কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

শিক্ষাঙ্গনে নির্বিঘ্নে হিজাব পরার পরিবেশ নিশ্চিত করুন

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের যাবতীয় কল্যাণের সব ধরনের রসদ বিদ্যমান রয়েছে। যা কিছু চির কল্যাণকর তার নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে এবং যা কিছু অকল্যাণকর তা নিষেধ করেছে। এখানে নারীকে যে সম্মান ও অধিকার দেওয়া হয়েছে, তাকে রক্ষার যত আয়োজন করা হয়েছে, তাকে যতভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তার ছিটেফোঁটাও অন্য কোনো ধর্ম বা আইনে নেই। হিজাব সেসব আয়োজন ও কর্মসূচিরই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হিজাব নারীর স্বভাবজাত বিষয় এবং নারীত্বের প্রতীক। হিজাব পুরুষের আত্মমর্যাদা ও পুরুষত্বের পরিচয়; ফলে তিনি তার অধীনস্থ কোনো নারীর বেপর্দায় চলা সহ্য করেন না। পর্দা নারীর অলংকার, গর্ব ও অহংকার। হিজাব নারী-পুরুষ উভয়ের মন ও মনন পবিত্র রাখার বড় মাধ্যম। পর্দা ঈমান, তাক্বওয়া, লজ্জাশীলতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতার পরিচায়ক। হিজাব মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত বিশেষ আচ্ছাদন, যা নারীকে ইহকালে কুদৃষ্টি ও নানা ফেতনা থেকে বাঁচাতে পারে এবং পরকালে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারে। পর্দা মহান আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। হিজাব নারীদের সম্মান ও সতীত্ব রক্ষার অনন্য বিধান। হিজাব মহান আল্লাহর অমোঘ আইন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়’ (আল-আহযাব, ৩৩/৫৯)। এই আয়াতে নারীদের মুখমণ্ডলসহ সারা শরীর আবৃত রাখার স্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়। কুরআন ও হাদীছে এ মর্মে আরো অনেক বক্তব্য এসেছে।

অন্যদিকে পর্দাহীনতা অশ্লীল কর্ম। এটি শয়তানের ফাঁদ ও ইয়াহূদীদের চক্রান্ত। পর্দাহীনতা উন্নতি নয়, বরং অধঃপতন; আধুনিকতা নয়, বরং প্রাচীন জাহিলীযুগের নিরেট মূর্খতা। এটি কল্যাণকর নয়; বরং নানা অকল্যাণের সূতিকাগার। পর্দাহীনতাকে সবচেয়ে বড় পাপ শিরকের সাথে উল্লেখ করে হাদীছে এর ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। পর্দাহীন নারীকে অভিশপ্ত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অপর হাদীছে এমন নারীকে মুনাফেক্ব বলা হয়েছে। পর্দা না করলে সরাসরি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর বিরুদ্ধাচরণ হয়। পর্দাহীন নারী জান্নাতে যাবে না এবং এর সুগন্ধিও পাবে না।

সুতরাং শুধু অনুমোদিত পুরুষ ব্যতীত অন্য সকল পুরুষের সামনে নারীকে হিজাব পরেই চলতে হবে (দ্র. আন-নূর, ২৪/৩১) এবং পুরুষরাও কেবল অনুমোদিত নারী ছাড়া অন্য কোনো নারীকে দেখতে পারবে না (দ্র. আন-নিসা, /২৩)

কিন্তু এতকিছুর পরও ভারতসহ অন্যান্য অমুসলিম দেশের মতো আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেরও বহু ক্ষেত্রে হিজাব পরার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কখনও সরকারি বা বেসরকারি অফিস-আদালতে, কখনও কল-কারখানা ও ফ্যাক্টরিতে, কখনও-বা স্কুল, কলেজ বা ভার্সিটিতে; কখনও বাংলা বিভাগে, কখনও শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে, কখনও-বা অন্য কোনো বিভাগে; কখনও ইডেনে, কখনও ঢাবিতে— এভাবে হিজাব নিয়ে একের পর এক ঘটছে হৃদয়বিদারক ঘটনা। হিজাব-নিক্বাব পরিহিতারা হচ্ছেন হেনস্তার শিকার। বঞ্চিত হচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার থেকে। শিক্ষাঙ্গনে অনেক শিক্ষার্থীকে ঝরে যেতে হচ্ছে অকালেই। একটি মুসলিম দেশে এগুলো কি কল্পনা করা যায়!

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি সেসব ঘটনারই ধারাবাহিকতা। এর আগে পরিচয় শনাক্তকরণের অজুহাতে বাংলা বিভাগের সকল শিক্ষার্থীকে সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাসে কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখার কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়। ইডেন মহিলা কলেজের ঘটনাও জনগণের মনে আছে। যাহোক, বরাবরের মতো এবারও প্রাকটিসিং মুসলিম শিক্ষার্থীগণ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে আদালতে রিটও করা হয়। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে শিক্ষক সমিতি একটি বিবৃতি দেন, যা খুবই আপত্তিকর এবং অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষার্থীগণ উপাচার্যের কাছে নিম্নবর্ণিত ৭ দফা দাবি পেশ করেন: 

১. শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ভাইভা বোর্ডে পর্দানশিন শিক্ষার্থীদের হেনস্তা হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে এবং নিকাব পরিধান করায় ভাইভা না নেওয়া শিক্ষার্থীর ভাইভা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

২. উক্ত ইন্সটিটিউটের সেই অধ্যাপক কর্তৃক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উগ্রবাদী দলের সদস্য বলে অপবাদ দেওয়া এবং পর্দানশিন মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না এসে বাসায় পড়াশোনা করবে— এমন ‘রেসিজম’ করায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৩. বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন কানসহ মুখমণ্ডল দৃশ্যমান রাখা সংক্রান্ত নোটিশ বাতিল করতে হবে।

৪. পরিচয় শনাক্তকরণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথা পরীক্ষার পূর্বেই নারী কর্মচারী কিংবা নারী শিক্ষিকার মাধ্যমে আলাদা রুমে হিজাব ও নিকাব পরিহিতাদের পরিচয় শনাক্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৫. দ্রুততম সময়ে সকল অনুষদের সকল বিভাগে হিজাব-নিকাব পরিধানকারী শিক্ষার্থীদেরকে হেনস্তা করা বন্ধে নোটিশ প্রদান করতে হবে।

৬. বিভিন্ন সময়ে ক্লাসরুমে, ভাইভা বোর্ডে অথবা পরীক্ষার হলে নিকাব খুলতে বাধ্য করা অথবা কটূক্তির মাধ্যমে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানি করার মতো ঘটনাগুলো তদন্তপূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. হিজাব বা নিকাব পরিধানে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বিধিতে ধারা যুক্ত করতে হবে এবং ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত ঘটনায় ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পুনরায় ফিরিয়ে এনে অথবা ভিন্ন উপায়ে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমরা এসব দাবির সাথে সহমত পোষণ করছি এবং শিক্ষাঙ্গনসহ সব জায়গায় নির্বিঘ্নে হিজাব পরার পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সাথে সাথে আদালত যেন কুরআন-হাদীছের বিপক্ষে ভুলেও কোনো রায় না দেন, সেই দাবি পেশ করছি।

মহান আল্লাহ তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!

Magazine