কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষা কোন পথে, সংগ্রাম না-কি আল্লাহর উপর ভরসা?

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

বাংলাদেশের এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডটির প্রতি বিভিন্ন রাষ্ট্রের শ্যেনদৃষ্টি বরাবরই লক্ষণীয়। এই ভূখণ্ডকে তারা ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বজায় রাখার উদ্দেশ্য এশিয়ায় চীনের আধিপত্য নিয়ন্ত্রণে একে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা। মিয়ানমার ও বঙ্গোপসাগর সীমানা ব্যতীত বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত বেষ্টিত একটি দেশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও সীমান্ত নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারতের প্রভাব অনেক। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন, যুলুম, অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা জন্মভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ইএমসিআরপি-এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৯ লক্ষ ১৯ হাজার রহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজারের পাহাড়ে তাঁবুর নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এখানে ভারত বা চীন তাদেরকে সাহায্য করলে তারা নিজ জন্মভূমিতে ফিরে যেত পারত। কিন্তু তারা সে সাহায্য করছে?

দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা দাবি করে আসছে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নাই। তারা মনে করে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার, বাকস্বাধীনতা ও জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সেই দাবিতে তারা নির্বাচনের পূর্ব থেকেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তবে নির্বাচন হওয়ার পর দেশটি বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি বলে ব্রিফ করলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে পদক্ষেপ নেয়নি। বরং সরকারের সাথে কাজ করবে মর্মে সরকারকে জানিয়েছে। এই দেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার সরব অবস্থান আমাদেরকে শঙ্কিত করে। আমরা আশঙ্কা করি বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিভিন্ন বিদেশি মোড়লদের ক্ষমতার দ্বন্দের কেন্দ্রে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আরো ঘোলাটে হয়ে যায় যখন থেকে মায়নমারের বেশির ভাগ অঞ্চল বিদ্রোহীদের দখলে চলে যায়। ধারণা করা হয় জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের পশ্চিমারাই পেট্রনাইজ করছে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। তারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেছিল। ভারতের শীর্ষস্থানীয় রেমিটেন্স অর্জনের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ (এনটিভি অনলাইন নিউজ, ২৮ মে, ২০২২)। এখানে বাংলাদেশের আমাদের সাহায্য করার কথা। অথচ এখন ফারাক্কা ও তিস্তায় বাধ দিয়ে ভারত আমাদেরকে ন্যায্য পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দেশকে মরুভূমিতে পরিণত করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্দর ও করিডোর ব্যবহার করে যারপরনাই সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে ভারত। সুতরাং বাংলাদেশে ভারতও শুধু তার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশের স্বার্থ তারা কখনোই দেখেনি।

পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। ১০টিরও বেশি মেগা প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করে চলেছে। বাংলাদেশের বাজারের বড় অংশ চীনা পণ্যের দখলে (বিবিসি বাংলা, ১২ অক্টোবর, ২০১৬)। এক্ষেত্রে চীনের উচিত বাংলাদেশকে সাহায্য করা। কিন্তু তারা সাহায্যের পরিবর্তে বাংলাদেশকে অত্যধিক লোনের ফাঁদে ফেলে দিচ্ছে।

অপরদিকে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার উদ্দেশ্য বিপুল অঙ্কের অর্থ অর্জন করা। এর ফ্রান্স বাংলাদেশে এয়ার বাস থেকে ১০টি উড়োজাহাজ ও বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট বিক্রি করে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা পেতে চায়। এভাবে বাংলাদেশ একটি ঋণনির্ভর দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হলে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে। জনগণকে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার চেষ্টা করতে হবে। যদি তারা মনে করে কোনো বিদেশি রাষ্ট্র সহযোগিতা করবে তবে এই চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। তাদেরকে সততা ও ন্যায়পরায়ণতার চর্চা করতে হবে। ঈমান ও আমল করতে হবে তবে আর্থিক সচ্ছলতা আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জনপদবাসীরা যদি ঈমান আনত আর ভয় করত তবে আমি তাদের জন্য আসমান আর যমীনের কল্যাণ উন্মুক্ত করে দিতাম’ (আল-রাফ, ৭/৯৬)

তবে বাহ্যিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি মানুষের পাপে জড়িয়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও জলে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে’ (আর-রূম, ৩০/৪১)। অন্য আয়াতে বলেন, ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে’ (আশ-শূরা, ৪২/৩০)

এক্ষেত্রে এদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিককে সজাগ হতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়— আমাদের দেশর একটি অংশ যারা অর্থিকভাবে সমৃদ্ধ তারা মাতৃভূমিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে না। তারা দেশের অর্থ পাচার করে বিদেশে স্থায়ী ঠিকানা বানাচ্ছে। চিকিৎসাসেবা বা কেনাকাটা করা ইত্যাদি বাইরের দেশে করতে তারা ভালোবাসে। এ আচরণ বর্জন করে আমাদেরকে দেশপ্রেমিক হতে হবে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মভূমিকে খুব বেশি ভালবাসতেন। তিনি মদীনায় হিজরতের সময় জন্মভূমির জন্য আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূলকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘যিনি আপনার প্রতি কুরআনের বিধান পাঠিয়েছেন, তিনি অবশ্যই আপনাকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনবেন’ (আল-ক্বাছাছ, ২৮/৮৫)

মহান আল্লাহ মানুষকে চেষ্টা করার জন্য বলেছেন। মানুষ যদি চেষ্টা না করে তাহলে সে সফল হবে না। বাসায় বসে আল্লাহর যিকিরে মগ্ন থাকলে অর্থ উপার্জন সম্ভব হবে না। বিদেশি শক্তির উপর ভরসা করে বসে থাকার সুযোগ নাই। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে’ (আর-রা, ১৩/১১)। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চেষ্টা না করলে কখনো সফল হওয়া যাবে না। মানুষের উপর ভরসা করে কখনোই সফল হওয়া যাবে না। সৎ আমল এবং আল্লাহর যিকিরে মনোনিবেশ করতে হবে। বিভিন্ন সমস্যা ও বিপদ-আপদে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। যে ব্যক্তি ক্ষমা চাইতে থাকবে আল্লাহ তার জন্য ব্যাপক রিযিক্বের ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি বললাম তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র ধারায় (রহমতের) বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের অর্থসম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন। তিনি তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং নদীনালার প্রবাহ নিশ্চিত করবেন’ (আন-নূ, ৭১/১০-১২)

কুরআনের শিক্ষা ও ইসলামের আদর্শ অনুসরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তখন বিপদ তারা বিপদে পড়বে। পরকালকে ভুলে দুনিয়ার জীবনের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দেবে তখন তাদের জীবনে অভাব, অশান্তি ও শত্রুর প্রভাব বাড়তে থাকবে। আল্লাহ আমাদের আর্থিকভাবে সাবলম্বী ও আল্লাহর উপর ভরসাকারী বানিয়ে দাও। আমীন! ‍ছুম্মা আমীন! (স.)

Magazine