কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ভারত ও ইসরাঈল বনাম বাংলাদেশ ও ফিলিস্তীন

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বর্বর ইসরাঈল পুনরায় ফিলিস্তীনের গাযায় বিমান হামলা শুরু করেছে। একদিনেই প্রায় চার শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু নিহত হয়েছে। পবিত্র রামাযানের এই দিনেও গাযাবাসীকে শান্তির সাথে সাহারী, ইফতারী ও তারাবীর ছালাত আদায় করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনিতেই গত দেড় বছর যাবৎ বিমান হামলা চালিয়ে সমগ্র গাযাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষের মাথা গুজাবার কোনো ঠাঁই নাই। সবেমাত্র যুদ্ধবিরতিতে তারা নিজ নিজ ধ্বংসস্তূপে ফিরতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় নতুন করে বিমান হামলা এক প্রকার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। রামাযান মাসের এই হামলা পৃথিবীর সকল আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। দুঃখজনক হলেও সত্য পৃথিবী এই হামলাকে নির্বিকারে চেয়ে চেয়ে দেখছে। মুসলিম বিশ্বের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ!

একদিকে রামাযান মাসে গাযার যখন এই অবস্থা ঠিক তখনি ভারতের মুসলিমরাও ভালো নাই। হোলি খেলাকে কেন্দ্র করে উত্তর প্রদেশের অসংখ্য মসজিদকে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া, হোলিতে অংশগ্রহণ না করায় পিটিয়ে মুসলিম যুবককে হত্যা করাসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ভারত উপমহাদেশের অন্যতম সফল মোঘল শাসক যার ন্যায়নিষ্ঠা ও আমানতদারিতার কথা সমগ্র ভারতবর্ষ জানত সেই মহান শাসক বাদশাহ আলমগীরের কবর নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে অন্যান্য মোঘল শাসক নিজেদের কবরের জন্য বিশাল মাজার তৈরি করলেও বাদশাহ আলমগীর কঠোরভাবে নিষেধ করেছিলেন তার কবরের উপর যেন কোনো মাজার তৈরি না হয়। প্রায় ৩০০ বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও খুবই সাদামাটাভাবে খোলা আকাশের নিচে বাদশাহ আলমগীরের কবর রয়েছে। কোনো প্রকার যৌক্তিক কারণ ছাড়াই শুধু বিদ্বেষের কারণে একজন মুসলিমের কবরকে অসম্মান করা কখনোই উচিত নয়। বিজেপি সরকার বাদশাহ আলমগীরকে এতটাই ভয় পায় যে, যে শহরে বাদশাহ আলমগীর শুয়ে আছেন সেই শহরের নাম আওরঙ্গাবাদ থেকে সাম্ভাজীনগরে রূপান্তর করেছে। এখন তারা খুলাদাবাদে শুয়ে থাকা বাদশাহ আলমগীরের কবরকেও উচ্ছেদ করতে চায়। অন্যান্য মোঘল শাসকেরা দিল্লী বা আগ্রাকেন্দ্রিক বসবাস করলেও বাদশাহ আলমগীর তার জীবনের অধিকাংশ সময় মহারাষ্ট্রে অতিবাহিত করেছেন। রাজধানীও পরিবর্তন করেছেন। কেননা মহারাষ্ট্রের মারাঠাদের সাথে মোঘলদের যুদ্ধ লেগেই থাকত। তাই যেখান থেকে শত্রুতার ভয় বেশি ছিল বাদশাহ আলমগীর সেখানেই বসবাস করতেন। আজ সেই শত্রুতার আবেগকে ব্যবহার করে তাকে মহারাষ্ট্র থেকে উৎখাত করতে চাওয়া হচ্ছে। বাদশাহ আলমগীরের নামে একটি ন্যক্কারজনক মুভি বানিয়ে তাকে হিন্দু সম্প্রদায়ের শত্রু হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ বাদশাহ আলমগীর তার প্রজাদের প্রতি হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সহৃদয়বান ছিলেন। তিনি তার সুদীর্ঘ ৫০ বছরের শাসন কখনো সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ গ্রহণ করেননি। তার শাসন পরিষদে যেমন মুসলিমরা ছিল তেমনি হিন্দুরাও ছিল। এমনকি তার সেনাপ্রধানও অনেক সময় হিন্দু ছিল। তাকে মন্দির ভাঙার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় অথচ সেগুলো ধর্মীয় কারণে ভাঙা হয়নি বরং রাজনৈতিক বিদ্রোহের কারণে ভাঙা হয়েছিল। বরং শতাধিক মন্দিরে তার শাসনামলে সহযোগিতা পাঠিয়ে ফরমান পাঠিয়েছেন। যদি তিনি সত্যিই হিন্দুবিদ্বেষী হতেন আজ ভারতে একটা মন্দিরও অবশিষ্ট থাকত না (তথ্যসূত্র: Bishambhar Nath Pande, Aurangzeb: A Reinterpretation; Pattabhi Sitaramayya, Feathers And Stones)

শুধু তাই নয়, ভারত সরকার মুসলিমদের ঐতিহ্যের ধারক-বাহক ওয়াকফ বোর্ডকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। মুসলিমদের শত বাধা সত্ত্বেও ওয়াকফ বোর্ড আইনের সংশোধনী বিল আইনসভায় পাশ করা হয়। উক্ত সংশোধিত আইনটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যেন ওয়াকফ সম্পত্তিতে মুসলিমদের একক কোনো কর্তৃত্ব না থাকে বরং সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এই আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে এক দিনের মধ্যেই আল্লাহর নামে ওয়াকফ করা লক্ষ লক্ষ বিঘা সম্পত্তি হুমকির মুখে পড়েছে। বিপদের মুখোমুখি হয়েছে হাজারো মসজিদ ও মাদরাসা। খর্ব হচ্ছে মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা।

একদিকে যেখানে ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের এই করুণ অবস্থা সেখানে আমেরিকার গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতে বসে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে তার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন। যা অত্যন্ত আশ্চর্য হলেও চরম দ্বিচারিতা। আমরা এহেন বৈষম্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের জন্য সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, ইসরাঈল যেভাবে গাযা তৈরি করেছে ভারতও চায় বাংলাদেশকে দ্বিতীয় গাযা বানাতে। ইসরাঈলের জায়নিস্টরা যেমন সুপারিওরিটি থিউরিতে বিশ্বাস করে ঠিক তেমনি ব্রাহ্মণরাও সুপারিওরিটি থিউরিতে বিশ্বাস করে। তথা তারাই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক বাছাইকৃত। আর বাকীরা সবাই বংশগতভাবে তাদের চেয়ে নিম্ন স্তরের। মহান আল্লাহর ভাষ্য অনুযায়ী ইয়াহূদীরা ও মুশরিক হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি মুসলিমবিদ্বেষী হবে (আল-মায়েদা, ৫/৮২)

ফিলিস্তীন ভেঙে ইসরাঈলের তৈরি হওয়া আর মুসলিমদের অখণ্ড ভারত ভেঙে হিন্দুদের ভারত তৈরি হওয়ার সময়ও অনেকটা সমসাময়িক। একটা ১৯৪৭ আরেকটা ১৯৪৮। ভৌগোলিকভাবে গাযার মানুষের যেমন এক দিকে সমুদ্র বাকী সকল দিকে ইসরাঈল। ঠিক তেমনি আমাদেরও এক দিকে সমুদ্র আর বাকি সকল দিকে ভারত। সুতরাং বাংলাদেশের দ্বিতীয় গাযা হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এই আশঙ্কাকে সামনে রেখেই গত ১২ এপ্রিল, রোজ শনিবার, বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ‘মার্চ ফর গাযা’ অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ফিলিস্তীনে ইসরাঈলের হামলা দ্রুত বন্ধের পাশাপাশি, ভারতের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি উত্থাপন করা হয়। পাশাপাশি, সকল মুসলিম দেশকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জায়নবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়। মহান আল্লাহ ফিলিস্তীন ও ভারতে বসবাসরত মুসলিমদেরকে রক্ষা করুন! বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যাবতীয় ষড়যন্ত্র থেকে অক্ষুণ্ন রাখুন- আমীন! (প্র. স.)

Magazine