উপক্রমণিকা : হাদীছের রাবীগণ হলেন অতন্দ্র প্রহরী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল আজ আমাদের হাতে। তাদেরকে ছাড়া হাদীছকে খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য সম্ভব ছিল না। যত জন ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য রাবী রয়েছেন, তাদের মধ্যে একজন হলেন ইবনু হুবায়রা রহিমাহুল্লাহ। নিচে তার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো-
নাম ও জন্ম : তার পুরো নাম হলো— আব্দুল্লাহ ইবনু হুবায়রা ইবনে আসআদ। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু হুবায়রা সাবাঈ নামে পরিচিত। উপনাম হলো আবূ হুবায়রা। আর উপাধি হলো ইবনু হুবায়রা। তিনি একজন মিসরী ছিলেন। তিনি সানাতুল জামাআহ-এর বছরে জন্মগ্রহণ করেছেন।[1] অর্থাৎ সেটি হলো ৪১ হিজরী। যে হিজরীতে হাসান রযিয়াল্লাহু আনহু এবং মুআবিয়া রযিয়াল্লাহু আনহু-এর মধ্যে সন্ধি সম্পাদিত হয়েছিল।
যারা তাকে ছিক্বাহ বলেছেন : তিনি সকলের মতে ছিক্বাহ ছিলেন। তিনি ছহীহ মুসলিমের রাবী ছিলেন। অসংখ্য ইমাম তাকে ছিক্বাহ বলেছেন। তার ছিক্বাহ হওয়ার বিষয়টি এতটাই প্রসিদ্ধ যে, একাধিক ইমামের মন্তব্য নিয়ে আসা নিষ্প্রয়োজন।
তার বর্ণিত একটি হাদীছ নিম্নরূপ :
ইমাম ত্ববারানী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ مُوسَى ثنا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْمُقْرِئُ ثنا ابْنُ لَهِيعَةَ حَدَّثَنِي ابْنُ هُبَيْرَةَ عَنْ حَبِيبِ بْنِ مَسْلَمَةَ الْفِهْرِيُّ وَكَانَ مُسْتَجَابًا أَنَّهُ أُمِّرَ عَلَى جَيْشٍ فَدَرَّبَ الدُّرُوبَ فَلَمَّا لَقِيَ الْعَدُوَّ قَالَ لِلنَّاسِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَا يَجْتَمِعُ مَلَأٌ فَيَدْعُو بَعْضُهُمْ وَيُؤَمِّنُ سَائِرُهُمْ إِلَّا أَجَابَهُمُ اللهُ.
(ত্ববারানী বলেন) আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন বিশর ইবনু মূসা। (তিনি বলেছেন) আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন আবূ আব্দুর রহমান আল-মুক্বরী। (তিনি বলেছেন) আমাদেরকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন ইবনু লাহীআহ রহিমাহুল্লাহ। (তিনি বলেছেন) আমাকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন ইবনু হুবায়রা রহিমাহুল্লাহ হাবীব ইবনু মাসলামা ফিহরী রযিয়াল্লাহু আনহু হতে।
যিনি একজন মুসতাজাবুদ দাওয়া ছিলেন। একদা তাকে (হাবীব ইবনু মাসলামাকে) একটি বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করা হয়। যখন তিনি শত্রুর সম্মুখীন হলেন তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, আমি রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে, ‘যদি কোনো দল একত্র হয়, তারপর তাদের মধ্য হতে কোনো একজন দু‘আ করে এবং অবশিষ্টরা আমীন বলে; তখন আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন’।[2]
তাহক্বীক্ব : এ হাদীছের রাবীগণ সকলেই গ্রহণযোগ্য। তবে এখানে একটি গোপন ত্রুটি রয়েছে। তা হলো, এ সনদের রাবী ইবনু হুবায়রা রহিমাহুল্লাহ ছাহাবী হাবীব ইবনু মাসলামা ফিহরীকে পাননি। সুতরাং এ হাদীছটির সনদ মুনক্বাতে‘। তিনি ৪১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে তার মৃত্যুর এক বছর পর ছাহাবী হাবীব ইবনু মাসলামা মারা গিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ছাহাবী হাবীব ইবনু মাসলামা রযিয়াল্লাহু আনহু ৪২ হিজরীতে ৫০ বছর বয়সে মারা গিয়েছেন।[3]
উল্লিখিত কারণে ইমাম নাছিরুদ্দীন আলবানী রহিমাহুল্লাহ এ হাদীছটির সনদকে মুনক্বাতে‘ আখ্যা দিয়েছেন।[4] বলাবাহুল্য, শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহ-এর এ তাহক্বীক্বটি শতভাগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য।
মৃত্যু : তিনি ১২৬ হিজরীতে মারা গিয়েছেন।[5]
উপসংহার : যদিও ইবনু হুবায়রা রহিমাহুল্লাহ একজন ছিক্বাহ রাবী ছিলেন। তথাপি তার বর্ণিত উপরিউক্ত হাদীছটি যঈফ। কেননা এখানে সনদের মধ্যে ইনক্বেতা‘ রয়েছে। সুতরাং এ হাদীছটি দিয়ে মুনাজাতের পক্ষে দলীল পেশ করা ঠিক নয়। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
[1]. তাহযীবুত তাহযীব, রাবী নং ১২১।
[2]. ত্ববারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৩৫৩৬; মুসতাদরাক হাকেম, হা/৫৪৭৮।
[3]. আবূ নুআঈম, মা‘রেফাতুছ ছাহাবা, ক্রমিক নং ২১৫০।
[4]. সিলসিলা যঈফা, হা/৫৯৬৮।
[5]. তাকরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৩৬৭৮।