কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রাবী পরিচিতি-৭ : আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জুদ‘আন রাহিমাহুল্লাহ

ভূমিকা : আলী ইবনু যায়েদ ইবনে জুদ‘আন রহিমাহুল্লাহ একজন প্রসিদ্ধ রাবী। তার অনেকগুলো হাদীছ ও রেওয়ায়াত বিভিন্ন গ্রন্থের একাধিক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। তিনি যঈফ রাবী নাকি ছিক্বাহ রাবী তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। আমরা আমাদের আলোচ্য নিবন্ধে প্রমাণ করব তার ব্যাপারে সঠিক অবস্থান।

নাম : তিনি হলেন আলী ইবনু যায়েদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ মুলায়কা যুহাইর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে জুদ‘আন আত-তায়মী, আবুল হাসান আল-বাছরী। তিনি একজন অন্ধ ফক্বীহ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিক্বাহ এবং শক্তিশালী রাবী ছিলেন না।[1]

উস্তাযগণ : তিনি অসংখ্য উস্তায থেকে হাদীছ শ্রবণ করেছেন। তন্মধ্যে আনাস ইবনু মালেক, উছমান নাহদী, সাঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব এবং তাবেঈদের একটি জামাআত সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ছাত্রগণ : তার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের কতিপয় হলেন ক্বতাদা, ইবনু আউন, উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার, সুফিয়ান ছাওরী, সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা, হাম্মাদ ইবনু সুলায়মান, হাম্মাদ ইবনু সালামাহ, শু‘বাহ, ইবনু আবী আরূবাহসহ আরও অনেকেই।[2]

হাদীছের রাবী হিসেবে ইমামদের দৃষ্টিতে তার অবস্থান : ফিক্বহে তিনি বিশেষ খ্যাতি লাভ করলেও হাদীছের রাবী হিসেবে ছিলেন যথেষ্ট দুর্বল। এ ব্যাপারে ইমামদের অভিমত নিম্নে প্রদত্ত হলো—

অভিমত—১ : ইমাম শাওক্বানী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,فِي عَلِيِّ بْنِ زَيْدِ بْنِ جُدْعَانَ مَقَالٌ مَعْرُوفٌ ‘আলী ইবনু যায়েদ ইবনু জুদ‘আনের ব্যাপারে সমালোচনাগুলো প্রসিদ্ধ’।[3] অন্যত্র তিনি তাকে যঈফ বলেছেন।[4]

অভিমত—২ : ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ বলেছেন,عَلِيُّ بْنُ زَيْدٍ ضَعِيفٌ ‘আলী ইবনু যায়েদ একজন যঈফ রাবী’।[5]

অভিমত—৩ : হানাফী ইমাম আল্লামা ইবনুত তুরকুমানী রহিমাহুল্লাহ তার যঈফ রাবী হওয়ার ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন।[6]

অভিমত—৪ : ইমাম দারাকুত্বনী রহিমাহুল্লাহ তাকে বিতর্কিত রাবী বলেছেন।[7]

অভিমত—৫ : ইমাম বায়হাক্বী রহিমাহুল্লাহ ‘তিনি শক্তিশালী রাবী নন’ বলেছেন।[8]

অভিমত—৬ : ইমাম ইবনু ক্বাছীর রহিমাহুল্লাহ তাকে যঈফ বলেছেন।[9] এছাড়াও হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ,[10] ইমাম ইবনু সা‘দ রহিমাহুল্লাহ,[11] ইমাম ইজলী রহিমাহুল্লাহ[12] প্রমুখ বিদ্বানগণ তাকে যঈফ ও সমালোচিত রাবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম ইবনু হিব্বান রহিমাহুল্লাহ তার সম্পর্কে চমৎকার বলেছেন,

كَانَ شَيخا جَلِيلًا وَكَانَ يهم فِي الْأَخْبَار ويخطء فِي الْآثَار حَتَّى كثر ذَلِك فِي أخباره وَتبين فِيهَا الْمَنَاكِير الَّتِي يَرْوِيهَا عَن الْمَشَاهِير فَاسْتحقَّ ترك الِاحْتِجَاج بِهِ.

‘তিনি একজন জালীলুল ক্বদর শায়েখ ছিলেন। তিনি ইতিহাস বর্ণনায় ভ্রমে পতিত হতেন। হাদীছ বর্ণনায় ভুল করতেন। এভাবে তিনি ইতিহাস বর্ণনায় প্রচুর পরিমাণে ভুল করতে লাগলেন। আর তিনি প্রসিদ্ধ রাবীদের থেকে যে সকল বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন সেগুলোর মুনকার হওয়া স্পষ্ট হয়ে গেল। ফলে তার দ্বারা দলীল পেশ করা বর্জিত হয়ে গেল’।[13]

আলী ইবনু যায়েদ রহিমাহুল্লাহ-এর হাদীছ : তিনি বেশ কিছু ছহীহ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তবে তার যঈফ হাদীছের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। নিচে একটি যঈফ হাদীছ নমুনা হিসেবে প্রদত্ত হলো।—

عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدِ بْنِ جُدْعَانَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْجَالِبُ مَرْزُوقٌ وَالْمُحْتَكِرُ مَلْعُونٌ.

‘আমদানী পণ্য সরবরাহকারী ব্যবসায়ী রিযিক্বপ্রাপ্ত হয় এবং মজুতদার অভিশপ্ত হয়’।[14]

তাহক্বীক্ব : শায়েখ আলবানী রহিমাহুল্লাহ যঈফ বলেছেন।[15]

মৃত্যু : তিনি ১২৯ হিজরীতে মারা গিয়েছেন।[16] আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন এবং তার উপর রহম করুন। আমীন।

উপসংহার : উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো যে, প্রসিদ্ধ রাবী আলী ইবনু যায়েদ ইবনে জুদ‘আন রহিমাহুল্লাহ একজন যঈফ রাবী ছিলেন। সুতরাং তার বর্ণনা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!


[1]. তাহযীবুত তাহযীব, ৭/৩২২।

[2]. তাহযীবুল আসমা ওয়াল লুগাত, রাবী নং ৪২৮।

[3]. ফাতহুল ক্বাদীর, ৪/৭৭।

[4]. ফাতহুল ক্বাদীর, ৪/৪৬৭।

[5]. নাসাঈ, হা/৩৮৫০।

[6]. আল-জাওহারুন নাকী, ১/৫৩।

[7]. আল-ই‘লালুল ওয়ারিদাহ, ৪/১৩৩।

[8]. মুখতাছার খেলাফিয়্যাত, ১/১৮৬।

[9]. মু‘জিযাতুন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পৃ. ২৪৯।

[10]. তারীখুল ইসলাম, ১/৫০১।

[11]. তাবাক্বাত ইবনু সা‘দ, রাবী নং ৩১৯৫।

[12]. আছ-ছিক্বাত, রাবী নং ১১৮৬।

[13]. ইবনু হিব্বান, আল-মাজরূহীন, রাবী নং ৬৭৩।

[14]. ইবনু মাজাহ, হা/২১৫৩।

[15]. তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/২৮৯৩; যঈফ তারগীব, হা/১১০১।

[16]. তাহযীবুত তাহযীব, ৭/৩২২।

Magazine