কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

ইয়াহূদীদের বিশ্বাসঘাতকতা এবং আমাদের করণীয়

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

ইয়াহূদী এমন একটি জাতি, বিশ্বাসঘাতকতা ও সীমালঙ্ঘন যাদের মজ্জাগত অভ্যাস। হিংসা-বিদ্বেষ, বর্বরতা-পাশবিকতা, হত্যা-ধর্ষণ ইত্যাদি তাদের চরিত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ফলে তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা, অভিশাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর প্রতিশ্রুতি কিংবা মানুষের প্রতিশ্রুতি ব্যতীত ওরা যেখানেই অবস্থান করেছে সেখানেই তাদের ওপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ওরা উপার্জন করেছে আল্লাহর গযব। ওদের উপর চাপানো হয়েছে অভাব। তা এজন্য যে, ওরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে অনবরত অস্বীকার করেছে এবং নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে…’ (আলে ইমরান, ৩/১১২)

ফিলিস্তীনিদের পবিত্র ভূমি বারবার শত্রুর আক্রমণের স্বীকার হয়। জন্মভূমি রক্ষার জন্য এক শতাব্দী ধরে অর্থ ও জীবন দিয়ে তারা সংগ্রাম করছে। চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পশ্চিমা শক্তি তাদের বিরুদ্ধে ইয়াহূদীদেরকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য করে যাচ্ছে। সম্প্রতি হামাসের হামলার প্রেক্ষিতে তারা যে হামলা চালায় তা বর্বরতা ও অমানবিকতার সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে। শরণার্থীশিবির, মসজিদ, হাসপাতাল, মুমূর্ষু রোগী কেউই তাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়নি। পানি, বিদুৎ ও ইনটারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং অবিরাম হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। হামাস নির্মূলের নামে নির্বিচারে ফিলিস্তীনিদেরকে তারা হত্যা করে চলেছে। শান্তি স্থাপনের নামে ক্রমাগত প্রতারণা করা তাদের চরিত্র। তারা বারবার চুক্তি করে এবং শর্ত ভঙ্গ করে। তাদের প্রতারণা ও অঙ্গীকার ভঙ্গের পরিসংখ্যান বর্ণনা করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতারণা ও চুক্তি ভঙ্গ সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, ‘যখনই তাদের একটি দল অঙ্গীকার করে, তখনই তাদের আরেক দল তা ভঙ্গ করে বরং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে না’ (আল-বাক্বারা, ২/১০০)

যুদ্ধ ব্যতীত তাদের প্রতিহত করার কোনো উপায় নেই। নিশ্চিত পরাজয় ব্যতীত কোনোভাবেই তারা সমঝোতার পথে আসবে না। আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোনো একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোনো একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয়, অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না’ (আল-বাক্বারা, ২/২১৬)। জাতির অনেক লোক আছে যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে সত্য এবং জাতিকে বিক্রি করে। আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির ইলাহী আদেশকে পরিত্যাগ করে। ইসলাম দ্বারা সম্মানিত হওয়ার পথকে বর্জন করে পশ্চিমা শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অনতিদূরে সকল বিজাতি তোমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে, যেমন ভোজনকারীরা ভোজপাত্রে একত্রিত হয়। একজন বলল, আমরা কি তখন সংখ্যায় কম থাকব, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, বরং তখন তোমরা সংখ্যায় অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা হবে স্রোততাড়িত আবর্জনার ন্যায়। আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের বক্ষ থেকে তোমাদের প্রতি ভীতি তুলে নেবেন এবং তোমাদের হৃদয়ে দুর্বলতা সঞ্চার করবেন। একজন বলল, হে আল্লাহর রাসূল! দুর্বলতা কী? তিনি বললেন, দুনিয়াকে ভালোবাসা এবং মরতে না চাওয়া (আবূ দাঊদ, হা/৪২৯৭)

প্রত্যেক মুসলিমের তার অবস্থা পর্যালোচনা এবং সংস্কার করা প্রয়োজন। কেননা, আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে (আর রা‘দ, ১৩/১১)। মনের মধ্যে যদি কাপুরুষতা, চরম দরিদ্রতা থাকে এবং জাতীয় সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব খ্রিষ্টানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে না। তাছাড়া শান্তির প্রত্যাশা কিংবা সামান্য মূল্যের বিনিময়ে পবিত্রভূমি বিক্রি করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা সামান্য পরিমাণের বিনিময়ে নিজেদের বিক্রয় করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দিবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর লাঞ্ছনা ও অপমান চাপিয়ে দিবেন। তোমরা তোমাদের দ্বীনে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদেরকে এই অপমান থেকে মুক্তি দিবেন না’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৪৬২)। যদি আল্লাহকে ভয় করা হয় এবং কুরআনের বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, তবে আল্লাহ শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় দান করবেন। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা এবং সংঘাত ও বিচ্ছিন্নতা পথ পরিহার করা বিজয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। তাছাড়া সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ বিজয়ের অন্যতম উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তবে তিনি তোমাদের বিজয় দান করবেন এবং তোমাদের দৃঢ় পদক্ষেপের ক্ষমতা দান করবেন’ (মুহাম্মাদ, ৪৭/৭)

আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাঁর দ্বীন এবং মুমিন বান্দাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি অবশ্যই আবশ্যক করেছি যে, আমি এবং আমার রাসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হবেন। নিশ্চয় তিনি শক্তিধর পরাক্রমশালী। তিনি আরও বলেন, আমি সাহায্য করব রাসূলগণকে, ইহকালে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে ও সাক্ষীদের দণ্ডায়মান হওয়ার দিন’ (গাফির, ৪০/৫১)। ‘হে রাসূল! আপনি কাফেরদের বলুন, তোমরা শীঘ্রই পরাজিত হবে এবং জাহান্নামে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। সেটা কতই না নিকৃষ্ট আবাসস্থল!’ (আল ইমরান, ৩/১২)

সুতরাং মুসলিমদের ভবিষৎ সাফল্য নিশ্চিত যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। উবাই ইবনু কা‘ব রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘এই জাতিকে স্বাচ্ছন্দ্য, বিজয় ও ক্ষমতায়নের সুসংবাদ দাও। অতএব, তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি দুনিয়ার জন্য পরকালের কাজ করবে, সে আখেরাতে কিছুই পাবে না’ (আহমাদ, হা/২১২২৩; ছহীহ জামে‘ ছগীর, হা/২৮২৫)। ফিলিস্তীন অত্যন্ত মূল্যবান এবং খুব তাৎপর্যপূর্ণ ভূমি। দখলদারদের হাতে তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেওয়ার সুযোগ নেই। ফিলিস্তীনের সাথে ইসলামের সম্পর্ক কখনও বিচ্ছিন্ন হবার নয়। এটি কেবল ফিলিস্তীনি বা আরবদের ভূমি নয়, বরং এটি সব সময় মুসলিমদের ভূমি। কুরআন-হাদীছের শিক্ষার অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো উপায়ে বিজয় অর্জন সম্ভব হবে না। এ শিক্ষা ব্যতীত যেকোনো উপায় আল্লাহর পক্ষ থেকে বিজয়ের আগমন বাধাগ্রস্ত করে। যেকোনো বাধাকে তুচ্ছ মনে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া পশ্চাদপদতার চেয়ে অনেক উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হলো, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্য তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধরো, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প’ (আত-তওবা, ৯/৩৮)

মুসলিম জাতির দুনিয়াবী কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভের সর্বোত্তম মাধ্যম জিহাদ। জিহাদ এই জাতির উপর ফরয করা হয়েছে। ইসলামের এই ফরয বিধানকে উপেক্ষা করে বিজয় আসতে পারে না। কাপুরুষতার পথ পরিহার করে সাহসী জীবনই হচ্ছে একজন মুমিনের প্রকৃত আদর্শ। আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস এবং সর্বদা সৎআমল করতে দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়া তার নেশা। এরূপ ঈমান ও সংগ্রামী চেতনা থাকলে আল্লাহ পক্ষ থেকে বিজয় আসা নিশ্চিত হবে। আল্লাহ মুসলিমদেরকে এটা বোঝার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন! (স.)

Magazine