ভূমিকা : ইসলাম ও মুসলিমদের খেদমতে যারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন, তাদের মধ্যে হাফেয মুহাম্মাদ ইবনু বারিকুল্লাহ লাখখাবী রহিমাহুল্লাহ অন্যতম। আজকের এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে তার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো—
নাম : মুহাম্মাদ বারিকুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ। তিনি ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে লাখখো জেলার ফীরোযপুর গ্রামে (পূর্ব পাঞ্জাব) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল হাফেয বারিকুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ, যিনি ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান।
শিক্ষাজীবন : হাফেয মুহাম্মাদ ইবনু বারিকুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ স্বীয় পিতার কাছে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি পিতার কাছেই কুরআন মাজীদ হিফয করেন। অতঃপর ফারসী, নাহু, ছরফ, ফিক্বহ, তাজবীদ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও তিনি পিতার কাছেই অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি লুধিয়ানায় গমন করেন এবং সেখানে একাধিক দক্ষ উস্তাযের কাছে অধ্যয়ন করেন। এরপর তিনি দিল্লীতে পড়াশোনা শেষ করে ‘মাদরাসা মুহাম্মাদিয়া’ নামক একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। আজীবন তিনি স্বহস্তে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় দারস-তাদরীস জারী রাখেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ও বিচক্ষণ আলেম ছিলেন। তিনি কোনো গ্রন্থ একবার অধ্যয়ন করলেই তা মুখস্থ হয়ে যেত। সুবহানাল্লাহ! ইবাদতবন্দেগী, পরহেযগারিতায় ছিলেন অনন্য।
ছাত্র ও উস্তাযগণ : হাফেয মুহাম্মাদ লাখখাবীর ছাত্রদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তন্মধ্যে মাওলানা আব্দুল কাদের লাখখাবী, মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব দেহলবী, মাওলানা রহীম বখশ প্রমুখ রহিমাহুমুল্লাহ উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন। আর অসংখ্য উস্তাযের মধ্যে সর্বাগ্রে আল্লামা নাযীর হুসাইন দেহলবী রহিমাহুল্লাহ-এর নাম আসবে।
প্রশংসাবাণী : আবূ দাঊদের ব্যাখ্যাগ্রন্থের ভূমিকায় আউনুল মা‘বূদের লেখক আল্লামা শামসুল হক্ব আযীমাবাদী রহিমাহুল্লাহ তার ব্যাপারে বলেন, ‘হাফেয মুহাম্মাদ বারিকল্লাহ লাখখাবী একজন পাঞ্জাবী আলেম ছিলেন। তিনি কামেল এবং সৎ মানুষ ছিলেন। আর তিনি সৎ মানুষের পুত্র ছিলেন’।[1]
রচনাবলি : তিনি আরবী, উর্দূ এবং ফারসী ভাষায় কিছু মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন—
(১) নিসাবুল ফিক্বহ। গ্রন্থটি তিনি পাঞ্জাবী ভাষায় পদ্য আকারে রচনা করেছেন।
(২) শীরে ত্বরীক্বাত (পাঞ্জাবী ভাষায় কবিতাকারে)।
(৩) হাওয়াশী ও তালীকাতে সুনানে আবূ দাঊদ (আরবী)।
(৪) ফিরকায়ে ইসমাঈলিয়া (উর্দূ)।
(৫) আত-তালীকাত আলা মিশকাতিল মাছাবীহ (আরবী)। এছাড়াও আরও অনেক গ্রন্থ রয়েছে।
মৃত্যু : আল্লামা হাফেয মুহাম্মাদ লাখখাবী রহিমাহুল্লাহ ৯০ বছর বয়সে ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পরপারে পাড়ি জমান। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন।
তথ্যসূত্র :
১. হাফেয আব্দুর রশীদ ইরাকী হাফিযাহুল্লাহ, চালিস উলামায়ে হাদীছ, পৃ. ৪২-৪৮।
২. হাফেয মুহাম্মাদ ইবনু বারিকল্লাহ রহিমাহুল্লাহ কা তাফসীরী মানহাজ, পৃ. ২২-৯৫, [এটি একটি পি.এইচ.ডি. থিসিস]।
৪. মুআররেখে আহলেহাদীছ আল্লামা ইসহাক্ব ভাট্টি রহিমাহুল্লাহ, বাযমে আরযামানদা, পৃ. ১৯৫-২৫৭।
[1]. আউনুল মা‘বূদ, ‘ভূমিকা’ দ্রষ্টব্য।