কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

প্রশ্ন (২): জনৈক হুযুর বলেছেন, বুখারীর কিছু রাবী আছে তারা নাকি শীয়া। তাই তারা বুখারীর হাদীছ মানে না। বিষয়টির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই।

উত্তর: কুরআন মাজীদের পরে পৃথিবীতে দ্বিতীয় বিশুদ্ধতম গ্রন্থ হলো ছহীহুল বুখারী এবং এ ব্যাপারে যুগের পর যুগ ধরে উলামায়ে কেরামের মাঝে ঐকমত্য সাব্যস্ত হয়েছে। তবে ছহীহুল বুখারীর বর্ণনাকারীদের মধ্যে বেশ কিছু বর্ণনাকারী আছেন যারা বিভিন্ন বিদআতী আক্বীদা লালনের অভিযোগে অভিযুক্ত বলে পূর্বাপর অনেক উলামায়ে কেরাম মন্তব্য করেছেন। হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ তার হাদয়ূস সারী গ্রন্থে ছহীহুল বুখারীর ৬৯ জন বর্ণনাকারীর ব্যাপারে আক্বীদার অভিযোগে অভিযুক্তের কথা উল্লেখ করেছেন এবং উক্ত বর্ণনাকারীদের বিশ্লেষণপূর্বক কিছু মানদণ্ড সাব্যস্ত হয়, যে মানদণ্ডের উপর নির্ভরশীল হয়ে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ বিদআতীদের থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। মানদণ্ডসমূহ নিম্নরূপ- ১. তাদের মধ্যে এমন কোনো বিদআত নেই, যা কুফরী বিদআত। ২. তাদের অধিকাংশই বিদআতের দিকে আহ্বানকারী ছিলেন না অথবা বিদআতের দিকে আহ্বানকারী থাকলেও পরবর্তীতে তওবা করেছেন। ৩. তাদের থেকে বর্ণিত অধিকাংশ হাদীছকে মুতাবাআত ও শাহেদ হাদীছ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ৪. তাদের অধিকাংশের ব্যাপারে আরোপিত অভিযোগ সঠিক নয়। সুতরাং ছহীহুল বুখারীর বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে আরোপিত এমন অভিযোগ অপ্রভাবনীয়। এমনকি ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ-এর উক্ত মানদণ্ডের আলোকে অনেক মুহাদ্দিছ হাদীছ বর্ণনা করেছেন। যেমন- ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ-এর ছাত্র ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রাহিমাহুমাল্লাহ যে মানদণ্ড গ্রহণ করেছিলেন এটি অসংখ্য ছাহাবী ও তাবেঈ ও তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছদের অভিমত। কেননা তাদের হাদীছকে ঢালাওভাবে পরিত্যাগ করলে ইলম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত এবং সুন্নাহ সংকীর্ণ হয়ে যেত। তাই কোনো বর্ণনাকারীর মাঝে ন্যায়পরায়ণতা ও হাদীছ সংরক্ষণের ব্যাপারে সমস্যা পরিলক্ষিত না হলে স্বল্প বিদআতের কারণে তার হাদীছকে মুহাদ্দিছরা পরিত্যাগ করেননি। আর সে সময়ে যারা শীয়া ছিলেন তারা বর্তমান শীয়াদের মতো এত ভয়ংকর শীয়া ছিলেন না, বরং তারা শুধুমাত্র আহলে বায়তকে অন্যান্য ছাহাবীদের উপরে মর্যাদার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাধান্য দিতেন আর বর্তমান শীয়ারা ছাহাবীদেরকে কাফের হিসেবে সাব্যস্ত করে। সুতরাং ছহীহুল বুখারীর হাদীছ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই; বরং যারা এ ধরনের অজুহাতে বুখারীর হাদীছকে প্রত্যাখান করতে চায়, তারা মূলত সুযোগ সন্ধানী।

প্রশ্নকারী :  মো. হামিদুল ইসলাম রূপম

হাতিবান্ধা, লালমনিরহাট।


Magazine