اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ
প্রাচীনকাল থেকে বহু ফেরকার উর্বরভূমি ভারত উপমহাদেশ। এখানে কত যে দল-মত-ফেরকার জন্ম হয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করা মুশকিল। কথিত ‘সুন্নী’ জামাআত সেসবের অন্যতম। আহমাদ রেযা খান ওরফে ‘আ‘লা হযরত’ (১৮৫৬-১৯২১ খ্রি./১২৭২-১৩৪০ হি.)-এর হাত ধরে ভারতের উত্তর প্রদেশের ‘ব্রেলী’তে ব্রিটিশ আমলে এ ফেরকার জন্ম হয়। মূলত ভারত-পাকিস্তানেই এদের সংখ্যাধিক্য। অবশ্য বাংলাদেশেও এদের অনুসারীর সংখ্যা কম নয়। ইউরোপীয় দেশসমূহেও তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, মরিশাসসহ আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে তাদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদেরকে তাদের সামনে খাঁটি মুসলিম হিসেবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে সর্বজন গৃহীত দু’টি পবিত্র নাম ‘সুন্নী’ ও ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ নাম দু’টি তারা ব্যবহার করে। ব্রেলভী নামে তারা সমধিক পরিচিত। রেজভী, আশেকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামেও তারা পরিচিত। এদের বর্তমান নেতা আন-নাওয়ারীর নামানুসারে এদেরকে জামাআতে নাওয়ারীও বলা হয়। বিশালাকার সবুজ পাগড়ি এদের প্রতীক। নানা রঙের ঝলমলে নকশাদার পোশাক পরতে দেখা যায় তাদের ধর্মগুরুদের। বর্তমানে পাকিস্তান হচ্ছে তাদের মূল কেন্দ্র। ভারতের মুম্বাইয়ের ‘রেযা একাডেমী’ তাদের প্রধান কেন্দ্র। লন্ডনে তাদের ‘বৃটিশ মুসলিম ফোরাম’ ও ‘ওয়ার্ল্ড ইসলামিক মিশন’ নামে দু’টি সংগঠন এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ইমাম আহমাদ রেযা একাডেমী’ নামক একটি দাওয়াতী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া ‘দাওয়াতে ইসলামী’ এবং ‘সুন্নী দাওয়াতে ইসলামী’ নামক দু’টি আন্তর্জাতিক দাওয়াতী মিশন তারা পরিচালনা করে। এদের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা সত্ত্বেও চূড়ান্তভাবে যারা বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হয়েছে, তাদের মধ্যে এই সুন্নী ফেরকা অন্যতম। শীআ ও ছূফীদের সাথে এদের বেজায় মিল রয়েছে; বরং তারা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মীলাদ, ক্বিয়াম, ওরস, জশনে জুলূস, মাযারপূজা, কবরপূজা, পীরপূজা, শিরক, কুফরের মতো জঘন্য কর্মকাণ্ড ঘটানো ও জিইয়ে রাখার মূল কারিগর এরাই। বাংলাদেশের খানকা, মাযারগুলো মূলত এদেরই মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় চলে। যেখানে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন, তাঁকে কেবল আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলার আদেশ করেছেন (বুখারী, হা/৩৪৪৫), সেখানে ব্রেলভীরা তাঁকে নিয়ে বাড়াবাড়ির খেলায় মেতেছে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তার পরিবার-পরিজন ও ওলি-আওলিয়ার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘনই তাদের মূলমন্ত্র। এরা একদিকে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ব্যাপারে চরম বাড়াবাড়ি করে তাঁকে আল্লাহর সমান মর্যাদা দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখায়। অপরদিকে রাসূলপ্রেমিক সেজে তাঁর সম্মানে মুখরোচক কুফরী স্লোগান ও গীতি-কবিতা গেয়ে সুন্নাতকে জবাই করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু নন, বরং তাঁর সাথে ওলী-আওলিয়াও দুনিয়া পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে তারা মনে করে। তাদের মতে, রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাযির-নাযির, গায়েবজান্তা। ফলে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েয। তারা ঈদে মীলাদুন্নবীকে সবচেয়ে বড় ঈদ মনে করে এবং মহাধুমধামে জশনে জুলূসের আয়োজন করে। তারাই ওলী-আওলিয়ার মাযারে কথিত ‘ওরস শরীফ’ পালন করে, যেখানে নানা স্টাইলে হরেক রকমের যিকিরের সমারোহ দেখা যায়। এমনকি বাদ্যযন্ত্র, নাচ-গানও সেখানে চলে হরদম, নারী-পুরুষেরর ফ্রি মিক্সিং তো রয়েছেই। কাফের ফতওয়া দেওয়া তাদের নিকট ডালভাত। এরকম কত যে শিরকী, কুফরী ও বিদআতী আক্বীদা-আমলের সাথে তারা জড়িত, তার হিসাব দেওয়া মুশকিল।
অনলাইন-অফলাইন, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট বিভিন্ন মিডিয়ায় তারা তাদের ছূফীবাদী ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস প্রচারের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরা ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থাপনা ভরে ফেলেছে নানা স্লোগান সম্বলিত লাল দেওয়াল লেখনি দিয়ে। শীত মৌসুমে তারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা খানকা-মাযারে ‘ওরস শরীফ’, ‘সুন্নী সমাবেশ’সহ বিভিন্ন সমাবেশের আয়োজন করে এবং রাসূলপ্রেমের নামে শিরক, বিদআত ও কুফর ছড়ায়।
এই বিভ্রান্ত দল ও এদের ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে নিজেদের হেফাযতে রাখা এবং সাধারণ জনগণকে এদের খপ্পর থেকে রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। অতএব, সাবধান! বাহ্যিক লেবাস ও মুখরোচক স্লোগানে কেউ প্রতারিত হবেন না। মহান আল্লাহ আমাদেরকে আমরণ বিশুদ্ধ ঈমান ও আমলের উপর ক্বায়েম ও দায়েম রাখুন- আমীন!