কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার কোন পথে?

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

প্রায় ৫০ বছর আগে ইসরাঈলের উপর আকস্মিক আক্রমণ চালিয়েছিল মিসর ও সিরিয়া। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তীনীদের উপর চালানো নৃশংসতার জবাবে একই উপায়ে ৭ অক্টোবর’২৩ শনিবার সকালে ইসরাঈলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হামাস হাজার হাজার রকেট ছোড়ে, যা ইসরাঈলের উন্নত আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিহত করতে ব্যর্থ হয়। এর জবাবে গাজায় জ্বালানি, বিদ্যুৎ, খাবার, পানি ও মানবিক সহায়তা বন্ধের পাশাপাশি অব্যাহত হামলা চালায় ইসরাঈল। ফলে হামাসের হামলায় ইসরাঈলে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ ছাড়ায়। এছাড়া ১২০ জনেরও বেশি ইসরাঈলীকে যিম্মী করে হামাস। অপরদিকে ইসরাঈলের বিমান হামলায় ২ হাজার ৪৫০ ফিলিস্তীনী প্রাণ হারায়। পাশাপাশি আহতের সংখ্যা ৯ হাজার ২০০ জনে পৌঁছে।

বায়তুল মাক্বদিসকে ঘিরে লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। এটিকে যত ধর্মযুদ্ধ ও রক্তপাত হয়, তা পৃথিবীর আর কোনো ভূখণ্ড নিয়ে বা ভূখণ্ডে হয় না। একে ঘিরেই খ্রিষ্টান ও মুসলিমদের মধ্যে ১৬টি ক্রুসেড সংঘটিত হয়েছে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের একটা বৃহৎ ভূখণ্ড অশান্ত হয়ে রয়েছে বিগত ৭৫ বছরের উপর। এ অশান্তির সূচনা হয় ১৯৪০ সালে, যখন চূড়ান্তভাবে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তির সরকার ১৯১৭ সালের এক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে— যা ইতিহাসে ‘বেলফোর ডিক্লারেশন’ নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে ইয়াহূদীদের জন্য ব্রিটিশদের দখলকৃত ফিলিস্তীনে রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে ডেভিড বেন গোরিয়ন ইসরাঈলী রাষ্ট্রের ঘোষণা করেন। ঐ ঘোষণাপত্রে ফিলিস্তীনকে বিভক্ত করে দু’টি পৃথক রাষ্ট্র ইয়াহূদী এবং ফিলিস্তীন রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। প্রথমেই এ ইয়াহূদী রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ইসরাঈলের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা এবং জাতিসংঘের হঠকারিতা মেনে নিতে পারেনি ঐ সময়ের আরব রাষ্ট্রগুলো, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত মুসলিমপ্রধান দেশ ও জনগোষ্ঠী।

আদম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম বায়তুল মাক্বদিস নির্মাণ করেন। এরপর ইবরাহীম, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, সুলায়মান আলাইহিমুস সালামসহ আরো কতিপয় নবী এর সংস্কারকাজ করেন। বায়তুল মাক্বদিস নবী-রাসূলগণের পদভারে মুখরিত পুণ্যভূমি। এ স্থানটি সর্বযুগে মুসলিমদের অধিকারে ছিল; শুধু কিছুকাল ছাড়া— যখন রক্তপিপাসু ও দুর্বৃত্তরা তা জবরদখল করেছিল। এদের কারো কারো কথা আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। যেমন- ‘প্রবল শক্তিশালী এক জাতি’, ‘জালূত এবং তার সৈন্যবাহিনী’ (দ্র. আল-বাক্বারা, ২/২৫১; আল-মায়েদা, ৫/২২)। অনুরূপভাবে খ্রিষ্টপূর্ব ৬৪ সালে রোমানরা তা দখল করে নিয়েছিল। এরপর ইউরোপীয় ক্রুশধারীরা ৪৯২ থেকে ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তা জবরদখল করে রেখেছিল। সর্বযুগে যখনই জবরদখলকারীরা সেটা দখল করেছে, তখনই মুসলিমরা তা পুনরুদ্ধার করেছে, আল-হামদুলিল্লাহ।

ইতিহাস প্রমাণ করে, ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মের ৬ হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম আরবের কিনআন গোত্র সর্বপ্রথম ফিলিস্তীনে বসবাস করেছিল এবং তাদের নামেই ‘ফিলিস্তীন’ নামকরণ করা হয়েছিল। অথচ ইয়াহূদীরা সেখানে প্রবেশ করেছিল ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রবেশের প্রায় ৬শ’ বছর পরে। অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালাম-এর জন্মের প্রায় ১৪শ’ বছর পূর্বে তারা সেখানে প্রবেশ করেছিল। তার মানে ইয়াহূদীদের ফিলিস্তীনে প্রবেশের প্রায় ৪ হাজার ৫শ’ বছর পূর্বে কিনআন আরবরা সেখানে প্রবেশ করেছিল।

তাছাড়া ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক্ব, ইয়াকূব, দাঊদ, সুলায়মান, মূসা, ঈসা আলাইহিমুস সালামসহ সকল নবীর ধর্মই ছিল ইসলাম, তাঁরা সবাই ছিলেন মুসলিম এবং তাঁরা সবাই ইসলামের দিকেই দাওয়াত দিয়ে গেছেন। তাঁদের কেউ খ্রিষ্টানও ছিলেন না, ইয়াহূদীও ছিলেন না (দ্র. আল-বাক্বারা, ২/১২৪, ১২৮, ১৩০-১৩৩, ১৪০; আলে ইমরান, ৩/৬৭-৬৮; ইউনুস, ১০/৮৪; আন-নামল, ২৭/২৯-৩১; হূদ, ১১/৪৬)। সুতরাং মুসলিম ব্যতীত অন্য কোনো ইয়াহূদ, নাছারা বা আর কোনো কাফের-মুশরিক কোনো দিক দিয়েই নবীগণের ওয়ারিশ হতে পারে না, যদিও তারা কোনো নবীর বংশধর হয়। কারণ নবী-রাসূলগণ ছিলেন মুসলিম আর এরা হচ্ছে কাফের। আর কস্মিনকালেও কোনো কাফের কোনো মুসলিমের উত্তরাধিকারী হতে পারে না (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬১৪)। সেজন্য নবী-রাসূলগণের একমাত্র উত্তরাধিকারী হচ্ছেন মুসলিমরা। আল্লাহ বলেন, ‘মানুষদের মধ্যে যারা ইবরাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে, তারা ইবরাহীমের ঘনিষ্টতম’ (আলে ইমরান, ৩/৬৮)অতএব, একথা হলফ করে বলা যায় যে, ইয়াহূদীরা জবরদখলদার এবং ইসরাঈল সম্পূর্ণ অবৈধ রাষ্ট্র।

কিন্তু দখলদার ইয়াহূদী জায়োনিস্টদের হাত থেকে বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার কোন পথে সম্ভব? এর সোজাসাপ্টা জবাব হচ্ছে, বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার করতে হলে মুসলিমদেরকে আগে দ্বীনী জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ঈমান ও আমল পুনরুদ্ধার করতে হবে। কুরআন-সুন্নাহ ফিরে এসে ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে, তাওহীদী দুর্গে নিজেদেরকে সংরক্ষিত রাখতে হবে, আমলদার মুসলিম হতে হবে। জুমআর জামাআতে যত জন মুছল্লী হয়, ফজরের জামাআতেও তত জন মুছল্লী না হওয়া পর্যন্ত বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার স্বপ্নই থেকে যেতে পারে। যে ইসলামের উপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন, শুধু সেই ইসলাম দিয়েই বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার সম্ভব। শুধু ইসলামের নাম দিয়ে বা আইডি কার্ডে নিজেকে মুসলিম পরিচয় দিয়ে এক ইঞ্চি জায়গাও জয় করা সম্ভব নয়। ফিলিস্তীন নামক ভূখণ্ডটি আরবদের নয়, বরং মুসলিমদের এবং আল্লাহর নেককার বান্দাদের— কেবল এই মন্ত্রে বিশ্বাসী হয়ে অগ্রসর হতে হবে। আরব-অনারব বিভাজন রোধ করে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে ‘এক দেহ এক প্রাণ’ হয়ে কাজ করতে হবে। মুসলিমদের সর্বাত্মক শক্তি বৃদ্ধির পথ খুঁজতে হবে (আল-আনফাল, ৮/৬০)। কেবল এই পদ্ধতিতেই মুসলিমরা দখলদার ইয়াহূদীদের বিতাড়িত করে বায়তুল মাক্বদিস পুনরুদ্ধার করতে পারবে। আর তখনই নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণী সত্য প্রমাণিত হবে, ‘ক্বিয়ামত সংগঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমরা ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের সাথে লড়াই না করবে। মুসলিমরা তাদেরকে হত্যা করবে। ফলে তারা পাথর বা বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দা! এই তো ইয়াহূদী আমার পেছনে। এসো, তাকে হত্যা করো। কিন্তু ’গারকাদ’ গাছ এ কথা বলবে না। কারণ এ হচ্ছে ইয়াহূদীদের গাছ’ (মুসলিম, হা/২৯২২)। লক্ষ করুন, হাদীছটিতে পাথর ও গাছ কর্তৃক ইয়াহূদীদের অনুসন্ধান দেওয়ার বাক্য হবে, ‘হে আল্লাহর বান্দা! হে মুসলিম!’ অর্থাৎ কেবল আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করে নিয়ে খাঁটি মুসলিম হতে পারলেই বিজয় সম্ভব, অন্যথা নয়। 

মহান আল্লাহ ইয়াহূদ ও তাদের দোসরদের অপবিত্রতা থেকে বায়তুল মাক্বদিসকে পবিত্র করুন। একে আবার মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে তা পুনরায় আবাদ করার ব্যবস্থা করে দিন। আমীন! (নি.স.)

Magazine