কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

গ্রন্থ পরিচিতি-১৫ : আল-লামহাত

post title will place here

ভূমিকা : রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন, তা গ্রহণ করতেই হবে। এর কোনো বিকল্প উপায় নেই। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেওয়া উপহারকে তথা সুন্নাতকে ছোটোখাটো বলে উপহাস করা বা তুচ্ছ করা কুফরী। তেমনিভাবে বিভিন্ন যঈফ ও জাল হাদীছের মাধ্যমে ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতসমূহকে বাতিল করারও কোনো উপায় নেই। যে সকল গ্রন্থে তাক্বলীদপন্থিদের দাঁতভাঙা জবাব প্রদান করা হয়েছে, তন্মধ্যে আল্লামা রঈস নাদভী রহিমাহুল্লাহ লিখিত ‘আল-লামহাত’ গ্রন্থটি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। নিচে গ্রন্থটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।

নাম ও বিবরণ : গ্রন্থটির নাম اللمحات إلى ما في أنوار الباري من الظّلمات ‘আল-লামহাত ইলা মা ফী আনওয়ারিল বারী মিনায যুলুমাত’। দেওবন্দীদের পক্ষ হতে লিখিত ‘আনওয়ারুল বারী শরহে বুখারী’ গ্রন্থের জবাবে এটি লিখিত হয়েছে। উক্ত বইয়ের মধ্যে দেওবন্দী লেখক মুহাদ্দিছ ইমামদের উপর চরমভাবে আক্রমণ করেছেন এবং চড়াও হয়েছেন। ‘আল-লামহাত’ গ্রন্থপ্রণেতা এর মধ্যে সেসব মিথ্যাচার, অপব্যাখ্যা ও বিকৃতির বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনী পরিচালন করেছেন এবং দেওবন্দীদেরকে দাঁতভাঙা জবাব প্রদান করেছেন। গ্রন্থটির পাঁচটি খণ্ড রচিত হওয়ার পর মুহতারাম লেখক রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে যান। অদ্যাবধি এই গ্রন্থের কোনো জবাব দেওবন্দীদের পক্ষ হতে প্রদান করা হয়নি। গ্রন্থটি ভারতের বিখ্যাত সালাফী মাদরাসা জামি‘আহ সালাফিয়্যাহ বানারস হতে মুদ্রিত হয়।

বৈশিষ্ট্যসমূহ : এই গ্রন্থের মধ্যে যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা এক কথায় বুঝানো অসম্ভব। লেখক প্রতিটি কথার জবাব এমনভাবে দিয়েছেন, তার কোনো নযীর মেলে না। প্রতিপক্ষকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে, নম্রতা ও প্রমাণপুষ্ট আলোচনা দ্বারা তিনি বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠাকে এমনভাবে প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছেন, যা পাঠকমাত্রই বুঝতে সক্ষম হবেন। যা অধ্যয়ন না করা পর্যন্ত অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

যা যা রয়েছে : বৃহদায়তন পাঁচটি খণ্ডের মধ্যে এত বেশি ইলমী ও তাহক্বীক্বী গবেষণালব্ধ আলোচনা রয়েছে, যা অধ্যয়ন করলে যে কোনো আলেম মুগ্ধ হতে বাধ্য। নিচে সংক্ষেপে সূচিপত্রাকারে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো—

(১) প্রশংসাবাণী : আল্লামা ছূফী আহমাদ কাশ্মীরী রহিমাহুল্লাহ এটির একটি ভূমিকা রচনা করেছেন এবং তিনি সেখানে গ্রন্থটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আল্লামা সূফী আহমাদ রহিমাহুল্লাহ হলেন মদীনার হাদীছ বিশারদ শায়খ রবী ইবনে হাদী আল-মাদখালী রহিমাহুল্লাহ-এর উস্তায। যার কাছে রবী ইবনে হাদী রহিমাহুল্লাহ উছূলে হাদীছ, ইলমুর রিজালের উপর বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন।

(২) ভূমিকা : এটি প্রণয়ন করেছেন আল্লামা উযায়ের শামস রহিমাহুল্লাহ। যিনি ইলমুর রিজাল, নুসখার তাহক্বীক্ব এবং শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া রহিমাহুল্লাহ-এর গ্রন্থাবলির উপর ব্যাপক খেদমত করেছেন।

(৩) মুহাদ্দিছদের উপর মিথ্যাচারের জবাব : প্রথম খণ্ডে মুহাদ্দিছ ইমামদের উপর আরোপিত কতিপয় মিথ্যাচারের জবাব প্রদান করা হয়েছে।

(৪) ৪০ জন ফিক্বহ কমিটি : হানাফীদের ৪০ জন ফিক্বহ কমিটির ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু জবাব প্রদান করা হয়েছে।

(৫) ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর উপর অভিযোগের জবাব : ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ-এর উপর যে সকল অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে।

(৬) হানাফী শীর্ষস্থানীয় ইমামদের সম্পর্কে তাহক্বীক্বী আলোচনা করা হয়েছে।

(৭) আবূ হুরায়রা, ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ রযিয়াল্লাহু আনহুম এবং আয়েশা রযিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত কয়েকটি হাদীছের ব্যাপারে সমুচিত জবাব প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও আরো অনেক গবেষণাপূর্ণ বিষয় এ গ্রন্থের মধ্যে স্থান পেয়েছে। যার পূর্ণ বিবরণ দিতে গেলে বড় একটি বই রচিত হয়ে যাবে।

গ্রন্থকার পরিচিতি : এই অতীব মূল্যবান গ্রন্থটির লেখক আল্লামা রঈস নাদভী রহিমাহুল্লাহ সম্পর্কে ‘মাসিক আল-ইতিছাম’ পত্রিকায় আলোচিত হয়েছে।[1]

উপসংহার : পরিশেষে এটাই বলতে হয় যে, যাদের মাধ্যমে আমরা হাদীছ শাস্ত্র পেয়েছি; তাদের উপর অতর্কিত হামলার জবাব হিসেবে এই গ্রন্থটি অতীব সুখপাঠ্য ও ইলমী ও তাহক্বীক্বী তথ্য ও তত্ত্বে ভরপুর। সুতরাং প্রতিটি আলেমকে এই গ্রন্থটি অবশ্যই পাঠ করা উচিত। উল্লেখ্য, গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডের অনুবাদ চলমান। আল্লাহ তাআলা এই গ্রন্থটি ক্বিয়ামত পর্যন্ত কবুল করুন এবং এর লেখককে জান্নাতবাসী করুন- আমীন!


[1]. মাসিক আল-ইতিছাম, ৭ম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, জুন ২০২৩, পৃ. ৩৭।

Magazine