(সেপ্টেম্বর’১৯ সংখ্যায় প্রকাশিতের পর)
মানুষের উচিত হবে, পবিত্র ও হালাল জিনিস ভক্ষণ করা এবং অপবিত্র ও হারাম জিনিস ভক্ষণ করা থেকে দূরে থাকা। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে মানব জাতি! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পবিত্র। তাই তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া (অপবিত্র) গ্রহণ করেন না। আর মহান আল্লাহ সমস্ত মুমিন ব্যক্তির (পবিত্র জিনিস ভক্ষণেরই) আদেশ করেন যে আদেশটি সমস্ত নবী-রাসূলকে করেছিলেন। এ মর্মে আল্লাহর বাণী,
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ.
‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হতে আহার কর এবং সৎকর্ম কর। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সব বিষয়ে আমি অবগত’ (মুমিনূন, ২৩/৫১)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ.
‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী দান করেছি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্তসমূহ ভক্ষণ কর। আর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁরই দাসত্ব করে থাক’ (বাক্বারাহ, ২/১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি দূরে সফরের কারণে তার (কেশ) ধুলায় ধূসরিত, এলোমলো হয়ে আছে, এমতাবস্থায় সে তার উভয় হাত আসমানের দিকে উত্তোলন করে বলছে, হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রতিপালক! আমার দো‘আ কবুল কর! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধানের পোশাকটিও হারাম, সে হারামই খেয়ে থাকে। তাহলে এমন ব্যক্তির দো‘আ আল্লাহর নিকট কেমন করে কবূল হবে?’[1]
নু‘মান ইবনু বাশীর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, হালাল স্পষ্ট এবং হারাম স্পষ্ট। আর দু’য়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ সে রাখালের ন্যায় যে তার পশু বাদশাহর সংরক্ষিত চারণভূমির আশেপাশে চরায়, অচিরেই সে পশুগুলো সেখানে ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আরো জেনে রেখ যে আল্লাহর যমীনে তার সংরক্ষিত এলাকা হল তার নিষিদ্ধ কাজসমূহ’।[2] আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আমার ঘরে ফিরে গিয়ে আমার বিছানায় খেজুর পড়ে থাকতে দেখি। খাওয়ার জন্য আমি তা তুলে নিই। পরে আমার ভয় হয় যে, হয়ত তা ছাদাক্বার খেজুর হবে তাই আমি তা রেখে দিই’।[3] ইবরাহীম ইবনে হুশাইম তার সাথীকে বিদায়ের সময় উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘তুমি সৎ আমল কর এবং পবিত্র বস্ত্ত ভক্ষণ কর’।[4]
(৩৮) যে সমস্ত পোশাক পরিধান করা ও যেসব পাত্রে খাওয়া অপসন্দীয় ও হারাম :
রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,مَنْ لَبِسَ الْحَرِيرَ فِى الدُّنْيَا فَلَنْ يَلْبَسَهُ فِى الآخِرَةِ ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় রেশমী কাপড় পরিধান করবে, সে আখিরাতে তা কখনই পরিধান করতে পারবে না’।[5] তিনি অন্যত্র বলেন,لاَ تَلْبَسُوا الْحَرِيرَ وَلاَ الدِّيبَاجَ وَلاَ تَشْرَبُوا فِى آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلاَ تَأْكُلُوا فِى صِحَافِهَا، فَإِنَّهَا لَهُمْ فِى الدُّنْيَا وَلَنَا فِى الآخِرَةِ ‘তোমরা রেশমী বা রেশমী জাতীয় কাপড় পরিধান কর না এবং সোনা ও রূপার পাত্রে পানি পান কর না এবং এগুলোর বাসনে আহার কর না। কেননা দুনিয়াতে এগুলো কাফিরদের জন্য আর আখিরাতে আমাদের জন্য’।[6] হাদীছে এসেছে,عَنْ أَبِى بُرْدَةَ قَالَ أَخْرَجَتْ إِلَيْنَا عَائِشَةُ كِسَاءً وَإِزَارًا غَلِيظًا فَقَالَتْ قُبِضَ رُوحُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِى هَذَيْنِ আবু বুরদা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা একবার একটি কম্বল ও মোটা লুঙ্গী নিয়ে আমাদের কাছে আসেন এবং তিনি বলেন, এ দু’টি পরা অবস্থায় নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রূহ কবয করা হয়’।[7] অন্য একটি হাদীছে এসেছে,عَنِ ابْنِ عُمَرَ رضى الله عنهما أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ يَنْظُرُ اللَّهُ إِلَى مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ সে লোকের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে তার (পরিধেয়) পোশাক ঝুলিয়ে পরে’।[8]
(৩৯) শরী‘আত বিরোধী খেলাধুলা ও বিনোদন হারাম :
যে সমস্ত খেলাধুলা, আনন্দ-বিনোদন, হাস্যকর বস্ত্ত শরী‘আত বিরোধী, সে সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক কর্তব্য। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انْفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا قُلْ مَا عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ مِنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ ‘আর তারা যখন ব্যবসা অথবা ক্রীড়া-কৌতুক দেখে, তখন তারা তার দিকে ছুটে যায় আর তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে যায়। বল, আল্লাহর কাছে যা আছে তা ক্রীড়া কৌতুক হতে ও ব্যবসা অপেক্ষা উত্তম। আর আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিক্বদাতা’ (জুমুআ‘হ, ৬২/১১)। তোমাদের ছালাত আদায়ের জন্য আল্লাহর নিকট যে ছওয়াব রয়েছে, তা তোমাদের খেল-তামাশা ও বিনোদন সামগ্রীর স্বাদ গ্রহণ ও ক্রয়-বিক্রয়ের ফায়দা থেকে অনেক উত্তম। তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট যে রিযিক্ব বণ্টিত আছে, তা তোমাদের এগুলো থেকে অনেক উত্তম’।[9] হাদীছে এসেছে,
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِى لَحْمِ خِنْزِيرٍ وَدَمِهِ.
সুলায়মান ইবনে বুরায়দা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে যেন তার হাত শূকরের গোশতের সাথে ও তার রক্তের সাথে রঞ্জিত করল’।[10]
মোদ্দাকথা, তাস, জুয়া, পাশা এবং যে সকল অন্যায় খেলাধুলা, বিনোদন, শরী‘আত বিরোধী ও যেগুলোর মাধ্যমে ছালাতের প্রতি অবহেলা করা হয়- এমন সব খেলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
(৪০) খরচে মধ্যপন্থা অবলম্বন, কারো মাল ভক্ষণ না করা :
মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا ‘আর তুমি তোমার হাত গলায় বেঁধে রেখ না (অর্থাৎ কৃপণ হয়ো না) এবং তাকে একেবারে খুলে দিয়ো না (অর্থাৎ অপচয় করো না)। তাহলে তুমি নিন্দিত ও নিঃস্ব হয়ে যাবে’ (বানী ইসরাঈল, ১৭/২৯)। প্রত্যেককে নিজের, পরিবারের এবং একে অপরে খরচের ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা আবশ্যক। অন্যথায় ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতে নিন্দিত হতে হবে। অপরপক্ষে এমনটিও নয় যে, সাধ্যের বাইরে দান করতে গিয়ে নিজেকেই মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। বরং তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে নচেৎ তিরস্কৃত হবে।[11]
মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِينَ إِذَا أَنْفَقُوا لَمْ يُسْرِفُوا وَلَمْ يَقْتُرُوا وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَامًا ‘তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপব্যয় করে না বা কৃপণতা করে না। বরং তারা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী অবস্থায় থাকে’ (ফুরক্বান, ২৫/৬৭)। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,كَانَ يَنْهَى عَنْ قِيلَ وَقَالَ وَكَثْرَةِ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةِ الْمَالِ، وَمَنْعٍ وَهَاتِ، وَعُقُوقِ الأُمَّهَاتِ، وَوَأْدِ الْبَنَاتِ ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করতেন অনর্থক কথা নিয়ে বাদানুবাদ করা, অধিক প্রশ্ন করা, মালের অপচয় করা, কৃপণতা, ভিক্ষা বৃত্তি, মাতাপিতার অবাধ্যতা এবং কন্যাদের জীবন্ত প্রোথিত করা হতে’।[12]
(৪১) হিংসা-বিদ্বেষ, শত্রুতা পরিত্যাগ করা :
আমাদের সবার উচিত, সকাল-সন্ধ্যায় হিংসুকের হিংসা এবং শত্রুদের শত্রুতা থেকে মহান আল্লাহর নিকট পরিত্রাণ চাওয়া। মহান আল্লাহ বলেন, وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ ‘এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে, যখন সে হিংসা করে’ (ফালাক্ব, ১১৩/৫)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُمْ مُلْكًا عَظِيمًا- ‘তবে কি তারা লোকদের (মুসলিমদের) প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহ থেকে তাদের কিছু দান করেছেন। আর আমরা তো ইবরাহীমের বংশধরগণকে কিতাব ও হিকমত দান করেছিলাম এবং তাদেরকে দান করেছিলাম বিশাল সাম্রাজ্য’ (নিসা, ৪/৫৪)। তারা (ইয়াহূদী-নাছারা) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ করে এজন্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি মহা সম্মানিত রিযিক্ব ও নবুঅত লাভ করেছেন, তারা হিংসা-বিদ্বেষ বশত নিজেরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং অপরকে বাধা প্রদান করেছে। কেননা তিনি আরব বংশের, বনী ইসরাঈল বংশের নন (এটি ইয়াহূদী-নাছারাদের গোঁড়ামি মাত্র)।[13] হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تَحَاسَدُوا، وَلَا تَبَاغَضُوا، وَلَا تَقَاطَعُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا-
আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা কর না, একে অপরের প্রতি ঘৃণা পোষণ কর না, একে অপরের মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন কর না; বরং তোমরা একে অপরে আল্লাহর জন্য ভাই-ভাই হয়ে যাও’।[14] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا، وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ-
আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা একে অপরকে ঘৃণা কর না (শত্রুতা কর না), পরস্পর হিংসা কর না, একে অপরের পিছনে লেগো না (পরস্পর বিছিন্ন হয়ো না)। আর তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাই থেকে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকবে’।[15] হাদীছে আরো বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ، وَلاَ تَحَسَّسُوا، وَلاَ تَجَسَّسُوا، وَلاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا.
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাবধান! (একে অপরের প্রতি খারাপ) ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ অধিকাংশ ধারণা মিথ্যা হয়ে থাকে। তোমরা (একে অপরের) দোষ তালাশ কর না, গোয়েন্দাগিরি কর না, একে অপরে পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ কর না, একে অপরের পিছনে লেগো না (শত্রুতা কর না), একে অপরের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন কর না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দা ও ভাই-ভাই হয়ে যাও’।[16]
মোদ্দাকথা, পরিপূর্ণ মুমিন হতে চাইলে নিজের জন্য যা ভালোবাসবে, অপর ভাইয়ের জন্য তাই ভালোবাসবে। একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ নয়, শত্রুতা নয়, গীবত-তোহমত নয়, বরং পরস্পরের কল্যাণ কামনা করতে হবে, দ্বীনী ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। তবেই ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তির আশা করা যেতে পারে।
(৪২) মানুষের মানহানি করা হারাম :
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্য ইহকালে ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। বস্ত্তত আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জানো না’ (নূর, ২৪/১৯)। কোন ব্যক্তি যখন কারো নিকট থেকে কোন খারাপ কথা শুনবে, তখন সে যেন এ কথাগুলো বেশী না করে বলে বেড়ায় ও প্রচার না করে। গীবতকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি রয়েছে।[17]
মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ ‘যারা সতী-সাধ্বী, সরলা ঈমানদার নারীদের প্রতি (যেনার) অপবাদ দেয়, তারা ইহকালে ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি’ (নূর, ২৪/২৩)। অতএব, এক মুসলিম অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি তার ধন-সম্পদ, রক্ত ও মান-মর্যাদা হানি করা হারাম’।[18] হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِى ذَرٍّ رضى الله عنه أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لاَ يَرْمِى رَجُلٌ رَجُلاً بِالْفُسُوقِ، وَلاَ يَرْمِيهِ بِالْكُفْرِ، إِلاَّ ارْتَدَّتْ عَلَيْهِ، إِنْ لَمْ يَكُنْ صَاحِبُهُ كَذَلِكَ.
আবু যার হতে বর্ণিত, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘একজন অপরজনকে ফাসিক্ব বলে যেন গালি না দেয় এবং একজন অন্যজনকে কাফির বলে অপবাদ না দেয়। কেননা অপরজন যদি তা না হয়, তবে সে অপবাদ তার নিজের উপরই আপতিত হবে’।[19]
(৪৩) লৌকিকতা ও শিরক বির্বজিত ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন :
মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَة- ‘অথচ তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খালেছ অন্তরে একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে’ (বাইয়্যিনাহ, ৯৮/৫)। সমস্ত ইবাদত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা এবং পরকালে নাজাতের জন্য রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর অনুসরণ-অনুকরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন, مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الْآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ ‘যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোন অংশই থাকবে না’ (শূরা, ৪২/২০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ- أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ‘যে ব্যক্তি পার্থিব জীবন ও তার জাঁকজমক কামনা করে, আমরা তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফল দুনিয়াতেই পূর্ণভাবে দিয়ে দিব। সেখানে তাদেরকে কোনই কমতি করা হবে না। এরা হল সেইসব লোক, যাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই। দুনিয়াতে তারা যা কিছু (সৎকর্ম) করেছিল, আখেরাতে তা সবটাই বরবাদ হবে এবং যা কিছু উপার্জন করেছিল সবটুকুই বিনষ্ট হবে (বাতিল আক্বীদা ও লোক দেখানো সৎকর্মের কারণে) (হূদ, ১১/১৫-১৬)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ‘অতএব যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (কাহ্ফ, ১৮/১১০)।
শিরকী আমল থেকে দূরে থাকতেই হবে, কারণ এটি মহাপাপ। মহান আল্লাহ লুক্বমান আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন,وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ‘স্মরণ কর, যখন লুক্বমান উপদেশ দিয়ে তার পুত্রকে বলেছিল, হে বৎস! আল্লাহর সাথ কাউকে শরীক কর না। নিশ্চয়ই শিরক সবচেয়ে বড় পাপ’ (লুক্বমান, ৩১/১৩)। শিরকের পাপ মহান আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। ঘোষিত হয়েছে,إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন’ (নিসা, ৪/৪৮)। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে অংশীস্থাপন করবে তার জন্য তিনি জান্নাত হারাম করে দিবেন। মহান আল্লাহ বলেন,مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ‘বস্ত্তত যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হল জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ, ৫/৭২)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ-
আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমাকে যাদের সাথে অংশীস্থাপন করা হচ্ছে তাদের থেকে আমি অনেক ঊর্ধ্বে। অতএব যে ব্যক্তি কোন আমল করে এবং সে তার আমলে আমাকে অন্যের সাথে অংশীস্থাপন করে, আমি তার শিরকী কাজ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’।[20]
লোক দেখানো আমল এবং লোককে শুনানো আমল করা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ اللَّهُ بِهِ، وَمَنْ يُرَائِى يُرَائِى اللَّهُ بِهِ. ‘যে ব্যক্তি লোককে শোনানোর জন্য ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে লোককে শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন’।[21]
মোদ্দাকথা, মানবজাতি শিরকী আমল থেকে দূরে থাকবে। যেমন কবরে সিজদা করা, আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে মানত মানা, কবর-মাযারের উদ্দেশ্যে ছাগল-গরু যবেহ করা, কবর থেকে বরকত নেওয়া, মৃত ব্যক্তির নিকট শাফা‘আত চাওয়া, বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য কবরে দাফনকৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া, মৃত ব্যক্তির নিকট তার মাধ্যমে অসীলা ধরা, কবরে ফুল দেওয়া, টাকা দেওয়া, তাবীয ঝুলানো, ব্যথা ভাল হবে বলে হাতে বালা, লাল-নীল সুতা পরা ইত্যাদি শরী‘আত বিরোধী কাজ পরিত্যাগ করতে হবে। লোক দেখানো ছালাত পড়া, মানুষকে শোনানোর জন্য কোন আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সকল প্রকার বিদ‘আতী আমল ত্যাগ করে কুরআন-সুন্নাহ মযবূত করে আঁকড়ে ধরতে হবে। আর সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী সরল সঠিক পথ ধরে সকল আমল-ইবাদত করতে হবে। তাহলে ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ সাধিত হবে। মনগড়া ইবাদত দ্বারা আমল কবুল হবে না।
(৪৪) ভাল কাজে আনন্দ এবং খারাপ কাজে দুঃখ পাওয়া : হাদীছে এসেছে, مَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَذَلِكَ الْمُؤْمِنُ ‘নেক আমল যাকে আনন্দিত করে এবং মন্দ আমল যাকে দুঃখিত করে সেই হল মুমিন’।[22]
(৪৫) সকল পাপের চিকিৎসা হল তওবা :
মহান আল্লাহ বলেন,وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ‘আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে ফিরে যাও, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (নূর, ২৪/৩১)। মহান আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা কর, খাঁটি তওবা’ (তাহরীম, ৬৬/৮)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,وَأَنِيبُوا إِلَى رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ ‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অভিমুখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও’ (যুমার, ৩৯/৫৪)। মানবজাতি তওবা, ইসতিগফার করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং আসমান থেকে পানি বর্ষণ করবেন আর তার ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করবেন, তাকে সন্তান-সন্ততি দান করবেন। সাথে সাথে জান্নাত দান করবেন। মহান আল্লাহ বলেন,فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًايُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا ‘তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি প্রেরণ করবেন, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালাসমূহ’ (নূহ, ৭১ /১০-১২)। হাদীছে এসেছে,
عَنِ ابْنَ عُمَرَقَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّى أَتُوبُ فِى الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ
ইবনু ওমর রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মানব জাতি! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা আমি প্রত্যেক দিন আল্লাহর নিকট একশ’ বার করে তওবা করি’।[23]
(৪৬) কুরবানী, আক্বীক্বা এবং অন্যান্য ভাল কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা :
মহান আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ ‘অতএব তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর ও কুরবানী কর’ (কাওছার, ১০৮/২)। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ ‘বল, আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ, সবই বিশ্বপালক আল্লাহর জন্য’ (আন‘আম, ৬/১৬২)। অতএব মহান আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক স্থাপন করা যাবে না। যবেহ, কুরবানী কোন মাযার বা পীরের নামে করা যাবে না। সকল কিছুই আল্লাহর জন্য করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ ‘তাঁর কোন শরীক নেই। আর এ ব্যাপারেই (অর্থাৎ শরীক না করার ব্যাপারে) আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম’ (আন‘আম, ৬/৬৩)। মহান আল্লাহ বলেন, وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ لَكُمْ فِيهَا خَيْر ‘আর কুরবানীর উটকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ, ২২/৩৬)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رضى الله عنه قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم يُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ وَأَنَا أُضَحِّى بِكَبْشَيْنِ
আনাস ইবনু মালেক রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি ভেড়া দিয়ে কুরবানী করতেন। আমিও কুরবানী দিতাম দু’টি ভেড়া দিয়ে’।[24] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم انْكَفَأَ إِلَى كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ فَذَبَحَهُمَا بِيَدِهِ
আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি সাদা-কালো রং এর শিংওয়ালা ভেড়ার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং নিজ হাত দিয়ে সে দু’টিকে যবেহ করলেন’।[25]
(চলবে)
[1]. মুসলিম, হা/১০১৫; আহমাদ, হা/৮৩৪৮।
[2]. বুখারী, হা/৫২; মুসলিম, হা/১৫৯৯; আহমাদ, হা/১৮৩৭৪।
[3]. বুখারী, হা/২৪৩২; মুসলিম, হা/১০৭০ আহমাদ, হা/৮২০৬।
[4]. ইমাম আব্দুর রহমান গাযবীনী ইমাম বায়হাক্বী মুখতাছার শু‘আবিল ঈমান, পৃঃ ৬৫; বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, ৭/৩৯১ পৃঃ।
[5]. বুখারী, হা/৫৮৩২; মুসলিম, হা/৫৫৪৬; আহমাদ, হা/১২০০৪।
[6]. বুখারী, হা/৫৪২৬; মুসলিম, হা/২০৬৭; আহমাদ, হা/২৩৩৬৪।
[7]. বুখারী, হা/৫৮১৮; মুসলিম, হা/২০৮০; আহমাদ, হা/২৪০৩৭।
[8]. বুখারী, হা/৫৭৮৩; মুসলিম, হা/২০৮৫; আহমাদ, হা/৪৪৮৯।
[9]. বুখারী, হা/৫৭৮৩; মুসলিম, হা/২০৮৫; আহমাদ, হা/৪৪৮৯।
[10]. তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/১০৮ পৃঃ।
[11]. ইবনু কাছীর, ৮/৪৭৬ পৃঃ।
[12]. বুখারী, হা/৬৪৭৩; মুসলিম, হা/১৭১৫; আহমাদ, হা/১৮১৯২; ইমাম বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, পৃঃ ৮/৪৮৮।
[13]. ইবনু কাছীর, ৪/১১৯ পৃঃ।
[14]. মুসলিম, হা/২৫৫৯; আহমাদ, হা/১৩১৭৯।
[15]. বুখারী, হা/৬০৭৬; মুসলিম, হা/২৫৫৯; আহমাদ, হা/১৩১৮০।
[16]. বুখারী, হা/৬০৬৪; মুসলিম, হা/২৫৬৩; আহমাদ, হা/৮১১৮।
[17]. ইবনু কাছীর ১০/১৯৫ পৃঃ।
[18]. মুসলিম, হা/২৫৬৪; আহমাদ, হা/৭৭২৭।
[19]. বুখারী, হা/৬০৪৫; আহমাদ, হা/২১৫৭১।
[20]. মুসলিম, হা/২৯৮৫; আহমাদ হা/৭৯৯৯।
[21]. বুখারী, হা/৬৪৯৯; মুসলিম, হা/২৯৮৭; আহমাদ, হা/১৮৮০৮।
[22]. তিরমিযী, হা/২১৬৫।
[23]. মুসলিম, হা/৭০৩৪; আহমাদ, হা/১৭৮৫০।
[24]. বুখারী, হা/৫৫৫৩; আহমাদ, হা/১৩৯৯৫।
[25]. বুখারী, হা/৫৫৫৪; মুসলিম, হা/১৯৬৬।