কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

নববর্ষ : আমাদের করণীয়

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

নববর্ষ : আমাদের করণীয়

মানুষ অন্ধকারের গোলক ধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অকল্যাণের পথে ছুটে চলেছে নিরন্তর। ঈমান ও আমলের চিন্তা নেই। পরকালের জবাবদিহিতার ভয় নেই, বরং অর্থহীন নববর্ষ উদযাপনে ব্যস্ত। বছর শেষে নতুন বছর আসে কিন্তু তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন আসে না। নববর্ষ পালন কতটা যৌক্তিক সে ভাবনা তাদের মধ্যে জাগ্রত হয় না! বরং অনাগত বছরের শুধুই ইতিবাচক স্বপ্ন দেখে। বিগত দিনের কৃত ভুলের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই, সংশোধন হওয়ার কোনো চিন্তা নেই; মুখে শুধু ‘শুভ নববর্ষ’!

নববর্ষে পৃথিবী নতুন রূপে সাজে, এই দিনে সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়, নতুন বর্ষের উদযাপন সুন্দর হলে পরবর্তী বছরটি সুখের হবে— এমন বিশ্বাস শিরক। কেননা সময়ের নিজের কোনো ক্ষমতা নেই; বরং তা আল্লাহর ইচ্ছায় আবর্তিত হয় (বুখারী, হা/৪৮২৬)। নববর্ষে ধরণি জীর্ণতা-শীর্ণতা থেকে মুক্তি পায় এই বিশ্বাসে ব্যর্থতা ও পরাজয়ের গ্লানি ভুলে বিজাতীয় ও দেশীয় সংস্কৃতির অনুসরণে নেচে-গেয়ে বরণ করতে হবে— এমন কথা ইসলামে নেই। বরং বিশেষ কোনো সময়কে শুভ বা অশুভ মনে করা কুসংস্কার। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সংক্রামক কোনো ব্যাধি নেই আর শুভ অশুভ কোনো লক্ষণ নেই’ (বুখারী, হা/৫৭৭৬)

এ দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে নববর্ষের বিশেষ কোনো তাৎপর্য নেই। এটি অন্য সব সাধারণ দিনের মতোই। এই কারণে ছাহাবায়ে কেরাম, খোলাফায়ে রাশেদীন ও পরবর্তী সময়ের কোনো বিদ্বান নববর্ষের উদযাপন করেননি। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্ম, হিজরত, নবুঅত ও মৃত্যদিবস পালন করেননি। এমনকি তিনি এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও প্রদান করেননি। ছাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম কেউই উদযাপন করেনি। বরং ইসলামে নতুন কোনো কর্ম বা বিশ্বাস আবিষ্কার করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করবে যা ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য’ (বুখারী, হা/২৬৯৭)। এ কারণে উমার রযিয়াল্লাহু আনহু হিজরী বর্ষের প্রচলন করলেও তার নববর্ষ উদযাপন করার প্রথা চালু করেননি।

তাছাড়া নববর্ষ উদযাপন মানে বেলেল্লাপনার সর্বনিম্ন সীমায় নেমে যাওয়ার নামান্তর। এই রাতে রাত বারোটার পর থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনে ব্যান্ড পার্টির গান-বাজানো, আতশবাজি ও পটকা ফুটিয়ে পরিবেশ নষ্ট করা, নাচ-গান করে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার মতো অসামাজিক জঘণ্য কাজগুলো সংঘটিত হয়, যা ইসলামে সুস্পষ্ট হারাম। বিশেষ করে নববর্ষ উদযাপনের অন্যতম মাধ্যম হলো কোনো নারীকে নগ্ন বা অর্ধনগ্ন করে উপস্থাপন করা; সৌন্দর্য প্রদর্শনের নামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুরুষের পাশে তাকে উপস্থিতি করে যেনা-ব্যভিচারকে সহজলভ্য করে ফেলা। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার পর পুরুষের উপর নারীর চাইতে অধিক ক্ষতিকারক কোনো ফেতনা রেখে যায়নি’ (বুখারী, হা/৫০৯৬)

বিধর্মীদের ইসলামের বিধান অস্বীকার করাতে ইসলামের কিছুই আসে যায় না। কিন্তু মুসলিমরা যখন তাদের এই অসার চিন্তা-চেতনা গ্রহণ করবে, তখন কী হবে? তখন তো তাদের উপর আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি নেমে আসবে। পদে পদে তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। সেই অবস্থায় আজ তারা এসেই পড়েছে! আল্লাহ ক্ষমা করুন। সত্য কথা বলতে মুসলিমদের একটা বড় অংশ দুনিয়ায় আয়-উন্নতি বুঝে; তারা এয়ো বুঝে যে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। দুনিয়ায় লাগামহীন চলার অবারিত সুযোগ আছে। কিন্তু এই জীবন কোনো মুসলিমের জন্য নয়। কেননা, তাকে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার প্রবৃত্তি আমার আনিত বিধানের অনুগত হয়’ (আস-সুন্নাহ, ইবনে আবী আসিম, হা/১৫; বায়হাক্বী, আল-মাদখাল ইলা সুনানে কুবরা, হা/২০৯)

কিন্তু মুসলিমদের চরম শত্রু শয়তান ও ইসলামবিদ্বেষীরা বুঝালো— ‘আবদ্ধ জীবন কতইনা কষ্টদায়ক! একমাত্র ধর্মান্ধ ও গোঁড়া ছাড়া কি কেউ এমন আবদ্ধ জীবনযাপন করতে চায়! কাজেই ধর্মন্ধতা ও গোঁড়ামি বর্জন করো আর সুখ-সমৃদ্ধি ও আনান্দভরা জীবন উপভোগে মেতে উঠো। আবদ্ধতার সীমানা ডিঙিয়ে মনের ইচ্ছা ও স্বপ্ন পূরণ করো’। দেখুন! কত বড় আহম্মক হলে এমন কথা বলে!? যেখানে জীবনই অনিশ্চিত, সেখানে স্বপ্ন, পরিকল্পনা আর বল্গাহীন বিলাসিতার আহ্বান?! আজ যে কত আল্লাহর বান্দা পথে ঘাটে ও সোশাল মিডিয়ায় happy new year বলছে- এগুলো ঐ সীমা অতিক্রমের অন্যতম বিষধর ফসল ছাড়া আর কিছু নয়। অথচ আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতকে কষ্টদায়ক বস্তু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে আর জাহান্নামকে প্রবৃত্তি ও লালসার চাদর দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে’ (বুখারীহা/৬৪৮৭)

আমরা যদি এ ক্ষেত্রে সজাগ হই, আমাদের পরিবার ও সন্তানের নিয়ন্ত্রণে কঠোর হই, তবে আরও বড় বড় ফেতনা সংগঠিত হওয়া থেকে রক্ষা পাব। আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করুন! আল্লাহ তাআলার আইন লঙ্ঘন করলে পার্থিব জীবনেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়বে আর পরকালে তো আরও ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে এর বেদনাদায়ক প্রভাব সামাজ ও রাষ্ট্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু আফসোস, আমাদের চেতনা করে ফিরে আসবে!? কবে আমরা সতর্ক হব!?

Magazine