اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সেরা সৃষ্টিজীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের প্রকৃতি এমন যে, তাকে আদর্শবান করে গড়ে তোলার জন্য অবশ্যই গাইডলাইন দরকার। এই গাইড লাইন দিয়ে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী-রাসূলদের পাঠিয়েছেন। সন্তানকে অনুপম আদর্শ ও বিশুদ্ধ নৈতিক চরিত্রের উপর গড়ে তোলা পিতা-মাতার প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু পিতা-মাতা যখন তাঁদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না অর্থাৎ সন্তানের উপর তাঁদের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ থাকে না এবং তাদের গঠন ও দিকনির্দেশনায় শিথিলতা প্রদর্শন করেন, তখন তারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে যায়। সুতরাং একটি সন্তানের সুষ্ঠু বিকাশ এবং তার শারীরিক ও মানসিক গঠনে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম।
অধিপত্যবাদের চেতনা হিন্দু পণ্ডিতদের শিরা-উপশিরায় প্রবাহিত। অখণ্ড ভারত মাতার বিশ্বাসে তারা ১৯৪৭ সালের পূর্বের ভারতকে তাদের আবাসভূমি মনে করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে তাদের সাহায্যের উদ্দেশ্য ছিল চিরশত্রু প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে খণ্ড-বিখণ্ড করা। সম্পদ ও কর্তৃত্বের অভিজাত্যে দাম্ভিক হিন্দুরা মুসলিমদেরকে দাস মনে করে। এই জন্য তাদের নেতৃস্থানীদের মুখে মুসলিমদেরকে উইপোকা নামের ডাক শুনতে হয়। (মোদি সরকারের আমলে মুসলিমরা কেন ভবিষৎ নিয়ে আতঙ্কিত: ১৬ মে ২০১৯) উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের শিশুদের ধর্মীয় মূল্যবোধ ধ্বংস করতে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন স্তরে ইসলামবিদ্বেষী গল্প, ছড়া, কবিতা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করতে তাদের নানামুখী কৌশল অব্যাহত আছে। তারা বিভিন্ন নদনদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেশটিকে মরুভূমিতে পরিণত করেছে। প্রতিনিয়ত তারা সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করে চলেছে। বাংলাদেশের উপর দিয়ে করিডোর সুবিধা নিয়ে তারা তাদের পরিবহণ খরচ সাশ্রয় করেছে কিন্তু বিনিময়ে কিছুই দেয়নি। তাদের রপ্তানি বাণিজ্যের তালিকায় বাংলাদেশর অবস্থান চতুর্থ। বাংলাদেশ ও ভারতের বাণিজ্য ঘাটতিটির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার (দৈনিক প্রথম আলো, ১৩ আগস্ট, ২০২৩)। আদানি গ্রুপের বিদুৎ ক্রয়ের অসম চুক্তির জালে তারা বাংলাদেশকে আটকে রেখেছে। এভাবে বাংলাদেশের উপর ভারতের বহুমুখী আগ্রাসন চলমান আছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর তাদের গোয়েন্দা নজরদারি আছে। আরএসএস এর সহযোগী সংগঠন ইসকন সনাতন ধর্মের আদর্শ ও শিক্ষা প্রচারে দেশব্যাপী তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ উন্মুক্ত রাখতে তাদের কার্যক্রম চলমান আছে। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতির চর্চা করার কথা, সেখানে তারা ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা কর্তা ব্যক্তির সহযোগিতায় অন্য ধর্মের আদর্শ ও সংস্কৃতি ইচ্ছায়/অনিচ্ছায় চর্চা করছে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা মুসলিম হলেও তাদের অধিকাংশের চরিত্রে ধর্মহীনতা ও ইসলামবিদ্বেষ বিরাজ। লাম্পট্য ও চরিত্রহীনতার কারণে ছাত্রীদের আন্দলোনের মুখে তাদের পদত্যাগে বাধ্য হওয়া- এখন সচরাচর।
পরিবার নিয়ন্ত্রণ মুক্ত আধুনিকমনা নামধারী মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণকারী কিশোর ও তরুণরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আয়োজিত পূজা উদযাপন অনুষ্ঠানে কিংবা হোলি নামক রং খেলায় অংশগ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় আদর্শ ও চেতনা ধারণের বিষয়টি একটি অপেক্ষিক বিষয় মনে করে। এরূপ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকে তারা আনন্দ উপভোগের অন্যতম মাধ্যম মনে করে। আর এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে কর্মরত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এদেরকে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ জানায়। ফলে এরূপ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ থেকে এড়িয়ে যাওয়ার তাদের সুযোগ কমে যায়।
দেশের নিরাপত্তা ও মৌলবাদ থেকে রক্ষার নামে দেশের কিছু মানুষ জঙ্গি জঙ্গি খেলা খেলায় লিপ্ত। ইসলামের নামে গড়ে উঠা কোনো সংগঠনের ট্যাগ এবং স্বাধীনতাবিরোধীর তকমা লাগিয়ে বিভিন্নভাবে ইসলামী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির নামে জনগণকে দুই ভাগে ভাগ করে একটিকে প্রগতিবাদী অসাম্প্রদায়িক এবং অন্যটিকে রাজাকার ও মৌলবাদী বলা হচ্ছে। অসাম্প্রদায়িকতার নামে অন্য ধর্মের যে-কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করা হচ্ছে আর ইসলামকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি না নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আরবী বিভাগের একদল শিক্ষার্থী রামাযানকে স্বাগত জানিয়ে কুরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাসম্বলিত কারণ দর্শানোর নোটিশ ডীন কর্তৃক চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়।
জঙ্গি বা মৌলবাদের তকমা লাগিয়ে কল্যাণকর কাজে সংঘবদ্ধ ছাত্রসমাজের নিরাপত্তা আদায়ের অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। বুয়েটে আন্দলনরত শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যারা আছে তাদের শিবির ও হিযবুত তাহরীরের প্রাক্তন নেতা বলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করছে। অথচ পানির ন্যায্য হিসসা না পাওয়ার কথা লিখার কারণে তাদের সংগঠনের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আবরার ফাহাদের মতো মেধাবী ছাত্রকে প্রাণ দিতে হয়েছে। আর্থিক অপচয় রোধের নামে এই রামাযানে ইফতার মাহফিল বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, অথচ রাষ্ট্রীয় যাবতীয় কার্যক্রম চলছে। যেখানে হিন্দু ধর্মের পূজা উদযাপন ও আয়োজনে সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধর্মীয় তহবিল থেকে অর্থ দিয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপনে সহায়তা করা হয়। সেখানে অর্থসংকটের দোহাই দিয়ে ইফতার মাহফিলের মতো মহতী কাজকে বাধাগ্রস্ত করা কতটা সমীচীন তা ভাববার বিষয়।
যখন হিন্দু ধর্মে পূজার সময় হয় তখন হাজার হাজার পূজামণ্ডপ প্রস্তুত হয়। এ সকল মণ্ডপে বহু মুসলিম নেতা-নেত্রীরা পূজা দেখতে যান। অথচ কয়েক বছর আগেও দৃশ্যপট এমন ছিল না। এদেশের হিন্দুগণ তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন বহু বছর থেকে। তখন ঢাকেশ্বরী ও নির্দিষ্ট কিছু মন্দিরে তাদের ধর্ম পালন সীমাবদ্ধ ছিল। তখন মুসলিম কিংবা নেতাদের উপস্থিতি তেমন একটা দেখা যেত না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তাদের প্রচার-প্রচারণা যেভাবে দেখা যায়, তাতে মনে হয় এটি একটি হিন্দু-প্রধান দেশ।
পূজার উৎসবে উপস্থিত হয়ে জাতীয় নেতারা এমন নীতিবাক্য দেন, এক পর্যায়ে তারা বলেন- ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আর কোনো কোনো নেতার মুখে শোনা যায়, ধর্ম সম্প্রদায়ের উৎসব সকলের। পূজায় আনন্দ-উল্লাস ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক হয়ে থাকে। তাই এখানে উৎসব-আনন্দ এবং পূজার বিষয়কে পৃথক করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। যেমন মুসলিমরা ঈদুল ফিতর ও আযহায় ছালাত এবং কুরবানী করে আনন্দ-উৎসব করে থাকে। তাই ঈদুল ফিতর ও আযহার আনন্দকে ঈদের ছালাত এবং কুরবানী থেকে আলাদা করে দেখা যায় না। ইসলামের দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি ঈদের ছালাত ও কুরবানী করে না তার ঈদুল আযহার আনন্দ করার অধিকার নেই। কাজেই ধর্মীয় কাজগুলো মুসলিমদের হলেও উৎসব সকলের এমন কথা বলা যাবে না।
এই গরু নিয়ে কত করুণ কাণ্ডই না ঘটে যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী হিন্দু-প্রধান দেশে। সেখানে সরকারি দলের লোকদের হাতে নিহত, নিগৃহীত হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজ। শুধু গরুর গোশত খাওয়া বা বহনের অপরাধে একজন মুসলিমকে হত্যা করা হচ্ছে বা শূকরের গোশত খাওয়ানো হচ্ছে; অথচ মুসলিমরা গরু যবেহ করে আনন্দ করে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মুসলিমদের আনন্দের উৎসব হিন্দুদের জন্য আনন্দের নয়। অপরদিকে তাদের আনন্দের উৎসব আমাদের জন্য আনন্দের হতে পারে না। এতে এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, এক ধর্মাবলম্বীদের ধর্মভিত্তিক উৎসব অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব হতে পারে না।
উৎসব আর শারঈ আদর্শকে আলাদা করার সুযোগ নাই। ইসলামের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও আযহার প্রচলনের পটভূমির প্রতি নজর দিলে দেখা যায় যে, ইসলামর পূর্বে মদীনায় নওরোজ ও মেহেরজান নামে দুটি উৎসব চালু ছিল। উক্ত উৎসবদ্বয় পালনের অনুমতি চাওয়া হলে, অনুমতি না দিয়ে আল্লাহর রাসূল ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নামে বিকল্প দুটি উৎসবের প্রচলন করেন। মুহাররম মাসের ১০ তারিখের ছিয়াম ইয়াহূদীদের সাথে যেন সাদৃশ্যপূর্ণ না হয়ে যায়, সেজন্য তিনি এর আগে বা পরে একটি ছিয়াম রাখতে বলেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ধর্ম বা অনুসারীদের সাথে সাদৃশ্য বা সামঞ্জস্য হওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ হাদীছে বারবার তাগাদা প্রদান করা হয়েছে।
তাছাড়া, ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে পূজার বিষয়টি বিবেচনা করলে কোনোভাবেই পূজা কার্যক্রমের সাথে একজন মুসলিমের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নাই। রাসূলে কারীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুর যুগে মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেই একত্ববাদের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন। আর সকল প্রকারের মূর্তিপূজাকে শিরক আখ্যা দিয়ে তা থেকে বেঁচে থাকার তাগিদ দিয়েছেন। সুতরাং আক্বীদাগত দিক থেকে একজন তৌহিদী মুসলিমের কোনোভাবেই মূর্তিপূজা সমর্থন করা এবং উৎসবে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
তবে ইসলামে অন্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে সহাবস্থান এবং তাদের আরাধনা-উপাসনা নির্বিঘে পালন করতে বাধা প্রদান জায়েয নাই। সুতরাং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্ম পালনের অধিকার এবং ধর্মীয় আচার-আচরণকে এক করে দেখা যৌক্তিক নয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব বিষয় এবং এ উপলক্ষ্যে উৎসব ও আনন্দও তাদের নিজস্ব। কিন্তু অপর ধর্মের আচার এবং ধর্মভিত্তিক উৎসবকে নিজের উৎসব মনে করে উক্ত উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। মূর্তিপূজাসংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান-উৎসবে কোনো মুসলিমের পক্ষে এভাবে অংশগ্রহণ করা ইসলামের শিক্ষা এবং চেতনাবিরোধী। আল্লাহ বুঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! (স.)