কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

রাবী পরিচিতি-৫ : আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্বআল-ওয়াসিত্বী আল-কূফী রহিমাহুল্লাহ

ভূমিকা : রাবী সম্পর্কে আমাদের ধারাবাহিক আলোচনার এই পর্যায়ে আমরা আজকে একজন রাবী সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশা-আল্লাহ। তিনি হলেন আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব আল-ওয়াসিত্বী রহিমাহুল্লাহ।

পরিচিতি : তার নাম হলো, عَبد الرَّحمَن بْن إِسحاق بْن الحارث أَبو شَيبة الواسِطِيّ ‘আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব ইবনু হারেস, আবূ শায়বাহ আল-ওয়াসিত্বী’।[1] তার উপনাম হলো আবূ শায়বাহ।[2] তিনি ওয়াসিত্বে জন্মগ্রহণ করেছেন বিধায় তাকে ওয়াসিত্বী বলা হয়।[3] জীবনের কিছুকাল তিনি কূফাতেও কাটিয়েছিলেন। তার জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে তেমন কিছু পাওয়া যায় না।

ইমামদের অভিমতসমূহ : তার সম্পর্কে ইমামদের মত নিম্নরূপ-

(১) ইয়াহইয়া ইবনু মাঈন রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৩৩ হি.) বলেছেন, ضعيف ليس بشئ ‘তিনি যঈফ; তার হাদীছের সংখ্যা খুবই কম’।[4]

(২) আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৪১ হি.) বলেন, منكر الحديث ‘তিনি মুনকারুল হাদীছ’।[5]

(৩) বুখারী রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ২৫৬ হি.) বলেছেন, ضعيف الحديث ‘তিনি যঈফুল হাদীছ’।[6]

(৪) ইবনু আদী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, فيه نظر ‘তার মধ্যে সমস্যা আছে। সমর্থক হাদীছের মাধ্যমে তার তাকে শক্তিশালী করা যাবে না।[7]

(৫) নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৩০৩ হি.) বলেছেন, ضعيف ‘তিনি যঈফ’।[8]

(৬) ইবনু হাজার রহিমাহুল্লাহ (মৃ. ৮৫২ হি.) বলেছেন, كوفيٌّ ضعيف ‘তিনি কূফার অধিবাসী, যঈফ’।[9]

তার বর্ণিত কয়েকটি যঈফ হাদীছ : তিনি রাবী হিসাবে প্রসিদ্ধ। তার দুটি যঈফ বর্ণনা নিম্নরূপ-

বর্ণনা-১ :

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مَحْبُوبٍ حَدَّثَنَا حَفْصُ بْنُ غِيَاثٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ عَنْ زِيَادِ بْنِ زَيْدٍ عَنْ أَبِى جُحَيْفَةَ أَنَّ عَلِيًّا رضي الله عنه قَالَ : السُّنَّةُ وَضْعُ الْكَفِّ عَلَى الْكَفِّ فِى الصَّلاَةِ تَحْتَ السُّرَّةِ.

আলী রযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘ছালাতের মধ্যে নাভির নিচে (বাম) কব্জির উপর (ডান) কব্জি স্থাপন করা সুন্নত’।[10]

বর্ণনা-২ :

حَدَّثَنَا حُسَيْنُ بْنُ عَلِىِّ بْنِ الأَسْوَدِ الْبَغْدَادِىُّ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ إِسْحَاقَ عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ أَبِى كَثِيرٍ عَنْ أَبِيهَا أَبِى كَثِيرٍ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ عَلَّمَنِى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : « قُولِى اللَّهُمَّ هَذَا اسْتِقْبَالُ لَيْلِكَ وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ وَحُضُورُ صَلَوَاتِكَ أَسْأَلُكَ أَنْ تَغْفِرَ لِى ».

উম্মু সালামা রযিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এই দু‘আটি শিখিয়ে দিয়ে বলেছেন, তুমি বলো : ‘হে আল্লাহ! এখন তোমার রাতের আগমনের সময়, তোমার দিন চলে যাওয়ার সময়, তোমার দিকে আহ্বানকারীর (মুআযযিনের) আওয়ায দেওয়ার সময় এবং তোমার ছালাতে হাযির হওয়ার সময়। আমি তোমার কাছে দু‘আ করি, তুমি আমাকে মাফ করে দাও’।[11]

উপসংহার : এই পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হলো যে, ‘আব্দুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব’ জমহূর মুহাদ্দিছীনে কেরামের নিকটে যঈফ ও সমালোচিত। কতিপয় মুহাদ্দিছ তাকে মিথ্যার দোষে অভিযুক্ত এবং পরিত্যাজ্যও বলেছেন। সুতরাং তার রেওয়ায়াত প্রত্যাখ্যাত।

উল্লেখ্য যে, বর্ণনাদ্বয়ে আরও কিছু ত্রুটি রয়েছে। তবে এখানে আব্দুর রহমান আলোচ্য বিষয়বস্তু হওয়ার কারণে সেগুলো উল্লেখ করা হলো না।


[1]. ইমাম বুখারী, আত-তারীখুল কাবীর, রাবী নং ৮৩৫।

[2]. প্রাগুক্ত।

[3]. প্রাগুক্ত।

[4]. আল-জারহু ওয়াত-তা‘দীল, ৫/২১৩, সনদ ছহীহ; তারীখে ইবনে মাঈন, জীবনী নং ১৫৫৯, ৩০৭০।

[5]. ইমাম বুখারী, কিতাবুয যু‘আফা, জীবনী নং ২০৩; আত-তারীখুল কাবীর, ৫/২৫৯।

[6]. ইমাম তিরমিযী, আল-ই‘লাল, ১/২২৭।

[7]. ইমাম ইবনু আদী, আল-কামিল, ৪/১৬১৩, সনদ ছহীহ।

[8]. ইমাম নাসাঈ, কিতাবুয যু‘আফা, জীবনী নং ৩৫৮।

[9]. তাক্বরীবুত তাহযীব, জীবনী নং ৩৭৯৯।

[10]. আবূ দাঊদ, হা/৭৫৬; যঈফ আবূ দাঊদ, হা/১৫৭।

[11]. তিরমিযী, হা/৩৫৮৯; যঈফ তিরমিযী, হা/১০।

Magazine