কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এক অনন্য বার্তা

মা ও শিশুর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না

post title will place here

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَحْدَهُ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَّا نَبِيَّ بَعْدَهُ

দেশে সন্তান প্রসবে অস্ত্রোপচার বা সিজারিয়ান বাড়ছে উদ্বেগজনকহারে। বছরে প্রায় ৩৬ লাখ শিশুর জন্ম হয়। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ বা ১৬ লাখের বেশি শিশুর জন্ম হয় অস্ত্রোপচারে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বা ১০ লাখ ৮০ হাজার শিশুর জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার হচ্ছে। ২০০৪ সালে সিজারের মাধ্যমে সন্তান হতো ৪ শতাংশ, ২০০৭ সালে হতো ৯ শতাংশ এবং ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ শতাংশে। আরও পরে ২০১৭ সালে এই সংখ্যা হয় ৩৫.৫ শতাংশ। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে ঐ সময় অস্ত্রোপচার করে বাচ্চা হওয়ার হার ছিল ১.৯৭ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ সালে এসে দাঁড়ায় ২৯.১৮ শতাংশে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মদান প্রায় আট গুণ বেড়েছে। ২০১৩ সালে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২১ জন গর্ভবতী মা ভর্তি হন। এর মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জন শিশু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্ম নেয়। কিন্তু এদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের প্রসব স্বাভাবিকভাবেই করা যেত বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। জরিপে বলা হয়, দেশে স্বাভাবিক প্রসব ৬২.১ শতাংশ, সিজারিয়ান ৩৫.৫ শতাংশ এবং অন্যান্যভাবে ২.৫ শতাংশ সন্তানের জন্ম হয়। অথচ আমাদের আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোতে এই অস্ত্রোপচারের হার অনেক কম; উন্নত দেশগুলোর কথা না হয় না-ই বললাম।

অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ৮৪ শতাংশ হচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে। সরকারি হাসপাতালে হচ্ছে ১৪ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ হচ্ছে এনজিও পরিচালিত কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ১৫ শতাংশের বেশি অস্ত্রোপচার হলে তা অপ্রয়োজনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সংস্থাটি বলছে, প্রতি ১০০ গর্ভধারণে ১০ থেকে ১৫ জন মায়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। তখন প্রসবে জটিলতার আশঙ্কা দেখা দেয়। এসব ক্ষেত্রে মা ও সন্তানের জীবন রক্ষায় প্রসবের সময় অস্ত্রোপচার করতে হয়। এটি একটি জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা।

অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন ও সময় বাঁচানোর জন্য একশ্রেণির চিকিৎসক বা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অপ্রয়োজনে নানা কৌশলে প্রসূতি মায়েদের সিজারিয়ানে বাধ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মা ও তার পরিবারের অসচেতনতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। কেউ ভয়ে আবার কেউ অনেকটা ফ্যাশানের কারণে এপথ বেছে নেয়। বেশি বয়সে বিয়ে হওয়াও অপ্রয়োজনীয় সিজারের অন্যতম কারণ। একজন গাইনি বিভাগের প্রধান বলেন, প্রথম সন্তান সিজারিয়ানের মাধ্যমে হলে পরের সন্তানও সিজারিয়ান করাতে হবে, এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা।

অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কারণে মানুষের প্রতি দুই ধরনের যুলম করা হচ্ছে: ক. শারীরিক ও খ. আর্থিক। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের খপ্পরে পড়ে অনেক গর্ভবতী মা অকাল মৃত্যুর শিকার হন। আর বেঁচে থাকা অনেক মা ও তার শিশুসন্তান পড়েন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে, যা সারা জীবন তাদের ভোগ করতে হয়। সিজারিয়ান শিশু অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিমান হয় এবং তার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হয়। এছাড়া এই ধরনের প্রসবে খরচও অনেক বেশি হয়। সবমিলিয়ে একটি অস্ত্রোপচারে গড়ে ৫৫২ মার্কিন ডলার বা ৪৪ হাজার ১৬০ টাকা ব্যয় হয়। ২০২২ সালে প্রসবকালে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারে কমপক্ষে ২ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা খরচ হয়। অথচ সব ধরনের যুলম ইসলামে নিষিদ্ধ এবং তা কিয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে (বুখারী, হা/২৪৪৭)। ইসলামে যে কোনো অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ (আন-নিসা, ৪/২৯; মুসলিম, হা/২৫৬৪)

অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার বন্ধ করতে হবে। নইলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। অতএব, (১) মা ও তার পরিবারে সচেতনতা তৈরি করতে হবে এবং মায়ের গর্ভকালীন স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। (২) চিকিৎসক এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকদের আল্লাহকে ভয় করতে হবে আর ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি ছেড়ে মানবিক হতে হবে; পেট কেটে অর্থ উপার্জনের মতো হীন পথ পরিহার করতে হবে। (৩) সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। অপ্রয়োজনীয় সিজারের সাথে জড়িত ডাক্তার ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। (৪) সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ধাত্রী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সারা দেশে যথেষ্ট পরিমাণ প্রশিক্ষিত নার্স বা মিডওয়াইফ-এর বন্দোবস্ত করতে হবে। (৫) নিরাপদ মাতৃত্বের প্রতি যত্নশীল হতে হবে, ফলে মায়ের গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান প্রসব এবং প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

Magazine