ভূমিকা : সালাফী দাওয়াত ও মানহাজের খেদমতে যারা শক্তিশালী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তাদের মধ্যে আল্লামা রঈস নাদভী রহিমাহুল্লাহ অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি জামি‘আহ সালাফিয়্যাহ, বানারসের শায়খুল হাদীছ, মুফতী এবং ভারতবর্ষের একজন প্রসিদ্ধ মুহাক্কিক্ব ও আলেমে দ্বীন ছিলেন। তিনি সাধারণ জনতারই শুধু আলেম ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন বড় বড় আলেমদের উস্তায। বড় বড় আলেমগণ সর্বদা তাঁর কাছে ভিড় করে থাকতেন ইলম হাছিলের জন্য। তিনি ‘ইলমের বিশ্বকোষ’ হিসেবে পরিগণিত হতেন। নিম্নে তাঁর সম্পর্কে যৎকিঞ্চিত আলোচনা পেশ করা হলো—
জন্ম : আল্লামা রঈস নাদভী বিন সাখাওয়াত রহিমাহুল্লাহ। তিনি উত্তরপ্রদেশের সিদ্ধার্থনগরে ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাজীবন : তিনি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর নিজ এলাকাতেই সম্পন্ন করেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লাখনৌ গিয়ে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় ভর্তি হন এবং তিনি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে আলেমিয়াত তথা একাডেমিক পড়াশোনা সমাপ্ত করেন। নদওয়াতুল উলামায় অধ্যয়নের কারণে তাঁর নামের শেষে নাদভী লেখা হয়। উল্লেখ্য, তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি তাহক্বীক্বী অধ্যয়নের দ্বারা আহলেহাদীছ হয়ে আহলেহাদীছ বিদ্বানদের উস্তাযরূপে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হন। আল-হামদুলিল্লাহ।
উস্তায : আল্লামা রঈস নাদভী রহিমাহুল্লাহ-এর উল্লেখযোগ্য উস্তাযদের মধ্য হতে সাইয়্যেদ আবুল হাসান নাদভী, মুনশী মঈনুল হক্ব, মাওলানা আব্বাস নাদভী, মাওলানা আব্দুল গাফফার নাদভী, মাওলানা আসবাত সাহেব প্রমুখ রহিমাহুমুল্লাহ।
ছাত্র : তাঁর অসংখ্য ছাত্রের মধ্য হতে ড. রেযাউল্লাহ, শায়েখ ছালাহুদ্দীন মাক্ববূল, শায়েখ ওয়াসিউল্লাহ মুহাম্মাদ আব্বাস (মক্কার মুদাররিস), শায়েখ উযায়ের শামস প্রমুখ রহিমাহুমুল্লাহ উল্লেখযোগ্য।
তাদরীসী খেদমত : ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ হতে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা হতে ফারেগ হওয়ার পর থেকে তিনি প্রথমে মাদরাসা বাদরিয়াতে দারস প্রদান শুরু করেন। অতঃপর তিনি জামি‘আহ সিরাজুল উলূম ঝান্ডানগর, নেপালে দায়িত্ব পালন করেন। এটির পরিচালনায় বিশ্ববিখ্যাত আলেমে দীন আল্লামা আব্দুর রঊফ ঝান্ডানগরী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন, যাকে খত্বীবুল ইসলাম এবং খত্বীবুল হিন্দ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। এরপর আল্লামা রঈস নাদভী জামি‘আহ সালাফিয়্যাহ আহমাদিয়া দারভাঙ্গায় শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি মাজাল্লাতুল হূদা নামক পত্রিকায় দীর্ঘ কলেবরের অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ হতে আমৃত্যু জামি‘আহ সালাফিয়্যাহতে শিক্ষকতা করে গিয়েছেন। সাথে সাথে গ্রন্থ প্রণয়ন, ফতওয়া প্রদান, অনুবাদ ইত্যাদি দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর ৫০ বছরের শিক্ষকতার জীবনে অসংখ্য দক্ষ আলেম তৈরি হয়েছিলেন।
রচনাবলি : তিনি একাধিক ভাষায় মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন— (১) কুরআনে ইয়াহূদীর বর্ণনা (আরবীতে ৪ খণ্ডে সমাপ্ত); ৫ম খণ্ড অর্ধেক সমাপ্ত করার পর পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায়। (২) তারীখে আহলেহাদীছ হিন্দ। (৩) সীরাতে আদম আলাইহিস সালাম। (৪) সীরাতে আল্লামা নাযীর আহমাদ আমলুবী রহমানী। ৫. আল-লামহাত (৫ খণ্ডে, বঙ্গানুবাদ চলমান); এটি সম্পূর্ণ করার পূর্বে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (৬) ইসলামে জুম‘আর ছালাতের বিধান। (৭) জানাযার মাসায়েল। (৮) হারিয়ে যাওয়া স্বামীর শারঈ বিধান। (৯) গায়ের মুক্বাল্লিদদের হাক্বীক্বত; এটি যামীর কা বুহরান বইয়ের শেষে যুক্ত করা হয়েছে। (১০) নবী আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছলাতের পদ্ধতি। (১১) তাছহীহুল আক্বায়েদ বি-ইবতালি শাওয়াহিদিশ শাহেদ। (১২) কাশফুল গুম্মাহ বি-সিরাজিল উম্মাহ।
সন্তানসন্ততি : তিনি দুটি বিবাহ করেছিলেন। প্রথম পক্ষের একটি সন্তান এবং দ্বিতীয় পক্ষের পাঁচজন কন্যা এবং একজন পুত্র সন্তান ছিল। যার নাম আব্দুল হক্ব।
মৃত্যু : আল্লামা রঈস নাদভী সাহেব ১৪৩০ হিজরী মোতাবেক ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ১০ই মে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন। আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। তার সকল খেদমতকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী রাখুন— আমীন!
তথ্যসূত্র :
১. তাছহীহুল আক্বায়েদ, পৃ. ১৬-২১। তাঁরই পুত্র আব্দুল হক্বের লিখনী হতে।
২. মাজমূআ মাক্বালাত পার সালাফী তাহক্বীক্বী জায়েযা, পৃ. ৫৫-৬১।
৩. আল-লামহাত, পৃ. ৬৭-৯২।