اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
কথায় আছে ‘স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা বেশি কঠিন’। প্রায় দুই হাজার ছাত্র-জনতার লাশের উপর যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই স্বাধীনতাটি মূলত ছিল ভারতের উপনিবেশ হওয়া থেকে স্বাধীনতা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে, নতুন এই স্বাধীনতা ধীরে ধীরে হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে।
প্রথমত: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দুর্বল সরকার গঠন করা। বিপ্লবী সরকার গঠন না করে চলমান সংবিধান ও রাষ্ট্রপতি বহাল রেখে অন্তর্বর্তী নাম দিয়ে এক প্রকার দুর্বল সরকার গঠন করা হয়েছে।
দ্বিতীয়ত: বিপ্লব বেহাত হওয়া। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি জীবন দিয়েছে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। অথচ বর্তমান সরকারে তাদের তেমন কোনো স্টেক নাই। যে সমস্ত সুশীল সেক্যুলার নিজেদেরকে সমাজের এলিট ক্লাস মনে করে থাকে এবং যারা গত ১৬ বছর পতিত রেজিমের সফট পাওয়ার ছিল ছাত্র-জনতার এই অভ্যুত্থানের ক্রেডিটও তারা নিজেদের ঘরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। পূর্বের ন্যায় তারাই এখনো ক্ষমতার স্টেকহোল্ডার। নতুন উপদেষ্টা নিয়োগসহ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে এই শ্রেণিটিই ডিসিশন মেকিংয়ে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।
তৃতীয়ত: পতিত ফ্যাসিজমের দোসরদের বিভিন্ন পাল্টা বিপ্লবের চেষ্টা ও দেশকে অস্থিতিশীল করত ছাত্র-জনতার বিজয়কে ব্যর্থ করা। এই চেষ্টায় সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে দেখা দিয়েছে সংখ্যালঘু কার্ড। আর এই কার্ড হিসেবে মাঠে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে ইসকন। গত ২৫শে অক্টোবর লালদীঘির মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশের দিন নিউমার্কেটের স্বাধীনতা স্তম্ভে বাংলাদেশের পতাকার উপর গেরুয়া রঙের হিন্দুত্ববাদী পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়, যা এক প্রকার রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। আর এই সমস্ত ভয়ংকর দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসকন। ইসকনের মূল নাম হচ্ছে, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন)। এটি মূলত গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী একটি হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৬ সালে নিউইয়র্ক শহরে অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসকন বাহ্যিকভাবে একটি ধর্মীয় সংগঠন মনে হলেও প্রকৃত অর্থে তারা একটি উগ্রবাদী সংগঠন। বাংলাদেশের স্বাভাবিক সনাতনী হিন্দুদের সাথে তাদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। স্বাভাবিক সনাতনী হিন্দুরা আবহমান কাল থেকে এই দেশে মুসলিমদের সাথে সহাবস্থানের ঐতিহ্য ধারণ করে থাকে। অন্যদিকে ইসকনের মূল স্লোগানই হচ্ছে ‘নির্যবন করো আজই সকল ভুবন’। তথা আজকেই পৃথিবীকে যবন বা মুসলিম মুক্ত করো। ইসকন বিষয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলেন, ‘এই সংগঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে উসকানিমূলক ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করা, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি’ (বই: বাংলাদেশের গোয়েন্দাসংস্থার সাবেক প্রধানদের কথা- বাংলাদেশে ‘র’ পৃ. ১৭১)।
একবাক্যে আমরা বলতে পারি ইয়াহূদীদের জায়নিজম মতবাদের হিন্দু রূপ হচ্ছে ইসকন। জায়নিস্টরা যেমন হিটলারের হলোকাস্ট বিক্রি করে সমগ্র পৃথিবীর সহানুভূতি অর্জন করে ইসরাঈল গড়ে তুলেছে ঠিক তেমনি ইসকন হিন্দু হলোকাস্টের নাটক তৈরি করে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
আর ইসকনের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিধস বিজয়ের কিছু ভালোমন্দ ও শিক্ষণীয় দিক রয়েছে। সবচেয়ে শিক্ষণীয় দিক হচ্ছে, আমেরিকা তার গত কয়েকশ বছরের ইতিহাসে একবারের জন্যও একজনকেও নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাছাই করেনি। হিলারী ক্লিনটন থেকে কমলা হারিস। নেতৃত্বের আসনে নারীকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় আমেরিকা। আর একটি দেশের উন্নয়নের জন্য পুরুষ নেতৃত্ব খুবই প্রয়োজন যেমনটি আমাদের রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা রয়েছে।
যাহোক, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বিজয়ের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, ট্রাম্প ডানপন্থি হওয়ায় সে এল.জি.বি.টি.কিউ, সমকামিতা ও গর্ভপাতসহ বিভিন্ন পরিবারবিরোধী শয়তানী এজেন্ডার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে। তার সাথে আরও যুক্ত হয়েছে ইলন মাস্ক। ইলন মাস্ক এই শয়তানী এজেন্ডাগুলোকে ‘ওক ভাইরাস’ নামে নামকরণ করেছে। কেননা তার নিজের সন্তানই এল.জি.বি.টি এজেন্ডার শিকার। তার সন্তান ছেলে থেকে মেয়ে হওয়ার জন্য নিজের হরমোনাল পরিবর্তনের বিষয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়ায় ইলন মাস্ক সন্তানের জীবন বাঁচাতে তাকে ট্রান্স হওয়ার অপারেশনের অনুমতি প্রদান করেন এবং তিনি অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে নিজের জীবিত সন্তানকে মৃত হিসেবে ঘোষণা করেন। তারপর থেকে তিনি এই এজেন্ডাগুলোর বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সেই লক্ষ্যে তিনি টুইটারকে ক্রয় করে নেন এবং একই লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে তার নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
আর ট্রাম্পের বিজয়ের সবচেয়ে মন্দ দিক হচ্ছে, যেহেতু ট্রাম্প ডানপন্থি সেহেতু সে কট্টর ডানপন্থিদেরকে পছন্দ করবে। সেই সূত্রে কট্টর হিন্দুত্ববাদী ইসকনও তার পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা অস্বাভাবিক নয়। বরং বাস্তবতাও কিছুটা সেই দিকেই ইঙ্গিত বহন করে। নির্বাচনের পূর্বেই ট্রাম্প বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে এক্স প্লাটফর্মে তার সতর্কবার্তা তুলে ধরেছেন। অথচ বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নির্যাতন নাই। নির্বাচনের পরও এটির ধারাবাহিকতা থাকলে সংখ্যালঘু কার্ড বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
অতএব সচেতন ছাত্রসমাজ এবং বর্তমান সরকারকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও চীনকে সাথে নিয়ে ভিন্ন সামরিক ও অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করতে হবে। সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। যাতে করে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত না হয়। পাশাপাশি ভারতের হেজিমোনিকে সাপোর্ট করে এমন সফট পাওয়ারকে বর্তমান সরকারে কোনো স্টেক দেওয়া উচিত হবে না। সুশীল সেক্যুলারদের কবল থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। এই অঞ্চলের মুসলিমদেরকে বুঝতে হবে সমগ্র বিশ্ব কট্টর ডানপন্থার দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। একদিকে কট্টর ইয়াহূদী অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী দেশে কট্টর হিন্দু এবং ট্রাম্প ও ইউরোপের কিছু দেশের হাত ধরে কট্টর খ্রিষ্টানও দেখতে পারে বিশ্ব। সেহেতু মুসলিমদের স্বতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদেরকেও কট্টর মুসলিম হতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দিন এবং সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন! (প্র. স.)