরণ করিয়ে বিবেককে পুনরায় জাগ্ৰত করার আহ্বান র‌ইল তরুণ প্রজন্মের কাছে—

দেখ জমা হল লালা রায়হান তোমার দিগন্তরে;
তবু কেন তুমি ভয় পাও, কেন কাঁপো অজ্ঞাত ডরে!
তোমার জাহাজ হয়েছে কি বানচাল,
মেঘ কি তোমার সেতারা করে আড়াল?

উচ্ছৃঙ্খল রাত্রির আজো মেটেনি কি সব দেনা?
সকাল হয়েছে। তবু জাগলে না?

তবু তুমি জাগলে না?

মাযহারুল ইসলাম

অধ্যয়নরত, দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুস সুন্নাহ, মিরপুর, ঢাকা।


[1]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩৩৫৫; মিশকাত, হা/৫১৭৪।

[2]. তিরমিযী, হা/২৪১৬, হাসান; মিশকাত, হা/৫১৯৭।

[3]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ২/৩৭৩।

[4]. ক্বিছরুল আমল, পৃ. ১৪২।

Magazine