কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রাবী পরিচিতি-৯ : আব্দুল আযীয ইবনু আব্দির রহমান আল-কুরাশী আল-বালিসী আল-জাযারী রাহিমাহুল্লাহ

post title will place here

ভূমিকা : রাবী অর্থ বর্ণনাকারী। আমাদের আলোচনায় আমরা রাবী বলতে ঐ সকল বর্ণনাকারীকে বুঝিয়ে থাকি যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন। যারা হাদীছ বর্ণনা করেছেন তারা বিভিন্ন শ্রেণির হয়ে থাকেন। কেউ ‘ছিক্বাহ’ হয়ে থাকেন; কেউ ‘যঈফ’ হয়ে থাকেন ইত্যাদি। আজকে আমরা একজন প্রসিদ্ধ যঈফ রাবী সম্পর্কে আলোকপাত করব ইনশা-আল্লাহ।

নাম ও বিবরণ : তার নাম আব্দুল আযীয ইবনু আব্দির রহমান আল-কুরাশী আল-বালিসী আল-জাযারী রাহিমাহুল্লাহ। তার জীবন-মৃত্যু ও জীবনী সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তিনি অত্যধিক সমালোচিত একজন রাবী। তার সম্পর্কে ইমামগণ যা বলেছেন তা নিচে তুলে ধরা হলো—

(১) ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনু আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,فَقَالَ أَبِيْ عَبْدُ الْعَزِيْزُ وَهُوَ الَّذِيْ يَرِوْيْ عَنْ خُصَيْفٍ اِضْرِبْ عَلٰى أَحَادِيْثِهِ هِيَ كَذِبٌ أَوْ قَالَ مَوْضُوْعَةٌ أَوْ كَمَا قَالَ أَبِيْ فَضَرَبْتُ عَلٰى أَحَادِيْثِ عَبِدْ الْعَزِيْزِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ ‘আমার বাবা বলেছেন, আব্দুল আযীয, যিনি খুছায়েফ হতে বর্ণনা করেছেন। তার হাদীছসমূহকে তুমি ছুঁড়ে ফেলে দাও। সেগুলো মিথ্যায় ভরপুর। অথবা তিনি বলেছেন, তার হাদীছগুলো জাল। অথবা আমার বাবা অনুরূপ কিছু কথা বলেছেন। ফলে আমি আব্দুল আযীয ইবনু আব্দির রহমানের বর্ণিত হাদীছ ছুঁড়ে ফেলে দেই’।[1]

(২) ইমাম সুয়ূতী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, ‘যাহাবী তার ‘মীযানুল ই‘তিদাল’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, আব্দুল আযীয ইবনু আব্দির রহমান বালিসী হাদীছ বর্ণনা করেছেন খুছায়েফ হতে। তাকে (বালিসীকে) ইমাম আহমাদ মিথ্যা হাদীছ বর্ণনার দোষে অভিযুক্ত করেছেন। আর তিনি তার হাদীছকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন’।[2]

(৩) অনুরূপভাবে ইমাম ইবনু আবী হাতেম রাহিমাহুল্লাহ ‘আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল’[3] গ্রন্থে, ইমাম ইবনু আদী ‘আল-কামেল’[4] গ্রন্থে, ইমাম দারাকুত্বনী রাহিমাহুল্লাহ ‘আয-যুআফা ওয়াল মাতরূকূন’[5] গ্রন্থে, হাফেয যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ ‘মীযানুল ই‘তিদাল’[6] গ্রন্থে, ইবনু হাজার আসক্বালানী রাহিমাহুল্লাহ ‘লিসানুল মীযান’[7] গ্রন্থে, আব্দুর রহমান মুবারকপুরী ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’[8] গ্রন্থে, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ‘ইরওয়াউল গলীল’[9] গ্রন্থে, তাকে মাতরূক, পরিত্যক্ত ও মিথ্যা হাদীছ বর্ণনার দোষে দুষ্ট রাবী হিসেবে অভিহিত করেছেন।

তার বর্ণিত একটি প্রসিদ্ধ হাদীছ : তার বর্ণিত একাধিক হাদীছ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো—

حَدَّثَنِي أَحْمَدُ بْنُ الْحَسَنِ بْنِ أَدِيبَوَيْهِ ثنا أَبُوْ يَعْقُوْبَ إِسْحَاقُ بْنُ خَالِدِ بْنِ يَزِيْدَ الْبَالِسِيُّ ثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ الْبَالِسِيُّ عَنْ خُصَيْفٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍt عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ مَا مِنْ عَبْدٍ ‌بَسَطَ ‌كَفَّيْهِ ‌فِي ‌دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثُمَّ يَقُوْلُ اللَّهُمَّ إِلَهِيْ وَإِلَهَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَإِلَهَ جَبْرَائِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَافِيْلَQ أَسْأَلُكَ أَنْ تَسْتَجِيْبَ دَعْوَتِيْ فَإِنِّي مُضْطَرٌّ وَتَعْصِمَنِيْ فِي دِيْنِيْ فَإِنِّي مُبْتَلًى وَتَنَالَنِيْ بِرَحْمَتِكَ فَإِنِّي مُذْنِبٌ وَتَنْفِيَ عَنِّي الْفَقْرَ فَإِنِّي مُتَمَسْكِنٌ إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ b أَنْ لَا يَرُدَّ يَدَيْهِ خَائِبَتَيْ.

আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন প্রত্যেক ছালাতের পর স্বীয় দু’হাত প্রসারিত করে বলে, হে আমার মা‘বূদ! ইবরাহীম, ইসহাক্ব, ইয়াকূব ও জিবরীল, মীকাঈল, ইসরাফীলের মা‘বূদ! আমার দু‘আ কবুল করার ব্যাপারে আপনার নিকট আবেদন করছি। আমি নিরুপায়। আমাকে আমার দ্বীনের উপর অটল রাখুন। কারণ, আমি দুর্দশাগ্রস্ত। আপনি আমাকে আপনার দয়ায় সিক্ত করুন। কারণ আমি গোনাহগার। আপনি আমার দরিদ্রতা দূরীভূত করুন। নিশ্চয়ই আমি আপনার বিধান পালনকারী। তখন নিরাশ করে বান্দার দুই হাত ফিরিয়ে না দেওয়া আল্লাহর উপর হক্ব হয়ে যায়’।[10]

তাহক্বীক্ক : হাদীছটি জাল। তিনি ছাড়াও এ হাদীছের সনদে আরও দুজন সমালোচিত রাবী রয়েছেন।

উপসংহার : কোনো হাদীছের উপর আমল করতে গেলে আগে সেই হাদীছের মান নির্ণয় করতে হবে। আর সেটি করতে গেলে প্রথমে রাবী নিয়ে গবেষণা করতে হবে। নতুবা আমরা জাল-যঈফ ও ছহীহ হাদীছ সবগুলো একসাথে গুলিয়ে ফেলব। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!


[1]. আল-ই‘লাল, আব্দুল্লাহর বর্ণনা, রাবী নং ৫৪১৯।

[2]. সুয়ূতী, আয-যিয়াদাতু আলাল মাউযূআত, ২/৭২০।

[3]. ইবনু আবী হাতেম, আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, রাবী নং ১৮০৬।

[4]. ইবনু আদী, আল-কামেল, রাবী নং ১৪২৬।

[5]. দারাকুত্বনী, আয-যুআফা ওয়াল মাতরূকূন, রাবী নং ৩৪৭।

[6]. হাফেয যাহাবী, মীযানুল ই‘তিদাল, রাবী নং ৫১১২।

[7]. ইবনু হাজার আসক্বালানী, লিসানুল মীযান, রাবী নং ৪৮২১।

[8]. আব্দুর রহমান মুবারকপূরী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ২/১৭১।

[9]. আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, হা/১৩০৩।

[10]. ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লা, হা/১৩৮; মু‘জাম ইবনুল মুকরী, হা/১২০৪; ইসহাক্ব ইবনু ইয়াকূব, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে দু‘আ ও মুনাজাত, পৃ. ১৩৩।

Magazine