কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

নারী সংস্কার না ধর্ম, সমাজ ও পরিবার বিনাশের ষড়যন্ত্র?

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

নারী সংস্কার না ধর্ম, সমাজ ও পরিবার বিনাশের ষড়যন্ত্র?

বাংলাদেশ, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে এটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা। ২০২৪-এর জুলাই আন্দোলনে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ জীবন দিয়েছে। দীর্ঘ এ পথপরিক্রমায় জনগণের আশা ছিল যে, বর্তমান সরকারের সংস্কার কার্যক্রম দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর নতুন সরকার গঠিত হলেও এখনো কোনো গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হয়নি।

সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের পেশ করা কিছু প্রস্তাবনা জনমনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাস ও সামাজিক কাঠামোর বিপরীতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:

(১) ‘ধর্ম নারীর প্রতি বৈষম্যের মূল কারণ’ (প্রতিবেদন, পৃ. ১১)। —ধর্মকে নারীর অধিকারহরণের মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, অথচ ইসলাম ধর্মই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম নারীর সকল অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। UDHR Article 18 ও বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী: ‘প্রত্যেক নাগরিকের নিজ ধর্মানুযায়ী জীবনযাপনের পূর্ণ অধিকার রয়েছে’। অতএব, ধর্মীয় পারিবারিক আইন অনুযায়ী জীবনযাপন করতে না পারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

(২) ‘যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইনে একে স্বীকৃতি দেওয়া’ (প্রতিবেদন, পৃ. ৩৭)। —সমাজে নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে পতিতাবৃত্তিকে বৈধতা প্রদানের মাধ্যমে নারীদেরকে পণ্যে পরিণত করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতে পতিতাবৃত্তি বৈধ করার পর নারী পাচার ও শিশু ধর্ষণ বহুগুণ বেড়েছে (CATW, HARVARD LIDS Report)। Family First, New Zealand-এর গবেষণা অনুযায়ী পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর অপরাধ সংগঠনগুলো নারীদের শোষণে আরও সক্রিয় হয়েছে।

(৩) ‘দশ বছরের অধিককাল বিবাহ হলে, তালাকের পর স্বামীকে স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং বিচ্ছেদের সময় সকল সম্পত্তি ৫০-৫০ ভাগাভাগি করতে হবে’ (প্রতিবেদন, পৃ. ৪০)। —বিবাহের ভিত্তিকে দুর্বল করার এমন প্রস্তাবনার মাধ্যমে পুরুষদের আর্থিক দায়বদ্ধতা বাড়ানোর পাশাপাশি পারিবারিক বন্ধনকেও দুর্বল করা হচ্ছে।

(৪) ‘একজন ব্যক্তি শুধু একজন স্ত্রীই রাখতে পারবে; একাধিক নয়’ (প্রতিবেদন, পৃ. ২৪৮)। —ইসলামী আইন অনুযায়ী পুরুষদের বৈধভাবে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার অধিকার রয়েছে। এই প্রস্তাব ব্যক্তির ধর্মীয় অধিকারকে খর্ব করার শামিল এবং বৈধ রাস্তার পরিবর্তে পরকীয়া ও ব্যভিচারকে উৎসাহিক করে।

(৫) ‘বাল্যবিবাহ আইন ২০১৭-এর বিশেষ ধারা বাতিল করতে হবে’ (প্রতিবেদন, পৃ. ৫৪)। —২০১৭-এর এই আইনে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহের বৈধতা দেওয়া ছিল। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার ন্যূনতম অধিকারও রাখা হয়নি।

(৬) ‘উত্তরাধিকার আইন সংশোধন করে নারীদের জন্য সমান উত্তরাধিকারের অধিকার নিশ্চিত করা’ (প্রতিবেদন, পৃ. ৪১)। —ইসলামে পুরুষ ও নারীর উত্তরাধিকার কখনোই লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। ইসলামী আইনের ভিত্তি ন্যায় ও ইনছাফ। মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক ও বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের ভারসাম্যের সাথে সম্পৃক্ত করে উত্তরাধিকার বণ্টন করা হয়েছে। যা লিঙ্গের ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হলে কারও না কারও প্রতি যুলুম হবে। বিশেষ করে পুরুষ বৈষম্যের শিকার হবে।

(৭) ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাতিল করার প্রস্তাব’ (প্রতিবেদন, পৃ. ৩৫)। —সংবিধানের ২-এর ক ধারা বাতিলের প্রস্তাবনার মাধ্যমে তারা অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করেছে।

(৮) ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার’ (প্রতিবেদন, পৃ. ১০৫)। —নারীদের স্বেচ্ছাচারী জীবনের প্রচারণা চালানোর এমন প্রস্তাব ইসলামি নীতিবোধ ও সমাজের নৈতিকতার সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

(৯) ‘Comprehensive Sexuality Education’ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব। —স্কুল পর্যায়ে বিকৃত যৌন শিক্ষা চালুর প্রস্তাবনা সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

(১০) Gender Identity Theory-এর মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পরিচয় সংকট সৃষ্টি করা এবং LGBTQ+ বিষয়ক প্রপাগান্ডা চালু করার অপচেষ্টাও প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে। অথচ, জেনেটিক বিজ্ঞান অনুযায়ী পুরুষ ও নারী হওয়া একটি জৈবিক সত্য। এই মতবাদ পশ্চিমা সমাজে চালু হওয়ার পর কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছে (Trevor Project, 2022)। WHO ও APA গবেষণায় দেখা গেছে, সমকামীদের মধ্যে PTSD, মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার হার দ্বিগুণ। HIV সংক্রমণ সমকামীদের মধ্যে ২৬-২৮ গুণ বেশি (Farley et al., WHO, UNAIDS)

নারী সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবনাগুলোকে সংস্কার না বলে বরং সমাজবিধ্বংসী ও মূল্যবোধবিরোধী ষড়যন্ত্র বলা যেতে পারে। আমরা সরকার মহোদয়ের নিকট দাবি জানিয়ে বলতে চাই— ১. বিদ্যমান সংস্কার কমিশন অবিলম্বে বাতিল করে ইসলামিক স্কলার ও মূলধারার নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন। ২. শিক্ষাক্রম থেকে বিকৃত যৌনতা ও জেন্ডার থিওরি সম্পূর্ণ অপসারণ। ৩. LGBTQ+ প্রপাগান্ডা রোধে কার্যকর আইন প্রণয়ন। ৪. ইসলামী পারিবারিক আইন সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন। ৫. পতিতাবৃত্তি ও ব্যভিচারকে সামাজিক অপরাধ হিসেবে ঘোষণা। ৬. ধর্মীয় স্বাধীনতাকে নারীর অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি। ৭. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রক্ষার্থে জাতীয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ পরিষদ গঠন।

আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলছি, ইসলামই একমাত্র জীবনব্যবস্থা যা নারীর যথাযথ সম্মান, অধিকার ও দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে। আমরা নারীর সম্মান চাই—পতিতাবৃত্তির নামে লাঞ্ছনা নয়। আমরা অধিকার চাই—চারিত্রিক বিকৃতির নামে ধ্বংস নয়। আমরা স্বাধীনতা চাই—আত্মা, পরিবার ও সমাজ বিধ্বংসী পাশ্চাত্য অন্ধ অনুকরণ নয়। আমরা আইন চাই—যা ঈমান, বাস্তবতা ও সুবিচারের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। (প্র. স.)

Magazine