কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করুন

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

জনগণ দেশের জন্য মোটেও বোঝা নয়; বরং দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সন্তানসন্ততি মহান আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত। তিনি অনুগ্রহ করে কাউকে মেয়ে, কাউকে ছেলে আবার কাউকে উভয়ই দান করে থাকেন (দ্র. আশ-শূরা, ৪২/৪৯-৫০)। সন্তান গ্রহণের প্রতি ইসলাম উৎসাহিত করে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অধিক সন্তানপ্রসবা মমতাময়ী নারীকে বিয়ে করো। কেননা আমি অন্যান্য উম্মতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করব’ (নাসাঈ, হা/৩২২৭)

মহান আল্লাহ প্রত্যেককে তার রিযিক্ব দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়ে থাকেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর যমীনে বিচরণশীল এমন কোনো জীব নেই, যার রিযিক্বের দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই। তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সবকিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে’ (হূদ, ১১/৬)। অন্যত্র মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা, ‘আর এমন কত জীবজন্তু রয়েছে, যারা নিজেদের রিযিক্ব নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক্ব দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী’ (আল-আনকাবূত, ২৯/৬০)। মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘অভাব-অনটনের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তাদেরকে রিযিক্ব দেই এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ’ (আল-ইসরা, ১৭/৩১)। উল্লেখ্য, ‘রিযিক্ব’ কথাটি দ্বারা কেবল টাকাপয়সা, খাদ্য-পানীয় উদ্দেশ্য নয়; বরং শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণ যে কত বড় শক্তি, তা আমাদের প্রবাসীদের দিকে তাকালেই সহজে অনুমেয়; বিদায়ী অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৫৯ কোটি ২১ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। বর্তমান দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয়ই হচ্ছে রেমিট্যান্স।

এক্ষেত্রে আমরা জাপানের দিকেও একটু দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারি। দেশটি জন্মহার বাড়াতে শিশু সুরক্ষা খাতে নানান প্রণোদনার পাশাপাশি প্রতিবছর আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ের ঘোষণা দিয়েছে। কারণ দেশটি ভয়াবহ জনশক্তির অভাবে ভুগছে। নিম্নমুখী জন্মহার জাপানের সমাজ এবং গোটা অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের আরো অনেক উন্নত দেশ এভাবে কর্মক্ষম জনসংখ্যার অভাবে ভুগছে। জনগণ যে কত বড় সম্পদ হতে পারে, তা তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

পরিসংখ্যার ব্যুরো (বিবিএস)-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। মোট জনসংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগ এখন তরুণ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। মোট জনগোষ্ঠীর ৬২ শতাংশ অর্থাৎ ১০ কোটি ৫০ লাখ মানুষই এখন কর্মক্ষম। আরেকটি সরকারি তথ্য মতে, বাংলাদেশে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা এখন ১২ কোটি ৩৩ লাখ। সেই হিসাবে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড (Demographic Dividend) বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে, যা একটি রাষ্ট্রে সবসময় আসে না। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলতে বুঝায়, কোনো একটি দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার শ্রমশক্তিতে পরিণত হওয়া। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপি)-এর মতে, ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী মানুষকে কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন তরুণ জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র। এ অঞ্চলের ৪৫টি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাস গ্রহণ করে সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। চীন সেই তালিকার একটি বড় উদাহরণ, যেখানে আশির দশক থেকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং এটাকে কাজে লাগিয়ে তারা আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ প্রদত্ত এ বিশেষ নেয়ামতকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এক্ষেত্রে (১) দেশে চাহিদামাফিক বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে হবে এবং কর্মক্ষম সকলকেই কাজে যুক্ত করতে হবে, কাউকে বেকার রাখা যাবে না। কর্মসংস্থান তৈরিতে সরকার ও জনগণ সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। (২) দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ বিশেষ কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশেষ করে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে আইটি ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। (৩) বর্তমান বাজারব্যবস্থা সামনে রেখে তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। (৪) দেশে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকদের ধীরে ধীরে ছাঁটাই করে সেখানে দেশী শ্রমিক নিয়োগ দিতে হবে। কারণ আমাদের রেমিট্যান্স-যোদ্ধারা ঘামঝরা পরিশ্রম করে যা আনছেন, বিদেশী শ্রমিকরা সেই তুলনায় আমাদের দেশ থেকে কিন্তু কম নিয়ে যাচ্ছেন না। (৫) বিশ্ব শ্রমবাজারে কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রমিকদের চাহিদা বেশি, সেগুলো যাচাই করে মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। (৬) বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে সেখানে ভালো ভালো পেশা ও পদে লোক পাঠাতে হবে, তাহলে অর্থ ও সম্মান দু’টোই হবে ইনশা-আল্লাহ।

মহান আল্লাহ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতিসহ সার্বিক সমৃদ্ধি দান করুন। আমীন!

Magazine