اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
৬
ফেব্রুয়ারি সোমবার ভোরে সিরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের নিকটে তুরস্কের
দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পরপর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে, রিখটার স্কেলে
যার মাত্রা ছিল ৭.৮। ১৯৩৯ সালের পর ৮৪ বছরে তুরস্কে এমন ভূমিকম্প হয়নি।
অন্তত এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এর কম্পন অনুভূত হয়। সিরিয়া অংশে
দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ অঞ্চল ভূমিকম্পে আক্রান্ত হয়। মাত্র এক
মিনিটের ভূমিকম্পে কয়েক হাজার ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যায়। সম্পাদকীয়টি লেখার
সময় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তুরস্ক-সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়ায়।
মহান আল্লাহ তার প্রত্যেকটি কর্ম ও আদেশ-নিষেধে প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞ। তিনি তার বান্দাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। এর মাধ্যমে তিনি বান্দাকে তার মূল দায়িত্বের ব্যাপারে স্মরণ করাতে চান এবং শিরক-বিদ‘আতসহ নানা পাপাচার সম্পর্কে সতর্ক করতে চান। আল্লাহ বলেন, ‘আমি কেবল ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যেই নিদর্শনসমূহ পাঠাই’ (আল-ইসরা, ১৭/৫৭)। মহান আল্লাহ আরো ঘোষণা করেন, ‘বলুন, তিনি তোমাদের উপর থেকে অথবা পদতল থেকে আযাব পাঠাতে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে এবং তোমাদের একদলকে অন্যদলের ভীতি আস্বাদন করাতে সক্ষম’ (আল-আন‘আম, ৬/৬৫)। আয়াতে পদতল থেকে আযাব পাঠানোর একটি অর্থ হচ্ছে, ‘ভূমিকম্প’ (শাওকানী, ফাতহুল কাদীর, ২/১৪৪)।
বর্তমান দিগ্বিদিক যে প্রচুর পরিমাণ ভূমিকম্প হচ্ছে, সেগুলো নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর নিদর্শন, যেগুলো দিয়ে তিনি তার বান্দাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন। ভূমিকম্প, ঝড়, বন্যা ইত্যাদি যতো দুর্যোগের মুখোমুখি মানুষ হচ্ছে, এর সবই তাদের শিরক, কুফর ও পাপাচারের ফল। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের উপর যে মুছীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন’ (আশ-শূরা, ৪২/৩০)। তিনি বিগত উম্মতদের ব্যাপারে বলেন, ‘অতঃপর তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ পাপের কারণে আমি পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমি পাথরকুচির ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে পাকড়াও করেছে বিকট আওয়াজ, কাউকে আবার মাটিতে দাবিয়ে দিয়েছি আর কাউকে পানিতে ডুবিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ এমন নন যে, তাদের উপর যুলম করবেন, বরং তারা নিজেরা নিজেদের উপর যুলম করতো’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৪০)। রাসূলুল্লাহ a বলেন, ‘প্রচুর পরিমাণ ভূমিকম্প না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সঙ্ঘটিত হবে না’ (বুখারী, হা/১০৩৬)। একবার মদীনায় ভূমিকম্প হলে উমার c লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা কত দ্রুত নতুন নতুন অপকর্মে করে লিপ্ত হয়ে গেলে! যদি পুনরায় ভূমিকম্প হয়, তাহলে তোমাদের সাথে এখানে আমি বসবাস করবো না’ (আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃ. ৪৭)। তবে কোনো এলাকায় আযাব এসে গেলে তা সেই এলাকার ভালো মানুষদেরকেও ছাড়ে না (দ্র. বুখারী, হা/৬৬৯১)।
‘অনেক আগে পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগে কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। টেকটোনিক প্লেটগুলো একে–অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর তখনো যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই মূলত ভূমিকম্প’। ভূমিকম্প সৃষ্টির এ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সাথে আমাদের উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা মোটেও সাংঘর্ষিক নয়। কারণ মহান আল্লাহ এসব পদ্ধতিতেই ভূমিকম্প দিয়ে থাকেন।
অতএব, দ্রুত আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনতো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করতো, তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম’ (আল-আ‘রাফ, ৭/৯৬)। তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে, বেশি বেশি তার যিকর-আযকার, দু‘আ ও ইস্তিগফার করতে হবে। সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে রাসূল a এরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে ধাবিত হবে’ (বুখারী, হা/১০৫৯)। গরীব-মিসকীন ও অন্যদের প্রতি সদয় হতে হবে। রাসূল a বলেন, ‘তোমরা দয়া করো, তাহলে তোমাদের উপর দয়া করা হবে’ (আহমাদ, হা/৬৫৪১)। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাহলে আল্লাহ বিপদ দূর করে দিবেন (দ্র. মুসলিম, হা/২৬৯৯)। ভূমিকম্পের আগের ও পরের সাধারণ করণীয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের হিফাযত করুন- আমীন!